পুঁজিবাজারমুখি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আস্থা রাখতে শুরু করেছে। আর তার প্রভাব কিছুটা বাজারের উপরেও দেখা যায়। রমজানের কারণে বাজার কিছুটা নিম্নমুখী থাকলেও পুঁজিবাজারের গতি এ সপ্তাহে বেড়েছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজেটে প্রত্যাশা না মেলায় তারা বাজারে লেনদেন কমিয়ে দিয়েছে। কিছুদিন ধরেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে নিশ্চুপ দেখা যাচ্ছে। বুধবার পর্যন্ত বাজারে দুটি সূচক সামান্য বৃদ্ধি পেলেও লেনদেন হয়েছে ৩৫৭ কোটি টাকার।
এদিকে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ করে ডিএসই’র শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ বিতরণ করেছে স্টক এক্সচেঞ্জ। যা বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আস্থা বাড়িয়েছে। বাজারকে গতিশীল করতে গণহারে আইপিও দেয়া বন্ধ করার প্রয়োজন। না হলে বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আস্থাহীনতা বাড়তেই থাকবে।
এদিকে পুঁজিবাজারের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডেরিভেটিভস গাইডলাইন অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। তবে নীতিমালা প্রণয়নে বিএসইসির পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী আগামী ২২ জুনের মধ্যে এই গাইডলাইন প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ডেরিভেটিভস মার্কেটের সঠিক গাইডলাইন আসলে তা যদি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে বাজারের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ডেরিভেটিভ আসলে বাজারে রিস্ক অনেক কমে যাবে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কম থাকলেও রমজানের কারণে বাজারে লেনদেন অনেক ধীর রয়েছে। এছাড়াও বাজেটে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা না মেলায় এখনও তার প্রভাব অনেক বেশি। বাজারের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্রিয় ভূমিকার সাথে প্রয়োজন সরকারের সহায়ক নীতি যা এবারের বাজেটে প্রতিফলন ঘটে নি। এদিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে একাউন্টিং ক্লারিটি উন্নয়নের জন্য আইসিএবির এবং ফাইনান্সিয়াল ইনস্টিটিউটের নৈতিকতা আরো বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও কোম্পানিগুলোর একাউন্টিংয়ের স্বচ্ছতা বাড়ানো হলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে।
কোম্পানির বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য আইসিএবির আরো গভীর ভাবে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। এদের একাউন্টিং প্রক্রিয়াকে আরো জোরদার করার দরকার যাতে করে একটা কোম্পানি সঠিক ফাইনান্সিয়াল স্ট্যাটাস বিনিয়োগকারীদের বোঝাতে পারে এবং বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির একাউন্সের উপরে আস্থা রাখতে পারে।
পুঁজিবাজারে এমনও অনেক কোম্পানি লেনদেন হচ্ছে যাদের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে চালু হওয়ারও সম্ভাবনা নেই তাদের শেয়ারও বেচা কেনা জোরে শোরে চলছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারী বিনিয়োগকারীদের বাজার সম্পর্কে জ্ঞানের পরিধি যত বাড়বে বাজার তত স্থিতিশীল হবে। বিনিয়োগকারীদের উচিৎ গুজবভিত্তিক শেয়ার না কিনে একাউন্টিং ভিত্তিক শেয়ারে লেনদেন করা। তাহলেই বাজারে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এরফলে বাজারও স্থিতিশীল হবে।
লেখক : বিজনেস এডিটর, এটিএন বাংলা। একাধারে সাংবাদিক, লেখক, সংবাদপাঠিকা এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালক। এছাড়াও অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার বিষয়ে রয়েছে তার সংবাদ ও টেলিভিশন টক শো। সদস্য, এফবিসিসিআই। কো-চেয়ারম্যান এসএমই, পাট, ইয়াং এন্টারপ্রাইনার ও পুঁজিবাজার বিষয়ক স্টান্ডিং কমিটি । বর্তমানে এশিয়ান প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশনের সার্টিফাইড প্রশিক্ষক এবং উদ্যোক্তা।
এইচআর/পিআর