কোথায় কী যেন হচ্ছে…
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বললেন, কিছু একটা হতে পারে, সজাগ থাকতে হবে, তিনি ৭৫ এর পুনরাবৃত্তির আশংকার কথা বলেছেন। একই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার ওপর বিভিন্ন সময়ে হামলা হয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছায় রক্ষা পেয়েছেন। একটা বিষয় নিয়ে বেশি চিন্তায় থাকেন তিনি সেটা হল যারা তার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন, তার কারণে তাদের যেনো কোনও ক্ষতি হয়ে না যায়। একই দিনে এই দুজনের বক্তব্য একসাথে করলে এটা স্পষ্ট যে শেখ হাসিনার ওপর আঘাতের আশঙ্কার কথাই বলা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (এসএসএফ) এর ৩০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কথা বলেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, “দেশে যাতে পঁচাত্তরের মত এমন কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় এর জন্য সবার সজাগ থাকার প্রয়োজন আছে। আপনাদের সব সময় মনে মনে একটা প্রস্তুতি রাখা দরকার।” তিনি বলেন, “ঝড়-বৃষ্টি নাই, গাছের পাতা নড়ছে না, তখন বুঝতে হবে একটা কিছু হতে পারে। তাই আমি ইঙ্গিত দিয়ে বললাম সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।”
সৈয়দ আশরাফের কথা শুনে মনে হচ্ছে কোথাও বড় মাপের কোন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পঁচাত্তরের পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা মানে যড়যন্ত্রটা এমন জায়গায় হচ্ছে যেটা তিনি প্রকাশ করতে পারছেন না। যদি সে ধরনের কোন ষড়যন্ত্রের কথা তিনি জানতেই পারেন তাহলে আমরা মনে করি সেটি আরো স্পষ্ট করেই জনগণকে জানাতে হবে। যদি কোন ঘটনা ঘটেই যায় শেষ পর্যন্ত জনগণই ভরসা। আবার ঘটনা যেন ঘটতে না পারে সেজন্যও জনগণের ওপরই ভরসা করতে হবে। তাই জনগণকে আগে থেকেই প্রস্তুত রাখতে হবে। যদিও তিনি বলেছেন মনে মনে প্রস্তুত থাকতে হবে। মনে মনে প্রস্তুতি দিয়ে কাজ হবে না, প্রতিরোধও করতে হবে। এবং সেটা এখনই। আর ঘটনা ঘটে গেলে তখন প্রতিরোধ করেই বা কী হবে, প্রতিরোধটা করতে হবে আগেই।
৭৫ এ প্রতিরোধ করা যায়নি বলে দেশের ইতিহাস বদলে গেছে। জাতি শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হারায়নি, শেখ হাসিনা শুধু তার বাবা মা ভাই বোনকেই হারাননি, জাতি শুধু জাতীয় চার নেতাকে হারায়নি, সৈয়দ আশরাফ শুধু তার বাবাকে হারাননি, ৭৫ এ জাতি একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হারিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশের পরিচয় হারিয়েছে, যার খেসারত আজ দেশের মানুষকে দিতে হচ্ছে। এখনো এদেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, যতটুকু ভূমিকা রাখা দরকার সেটা শেখ হাসিনাই রাখতে পারেন, রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে হাজারটা কথা থাকতে পারে কিন্তু জঙ্গিবাদ ও ধর্মান্ধদের ইস্যুতে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনাই ভরসা। তিনি না থাকলে আওয়ামী লীগের পক্ষে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যেমন সম্ভব হতো না তেমনি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইও করা যাবে না। তাই যুদ্ধাপরাধ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু হয়েছে সেটার শেষ না হওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে বেঁচে থাকতে হবে।
সৈয়দ আশরাফ নিশ্চয়ই সারা বিশ্ববাসীর মতো দেখেছেন তুরস্কে জনগণকে আহ্বান জানিয়ে কীভাবে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। আর সেটা সম্ভব হয়েছে জনগণকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আহ্ববান জানাতে পেরেছিলেন বলেই। আমরা মনে করি না এদেশে ওই রকম কিছু একটা হবে, বা ওই রকম কিছু করার শক্তি কারো আছে। তবে শঙ্কাটা কম নয়, চেষ্টাও যে হয়নি তাও নয়, যেহেতু ক্ষমতাসীন দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তিই ৭৫ এর পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সজাগ থাকতে বলেছেন। আর শেখ হাসিনার ওপর আঘাতের শঙ্কাও নতুন নয়, তাকেতো কমপক্ষে ১৪ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন, তার বিরুদ্ধে শুধু দেশীয় জঙ্গি, বা যুদ্ধাপরাধীরাই নয় আন্তর্জাতিক শক্তিও উঠেপড়ে লেগেছে বলে আমরা আঁচ করতে পারি।
তাই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জনগণকে সাথে নিয়েই এখন কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানার খবরও তাকে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু গুরুত্ব দেননি। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকে সেই শিক্ষা নিতে হবে। বিশেষ করে সরকার আর দল যে একাকার হয়ে গেছে, সেখান থেকে সরে এসে দলকে তার নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে এগুতে হবে। দেশে আওয়ামী লীগের অনেক দিন ধরে রাজনৈতিক কোন কর্মসূচি নেই, এই রাজনৈতিক কর্মসূচি শূন্যতা চলতে থাকলে জনগণকে ডাক দিলেও তখন পাওয়া যাবে না। তাই শুধু সতর্ক বা সজাগ থাকলেই চলবে না প্রতিরোধের মঞ্চ এখনই তৈরি করতে হবে।
লেখক : সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ
এইচআর/পিআর