পানি আগ্রাসন: ভালো নয় লক্ষণ
কথিত নিম্ন-উচ্চতার ড্যাম ডম্বুরু ৩১ বছর আগে একবার খুলে দিয়েছিল ভারত। আর ঠিক এই বৃষ্টির দিনে ওই বাঁধ আবারো খুলে দিতে হলো কেন? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা পাবো ভারতের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মার বক্তব্যে। তিনি আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বলেছেন যে অতিবৃষ্টির কারণে ড্যামের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নের অঞ্চল বন্যার কবলে পড়েছে।
তার এই কথা প্রাথমিক চিন্তায় সত্য বলেই মনে হতে পারে। কিন্তু ডম্বুরুতে যে বাঁধটি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করছে (সেই বিদ্যুৎ থেকে ৪০ মেগাওয়াট আমাদের দেশে সরবরাহ করে এবং তার দামও নেয়। তিনি যে প্রচ্ছন্ন একটি হুমকি দিয়েছেন আমরা তা বুঝতে পারি। এটা বন্ধুসুলভ আচরণ নয় বরং দাদাগিরির ভাষা)। নিম্ন-উচ্চতার ড্যাম বলা হলেও আসলেই কি তা সত্য। একটি ড্যাম নির্মাণের জায়গা ঠিক করা হয় সেখানকার টপোগ্রামির ভূসংস্থান বা স্থান বিবরণ বিবেচনা করে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও নদীর প্রবাহ এবং তার গতিপ্রকৃতি, স্রোতের গতিবেগ, পুরো বছরের পানিপ্রবাহের ইউনিফায়েড হিসাব এবং সেখান থেকে কি পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে বা হতে পারে, তার প্রাক্কলন ইত্যাদির যোগফলের পরেই ড্যাম নির্মাণের কাজে হাত দেওয়া হয়।
ওই রকম একটি ড্যামের ওপর দিয়ে পানি ওভারফ্লো (উপচে পড়া) হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। দ্বিতীয়ত উজানে ওই কয়দিন বারিপাতের পরিমাণ রেকর্ড চেক করলেই পাওয়া যাবে আসল সত্য। আইন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক নদীর পানিপ্রবাহ ও তার প্রাকৃতিক বিষয়-আশয় প্রতিদিনই মনিটরিং করে ভাটির দেশগুলোকে জানানো ভারতে ইতিকর্তব্য। উজানের বৃষ্টিপাতের খবর আমরা জানি কিন্তু তা যে প্রবল বেগে ড্যামের ওপর আছড়ে পড়ে ওভারফ্লো করছে, এ সংবাদ তারা বাংলাদেশকে জানায়নি। সেই আশঙ্কার রেকর্ড যদি ড্যাম কর্তৃপক্ষ পানি উপচে পড়ার শঙ্কা আছে বা হচ্ছে তাহলে তারা নিয়ন্ত্রিতভাবে পানি ছাড়ার পদক্ষেপ নিতে পারতো।
সেই পদক্ষেপের প্রাথমিক কাজ হলো ড্যামের খিড়কিগুলো কম মাত্রায় খুলে দিয়ে ওভারফ্লো থামানো। কিন্তু আমরা ভিডিওতে দেখলাম ডম্বুরু ড্যামের সব দরজাই একসাথে খুলে দিয়েছে তারা এবং পানি এমন উচ্চগতিতে লাফ মেরে নিচে নামছে যে মনে হচ্ছে তারা হিমালয় থেকে লাফিয়ে ভাটিতে নামছে। কিংবা ড্যামের একটি দরজা/গেট খুলে দিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যেতো। সেটা করা হয়নি। তার মানে দাড়াচ্ছে প্রণয় ভার্মা যে প্রণয়ের বাণী শুনিয়েছেন, সেটাকে ফেক বলাই শ্রেয়। কিন্তু আমরা সেটা বলবো না। আমরা বলবো পানি আগ্রাসনকে শাক দিয়ে মাছ ঢেকে রাখার শামিল, তিনি সেটাই করেছেন। এতে তাদের ভেতর মহলের সত্যটা উঁকি দিচ্ছে। পলাতকা আশ্রিতার জন্য এইটুকু তারা করতে দ্বিধা করবেন না, তা আমরা জানি।
ভারতের এই জলাগ্রাসনের কারণ কী? বাহ্যিক কারণ এটাই প্রথমত মনে হবে। কিন্তু এর বাইরে, যাকে বলা উচিত পেছনেও আছে আরো রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বহুস্তরীয় অভিসন্ধি। এটা প্রণয় ভার্মা বেশ ভালোই জানেন। তাকে সে সব শেখানো/পড়ানো ও প্রশিক্ষিত হয়েছে। বিজেপি সরকার কি চাইছে সেটা এই ‘ঝি’কে মেরে মাকে (মাকে মানে বাংলাদেশকে শিক্ষা দিয়ে) বোঝানোর চেষ্টা করছে। তারা আটা, রুটি এবং ছাতু খেয়ে যে পাকা বুদ্ধির তহফিলদার হয়েছেন, আমরা ভাটির ভেতো বাংলাদেশিরা ভাত খেয়ে কিন্তু এতটা ভেজা ও নরমপ্রকৃতির হইনি।
