ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

এসপি বাবুল, শোককে শক্তিতে পরিণত করুন

প্রকাশিত: ০৩:৪৬ এএম, ০৮ জুন ২০১৬

লেখাটা কিভাবে শুরু করবো ভেবে পাচ্ছি না। শোকে মূহ্যমান পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার তাঁর দুই শিশু সন্তানকে বুকে আগলে রেখে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। শিশু দু’টি অকালে অকস্মাৎ হারিয়েছে তাদের মমতাময়ী মা’কে। এ দৃশ্য সকলের চোখের পানি ঝরায়। আমি শুধু ভাবি, এসপি বাবুল তাঁর আদরের এই ধন দু’টোকে মানুষ করবেন কিভাবে! তিনি তো বাড়িতে পড়ে থাকার লোক নন। কর্তব্য তাকে সার্বক্ষণিক ব্যস্ত রাখে। তাকে আমি জানি যখন ঢাকায়  র‌্যাবে ডেপুটেশনে ছিলেন তখন থেকে। সৎ সাহসী, কর্মনিষ্ঠ, স্বল্পভাষী ও বিনয়ী এই দেশপ্রেমী পুলিশ অফিসারকে আল্লাহ মহাবেদনার ভার বইবার শক্তি দিন- এই দোয়া করি।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট যে এখন শুধু লেখক, ব্লগার, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ধর্মযাজক কিংবা ভিন্ন মতাবলম্বীরাই জঙ্গিদের টার্গেট নয়। এখন তাদের টার্গেট প্রশাসনও। স্পষ্ট করে বললে পুলিশ প্রশাসন। আরো স্পষ্ট করে বললে, পুলিশের যেসব কর্মকর্তা বা সদস্য জঙ্গিদের জন্য আতংক তারাই প্রধান টার্গেট। এই পুলিশ সদস্যদের ঘায়েল করতেই তাদের পরিবার পরিজনদের খুন করার পরিকল্পনা এঁটেছে জঙ্গিরা। তারই অংশ হিসেবে খুন করা হয়েছে অসম সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে। এই পুলিশ কর্মকর্তাই চট্টগ্রামে জঙ্গিদের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে হত্যার মধ্য দিয়ে জঙ্গিরা সম্ভবত এই বার্তা দিতে চেয়েছে- ‘যারা আমাদের ধরবে, রুখবে, আমাদের বিরুদ্ধচারণ করবে তাদের স্বজনদেরকেও আমরা ছাড়বো না।’ অপশক্তি মাত্রই এ ধরনের বার্তা দেয়। অপশক্তির শিকারের সংখ্যা হয়তো শুধু পুলিশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশার আলোকিত মানুষ এই তালিকায় থাকা স্বাভাবিক।

অপশক্তির এমন বার্তায় শান্তিকামীরা ক্ষণকাল বিভ্রান্ত হতে পারে, শান্তি অভিযান স্তব্ধ হয় না। সে জন্য কী আমরা হাতে চুড়ি পড়ে ঘরবন্দী হয়ে থাকবো? অবশ্যই না। আমরা শুভশক্তির অংশ। ভণ্ডামি, অনাচার, সহিংসতা, কখনোই শুভকর কিছু নয়। যারা সংহার করছে, যারা বাবুলের সোনার সংসার এলোমেলো করে দিল, মাতৃহীন করে দিল তার অবুঝ দুই সন্তানকে তারা ঘৃণ্য, অভিশপ্ত। দেশবাসী বলছেন ‘এদের ওপর আল্লাহর গজব পড়ুক।’ গজব পড়বেই। সজ্জনের সর্বনাশ করতে উদ্যতদের আল্লাহ কখনো বরদাশত করেননি। এবারও করবেন না। সে জন্যই সদাচারী পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলব- ‘আপনারা সহকর্মীর ট্রাজেডীতে কাঁদবেন না প্লিজ। শোককে শক্তিতে পরিণত করে জনসেবায় আত্মনিয়োগ অব্যাহত রাখুন।

বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘পুলিশের মনোবল যাতে নষ্ট হয় সে জন্যই জঙ্গিরা এ ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়েছে।’ বাবুল আক্তারকে একনজন চৌকস কর্মকর্তা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। এই ধরনের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড, জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটবে- মহিলাদের উপর এ ধরনের আক্রমণ হবে- তা ধারণার বাইরে ছিল।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরেকটি মূল্যবান কথা বলেছেন, ‘টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে।’ হ্যাঁ, অবশ্যই টার্গেট কিলিং। না হলে গত প্রায় দুই বছরে প্রায় অর্ধশত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে একই কায়দায়। যাদের মধ্যে রয়েছেন- ব্লগার, লেখক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিদেশি নাগরিক, ধর্মযাজক, পুরোহিত, ভিন্ন ধর্মের ব্যবসায়ী। যার সর্বশেষ শিকার এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু। কিন্তু পূর্বে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের পর যদি দ্রুততার সাথে এসব ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা যেত তাহলে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটতো না। পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মিতুও হয়তো অকালে এমন নৃশংসতার শিকার হতেন না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে যারা হত্যা করেছে তাদেরকে ধরে চেহারাটা দেখিয়ে দেবেন। আমরা শুধু চেহারাই দেখতে চাই না। চাই, এসব জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের সমূলে উৎপাটন। দেখতে চাই- এদের মদতদাতা, অর্থের যোগানদাতাদের মুখোশ উম্মোচন করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।

লেখক- সাংবাদিক

এইচআর/এবিএস

আরও পড়ুন