ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের উন্নয়ন

সকল ধর্মের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধাশীলের নিদর্শন

তাপস হালদার | প্রকাশিত: ০১:৫৩ পিএম, ১৫ জুন ২০২৪

ঢাকেশ্বরী মন্দির বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির।হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উপাসনালয়।সারা বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে মন্দিরটি। জাতীয় পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হওয়ার কারণে সারা দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতারা এখানে নিয়মিতই আসেন।জাতীয় মন্দির হওয়ার কারণে দেশ-বিদেশের পর্যটকদেরও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকেশ্বরী মন্দির। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিংবা মরিশাসের রাষ্ট্রপতি পৃথ্বীরাজ সিং রূপন বা বিশ্বের হিন্দুধর্মের শীর্ষ ব্যক্তিরা বাংলাদেশ সফরকালে একবার হলেও ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পদার্পণ করেন। এজন্যই দেশ-বিদেশে এই মন্দিরের আলাদা একটা গুরুত্ব রয়েছে।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাস একসময় সুখকর ছিল না। পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরও বি়ভিন্ন সময়কালে বারবার দুর্বৃত্তদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। পাকিস্তান সৃষ্টির পরই ১৯৫০ সালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হামলা হয়,স্বর্ণালংকার লুট হয়। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের শাসনামলের শুরু এবং ১৯৬৪ সালের দাঙ্গার পর বেশ কিছুটা সময় মন্দিরে পূজা অর্চনা বন্ধ থাকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মন্দিরটি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মন্দিরের অর্ধেকের বেশি ভবন ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।প্রধান ভবনটি দখল করে পাক হানাদার বাহিনী গোলাবারুদ রাখার গুদামে পরিনত করে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ঢাকেশ্বরীতে হারানো গৌরব ফিরে আসে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ আনন্দের সাথে পূজা অর্চনা শুরু করে। কিন্তু জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের পরই ১৯৭৫ সালের ২৫ নভেম্বর মন্দিরে আবারও হামলা চালানো হয়।সামরিক শাসনামলে ১৯৮৩ সালে মন্দির লুট ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ১৯৯০ সালে এরশাদের আমল ও ১৯৯২ সালে খালেদা জিয়ার আমলে ঢাকেশ্বরী মন্দির সহ সারা দেশে মন্দিরে হামলা সহ আগুন দেয়া হয়। একই ঘটনা ঘটে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর। তখন জগন্নাথ হলের ছাত্রলীগের নেতারা সাধারণ ছাত্রদের সাথে নিয়ে প্রায়শই মন্দির পাহারা দিতো। প্রতিটি সময়ই সহযোগিতার হাত নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা।

বাঙালির হাজার বছরের যে ঐতিহ্য হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান একসাথে মিলে মিশে সম্প্রীতির বন্ধনে বাস করার প্রচলন ছিল, সেটা শেখ হাসিনার আমলে আবার ফিরে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আশ্বস্ত করে বারবার বলেছেন,‘আপনারা নিরাপদে যার যার ধর্ম পালন করবেন। কারা সংখ্যায় বেশি,কারা কম, সেটা বড় কথা নয়। যে যার ধর্ম উৎসবের সঙ্গে স্বাধীন ভাবে পালন করবেন। সেটা নিশ্চিত করা নিয়েই বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’

১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে জাতীয় মন্দিরের মর্যাদা দেয়া হয়। এবং নাম পরিবর্তন করে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির রাখা হয়।তখন মন্দির সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় এবং হিন্দুরা নির্বিঘ্নে পূজা অর্চনা করার সুযোগ পেয়েছে। আবার ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আস্থার জায়গা তৈরি হয়। ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ সারা দেশের মন্দিরে শান্তিপূর্ণ ভাবে মহাসমারোহে পূজা অর্চনা শুরু হয়েছে,যা এখন দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ঢাকেশ্বরী দেবীর প্রতিমা যেখানে স্থাপিত সেসব জায়গা ঘিরে ভাওয়াল রাজার আমলের শেষদিকে মন্দিরের জন্য ২০ বিঘা জায়গা দেবোত্তর ভূমি হিসেবে রেকর্ডভূক্ত হয়।সেই দেবোত্তর ভূমি একশ্রেণির ভূমি দস্যুরা দখল করে অবৈধ বস্তি ও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল।যার কারণে মন্দিরের প্রবেশ পথ খুবেই সরু ও জরাজীর্ণ ছিল। এতে করে মন্দিরের পবিত্রতা যেমন নষ্ট হতো, অন্যদিকে ভক্ত ও পর্যটকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা থাকতো। প্রধানমন্ত্রীর কাছে মন্দির কমিটির দাবি ছিল দ্রুত এই জায়গাটুকু পুনরুদ্ধার করে মন্দিরের সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা।কিন্তু এই জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলা ছিল। প্রধানমন্ত্রী ভালো করেই জানেন,মামলা নিষ্পত্তি করে এই জমি ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। তখন তিনি বিকল্প পথে গিয়ে মোটা অংকের টাকা দিয়ে আপোস মীমাংসা করে মন্দির কমিটির হাতে জমিটি ফিরিয়ে দেন। ২০১৮ সালে দুর্গা পূজার উপলক্ষ্যে ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্দির কর্তৃপক্ষকে জমি উপহারের ঘোষণা দিয়ে বলেন,‘এই ঢাকেশ্বরী মন্দিরে জমি নিয়ে একটা সমস্যা ছিল। ইতোমধ্যেই সেই সমস্যা আমরা সমাধান করে ফেলেছি। বাকি কাজটা আপনাদের ওপরই নির্ভরশীল।’

