ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

সরকার কি জনগণের?

ড. মাহবুব হাসান | প্রকাশিত: ০৯:৪৮ এএম, ২৬ মে ২০২৪

 

সরকারের প্রশাসনিক আচরণ দেখে এটাই মনে হচ্ছে যে সরকার জনগণের নয়। এ সরকার আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগ ভোটে জিতে ( এনিয়ে তর্ক-বিতর্ক আছে। মিথ্যা-সত্যের মিশেল আছে) ক্ষমতায় গেছে। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে সরকার জনগণের রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে তর্ক তুলেছে বিভিন্ন ইস্যুতে। ওই সব বিতর্কের মীমাংসা কখনোই করে না সরকার বা প্রশাসন, তা ঝুলিয়ে রাখে। ঝুলিয়ে রেখে দেখার বা বোঝার চেষ্টা করেন যে জনগণ ক্ষেপে যায় কি না। তারপর সেই জনগণ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে কি না। প্রতিবাদ করলে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হয়। বিএনপির নানামাত্রিক গণবিক্ষোভের সময় ১৭টি প্রাণ হরণ ছিল চরম অন্যায় অপরাধ। কারণ ওই জনগণ তাদের ওপর সরকারি দমন ও পীড়নের প্রতিবাদ করতেই গণমিছিল বের করেছিল। কিন্তু সরকারের বুলি হচ্ছে প্রতিবাদী মিছিলকারীরা সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করছিল।

আইনশৃঙ্খলা বিনাশ করছিল, তাই (গুলি করে মানুষ হত্যার কথা তারা বলে না। ) স্থবির বা জড়বস্তুর চেয়ে মানুষের মূল্য যখন কম হয় সরকারের কাছে, তখন এই ধরনের হত্যাযজ্ঞ চালায় সরকার। কিন্তু একবারও এটা ভাবে না যে মানুষকে খাদ্যশস্যের দাম কমানোর জন্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকে সক্রিয় করতেই আন্দোলন ও মিছিলের মতো গণতান্ত্রিক অধিকার গ্রহণ করে।

সরকার তখন ওই জড়বস্তু নামক ‘জনগণের সম্পদ’ রক্ষার জন্য গুলি করে প্রতিবাদী মানুষ হত্যা করতে হয়। আমাদের তথাকথিত নির্বাচিত সরকারের রাজনৈতিক নাটকগুলো এমনই। অতীতের সব সরকারের আচরণ ও গত ১৫ বছরের আওয়ামী সরকারের আচরণের মধ্যে কোনোরকম পার্থক্য নেই। তবে এই ১৫ বছরের সরকার মানুষের ওপর যে-ভাবে শাসনকে শোষণ ও নির্যাতনের স্টিমে পরিণত করেছে, তার তুলনা বাংলাদেশে নেই।

কর্তৃত্ববাদী বলতে যা বোঝায়, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও সরকারের প্রশাসনিক আচরণের মধ্যে কোনো ফারাক খুঁজে পাওয়া যায় না। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। তিনি সেতু, সড়ক পরিবহন মন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদক, ওবায়দুল কাদের গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা ঢুকতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি কি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা? নাকি মুখপাত্র? যখন তিনি এই কথা বলছিলেন, মনে হয় তিনি ওই ব্যাংক পরিচালনার একজন। কিন্তু তিনি তো অর্থমন্ত্রীও নন, তিনি সেতুমন্ত্রী। তারপরও তিনি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক। ওই পজিশনে থেকে তিনি ওই নির্দশনামূলক কথা বলতে পারেন কি না, আমরা তা জানতে চাই। সব মন্ত্রীই যদি সব মন্ত্রণালয় বা সংস্থার বিষয় নিয়ে জনগণের সামনে বা সাংবাদিকদের কিছু বলতে চান, তাহলে তা `হ য ব র ল’ হবে। তাই যার দায়িত্ব তাকেই বলতে দেয়া উচিত। আগ বাড়িয়ে নাক গলানো মন্ত্রীর কাজ নয়। তিনি সরকারের রাজনৈতিক মুখপাত্র হতে পারেন, কিন্তু তাতে তিনি সাংসাদিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারিকে সমর্থন করে বক্তব্য দিতে পারেন না।