আমাদের জল-হাওয়ার সঙ্গে সন্ধি নেই, আছে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক ইতিহাস। ১৯৭১ সালে সেটা কি আমরা পাকিস্তানি সামরিক সরকারের নেতাদের বোঝাইনি? আমরা কি ভারতের সন্ধি ও অভিসন্ধির রসালো প্রেমের ব্যাপারে সচেতন নই? ভারত বন্দনা ও প্রেমে রাজনৈতিক দলগুলো কেয়ারফুল আচরণ করলেও এখানকার মানুষ গত ৫৩ বছর ধরেই জেনে আসছে, দেখে শিখেছে যে প্রতিবেশী ভারত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র নয়। বরং ভারতের আগ্রাসনই তারা দেখেছে, শিখেছে। প্রায় প্রতিদিনই যে সীমান্তে বাংলাদেশি মানুষ গুলি করে হত্যা করছে বিএসএফ, স্বোচারি হাসিনা তা চোখ বন্ধ করে রেখে সময় পার করেছে। কারণ তিনি ও তার সরকার রাজনৈতিক দখলদার সরকার সিকিমের লেন্দুন দর্জি হতে চান।
এদেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ধসিয়ে দিয়ে যাতে কোমর সোজা করে দাঁড়াতে না পারে, সেই ব্যবস্থাই তিনি কয়েম করেছেন কতিপয় অর্থদুর্বৃত্তকে দিয়ে। তাদের মধ্যে এক নম্বরে আছেন এস আলম গ্রুপের মালিক মো. সাইফুল আলম মাসুদ (এস আলম)। তিনি সুকৌশলে ৭/৮টি ইসলামিক ব্যাংক দখল করে মাত্র ৯৫ হাজার কোটি (আজই টিভি নিউজে জানা গেলো, ২৩ আগস্ট, ২০২৪) টাকা ঋণ নিয়েছেন। দ্বিতীয়/তৃতীয়দের হাতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা, ৫০ হাজার কোটি টাকা এবং সহযোগী গ্রুপগুলো কি ১৬ বছর ধরে আঙুল চুষেছে?
বাংলাদেশ রাজনৈতিক আওয়ামী সরকার ভারতের পণ্যের বাজারে পরিণত করেছে ১৬ বছরে। সেটা দেশবাসী জানে। কিন্তু বিকল্প পণ্য নেই বলেই তারা আজও ভারতের পণ্য কেনে, ব্যবহার করে। তবে ভারতীয় পণ্য বর্জন শুরু হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়েছে। জনগণ সাড়া দিয়ে উৎসাহ জোগাচ্ছে। ভারতীয় পণ্যের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা যা হয়েছে, সেটা কার্যকর করে তোলা জরুরি বলে মনে করে দেশের মানুষ।
ভারতীয় পণ্য বর্জন শুরু হয়েছে, তাকে শূন্যের কোটায় নিয়ে যেতে হবে। সেটা করতে হলে ভিন্ন পথের আশ্রয় নিতে হবে—সেটা মানুষ জানে। কিন্তু পতিত হাসিনা সরকার ভারতের জন্য আমদানির দুয়ার উদার করে দেওয়ায় সস্তায় কেনা ও আনার ব্যাপারে প্রধান্য দিয়েছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে হাসিনার স্বৈরাচারী সরকার মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য-উপাত্ত সৃষ্টি করে পেঁয়াজ-রসুন চাল-ডাল ইত্যাদি আমদানির মচ্ছব বসায়। কোনো রকম ঘাটতির তথ্য দিলেই বলতো আমরা আমদানি করবো। তারা একবারও বলে না যে দেশেই উৎপাদন বাড়াবো। ভারতের জন্য শেখ হাসিনার মতো একজন বশংবদ প্রয়োজন ছিল। তাকে তারা সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে টিকিয়ে রেখেছিল ক্ষমতায়। এজন্য প্রকাশ্যে হাসিনা বলেছেন—আমি ভারতকে যা দিয়েছি, তা তারা সারা জীবনেও ভুলতে/অস্বীকার করতে পারবে না।
শেখ হাসিনা সত্য বলেছেন। তিনি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধূলিসাৎ করে দিয়ে ভারতকে সুবিধা দিযেছেন। সেই ঋণ তো ভারত অস্বীকার করতে পারেনি পারবে না। হাসিনার পলায়ন ও ভারতে আশ্রয়ের পর যে প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে তাকে আমরা মিডিয়ার আগ্রাসন হিসেবেই দেখছি। এখন আবার ডম্বুরু ও গজলডোবা ড্যাম ছেড়ে দিয়ে জলাগ্রাসন চালাচ্ছেন, যাতে দুস্থ ও নিপীড়িত হয়ে বাংলাদেশিরা মারা যায়। যাতে অর্থনীতির কোমর ভেঙে যায়। যাতে সরকার তার সাধ্যমতো উঠে দাঁড়াতে না পারে। যাতে এ দেশের মানুষ বাঁচতে না পারে।