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী মন্দিরের দক্ষিণ-পশ্চিমের দেড় বিঘা জমি বুঝে পেয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী শুধু জায়গা ফিরিয়ে দিয়েই দায়িত্ব পালন শেষ করেননি। এবং মন্দিরের আধুনিকায়নের জন্য ১০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। যার উন্নয়ন কাজ এখনো চলমান রয়েছে। এখনকার সুবিশাল মন্দির এরিয়া শেখ হাসিনারই অবদান। আমাদের প্রত্যাশা যতই জটিল হোক,আরো যেসব বেদখল জমি রযেছে,সেগুলোও প্রধানমন্ত্রীর স্পর্শে একদিন দখলমুক্ত হয়ে মন্দির কর্তৃপক্ষ ফিরে পাবে।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আদালা একটা আবেগ ভালোবাসা রয়েছে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি প্রতিবছর স্ব শরীরে মন্দিরে উপস্থিত হয়ে ভক্তদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এবং যখন যা লাগে তাই করে দেন। প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় অনুযায়ী,মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিনামূল্যের ক্লিনিকটা পুনরায় চালু করা হবে। সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে আধুনিক মানসম্মত চিকিৎসা দেয়া হবে। এছাড়া ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে পূজারীদের সুবিধার্থে একটি লিফটসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান আছে।

আওয়ামী লীগ সরকার সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষদেরও সমান গুরুত্ব দেয়। সকল ধর্মীয় উপাসনালয় সংস্কার,ধর্মীয় শিক্ষা প্রচারের ক্ষেত্রে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য ধারাবাহিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার মসজিদ ভিত্তিক যেমন গণশিক্ষা চালু করেছে,ঠিক মন্দির ভিত্তিক ধর্মীয় শিক্ষাও চালু করেছে।সেবায়েত– পুরোহিতদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রত্যেক ধর্মের জন্য আলাদা আলাদা কল্যাণ ট্রাস্ট চালু করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানা শাসনামলে দেশের উন্নয়নের সাথে দেশের সকল সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয় গুলোর অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ হাজার হাজার মন্দিরের উন্নয়ন ও সংস্কার করা হয়েছে।

বাঙালির হাজার বছরের যে ঐতিহ্য হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান একসাথে মিলে মিশে সম্প্রীতির বন্ধনে বাস করার প্রচলন ছিল, সেটা শেখ হাসিনার আমলে আবার ফিরে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আশ্বস্ত করে বারবার বলেছেন,‘আপনারা নিরাপদে যার যার ধর্ম পালন করবেন। কারা সংখ্যায় বেশি,কারা কম, সেটা বড় কথা নয়। যে যার ধর্ম উৎসবের সঙ্গে স্বাধীন ভাবে পালন করবেন। সেটা নিশ্চিত করা নিয়েই বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’

ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ সারাদেশে মন্দির নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর এতো অবদান থাকার পরও ধর্মীয় সংগঠনের নামে কিছু মুখোশধারী বিএনপির এজেন্টরা উন্নয়ন নিয়ে মিথ্যে বদনাম করছে,যা গভীর ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়।এরা সমাজের অতি ক্ষুদ্র একটা অংশ,এদেরকে সম্মিলিত ভাবে প্রতিহত করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর যেসব উন্নয়ন করেছেন, সেগুলো জনগণের মাঝে তুলে ধরে,মিথ্যার সমুচিত জবাব দিতে হবে।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা ও কলামিস্ট।
haldertapas80@gmail

এইচআর/এএসএম

আরও পড়ুন