ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বিচক্ষণ ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সময়ের দাবি

প্রকাশিত: ০৩:৫৪ এএম, ০৪ জুন ২০১৬

সময় এসেছে, বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। নতুন অর্থ বছরের জন্য তার প্রস্তাবনা সমূহ নিয়ে চলছে প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ। অর্থমন্ত্রী বাজেট দিয়েছেন যে প্রেক্ষাপটে তা তার জন্য সুখকর নয়। বিনিয়োগে স্থবিরতা, বড় মেগা প্রকল্পে সরকারি বিনিয়োগ সত্বেও সামগ্রিকভাবে বিরাজমান অবকাঠামো স্বল্পতা, কর্মসংস্থানের অভাবে বেকারত্ব বৃদ্ধি, বিস্তর আয় বৈষম্য, দুর্নীতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতার চ্যালেঞ্জ নিয়েই আরো একটি বড় বাজেট তিনি উপস্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের জন্য এর চেয়ে বড় বাজেটও দরকার। কিন্তু সক্ষমতার বিচারে বারবার লক্ষ্যপূরণে বারবার ব্যর্থ হয়েও বড় বাজেটের পেছনেই ছুটছে দেশ।  

দেশে বেকারত্ব বড় আকার নিয়েছে। অর্থনীতিতে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগের সুযোগ কমেছে। বেড়েছে ব্যবসা করার খরচ। গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ নেই, জমি নেই। কিন্তু নেই তার চেয়ে বেশি যা, তাহলো আস্থা। দেশীয় বিনিযোগকারীরাই টাকা না খাটালে বিদেশীরা কেন আসবে যতই বিদেশে রোডশো করুকনা কেন বিনিয়োগ বোর্ড? রাজনতৈনিক স্থিতিশীলতা আছে, কিন্তু কোথায় যেন একটা শংকা। পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের কাছে স্বাভাবিক নয়। আর যারা টাকা লগ্নি করেছেন তারা গ্যাস আর বিদ্যুৎ সংকটে নাজেহাল। তাই দেখা যায় বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপি’র ২১.০৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে যা আগের অর্থবছরে ছিল ২২.০৭ শতাংশ। নতুন উদ্যোক্তা খুব কম, যা কিছু হয়েছে পুরোনো বড় উদ্যোক্তারাই করেছেন।

সরকারের লোকজন বলার চেষ্টা করেন বিনিয়োগ হচ্ছে, কারণ মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়ছে। কিন্তু তার কতটা বিনিয়োগর জন্য, আর কতটা অর্থ পাচারের জন্য সেটা বিচার্য। পরিসংখ্যান বলছে ২০০৪ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে দেশের বাইরে পাচার হয়েছে।

প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা লক্ষণীয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে নতুন অর্থবছরে আদায় করতে হবে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে  এনবিআরকে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। না পারায় সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার কোটি টাকা কমানো হলো। কিন্তু বাস্তবতা বলছে বছর শেষে প্রায় ৩৮ হাজার থেকে ৪০ হাজার কোটি কম আদায় হবে মূল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে নতুন অর্থবছরের শেষে ঘাটতি হবে ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

সক্ষমতার অভাব লক্ষণীয় প্রকল্প বাস্তবায়নেও।বড় প্রকল্প করছে সরকার। কিন্তু এসবের সময় লাগছে প্রচুর। ব্যয় স্বচ্ছতা নেই বললেই চলে। আমরা রাস্তা বা সেতু পাচ্ছি, কিন্তু দেরিতে এবং অনেক বেশি মূল্য দিয়ে। এবার দশ মাসে প্রকল্প বাস্তবায়নের হার মাত্র ৫০ শতাংশ, যা গত ১৫ বছরে সর্বনিম্ন।

প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতার আরেক নজির রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালক নিয়োগ, অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের খবরদারিতে রা্ষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোতে অব্যস্থাপনা এখর চরম অবস্থায় পৌঁছেছে। বড় কয়েকটি লুটপাটের ঘটনার বিচার না হওয়ায় এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনীতির রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছে। জনগণের অর্থে এসব দুর্নীতিপরায়ণ ও অদক্ষ প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দিয়ে যাচ্ছে সরকার যেমন করে দিয়ে চলেছে আরেক দুর্নীতিগ্রস্থ সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে অনুন্নয়ন ব্যয়ের ১৭ শতাংশ বৃদ্ধিজনিত প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি মেটাতে দেশীয় খাত থেকে ৬১ হাজার কোটি টাকার বেশি, বিদেশি খাত থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক অনুদান নিতে হবে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। দেশীয় খাতের নিশ্চয়তা থাকলেও নিশ্চয়তা নেই বিদেশি ঋণ আর অনুদানের বেলায়।

সরকার ৩লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে পারবেনা একথা নিশ্চিত। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা সক্ষমতার চেয়েও বেশি। রাজস্ব আয় কিছুটা বাড়ানো যেত যদি নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা যেতো। অর্থমন্ত্রীর মূল রাজস্ব পরিকল্পনায় ভরসার জায়গা ছিল মূসক আইনের উপর। ২০১২ সালে প্রণীত আইনটি এবারও বাস্তবায়ন করা গেলোনা। ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে সরকার পিছু হটেছে। ফিরে গেছে প্যাকেজ ভ্যাট সিস্টেমে। আসলে এই আইন বাস্তবায়নের প্রস্তুতিই ছিল না সরকারের। ফলে শেষ সময়ে এসে নতুন আইন বাস্তবায়ন এক বছর স্থগিত রাখতে হলো। ফিরে যেতে হলো ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনে। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন বাজেট প্রস্তাবনায় ৭৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি ভ্যাটের আয়োজন সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত। অনিশ্চিত বৈদেশিক উৎস থেকে প্রস্তাবিত ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণও। এমন বাস্তবতায় বছর শেষে ঘাটতি ৯৭ হ্জার ৮৫৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়ে যেতে এক লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি।

প্রবৃদ্ধির হার ৭.২ শতাংশ বড় কোন লক্ষ্য নয়। কিন্তু এতে পৌছুতে আমাদের দক্ষতা বা সক্ষমতা কতটুকু সেটিই বিচার্য। গত দুই বছরে জিডিপি শতাংশ হারে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে। আগামী বছর কীভাবে ব্যক্তি খাতে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ বাস্তবায়িত হবে, সেটিই বড় তাহলে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি কি করে হবে, বিনিয়োগই কি করে হবে, সরকারের চলতি ব্যয়ই বা কি করে মেটানো হবে, তা দেখতে হবে বছর জুড়ে নানা কর্মকাণ্ডে।

বিদায়ী অর্থবছরের রাজস্ব কার্যক্রমে যে ব্যর্থতা তা স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এবং এও বলেছেন যে আগামী অর্থ বছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ‘অবশ্যই উচ্চাভিলাষী’। তবুও তার আশা ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত কর আদায়ে তিনি সফল হবেন। বাজেট নিয়ে প্রায় সব আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসছে রাজস্ব আদায়ের করুণ চিত্র। এনবিআর আগে পেরেছে। এখন পারছেনা কেন সেই উত্তর খোঁজা হোক নতুন বছরে। একটি বিচক্ষণ ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সময়ের দাবি।

istiaq-reja

এইচআর/এবিএস

আরও পড়ুন