আমি কি খুব ভুল কিছু বললাম? সোহেল তাজ (তিনি প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের ছেলে) তার ফেসবুক ভেরিফায়েড পাতায় বেশ কিছু মিল খুঁজে পেয়েছেন ভারতের সঙ্গে পলাতকা শেখ হাসিনার প্রণয়ের এবং রাশিয়ার পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেনের পতিত ও পলাতক ইয়ানুকোভিচের। এই ইয়ানুকোভিচের ক্ষমতাচ্যুত হয়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর পুতিন ইউক্রেনের ক্রিমিয়ায় আক্রমণ করে দখলিস্বত্ব কায়েম করে। পড়ুন সোহেল তাজের বিশ্লেষণ।
সোহেল তাজের দৃষ্টিতে এমন কয়েকটি মিলের জায়গা হলো
১. রাশিয়া-ইউক্রেনের মতো ভারত-বাংলাদেশও প্রতিবেশী দেশ।
২. রাশিয়া একটি পরাশক্তি যে নিজের অঞ্চলে আধিপত্য/প্রভাব বিস্তার করতে চায়। ভারতও একটি আঞ্চলিক পরাশক্তি যে তার নিজের অঞ্চলে আধিপত্য/প্রভাব বিস্তার করতে চায়।
৩. পুতিনের অনুগত ইয়ানুকোভিচকে ইউক্রেনে অন্ধভাবে সমর্থন দেয় রাশিয়া। একই ভাবে ভারত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে অন্ধভাবে সমর্থন দেয়।
৪. রাশিয়া ইউক্রেনকে একটি ‘ক্লায়েন্ট স্টেট’ বানিয়ে রাখার চেষ্টা করে। ভারতও বাংলাদেশকে একটি ‘ক্লায়েন্ট স্টেট’ বানিয়ে রাখার চেষ্টা করে।
৫. ২০১৪ সালে ইউক্রেনে (রাশিয়াপন্থি) জনস্বার্থবিরোধী কার্যক্রমের কারণে ইয়ানুকোভিচের বিরুদ্ধে জনগণ জেগে ওঠে এবং ‘অরেঞ্জ রেভোলুশনের’ মাধ্যমে তাকে উৎখাত করে। তারপর ইয়ানুকোভিচ পালিয়ে রাশিয়ায় চলে যান। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে দীর্ঘ ১৬ বছর (ভারতপন্থি) জনস্বার্থবিরোধী এবং নির্যাতন/নিপীড়নের কারণে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা জেগে ওঠে এবং ‘রেড রেভোলুশনের’ মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করে। শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান।
৬. রাশিয়ায় তাদের মিডিয়ায় ইউক্রেন সম্পর্কে নানা ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার শুরু করে। ভারত তাদের মিডিয়ায় বাংলাদেশ সম্পর্কে নানা ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার শুরু করে।
৭. ২০১৪ সালে ইয়ানুকোভিচের পলায়নের কয়েক মাসের মধ্যে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়। ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার পলায়নের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভারত তাদের বাঁধ ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ডুবিয়ে মারার মতো ঘৃণ্য কাজ করে এবং পাশাপাশি বিদ্যুৎ সাপ্লাই বন্ধ করে।
সোহেল তাজের এই বিশ্লেষণ কি আপনার ধাঁধা লাগা চেতনায় কিছুটা আলো ফেলেছে? তা ফেলতেই পারে। কারণ সোহেলের বোধ ও রক্তে আওয়ামী রক্তপ্রবহমান হলেও তিনি এবং তার বাবাসহ গোটা পরিবার নির্য়াতিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, প্রায় বিতাড়িত এবং কোনো রাজনৈতিক স্বীকৃতি দেয়নি মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা। তার পরিকল্পনা সোজাসাপ্টা। তিনি এবং তার পরিবার ভিন্ন আওয়ামী লীগের আর কেউ রাজনৈতিক ইতিহাসের অংশীদার থাকতে পারবে না। যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তারাও ক্রমাগত ফ্যাসিস্ট হাসিনার কনুইয়ের গুঁতো খেয়ে