পবিত্র রজব মাসের ফজিলত
আরবি চান্দ্রবর্ষের সপ্তম মাস হলো রজব। রজব শব্দের অর্থ সম্মানিত আর রজব হলো আল্লাহতায়ালার বিশেষ অনুগ্রহের মাস। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালার বিধান মতে আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বার মাস সেই দিন হতে যেই দিন তিনি আকাশ মণ্ডল এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।’ (সুরা আত তাওবাহ: ৩৬) পবিত্র কুরআনে যে চারটি মাসকে সম্মানিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, মাহে রজব তার একটি।
হাদিসে এসেছে, হজরত আবু বাকরা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবি (সা.) বলেছেন, বার মাসে বছর। তার মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক আর তা হচ্ছে- জিলক্বদ, যিলহজ, মহররম আর চতুর্থ মাসটি হল-রজব, যা জুমাদাল উখরা ও শা’বান মাসের মধ্যবর্তী মাস (সহিহ বুখারি)।
হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, যখন রজব মাস শুরু হতো, মহানবি (সা.) তখন এ দোয়াটি পড়তেন- আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়াবাল্লিগনা রমাদান। অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধি করে দিন (আলমুজামুল আওসাত)।
অন্যান্য মাসের মতো রজব মাসের জন্য বিশেষ কিছু নফল আমল রয়েছে, যা আমল করলে আমরা জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লাভ করতে পারি এবং জান্নাত লাভের পথ সুগম হবে। হাদিস পাঠে জানা যায়, যখন রজব মাস শুরু হত, তখন মহানবি (সা.) দুই হাত তুলে এ দোয়া পাঠ করতেন এবং সাহাবাদের পড়তে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবাও ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা ইলা শাহরির রমাদান’ (মসনদে আহমদ)। অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দাও এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রজব হলো আল্লাহর মাস, শাবান হলো আমার (নবীজির) মাস; রমজান হলো আমার উম্মতের মাস।’ (তিরমিজি)।
তাই বলা যায় মুমিন মুত্তাকিরা সম্মানিত রজব মাস থেকেই পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তারা রজব মাসেই একটি রুটিন তৈরি করে যে, পূর্বের রমজান থেকে আগত রমজানে কি কি নেক আমল বেশী করবে। গত রমজানে যদি একবার পবিত্র কুরআন খতম দিয়ে থাকে তাহলে এবার ইচ্ছা রাখে দু’বার দেয়ার। অর্থাৎ সব কিছুতেই মুমিন চায় পূর্বের তুলনায় বেশি ইবাদত বন্দেগিতে রত থাকতে। তাই একজন মোমেন রমজান আসার পূর্বে রজব মাস থেকেই নিজকে রমজানের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত করে তোলে। বাহ্যিকভাবে আমরা যেমন স্কুলকলেজের পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করার জন্য অনেক পূর্ব থেকেই নিজেকে গড়ে তুলি আর সব সময় মাথায় পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের চিন্তা ঘুরপাক করে ঠিক তেমনি যারা মুমিন তারা রমজানকে শ্বাগত জানানোর জন্য রজব মাস থেকেই তৈরি হয়ে থাকে।
আসলে সম্মানিত রজব মাস আমাদেরকে রমজানের ইবাদতের জন্য প্রস্তুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি মহানবিকে (সা.) রজব ও শাবান মাসে এত বেশি রোজা রাখতে দেখেছি, রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত রোজা রাখতে দেখিনি। স্রষ্টার পরে মাখলুকের মধ্যে মহানবির (সা.) প্রথম স্থান হওয়ার পরেও তিনি রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে রজব মাস থেকে রোজা রাখা শুরু করতেন।
তাই আমরাও যদি এই রজব মাস থেকে পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতি নিতে থাকি আর আল্লাহর কাছে দোয়া করতে শুরু করি যে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সুস্থ রাখ আমি যেন আগত রমজানে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী ইবাদত-বন্দেগি, দানখয়রাত, কুরআন পাঠসহ সব পুণ্য কর্ম বেশী বেশী করতে পারি।
এছাড়া হজরত রাসুল করিম (সা.) শাবান মাসেও অনেক বেশি ইবাদত করতেন আর তিনি (সা.) রমজান ছাড়াও প্রতি মাসে নফল রোজা রাখতেন আর বিশেষ করে রজব মাসে। আমরাও যদি মহানবির (সা.) সুন্নত অনুযায়ী প্রতি মাসে কয়েকটি করে নফল রোজা রাখি তাহলে রমজানের রোজা আমাদের জন্য আরো সহজ হবে।
এছাড়া আমরা যদি মনের সব দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে রজব মাস থেকেই রমজানের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করি তাহলে আমাদের সব ইবাদত বন্দেগি হবে প্রশান্তিময়।
তাই আসুন, পবিত্র মাহে রমজানকে স্বাগত জানাতে এই রজব মাস থেকেই নিজেকে পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করে নেই।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে সম্মানিত রজব মাসের তাৎপর্য বুঝার এবং এর ওপর আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক, ইসলামি চিন্তাবিদ।
[email protected]
এইচআর/এমএস