২.
কেন সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো জনগণের বাংকে ঢুকতে পারবেন না? জনগণের টাকার জিম্মাদার ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথাগুলো সেতুমন্ত্রী কেন বললেন তা আমাদের বোধে আসছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা যান সত্য তথ্য-উপাত্ত নেওয়ার জন্য। তারা ঋণ নেওয়ার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানে যান না। কিন্তু ঋণখেলাপিদের অবাধ যাতায়াত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। কেন তারা সেখানে যান? নতুন ঋণ যাতে পেতে পারেন, সেই তদবিরে? নাকি ঊর্ধ্বতন কর্তাদের ভজাতে, যাতে তারা যে ঋণী, তা অবলোপন করেন বা স্থগিত রাখেন, এই ধরনের দুর্নীতি কায়েমের উদ্দেশেই ঋণখেলাপিরা সেখানে যান।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, তাদের লক্ষ্য তিনটি—১. ব্যাংকের সার্বিক খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামানো, যা এখন ১০ শতাংশের একটু কম। ২. রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা, যা এখন যথাক্রমে প্রায় ২২ ও ৭ শতাংশ। ৩. ব্যাংকখাতে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য সীমার বাইরে দেওয়া ঋণ, বেনামি স্বার্থসংশ্লিষ্ট ঋণ এবং জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ঋণ বিতরণ শূন্যে নামিয়ে আনা। বেনামি স্বার্থসংশ্লিষ্ট ঋণ, জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ঋণ বিতরণ শূন্যে নামিয়ে আনা’ নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।

প্রথমত বেনামি ঋণ হয় কীভাবে? কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা ছাড়াই কি ঋণ দেওয়ার রীতি বা আইন আছে? নাকি এটা ব্যাংকারদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ঋণ? তারা কি বেনামেই ঋণ পেয়ে থাকেন? যা নাম ছাড়াই অনুমোদন ও বিতরণ করা যায়? কার বা কাদের স্বার্থে ওই ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করা হয়েছিল? দ্বিতীয় হচ্ছে জালিয়াতি ও প্রতারণা করেও অনেক পাপী মহাজন ঋণ নিয়েছেন এবং লা-পাত্তা হয়ে গেছেন। এসব ঋণ যাতে আর দেওয়া না হয়, সেই লক্ষ্য বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খুব ভালো সিদ্ধান্ত। কিন্তু একটা প্রশ্ন করতে পারি আমরা।

গত ৫০-৫৩ বছর ধরেই তো ওই জালিয়াতি ও প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এবং তারা জানেন যে ওই টাকা আর ফিরে আসবে না কোনোদিন। এভাবে বহু চতুর মানুষ শিল্পের মালিকানা পেয়েছেন বা ধনবানে পরিণত হয়েছেন। আমাদের অধিকাংশ ধনপতি মূলধন ছাড়াই ব্যাংকের ঋণ খেলাপ করে দিব্যি ধনপতি হয়েছেন। তারা সরকারের রাজনৈতিক তহবিলে চাঁদা (আসলে পড়ুন ঘুস) দিয়ে সদস্য, নেতা ও মন্ত্রী ইত্যাদি হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দল এ দাবি করতে পারবেন না যে তারা চাঁদা নেন না। তবে এটা বিস্ময়কর যে এত বছর পর কেন বাংলাদেশ ব্যাংক এই সিদ্ধান্তটি নিল এবং আগে কেন নেয়নি? আর সিদ্ধান্ত নিলেই যে ওই খাতে ঋণ দেবে না ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা, তা হলফ করে বলতে পারবেন কি তারা? ব্যাংক আইনের যে সংস্কার মাননীয় সংসদ সদস্যরা করেছেন, তাতে তো হরিলুটের দিগন্ত উন্মোচিত হয়ে আছেই- ওই চুরি ও জালিয়াতির সুযোগ রেখে, কেমনভাবে তা বন্ধ করবে বা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনবে বাংলাদেশ ব্যাংক?

