ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ট্রানজিট নয় ভারত বিরোধী বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে বিএনপি

ড. সুলতান মাহমুদ রানা | প্রকাশিত: ১০:০৬ এএম, ০৭ জুলাই ২০২৪

 

আঞ্চলিক কানেকটিভিটির ক্ষেত্রে ট্রাানজিট ট্রানশিপমেন্ট খুব স্বাভাবিক বিষয়। বাংলাদেশ-ভারত ট্রানজিট প্রসঙ্গে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের নেতিবাচক বক্তব্য উপস্থাপিত হচ্ছে। এমনকি দেশ বিক্রি হয়ে যাওয়ার অভিযোগও তুলেছে বিএনপির মহাসচিব। সাধারণ মানুষ যারা সমালোচনা করছেন, তাদের অনেকেই না বুঝে করছেন। কিন্তু একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে যাচ্ছেন।

এমনকি যারা অপ্রপচার করছেন, তারা নিজেরাই জানে না একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে কী ধরনের সমঝোতা হতে পারে কিংবা হওয়া উচিত। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সাথে সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছে। একটু গভীরভাবে এবং ইতিবাচকভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, ট্রানজিট নিয়ে ভারতের সাথে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে সেটি বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় অগ্রসরমান একটি সিদ্ধান্ত।

সমালোচকরা বলছে, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের ট্রেন চলবে; কিন্তু বাংলাদেশের ট্রেনও ভারতের ভেতর দিয়ে নেপাল এবং ভুটান যাবে। কিন্তু এ বিষয়টি কেউই তুলে ধরার চেষ্টা করছে না। আমরা যদি আরও একধাপ এগিয়ে বিশ্লেষণ করি, তাহলে ক‚টনীতির ভাষায় এই চুক্তি বাংলাদেশের জন্য হতে পারে অন্যতম দর কষাকষির মাধ্যম। বিভিন্ন অমীমাংসিত ইস্যুতে ‘বারগেইনিংটুল’ হিসেবে এটিকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

ভারতের সঙ্গে কানেকটিভিটি তো এমনিতেই আছে। আকাশ এবং জলপথে আছে। এমনকি স্থলপথেও অন্যভাবে এর কার্যকারিতা রয়েছে। এক সময় বাস চলাচল করতো না। এখন সেটা হচ্ছে। তাতে কি বাংলাদেশের খুব একটা ক্ষতি হয়েছে? বরং অনেক দিক বিবেচনায় লাভ হয়েছে। বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রেক্ষাপটে এখন স্থলপথে একটি সমঝোতাভিত্তিক পারস্পারিক সম্পর্ক তৈরি হতেই পারে। আমরা যেকোনো সময়েই ইউরোপের উন্নত দেশসমূহের কৃষ্টি কালচার নিয়ে কথা বলি, উদাহরণ দেই। আমরা নিজেরাও চাই দেশকে ইউরোপের কাতারে নিয়ে যেতে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে দাবি উঠেছে যে সার্কভুক্ত দেশসমূহের একটি বৈশ্বিক সীমানা তৈরি করা যেতে পারে। যেখানে কোনো স্থলভাগের সীমানা বড় বাধা হিসেবে কাজ করবে না। আমরা অনেকেই চাই ভবিষ্যতে এ অঞ্চলেও ইউরোপীয় মডেলের অবস্থা তৈরি হতে পারে।

সমালোচকদের উদ্দেশে বলবো বাংলাদেশের জন্য এখন বড় ব্যাপার হলো, নেপাল এবং ভুটানে যাওয়ার একটা পথ তৈরি হলো। একইভাবে ওই দুই দেশেরও বাংলাদেশে আসার একটা পথ হলো। আমরা জানি, নেপালের সঙ্গে চীনের একটা রেলওয়ে কানেকটিভিটি তৈরি হয়ে গেছে। সেটা হলে এই ট্রেনের মাধ্যমেই কিন্তু মানুষ বাংলাদেশ থেকে নেপাল হয়ে চীন যেতে পারবে। বৈশ্বিক কানেকটিভিটির ক্ষেত্রে এখন রেলওয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে। ফলে আগামীতে এই পথ ধরে মিয়ানমার, থাইল্যান্ডও চীনের সঙ্গে যোগাযোগের পথ তৈরি হবে বাংলাদেশের।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের বুক চিরে ভারতের ট্রেন চলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশ নাকি নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এই লাইনে ভারত নাকি এখান দিয়ে আর্মস নিয়ে যাবে। কিন্তু সমঝোতা স্মারকে এমন কিছুই নেই। বরং আর্মসসহ এ জাতীয় কিছুই পরিবহণ করা যাবে না উল্লেখ আছে। এ নিয়ে একটা কল্পিত ঝুঁকির ভয় দেখানো হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

এমনকি অনেকেই বলছে, দেশ বিক্রি হয়ে যাবে। কিন্তু একটি দেশেকে ট্রানজিট সুবিধা দিলেই যদি দেশ বিক্রি হয়ে যায়, তাহলে ইউরোপের দেশগুলো এক অপরের কাছে কি বিক্র হয়ে গেছে? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া ইউরোপের ঘুরে দাঁড়ানো এবং আজকের পর্যায়ে আসার পেছনে এ অবাধ কানেক্টিভিটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে। শুধু তাই নয়, এর ফলে ইউরোপীয় দেশগুলোর নিরাপত্তা আরও জোরালো হয়েছে।

বাংলাদেশের ক‚টনৈতিক পলিসি হচ্ছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়। ‘ডিজিটাল অংশীদারিত্ব’ এবং ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ‘সবুজ অংশীদারিত্ব’ বিষয়ক দুটি সমন্বিত রূপকল্পকে সামনে রেখে কাজ করতে বাংলাদেশ-ভারত সম্মত হয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে আরও চাঙা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে এই ট্রানজিট সুবিধা। কাজেই বিষয়গুলোকে যৌক্তিক বিবেচনায় আনতে হবে।

বিএনপি যে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে- সেটিও তাদের এক ধরনের ভুল রাজনীতি। রাজনৈতিক উদ্দেশে বক্তব্য-বিবৃতি না দিয়ে দেশের উন্নয়ন তথা বৈশ্বিক উন্নয়নের নিজেদের শামিল করতে আরও কী করণীয় সে বিষয়ে কথা বলা দরকার। তবে বিএনপির সোচ্চার হওয়া দেখে যেটা মনে হচ্ছে, তারা ট্রানজিট নয় ভারত বিরোধী বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে।

লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

এইচআর/এমএস