দুই দেশই যেন সমানভাবে উপকৃত হয়
আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে চালু হলো ভারত-বাংলাদেশ নৌ ট্রানজিট। কলকাতা বন্দর থেকে নৌপথে ট্রানজিটের প্রথম চালান নিয়ে একটি জাহাজ বাংলাদেশের আশুগঞ্জ বন্দরে এসে ভিড়ে। এটি থেকে পণ্য খালাসের মাধ্যমেই ট্রানজিট শুরু হওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। নৌ প্রটোকল চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের মধ্যে এটি হবে নিয়মিত ট্রানজিট। এর আগেও দু-একটি ক্ষেত্রে নৌ ট্রানজিট দেয়া হয়েছিল ভারতকে। তবে সেটা ছিল অনানুষ্ঠানিক। আনুষ্ঠানিকভাবে এবারই প্রথম মাশুলের বিনিময়ে ভারতের পণ্যবাহী জাহাজ বাংলাদেশের নৌ সীমানায় প্রবেশ করছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরো দৃঢ় ও মজবুত হবে বলে-এমনটিই আশা করা যাচ্ছে।
আশুগঞ্জ বন্দরে ভারত থেকে আসা পণ্য খালাস করার পর বাসযোগে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে আগরতলায় যাবে। ভারতের সাতটি বন্দর থেকে পণ্য আসবে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ বন্দরে। বাংলাদেশ থেকে সড়ক পথে পণ্য ভারতে যাবে। যেহেতু ভারত একটি বন্দর থেকে অন্য বন্দরে পণ্য পাঠাবে, তাই ভারতই ঠিক করবে কোন পণ্য ট্রানজিট হবে। তবে নিষিদ্ধ কোনো জিনিস পরিবহন করবে না তারা। সেটা নিশ্চিত করা হবে। ১৯৭২ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিতে ট্রানজিটের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। এরপর ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় ট্রানজিটের বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। তবে ফি নির্ধারণ, অবকাঠামো দুর্বলতাসহ নানা সমালোচনার কারণে ট্রানজিট নিয়ে কেউ আর এগোয়নি।
নৌ প্রটোকল চুক্তিতে বন্দর ব্যবহারের বিধান না থাকায় ভারতকে এতদিন তা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ২০১৫ সালের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে এলে এই চুক্তি সংশোধন করে বাংলাদেশ। এরপর গত বছর দিল্লিতে মাশুল নির্ধারণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
সর্বশেষ দুই দেশের আলোচনার মাধ্যমে ট্রানজিটের রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। ভারতের চেন্নাই, কৃষ্ণপত্তম, বিশাখাপত্তম, কাশিনাদা, প্যারা দ্বীপ, হলদিয়া ও কলকাতা নৌবন্দর থেকে পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়বে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, মংলা, খুলনা, পায়রা, নারায়ণগঞ্জ, পানগাঁও ও আশুগঞ্জ বন্দরে। বন্দর থেকে পণ্য খালাস হলে বাংলাদেশি ট্রাক সেই পণ্য নিয়ে যাবে ভারতে। পণ্যের শুল্ক, সড়ক ও বন্দর ব্যবহারের জন্য তিনটি পর্যায়ে ফি বা মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি মেট্রিক টন পণ্যের জন্য শুল্ক ফি ধরা হয়েছে ১৩০ টাকা, রোড চার্জ প্রতি কিলোমিটারে ৫২ টাকা ২২ পয়সা, বন্দর ব্যবহারের জন্য ১০ টাকা পাবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ১৯২ টাকা দিয়ে ভারতের এক মেট্রিক টন পণ্য বাংলাদেশ দিয়ে আবার ভারতে যাবে।
ট্রানজিট চালু হলে উভয় দেশই উপকৃত হবে। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় বিচ্ছিন্ন থাকার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ করে প্রতিবেশি দেশের সাথে তো নয়ই।বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশই আন্তদেশীয় যোগাযোগকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এরই ফল হিসেবে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে। হয়েছে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা ছিটমহল সমস্যার সমাধানও।
এরই ধারাবাহিকতায় আনুষ্ঠানিক ট্রানজিট চালু হলো। এ জন্য দু’দেশকেই আন্তরিক থাকতে হবে যাতে এটি সচল থাকে। উভয় দেশের স্বার্থ সমানভাবে রক্ষা না হলে এ ট্রানজিট টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। সে জন্য বৃহৎ প্রতিবেশি দেশ হিসেবে ভারতকে দায়িত্বশীল হতে হবে। ট্রানজিট চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রা লাভ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এইচআর/পিআর