ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

শুধু তরুণ-তরুণীদের জন্য

প্রকাশিত: ০২:১০ এএম, ১০ জুলাই ২০১৬

আজকের কলাম শুধু তরুণ-তরুণীদের উদ্দেশ্যে লেখা। কারণ মুহূর্তের মধ্যে আত্মহত্যার মতো ভুল সিদ্ধান্ত তরুণরাই নিয়ে থাকে। জীবনের প্রতি ভালোবাসা তখনও তাদের হয়ে ওঠে না। আমাদের দেশে প্রতিদিন প্রায় ২৮ জন আত্মহত্যা করে যার মধ্যে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীর সংখ্যা বেশি। একটি অনলাইন পোর্টালে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, দেশের ৬০ লাখ ৮০ হাজার মানুষ আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। আত্মহত্যা প্রবণতায় ২০১১ সালে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান যেখানে ছিল ৩৮তম, সেখানে ২০১৫ সালে দশম স্থানে উঠে এসেছে। ভয়ঙ্কর কথা!

গত বছর কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় জনপ্রিয় সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছিল। সাক্ষাৎকারের একটি তিনি জায়গায় উল্লেখ করেছিলেন, “গভীর একটা অবসাদ। বয়স তখন আটাশ-ঊনত্রিশ। মনে হচ্ছিল সব শেষ। এই দীর্ঘ অবসাদ এমন জায়গায় নিয়ে গেল যে আমি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিলাম”। তবে তিনি বের হয়ে আসতে পেরেছিলেন তাঁর এমন সিদ্ধান্ত থেকে। পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্য তিনি সমৃদ্ধ করে চলেছেন। ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণকারী এই সাহিত্যিক যদি আটাশ বছর বয়সে আত্মহত্যা করতেন, তবে ১৯৮৫ সালে শিশু সাহিত্যে অবদানের জন্য বিদ্যাসাগর পুরষ্কার, ১৯৭৩ ও ১৯৯০সালে আনন্দ পুরষ্কার, ১৯৮৮ সালে সাহিত্য একাডেমি পুরষ্কার কিংবা ২০১২ সালে বঙ্গবিভূষণ লাভ করেছেন, সেটা কি সম্ভব হতো?  

আমাদের দেশে দাম্পত্য কলহ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, পরকীয়া প্রেম, পরীক্ষায় পাস না করা, প্রেমে ব্যর্থতা, যৌতুক, দারিদ্র্য, অযাচিত গর্ভধারণ, মেলামেশা কম করার প্রবণতা, ধর্ষণ, বেকারত্বসহ নানা কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। একটা বিষয় লক্ষণীয়, আত্মহত্যাকারী শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত যাই হোক তাদের বিচার বিবেচনার পার্থক্য তেমন একটা চোখে পড়ছে না। অনেকে সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না এই অজুহাতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। সমাজ কি একা একা তৈরি হয়। আমরা তৈরি করি। একজন অপমানিত মানুষ যদি লজ্জায় মুখ না লুকিয়ে অপমানের প্রতিবাদ করে, প্রত্যেকটি মানুষ তাদের নিজেদের প্রতি হওয়া অন্যায়ের বিচার দাবি করে, তবে শতভাগ নিশ্চিত থাকুন অন্যায় কমে আসবে এবং সমাজ বদলে যাবে।    

জে.কে রাওলিং এর কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। তরুণ বয়সে বিবাহ বিচ্ছেদ এবং বিষন্নতার কারণে তিনি আত্নহত্যার কথাও চিন্তা করেছিলেন। শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে সৃষ্টি করলেন ‘হ্যারি পটার’ নামের অমর সৃষ্টি। এক সময়ের ’নো বডি’ জে.কে রাওলিং এখন বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর নারী। আমরা কেউ জানিনা ভবিষ্যতে আমাদের সামনে কি অপেক্ষা করছে। একটু অপেক্ষা করুন, সমস্যা কেটে যাবে। মুহূর্তের মধ্যে আপনি কেন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেকে শেষ করবেন। মহান স্রষ্টা সারাজীবন আপনাকে দুঃখে কষ্টে রাখবে এ রকম ভাবার কোনো কারণ নেই।

আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। জন্মের ৯ বছরের মাথায় মাকে হারানো, ১৯ বছর বয়সে বোনকে হারানো, ২২ বছর বয়সে ব্যবসায় মার খাওয়া, ২৩ বছর বয়সে চাকরি হারানো এবং আইন স্কুলে ভর্তি না হতে পারা, ২৪ বছর বয়সে দেউলিয়া হওয়া, পরবর্তীতে যুদ্ধ থেকে ফিরে প্রাপ্য সম্মান না পাওয়া, বিয়ে করার পূর্ব মুহূর্তে ভালোবাসার মানুষটির মৃত্যু এবং নাভার্স ব্রেকডাউনে ছয় মাস শয্যাশায়ী হওয়া, সন্তানের মৃত্যু, ৩৪ বছর বয়সে কংগ্রেস নির্বাচনে হেরে যাওয়া, ৪৭ বছর বয়সে মাত্র ১০০ ভোটের কারণে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে হেরে যাওয়া, ৪৯ বছর বয়সে সিনেটর নির্বাচনে হেরে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।

জীবনের ৪৯টি বছর প্রায় প্রতিটি কাজে ব্যর্থতার পর ৫১ বছর বয়সে ১৯৬০ সালে আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন আব্রাহাম লিংকন। সেই আব্রাহাম লিংকন বিশ্বের বুকে এক ইতিহাসের নাম। পূর্বের কোনো ব্যর্থতাই তখন আর ব্যর্থতা থাকলো না। স্বেচ্ছায় মৃত্যু কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। দুঃখ কষ্ট আসতেই পারে। কিন্তু সুখী হওয়া তো আপনার হাতে। যেমনটি  আব্রাহাম লিংকন বলেছেন,“যে মানুষ যতটা সুখী হতে চায় সে ততটাই পারে। সুখের কোনো পরিসীমা নেই। ইচ্ছে করলেই সুখকে আমরা আকাশের সমান বড় করে উপভোগ করতে পারি”।

সমাজের নামকরা কিংবা অখ্যাত কোনো তরুণ কিভাবে, কোথায় এবং কেন আত্মহত্যা করেছেন তার ব্যাখ্যায় আমি যাব না। প্রয়োজন বোধও করছি না। কারণ জীবন থেকে পালিয়ে আত্মহত্যাকারী কাউকে কখনও বিখ্যাত করা আদৌ সম্ভব নয়। কিছু সময়ের জন্য সমবেদনা থাকতে পারে মাত্র। পৃথিবীতে সবচেয়ে সহজ কাজ হচ্ছে পালিয়ে যাওয়া। কিন্তু সে কাজে কোনো কৃতিত্ব নেই। শিরদাড়া সোজা করে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যান। সফলতা আসবেই। আপনি কেন অন্যের উপর রাগ, অভিমান, ঘৃণা করে আপনার নিজের জীবন শেষ করবেন? এত সস্তা নাকি আপনার জীবনের মূল্য!

লেখকঃ উপ-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।
[email protected]

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন