ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

আনলিমিটেড স্যাবোটাজে সরকার

মোস্তফা কামাল | প্রকাশিত: ০৮:১৬ এএম, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

বান্দরবান টু সাভার-গাজীপুর। ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ থেকে পুরান ঢাকার সোহরাওয়ার্দী-কবি নজরুল কলেজ বা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ। নতুন ঢাকার তিতুমীর কলেজ অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজ। অটোরিক্শা থেকে কাভার্ডভ্যান। পাহাড় থেকে সমতল, পাতাল আর হাসপাতাল গোটা দেশে পরতে পরতে বিরতিহীন স্যাবোটাজ। ভাব নমুনায় স্পষ্ট, এ সরকারকে একদিনও শান্তিতে থাকতে না দেওয়ার পাকা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের এজেন্ডা চলমান।

বিনা জামানত এবং বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার প্রলোভনে ফেলে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অভাবি মানুষদের ঢাকায় এনে গণ্ডগোল পাকানোর অপচেষ্টা পর্যন্ত বাদ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপে এবারের যাত্রায় তা ভণ্ডুল হয়েছে। রোববার রাত থেকেই শাহবাগে জড়ো করা হয় বিভিন্ন বয়সী কিছু নারী-পুরুষকে। অহিংস গণ অভ্যুত্থান নামের ব্যানারে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় রোববার শেষরাত থেকে বাস-মাইক্রোবাসে আসতে থাকে মানুষ। বিচ্ছিন্নভাবে শাহবাগসহ আশপাশে অবস্থান নেয় তারা। বিনা সুদে এক লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়ার আশ্বাসে তাদের ঢাকায় আনা হয়।

ধরে ধরে ইস্যু তৈরির এ নোংরা পথে যে যেদিক দিয়ে পারছে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। একটি বিশাল গণ অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র মেরামত অনিবার্য কাজ। নইলে অভ্যুত্থানের প্রয়োজন হলো কেন? কোনটা মেরামত দরকার তা নাম ধরে ধরে বলার তো কোনো প্রয়োজন নেই! যেখানেই ত্রুটি সেখানেই মেরামত। সেই পথে পদে পদে বাধা। এ আয়োজনেই রাজধানীতে তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ডেমরার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ এলাকা। কলেজে ভাংচুর করে লুটপাট করা হয়েছে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র। তিন কলেজের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। রোববার ক্যাম্পাসে ভাংচুরের প্রতিবাদে সোমবার এভাবেই ডেমরার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ ভাংচুর করে সরকারি কবি নজরুল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে কলেজের ভেতরে গিয়ে ভাংচুর করে বিভিন্ন রুম। নিয়ে যায় জিনিসপত্র। এক পর্যায়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ভেতরে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের কিছু শিক্ষার্থীরা আটকে যায়। তাদের ওপর হামলা চালায় মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের সাথে যোগ দেয় ডেমরার স্থানীয়রাও।

গত ১৮ নভেম্বর ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ড. মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ। এর জেরে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় মাহবুবুর রহমান কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর আগে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মাঝে রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইস্যু বানাতে গিয়ে রিকশাওয়ালা-হকার-কাজের বুয়া-বস্তিবাসী কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আয়োজন এমনভাবে করা হচ্ছে, এক জায়গায় শ খানেক লোক জড়ো হয়ে বলছে, এটা জনগণের দাবি- সরকার সেটা মেনে নিচ্ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা ড্রাইভাররা দেখিয়েছে আচ্ছা রকমের খেল। টক অব দ্য টাউন হয়েছে তারা। প্রেস ক্লাব, শহীদ মিনার, আগারগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় আইনের লোকদের সাথে সংঘর্ষ বাধিয়ে হিম্মত দেখিয়েছে। হামলে পড়ে সেনাবাহিনীকে উসকানোর অপচেষ্টাও ছাড়েনি। দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা সদস্যরা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েই যাচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা থাকার পরও মাঠে যারপরনাই সতর্ক অবস্থানে থাকতে হচ্ছে তাদের। সময়টা খারাপ তথা স্পর্শকাতর। ব্যারাকের দায়িত্বের পাশাপাশি বাইরের এসব জরুরি কাজে হিসাব কষে এগোতে হয়। পাহাড়ি জনপদে অশান্তি তৈরির হোতাদের রোখা সেনাবাহিনীর আরেক দায়িত্ব। এরইমেধ্য পাহাড়ি এলাকার সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো নতুন করে আবারো বেপরোয়া। তাদের দম করতে গিয়ে বান্দরবানের রুমার কুত্তাঝিরি দুর্গম এলাকায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফের গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী। অভিযানে কেএনএফের গোপন আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেলে সেখানে তল্লাশি অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। এসময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে অনবরত গুলি ছুড়তে থাকে।