দূরে সরে গেছেন। তিনি কেবল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বড়ি উৎপাদন করে তা রাজনৈতিক বুলির মাঠে ছেড়ে ছিলেন। যে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কীর্তি তিনি গড়ে তুলেছিলেন ১২শত কোটি টাকা একবছরে ব্যয় করে, দেশের ভিভিন্ন শহরে বন্দরে স্থাপন করেছিলেন মুজিব মূর্তি, তা যে শিক্ষার্থীরা মেনে নেয়নি, সেটা আমরা দেখলাম অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের পর। তার পরিবার শেখ মুজিবের একরোখা ও একক সিদ্ধান্তের হাতে বলি হয়েছিলেন।
আপাতত আমরা যতই মনে করি না কেন যে অতিবৃষ্টির কারণে উজানের বন্যা হয়েছে। প্রতি বছরই এমনটা হয় বলে মনে করা যায়। কিন্তু ভাটির বাংলাদেশ বানের পানিতে আর্তজীবন যাপন করলেও এবারকার বানের পানির সঙ্গে যে উদগ্র হয়ে ড্যামের পানি আসছে, সেই পানি তো আগ্রাসনের। এই মৌসুমে ড্যামের গেট খুলে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে বিপদ মারাত্মক করে তোলা।
শেখ হাসিনার পতন ও তাদের স্বার্থহানির তরফেই যে ড্যামের গেট খুলে অন্তর্বর্তী সরকারকে হাবুডুবু খায়ানোর অপচেষ্টা, তা বিলক্ষণ বুঝেছে দেশের মানুষ। এবং সেই সঙ্গে দেশের কিশোর-কিশোরী যুবক-যুবতীরা যে পানি আগ্রাসনের মাধ্যমে ভাটির হিস্যাদারকে নাকানিচুবানি খাওয়ানোর অপচেষ্টা করছে, তা তাদের মনোবল আবারো দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করলো। আমাদের বন্ধুরাষ্ট্রটিই যে আমাদের শত্রু, সেটাও আমরা বুঝলাম। মওলানা ভাসানী বলেছিলেন ভারত যে আমাদের বন্ধু নয়, শত্রু, এটা যখন দেশের মানুষ বুঝবে, তখনই মূলত দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার চিন্তায় তরুণরা ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব বিজয়কে তাই দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসেবে চিত্রিত করেছি।
সোহেল তাজের মনে যে বোধ জাগ্রত হয়েছে তাদের বঞ্চনার সুবাদের এমন অনেক আওয়ামি লীগ নেতা-কর্মীর মনেও সন্দেহমুক্ত হয়ে এই সত্যই জারি হচ্ছে যে আওয়ামী লীগ না হলেও শেখ হাসিনা ইয়াকোভিচের মতো ভারতের দালাল। তিনি দেশের জনগণ থেকেই কেবল বিচ্ছিন্ন হননি, আওয়ামী জনতাকেও পরিত্যাগ করেছেন। তিনি পালিয়ে পাওয়ার আগে তার সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও আলাপ করেননি। তাদের একটি হত্যাযজ্ঞের অংশীজন করে দিয়ে তিনি জান নিয়ে পালিয়েছেন। তিনি যে আওয়ামী নেতাদেরও বিশ্বাস করতেন না, কেবল পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সোয়াত ও আর্মি, বিমান ও নৌবাহিনী এবং আনসারদেরই বিশ্বাস করতেন।
দেশবিরোধী হাসিনা একটি গ্রিক মিথের ইরেনিজ চরিত্রের মানুষ, যিনি জাতির ওপর প্রতিশোধ নিতেই ভারতের সাহায্যে দেশে এসেছিলেন। তিনি হাজার হাজার মানুষকে গুম করে হত্যা করেছেন, জাতিকে ভারতের সেবাদাসী রাজ্যে পরিণত করতে জোড় কদমে হাঁটছিলেন। তার কুকীর্তি দেশের মানুষ আপদমস্তক জেনেছে। ফলে ভারত পানি আগ্রাসন দিয়ে আমাদের দাবিয়ে রেখে হাসিনাকে পুনর্বাসন করতে পারবে না। ভারত সরকার বা মোদী সরকার এতটা বোকা নয় যে তারা হাসিনাকে ক্ষমতায় ফেরাতে নতুন করে সামরিক অর্থনৈতিক চাপ দেবে। তবে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের মতো করে ভারত বাংলাদেশের কিছু অংশ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করবে, যার আলামত আমরা এর মধ্যেই জেনেছি।
#০৮/২৪/২৪#
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, কবি, কলাম লেখক।
এইচআর/এমএস