শেষটা ভালো হোক
ছয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের শেষ ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। ৬৯৮ ইউপিতে সকাল ৮টায় শুরু হওয়া এ ভোট বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। আর এর মধ্য দিয়েই শেষ হবে ইউপি নির্বাচন। এবারের ইউপি নির্বাচনের শুরু থেকেই ব্যাপক সহিংসতা লক্ষ্য করা গেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় অন্তত ১০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটা দুঃখজনক। তবে শেষ ধাপের নির্বাচনটি যেন ভালোভাবে সম্পন্ন হয় এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কথায় বলে শেষ ভালো যার, সব ভালো তার।
দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের তৃণমূল পর্যায়ের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ হচ্ছে এর শেষ ধাপের নির্বাচন। আশা করা গিয়েছিল উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে কমিশন সব ধরনের ব্যবস্থা করবে। কমিশন সে ধরনের আশ্বাসও দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন খুব একটা দেখা যায়নি না। বিশেষ করে নির্বাচনী সহিংসতায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানির বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না। নির্বাচন আমাদের দেশে উৎসব। সেখানে প্রাণহানি কেন ঘটবে? বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, সমর্থক, ভোটার সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এ অবস্থার উত্তরণ অসম্ভব।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকটের মূলে আছে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আস্থাহীনতা। সেটা জাতীয় নির্বাচনই হোক, আর স্থানীয় নির্বাচনই হোক। নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে, কিংবা কার অধীনে হবে- এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছে না। এরশাদের পতনের পর তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার জন্য। এরই মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বেশ কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো নির্বাচনই সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চদশ সংশোধনীর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায়ও বাতিল হয়েছে। এই অবস্থায়ই দেশে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পৌরসভা নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ার পর এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও দলীয়ভাবে হলো। এ অবস্থায় মনে রাখতে হবে যখন সংকটের মূলে নির্বাচন ব্যবস্থা তখন নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করতে হবে যে কোনো মূল্যে। কারণ এটা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। দেশের মানুষ নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ দেখতে চায়। আর এই নির্বাচন থেকে লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। গণতন্ত্রকে শক্তভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে সহিংসতামুক্ত অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
এইচআর/এবিএস