এ সময় কেএনএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলিতে তিনজন কেএনএফ সন্ত্রাসী ঘটনাস্থলে নিহত হয়। কয়েক জন সন্ত্রাসী গহীন জঙ্গলে পালিয়ে যায়। পরে ওই এলাকা তল্লাশি চালিয়ে সেনাবাহিনী কেএনএ সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত একটি চাইনিজ রাইফেল, দুটি একনলা বন্দুক, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, ইউনিফর্ম, বেতারযন্ত্র, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও ওষুধসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করে। পাহাড়ি এলাকায় সন্ত্রাসীদের তৎপরতার পেছনেও রাজনীতি ও কালো টাকার খেলা আছে। মাত্রাগতভাবে সমতলে আরও বেশি। ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের কয়েকজন জানিয়েছে, তাদের এ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের কর্মীরা অনুপ্রবেশ করেছে। তারাই মূলত নানা অপকর্ম ও বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে। মূল সড়কে নয়, অলি-গলিতে রিকশা চালানোর কথাও বলেন তারা। এমন নোংরা অভিযাত্রা পথে মাস খানেকের আদালতি ফয়সালা এসেছে। ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনায় এক মাসের জন্য স্থিতাবস্থা দিয়েছে চেম্বার আদালত। ফলে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে আপাতত কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। ১৯ নভেম্বর এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৯ নভেম্বর রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট। সেই আদেশে তিনদিনের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকমা চলাচল বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে যায় রাষ্ট্রপক্ষ। চেম্বার আদালতের এ পদক্ষেপে অটোরিকশা পলিটিক্সে আপাতত একটা ছেদ পড়েছে। কিন্তু, তা চূড়ান্ত ফয়সালা নয়।

এদিকে, বাজার পলিটিক্স ভেতরে ভেতরে আরও কদাকার করার আয়োজনও এগোচ্ছে অবিরাম। সরকারের যথাসাধ্য চেষ্টায় কুলাচ্ছে না। সরকারকে পেয়ে বসার মতো আচরণ বাজার সিন্ডিকেটের। ৬০ আর ৭০ এর দশকে স্নায়ুযুদ্ধকালে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে কব্জায় রাখতে প্রধান হাতিয়ার করা হয়েছিল খাদ্যপণ্য। বাজারে দাম যাতে না পড়ে সেজন্য গমসহ বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য তারা সমুদ্রেও ফেলে দিত। এরপর পিএল-৪৮০ এর আওতায় অনুগত দেশগুলোকে কিছু গম খয়রাতি সাহায্য দিতো। বহু বছর পরে আমাদের দেশে এই ফর্মুলা ব্যবহার করছে- খাদ্য সিন্ডিকেট। নতুন আলু বাজারে উঠছে। এই সময় কোল্ড স্টোরেজ খালি করতে মালিকরা পুরোনো আলু বিক্রি করে দেন। এর প্রভাব আলুর দামে পড়ে। দাম কমে যায়। অথচ এখন একদম উল্টাচিত্র।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন।

এইচআর/জেআইএম/ফারুক