ঠিক এখানেই আরেকটি প্রশ্ন। তাহলো, বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্তটি নিয়েছে, সেই অনুযায়ী কি তারা কাজ করছে? বা করবে? নাকি সিদ্ধান্তটি তালা মেরে রেখে কাজ করছেন? এ বিষয়ে যদি কোনো সাংবাদিক তথ্য জানতে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের কাছে যান বা যেতে চান, তাতে কেন আপত্তি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের? বা জনাব ওবায়দুল কাদেরই বা কেন তাদের সাহস ও রসদ জোগাবেন? অযোগ্য, অকর্মণ্য ও জাতিয়াতদের স্বার্থ উদ্ধারে রত কর্মকর্তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যাবে, এই ভয়ে তারা আপনাকে (ওবায়দুল কাদের) দিয়ে রাজনৈতিক /প্রশাসনিক চাপ সৃষ্টি করলো আমলানির্ভর প্রশাসন। এতে যে ওবায়দুল কাদেরের ইমেজ নষ্ট হলো জনপ্রতিনিধি হিসেবে, তা কি পুনরুদ্ধার করা যাবে কোনো দিন? যাবে না।

২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ ছিল সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার মতো, যা এখন ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ তথ্য অনেক আগেই চাউর হয়েছে সাংবাদিকদের হাতে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক যে সরকারের নির্দেশে নতুন নোট ছাপিয়ে দিয়েছে সরকারের মাত্রাতিরিক্ত টাকার চাহিদা মেটাতে, সে খবরও তো সাংবাদিকরাই জনগণকে জানিয়েছেন। আপনারা জনগণের উন্নতি ও উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন আর বেতন-ভাতা গাড়ি উপহার( পড়ুন ঘুস) দেবেন মিড লেভেলের আমলাদের, পুলিশও তাদের সঙ্গে যুক্ত আছে, সেই খবরের সত্যাসত্য যাচাই করতে সাংবাদিকরা বি.বি ব্যাংকে গেলেই তারা দোষী সাব্যস্ত হবেন?

এই তথ্য কি অসত্য? যদি অসত্য হয়, যদি বানোয়াট হয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক কেন প্রকৃত সত্য তথ্য সরবরাহ করে তা চালেঞ্জ করে না? কারণ ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। সত্য ও প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত ঢেকে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তাদের বিচার হওয়া উচিত। জনগণের সম্পদের তথ্য জনগণের প্রতিনিধিরা দেখবে? চমকালেন তো? সংবাদপত্র ও সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। সে অর্থে সাংবাদিকরা জনগণেরই প্রতিনিধি। তারা তথাকথিত চুরি-ডাকাতির নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী নন, তারা নিজেদের যোগ্যতায় সংবাদপত্রের কর্মী হয়ে উঠেছেন। সাংবাদিকের অধিকার যে কোনোরকম বেতনভুক কর্মকর্তার চেয়ে শতগুণ ওপরে। নির্বাচিত জননেতা যখন সরকারের কাছ থেকে বেতন-ভাতা নেন, তখন আর তারা জনপ্রতিনিধি থাকেন না, তারাও কর্মচারীতে রূপান্তরিত হন। আমাদের মাননীয় এমপিরা এখন বেতনভুক কর্মকর্তা, কিন্তু সেটা আমাদের জনগণ জানে না। আমাদের কর্মকর্তারাও জানে না যে দেশটির মালিক তারা, মানে জনগণ, আর বেতনভুক কর্মকর্তারা তাদেরই কর্মচারীমাত্র।

২০০৯ সালে ঋণ খেলাপি ছিল ২২হাজার কোটি টাকা। এখন, মানে ২০২৩/২৪-এ সেই খেলাপি অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা মাত্র। পনেরো বছরে আওয়ামি লীগ সরকার নিজেদের শিল্পপতি, ব্যবসাপতি, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ঋণ দিয়েছেন মাত্র ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এবং ওই পরিমাণ টাকা খেলাপ করেছেন তারা ঋণ নিয়ে।

আর যারা ঋণ নিয়ে ফেরত দিয়ে চলেছেন তারা কত লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন? ওই ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা আমাদের প্রতি বছরের জাতীয় বাজেটের ৭ ভাগের একভাগের সমান। ওই টাকা যদি খেলাপ না থাকতো, তাহলে কি আমাদের ঘাটতি বাজেট ঘোষণা করতে হয় সরকারকে? যারা খেলাপকারী তাদের সন্ধান বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঋণদাতারা খুব ভালো করেই জানেন ও চেনেন তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক শিকড়-বাকড়শুদ্ধ। তাদেরই নাকের ডগার ওপর দিয়ে খেলাপিরা ঘোরাঘুরি করেন, চাপাবাজি করেন, রাজনৈতিক সভার মঞ্চে দাপট করে বেড়ান। কেননা, তারা ঘুস দিয়েই ঋণ দিয়েছেন। তারা অস্বীকার করবেন, সেটা তারা করতেই পারেন। যদি অস্বীকার করেন, তাহলে খেলাপ হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনেন এবং বলেন, তারা ফেরত দিয়েছে।

আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের পথনকশাকে ইতিবাচকভাবে দেখি না। অতীতেও তারা এমন প্রোগ্রাম নিয়েছে, কিন্তু কার্যকর করতে পারেনি। সেটা কেন পারেনি, তার নানা রকম ব্যাখ্যাও দিতে পারে, কিন্তু তাতে জনগণের খোয়া যাওয়া টাকা ফেরত আসবে না। যখন খেলাপকারীদের সহায়-সম্পদসহ যাবতীয় সম্পদ বায়েজাপ্ত হবে এবং তাদের জেলে পোরা হবে, তখনই জনগণ বুঝবে যে, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক জনগণের। তারা জনগণের প্রকৃত সম্পদ রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজের মধ্যে আছে মুদ্রানীতি ও ঋণনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন; ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ এবং দেশীয় আর্থিক বাজারের প্রসার ও উন্নয়ন; দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা; মুদ্রা (ধাতব ও কাগুজে মুদ্রা) ইস্যু করা; পরিশোধব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান ইত্যাদি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজের মধ্যে মুদ্রানীতি, ঋণনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন অন্যতম। মুদ্রানীতি কেমনতর কাজ করছে তা বাজার দেখলেই অনুমান করা যায়। মানি ইনফ্লেশন যে ১০ শতাংশের ওপরে এটা অস্বীকার করার কোনো মানে নেই। জনগণের পকেটের/আয়ের ৭০ শতাংশই ব্যয় হয় নিত্যপণ্য চাল-ডাল-নুন-মরিচ-শাক-সবজি কিনতে। আপনারা তো ভুক্তভোগী কাচা পেপে কিনতে হয় ১শ টাকা কেজি দরে। ১০ টাকা কেজির কাচা পেপে এখন ১শ টাকায় কিনতে হয়। মুদ্রাস্ফীতি কেমনতর তাতেই বোঝা যায়। এখন ১শ টাকার মূল্যমান নেমে এসেছে প্রকৃতপক্ষে ১০ টাকায়।

আর ঋণ খেলাপের যে নীতিপ্রণয়ন করেছেন তারা, তাতে গড়ে দশ শতাংশেরও ওপরে আছে খেলাপকারী ঋণীদের অবস্থান। মানে দাঁড়ায় ঋণ নিয়ে তা খেলাপ করার প্রভুত সুযোগ সুবিধা ও আইনি ফাঁক রেখেই তারা তা প্রণয়ন করেছেন। ঋণের টাকাটা যদি কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত হতো তাহলে প্রণীত ঋণনীতি `বজ্র আঁটুনির ফসকা গেরো’র হতো না।

এই সমালোচনা ইতিবাচকভাবে নেয়া উচিত সরকার ও তার মন্ত্রী সহকর্মীদের। কারণ জনগণের টাকা খোলামকুচি নয়, এটা মনে রাখা উচিত। পৃথিবীর কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ঢুকতে হয় না সাংবাদিকদের। কারণ তারা কত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপ করেছে, সেই উপাত্ত তাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত দিয়ে আপডেট থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ঋণখেলাপির তালিকা নেই, কারা ঋণ নিয়ে ফেরত দেয়নি, তাদের পরিচয় লিপিবদ্ধ করা নেই। ফলে সাংবাদিকদের যেতে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্তার কাছে। চক্ষু মুদে থাকলেই যদি দুনিয়া বন্ধ থাকতো তাহলে সরকার চোখ বন্ধ করে শাসন চালিয়ে যান। আমরা আর প্রাণ দেওয়ার জন্য রাস্তায় মিছিল করে জীবন বিসর্জন দিতে রাজি নই। আপনারা জনগণের প্রশ্নে উত্তর বা জবাবদিহি করতে রাজি নন , কেন না, আপনারা তো জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে `স্যার ও মাননীয়’ হয়েছেন।

লেখক : কবি, সাংবাদিক, কলামিস্ট।

এইচআর/এমএস