কে নেবে এই মৃত্যুর দায়?
রাজধানীর উত্তরার একটি মার্কেটে আগুন লেগে হতাহতের ঘটনায় আবারো প্রমাণ হলে মানুষের জীবন কতোটা অনিরাপদ। বিশেষ করে ঈদের কেনাকাটার এই মৌসুমে মার্কেট বা শপিং মল গুলোতে মানুষের ভীড় লেগে থাকে। সেখানে নিরাপত্তার দিকটিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত ছিল। তাহলে হয়তো এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা এড়ানো যেত। নিরাপত্তার বিষয়টিতে উদাসীনতার একটি চিত্রই পাওয়া গেল এই মর্মান্তিক ঘটনায়। এতে কারো কোনো অবহেলা বা গাফিলতি থেকে থাকলে সে ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ করারও কোনো বিকল্প নেই।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় উত্তরার ট্রপিকানা আলাউদ্দীন টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্সে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিপণিবিতানের লিফট ছিঁড়ে আগুন লেগে সাতজন নিহত ও অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশের রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সের পেছনেই আলাউদ্দীন টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্সের অবস্থান। ১৪ তলা ভবনটির ৬ তলা পর্যন্ত পোশাক, অলংকার, ইলেকট্রনিকস, প্রসাধনীর দোকানপাট। ওপরের তলাগুলোতে বিভিন্ন অফিস। একটা লিফট ছয়তলা থেকে ছিঁড়ে ভূগর্ভস্থ দ্বিতীয় তলায় পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শর্টসার্কিট থেকে আগুন ধরে যায়। ভবনটির কেন্দ্রীয় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছিল। আগুন ধরার পরে ওই কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাতেও বিস্ফোরণ ঘটে। পাঁচতলা পর্যন্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের বাতাস ঢোকা ও বের হওয়ার পথটিও বিস্ফোরণে ভেঙেচুরে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকে বলছেন, বেজমেন্ট মার্কেট কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো করে সংস্কার করেছে। সেখানে বিভিন্ন কার্যালয় তৈরি করেছে, যা ভবনের পরিকল্পনার মধ্যে থাকার কথা নয়।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নতুন নয়। এমনকি এই ভবনেই ২০১২ সালেও আগুন লেগেছিল। কিন্তু অগ্নি নির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সেখানে নেই। তাছাড়া লিফট ছিঁড়ে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। লিফট রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতি ছিল, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এ বিষয়েও তদন্ত হওয়া দরকার। যে সাতটি প্রাণ ঝরে গেল কে নেবে এর দায়। আগুনে পুড়ে যাওয়া আহতদের অবস্থাও করুন। কাউকে কোনো দায় নিতে হয় না বলেই একের পর এক এসব দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ ব্যাপারে আর কোনো অবহেলা কাম্য নয়। ঈদকে সামনে রেখে জনবহুল এলাকাগুলোতে সব ধরনের নিরাপত্তা জোরদার করাও অত্যন্ত জরুরি। জোর দিতে হবে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনার দিকেও।
এইচআর/এমএস