ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

পুঁজিবাজারের সংস্কার প্রসঙ্গ

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা | প্রকাশিত: ০৯:৪৪ এএম, ২৪ আগস্ট ২০২৪

শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের পর নানা খাতে সংস্কারের প্রসঙ্গ বড় করেই আলোচনায় আসছে। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়াদি আছে। ব্যাংক খাতে গত ১৫ বছরে যে লুটপাট হয়েছে তা নিয়ে অনেক কথাই হচ্ছে। তবে একই সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে আরও অনেক ক্ষেত্র। এর একটি হলো শেয়ারবাজার।

সত্যি বলতে কি বাংলাদেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার ভেতরে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে শেয়ারবাজার। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হচ্ছে না। ব্যাংকখাতে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে অনেক কথা সামনে আসছে, কিন্তু শেয়ারবাজার নিয়ে আলোচনা খুব কম। দেশের দুটি শেয়ারবাজার অনেকদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে পারেনি। বড় কোনো বিনিয়োগের জন্য এর ওপর নির্ভর করাও সম্ভব হয়নি। আমাদের দেশের শিল্পপতি বা ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকের দ্বারস্থ হন। অথচ পৃথিবীর উন্নত দেশের মানুষ শেয়ারবাজারের কাছে যায় সেখান থেকে বিনিয়োগ নিয়ে আসার জন্য।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে অনেকদিন থেকেই উত্থান-পতন চলছে। আসলে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। ১০ বছর আগে শেয়ারবাজারে যে সংকট তৈরি হয়েছিল সেখান থেকে এখনো বের হওয়া সম্ভব হয়নি। যদি ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের দিকে লক্ষ্য করা যায় তাহলে দেখা যায়, প্রতিবারই শেয়ারবাজারে বড় ধরনের কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের কোনো বিচার হয়নি।

তারা বাজার থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এক হিসাবে বলা হয়েছে ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের ঘটনায় প্রায় ৫০ বিলিয়নের মতো ক্ষতি হয়েছিল শেয়ারবাজারে। এরপর থেকে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। মানুষ এখন পর্যন্ত শেয়ারবাজারে আর আস্থা রাখতে পারে না।

কিছুটা অন্য সমস্যাও আছে। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে যারা বিনিয়োগ করেন তারা এটিকে দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগ হিসেবে দেখেন না। তাদের ভাবনা হচ্ছে ডেইলি ট্রেডিংয়ের মতো। তারা শেয়ারবাজারে যাবেন, বিনিয়োগ থেকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অর্থ নগদ বাবদ নিয়ে আসবেন এবং যেটা কমেছে সেটি দিয়ে নতুন কিছু কিনবেন। ডেইলি ট্রেডিং বানিয়ে ফেলাটা শেয়ারবাজারের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে জন্য এটি একটি বড় বাজার বা দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগের জায়গা হতে পারছে না। সবাই স্বল্পমেয়াদি ট্রেডার, দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা নেই। ফলে বাজার নিম্নমুখী হলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা একধরনের আতঙ্কের মধ্যে পড়েন।

তারা বিনিয়োগ করেন ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে। ব্রোকারেজ হাউজ কেনা-বেচা দুদিক থেকেই কমিশন পায়। তাদের কোনো লস হয় না। শেয়ারবাজারটি প্রাতিষ্ঠানিক জায়গায় কেন নিয়ে আসা যাচ্ছে না এটি একটি বড় প্রশ্ন। যারা এখানে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে কারসাজি করলো, তাদের কেন বিচার হলো না এগুলো নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক প্রশ্ন আছে।

বর্তমান সময়ে যখন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিয়ে আলোচনা করি আমরা সেখানে শেয়ারবাজার নিয়ে কোনো আলোচনা বা বড় চিন্তাভাবনা দেখতে পাই না। আমাদের সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন আছে। সেটি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত হয়। কিন্তু বিগত সরকারের আমলে অধ্যাপক শিবলিরুবায়তের নেতৃত্বে এই কমিশন বাজারের সংস্কার, বাজারে ভালো মানের শেয়ার ফিরিয়ে আনা এসব ব্যাপারে কোনো বড় ধরনের পদক্ষেপ নেননি। তারা বিদেশে কতগুলো লোক-লস্কর নিয়ে রোড শো করেছে, অনেক টাকা খরচ করেছে, কিন্তু বাজারে গতি আনতে পারেনি। যে রোড শোগুলো চেয়ারম্যান করলেন সেগুলোর ফলাফল নিয়ে কোনো জবাবদিহিতাও ছিল না।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থার পাশাপাশি এখন তাই দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নতুন পর্ষদ গঠনের আগেই দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালকদের পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। গত মঙ্গলবার বিএসইসির পক্ষ থেকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) মৌখিকভাবে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। মৌখিক ওই নির্দেশনার ভিত্তিতে গত বুধবার পদত্যাগ করতে শুরু করেছেন দুই স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালকরা।

এখন প্রশ্ন হলো, স্টক এক্সচেঞ্জের নতুন পর্ষদ কীভাবে গঠিত হবে? দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ ১৩ সদস্যের। এর মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচালক মোট সাতজন। এর বাইরে সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন চারজন শেয়ারধারী পরিচালক, কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হন একজন পরিচালক। সংস্থাটির এমডি পদাধিকারবলে পর্ষদের সদস্য। দেখা যাচ্ছে স্বতন্ত্র পরিচালকরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। একই পরিস্থিতি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। স্বতন্ত্র পরিচালকদের পদত্যাগের মধ্য দিয়েই মূলত দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী বিএসইসির পক্ষ থেকে ডিএসইতে সরাসরি স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সুযোগ নেই। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ সমস্যার সমাধান জরুরি। কীভাবে বিষয়টির সুরাহা করা যায়, তা ডিএসইর অন্য পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক।

এইচআর/এমএস