ছয়শ’ কোটি টাকা কি গচ্চা যাবে?
রাষ্ট্রের অর্থ গচ্চা যাওয়ার নানাবিধ উদাহরণ আছে আমাদের দেশে। সময় মত প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়াসহ অন্যান্য কারণে এবার ছয়শ’কোটি টাকা গচ্চা যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বৈদেশিক অর্থায়ন না পাওয়াসহ নয় কারণে স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে ৪০ উন্নয়ন প্রকল্পে। এর মধ্যে ৫টির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। মন্থর গতির ৩৫টি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু কাজের অগ্রগতি পাঁচ ভাগেরও নিচে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত (এডিপি) থাকলেও কাজ শুরুর আগেই বেশ কিছু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে প্রকল্পগুলো এডিপি থেকে বাদ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসব প্রকল্পের অচলাবস্থার জন্য নানাবিধ কারণ রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বৈদেশিক অর্থ না পাওয়া, দরদাতার অভাব, সময়মতো অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া ইত্যাদি। এ ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধনে বিলম্ব, জমি অধিগ্রহণে সমস্যা, যন্ত্রপাতি সংগ্রহে দেরি, সমীক্ষায় বিলম্ব, দাতাদের সম্মতি পেতে সময়ক্ষেপণ এবং দরপত্র প্রক্রিয়া দেরি হওয়াকেও অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে।প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। ইতিমধ্যে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা। এ অবস্থায় প্রকল্পগুলো বাতিল হলে বড় অংকের অর্থ এবং সময়ের অপচয় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য চূড়ান্ত বাতিলের আগে দ্রুতই প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
মন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠকের পর হয়তো প্রকল্পগুলোর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। কিন্তু এ থেকে এ বিষযটি পরিষ্কার যে কোথায়ও না কোথায়ও গাফিলতি ছিল যে কারণে প্রকল্পগুলো সময়মত বাস্তবায়ন করা যায়নি। যে কারণগুলো সামনে নিয়ে আসা হয়েছে সেগুলো সমাধানে সংশ্লিষ্টরা কতোটা দায়িত্বশীল ও আন্তরিক ছিলেন এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয়হীনতাসহ নানাবিধ কারণে অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়ে যায়। এতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ে, বাড়ে ব্যয়ও। মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারসহ আরো বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পে সম্প্রতি প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ও বরাদ্দ দুই-ই বাড়ানো হয়েছে। এই বাড়তি ব্যয়ও মেটানো হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। যা শেষ পর্যন্ত গিয়ে দেশের মানুষের ঘাড়ে গিয়েই চাপবে। এ অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে কারো কোনো গাফিলতি থাকলে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। কেন প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়লো এ ব্যাপারে গভীরভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। এবং অবশ্যই ভবিষ্যতে প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হওয়া অত্যন্ত জরুরি। রাষ্ট্রীয় অর্থ গচ্চা যাবে-আর কারো কোনো জবাবদিহিতা থাকবে না-এটা হতে পারে না।
এইচআর/এমএস