ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

গোড়ায় গলদ রেখে জঙ্গি দমন সম্ভব?

প্রকাশিত: ০৫:৫৭ এএম, ১২ জুলাই ২০১৬

গুলশান ট্র্যাজেডির পর জঙ্গিবাদ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে- এমন কথা সব মহল থেকেই উচ্চারিত হচ্ছে। এতদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বেছে বেছে একের পর এক হত্যার পর একসঙ্গে এত বড় অপারেশন চালানোর মত সক্ষমতা অর্জন করেছে জঙ্গিরা- এটা বোধহয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণার বাইরে ছিল। কিন্তু হলো তাই। গত ১ জুলাই গুলশানের আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। এসময় তারা ১৭ জন বিদেশি, দুই বাংলাদেশি ও একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিককে হত্যা করে। এই হামলার পর গোটা বিশ্বের এখন মাথাব্যথার কারণ হয়েছে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের আস্ফালন। এই ন্যক্কারজনক ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে তিনি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাও জানিয়েছেন। জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণে দুইদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়েছে।

এবারের ঈদও ছিল বেদনায় মোড়ানো। দেশের মানুষও এই হামলার পর শোকগ্রস্ত হয়েছে। তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে এ ধরনের উগ্রবাদী তৎপরতা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। হামলার প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বাংলাদেশ সফর করছেন।  জঙ্গিবাদ এখন বৈশ্বিক সমস্যা হলেও বাংলাদেশ অনেকটাই মুক্ত ছিল এই সমস্যা থেকে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের জঙ্গিবাদবিরোধী কঠোর অবস্থান এক্ষেত্রে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু জঙ্গিবাদের অপতৎপরতা রোধ করা যাচ্ছে না- এটা এক কঠিন বাস্তবতা। গুলশান হামলার পরও তারা বসে নেই। হামলা হয়েছে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়।  

এই পরিস্থিতিতে ১৪ দল গতকাল সোমবার শহীদ মিনারে জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ করেছে। সেখান থেকেও উচ্চারিত হয়েছে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা।  কিন্তু ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’ বলে একটি কথা চালু আছে। সেটিই এখন দেখা যাচ্ছে জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে। গুলশান হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গি নিবরাস ইসলামসহ সাত জঙ্গি তুরস্কে প্রশিক্ষণ নিয়ে চার মাস আগে দেশে ফিরেছিল। বিমানবন্দরে তাদের মধ্যে তিনজনকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তারা জামিনে বেরিয়ে যায়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাদের মধ্যে পাঁচ শতাধিক আসামি জামিনে বেরিয়ে গেছে। অনেকেই আবার জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে।

অন্যদিকে এ পর্যন্ত ভয়ংকর ২১ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন আদালত। কিন্তু বছরের পর বছর পার হলেও এদের ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হচ্ছে না। ফলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাচ্ছে না। আবার কারাগারে আটক শীর্ষ অনেক জঙ্গি কারাগারে বসেই জঙ্গি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। এই অবস্থা আর যাই হোক জঙ্গিবাদ দমনে সহায়ক নয়। এছাড়া রয়েছে গোয়েন্দা ব্যর্থতার অভিযোগ। পুলিশের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। জঙ্গি হামলায় পুলিশের জীবন যাচ্ছে। কিন্তু তারা সেভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না। এ অবস্থায় নীতিনির্ধারকদের নতুন করে ভাবতে হবে। জঙ্গি দমনে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। গোড়ায় গলদ রেখে যতই ব্যবস্থা নেওয়া হোক-আখেরে তা কাজ দেবে না। অথচ এই ভয়াল সমস্যা থেকে আমাদের মুক্ত হতেই হবে।

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন