ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ধনী হওয়ার পথে গরিব ও মধ্যবিত্তের ১৬টি ভুল

সাইফুল হোসেন | প্রকাশিত: ১০:০৬ এএম, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

ধনী হওয়া একটি আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য যা প্রায় প্রতিটি মানুষই জীবনে অর্জন করতে চান। তবে, ধনী হওয়ার জন্য শুধু আয় বাড়ানোই নয়, ব্যয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা এবং সঠিক বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। ধনী এবং দরিদ্রদের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য শুধুমাত্র আয় নয়, বরং এটি ব্যয় এবং বিনিয়োগের পদ্ধতিতেও রয়েছে। এই কারণেই অনেকে জীবনে যথেষ্ট আয় সত্ত্বেও ধনী হতে ব্যর্থ হন।

আমরা এখানে গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের ১৬টি সাধারণ ভুল তুলে ধরব, যা ধনী ব্যক্তিরা সচেতনভাবে এড়িয়ে চলেন। এই ভুলগুলো শুধুমাত্র আর্থিক লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এই ভুলগুলো এড়িয়ে চললে আপনি আর্থিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং ধনীর তালিকায় স্থান করে নিতে পারবেন।

১. ফ্যান্টাসি গাড়ি কেনা:

গরিব ও মধ্যবিত্তরা প্রায়ই চমৎকার ও ব্যয়বহুল গাড়ির প্রতি আকৃষ্ট হন। যদিও একটি সুন্দর গাড়ি কেনার মধ্যে কোনো দোষ নেই, তবে এটি একটি বড় দায়বদ্ধতা হয়ে উঠতে পারে। 'কেলি ব্লু বুক' এর ২০২২ সালের গবেষণা অনুযায়ী, গাড়ি কেনা এবং তার পেছনের খরচ (ফুয়েল, মেইনটেন্যান্স) ব্যক্তিগত আয়ের ২০%-এরও বেশি ব্যয় করে ফেলে। ধনী লোকেরা ব্যয়বহুল গাড়ি কেনার পরিবর্তে বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ দেন, যা ভবিষ্যতে তাদের আর্থিক স্থিতি বাড়াতে সাহায্য করে।

২. অপ্রয়োজনীয় মাদক ও সিগারেট কেনা:

অনেক দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত মানুষ তাদের অর্থ সিগারেট, অ্যালকোহল বা অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় মাদকদ্রব্যে ব্যয় করেন। এই অভ্যাসগুলো শুধু স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলে না, অর্থনীতিকেও ব্যর্থ করে দেয়। 'ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন' (WHO) এর মতে, ধূমপান ও অ্যালকোহল কেনার পেছনে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়। ধনী ব্যক্তিরা এই ধরনের অভ্যাস থেকে দূরে থাকেন এবং বরং সেই অর্থকে উন্নয়নের পথে ব্যয় করেন।

৩. ফাস্ট ফুডের প্রতি আসক্তি:

ফাস্ট ফুড শুধু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, এটি অর্থেরও অপচয়। গরিব ও মধ্যবিত্তরা প্রায়ই সস্তা ফাস্ট ফুডে বেশি ব্যয় করেন। 'সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন' (CDC) এর একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ৩৫% আমেরিকান প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একবার ফাস্ট ফুড খেয়ে থাকেন, যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য সমস্যা এবং চিকিৎসা ব্যয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ধনী ব্যক্তিরা স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেন এবং ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলেন।

৪. খারাপ পরিবেশে বসবাস:

গরিব ও মধ্যবিত্তরা প্রায়ই কম খরচে বসবাস করার জন্য অপরাধপ্রবণ এলাকায় বাস করেন। এটি তাদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। নিরাপদ পরিবেশে বিনিয়োগ করলে স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আর্থিক স্থিতিশীলতাও বজায় থাকে।

৫. ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকা:

গরিব মানুষদের একটি বড় সমস্যা হলো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকা। অর্থ বালিশের নিচে বা খাটের নিচে রাখা একটি বিপজ্জনক অভ্যাস, যা যে কোন সময় চুরি বা লুট হতে পারে। 'ওয়ার্ল্ড ব্যাংক' এর ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্লোবাল পপুলেশনের প্রায় ৩১% প্রাপ্তবয়স্ক এখনো কোনো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেনি। ব্যাঙ্কিং সুবিধা গ্রহণ না করলে সঞ্চয়ের সুযোগ হারানোর পাশাপাশি অর্থ চুরির ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

৬. টাকা সঞ্চয় না করা:

সঞ্চয় করা ধনী হওয়ার অন্যতম চাবিকাঠি। গরিব ও মধ্যবিত্তরা সাধারণত আয় পাওয়া মাত্রই সব অর্থ খরচ করে ফেলেন। অথচ ধনী ব্যক্তিরা তাদের আয়ের নির্দিষ্ট একটি অংশ সঞ্চয় হিসেবে রেখে দেন। 'ব্যুরো অব ইকোনোমিক অ্যানালাইসিস' (BEA) এর রিপোর্ট অনুসারে, ২০২১ সালে মার্কিন ধনীদের সঞ্চয়ের হার গড়ে ২০%-এরও বেশি ছিল।

৭. সামর্থ্যের বাইরে খরচ করা:

গরিব ও মধ্যবিত্তরা প্রায়ই তাদের সামর্থ্যের বাইরে খরচ করে ফেলেন, যা ঋণের বোঝা বাড়ায়। ধনী ব্যক্তিরা বরং সীমিত খরচ করেন এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা এড়িয়ে চলেন।

৮. নিজের উপর বিনিয়োগ না করা:

গরিব ও মধ্যবিত্তরা প্রায়ই নিজেদের দক্ষতা ও জ্ঞান বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দেন না। ধনী ব্যক্তিরা সবসময় নিজেদের শিক্ষা এবং ব্যক্তিগত উন্নয়নে বিনিয়োগ করেন, কারণ এটি ভবিষ্যতে তাদের আয় বাড়ানোর পথ খুলে দেয়। বিল গেটসের মতো ধনী ব্যক্তিরা সারা জীবন শেখার অভ্যাস বজায় রেখেছেন, যা তাদের সফলতার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।

৯. খারাপ আর্থিক ঝুঁকি নেওয়া:

অতিরিক্ত ঝুঁকি নেওয়া অর্থনৈতিক ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। গরিব ও মধ্যবিত্তরা প্রায়ই অধিক লাভের আশায় অনভিজ্ঞভাবে ঝুঁকি নেন, যা তাদের ঋণগ্রস্ত করে ফেলে। ধনী ব্যক্তিরা তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং সঠিক পরামর্শ ছাড়া ঝুঁকি নেন না।

গরিব ও মধ্যবিত্তরা প্রায়ই অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় ব্যয় করেন, যেমন টিভি দেখা বা সামাজিক মিডিয়ায় সময় কাটানো। ধনী ব্যক্তিরা তাদের সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করেন এবং ক্রিয়েটিভ কাজে জড়িত থাকেন।

১০. সঠিক যোগাযোগের অভাব:

গরিব ও মধ্যবিত্তরা অনেক সময় আর্থিক বিষয়ে পরিবারের সাথে আলোচনা না করে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, যা আর্থিক ক্ষতি ডেকে আনে। ধনী ব্যক্তিরা পরিবারের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন এবং আর্থিক ঝুঁকি কমিয়ে দেন।

১১. বিনিয়োগ না করা:

গরিব ও মধ্যবিত্তরা প্রায়ই তাদের অর্থ বিনিয়োগ না করে সঞ্চয় করে রাখেন। ধনী ব্যক্তিরা বরং স্টক মার্কেট, জমি বা অন্যান্য সম্পদে বিনিয়োগ করেন, যা দীর্ঘমেয়াদে তাদের সম্পদ বাড়ায়।

১২. আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ না করা:

ধনী হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হলো আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা। গরিব ও মধ্যবিত্তরা প্রায়ই কোনো নির্দিষ্ট আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করেন না, যার ফলে তারা কোনদিকে এগোচ্ছেন তা বুঝতে পারেন না। ধনী ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পনা করেন।

১৩. ঋণগ্রস্ত থাকা:

গরিব ও মধ্যবিত্তরা প্রায়ই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং সেই ঋণের জন্য বাড়তি সুদও দিতে হয়। ধনী ব্যক্তিরা ঋণ এড়িয়ে চলেন এবং নিজেদের খরচ সীমাবদ্ধ রাখেন।

১৪. বাজেটের অভাব:

বাজেট তৈরি না করলে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ধনী ব্যক্তিরা নিয়মিতভাবে বাজেট তৈরি করেন এবং তা অনুযায়ী খরচ করেন।

১৫. অর্থহীন সময় ব্যয়:

গরিব ও মধ্যবিত্তরা প্রায়ই অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় ব্যয় করেন, যেমন টিভি দেখা বা সামাজিক মিডিয়ায় সময় কাটানো। ধনী ব্যক্তিরা তাদের সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করেন এবং ক্রিয়েটিভ কাজে জড়িত থাকেন।

১৬. চ্যারিটিতে অর্থ ব্যয় না করা:

গবেষণায় দেখা গেছে, ধনী ব্যক্তিরা প্রায়ই চ্যারিটিতে অর্থ ব্যয় করেন। এটি কেবল সামাজিক দায়িত্ব নয়, এটি তাদের আর্থিক সচেতনতা ও মূল্যবোধকে উন্নত করে। গরিব ও মধ্যবিত্তরা অনেক সময় এই অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন না। গরিব ও মধ্যবিত্তদের প্রায়শই এমন অভ্যাস থাকে, যা তাদের ধনী হতে বাধা দেয়। তবে এই অভ্যাসগুলো এড়িয়ে চললে এবং আর্থিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে আর্থিক স্বাধিনতা অর্জন সহজ হবে।

লেখক: দি আর্ট অব পার্সোনাল ফাইনান্স ম্যানেজমেন্ট বইয়ের লেখক, কলামিস্ট, ইউটিউবার এবং ফাইনান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট।

এইচআর/জেআইএম