ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

এই পৃথিবীর জন্য মায়া

এএইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন | প্রকাশিত: ০৯:৪১ এএম, ১৬ মে ২০২৪

পৃথিবী প্রত্যেক মানুষের প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট, কিন্তু প্রত্যেক মানুষের লোভ নয়- বলেছিলেন প্রিয় মানুষ মহাত্মা গান্ধী। আজকের পৃথিবী কেমন আছে? উত্তরে খুব ভালো আছে, তা বলার সুযোগ কম। কোভিড-১৯ থেকে মানুষ শিক্ষা নিতে পেরেছে কি না, তা বড় প্রশ্ন। উন্নত চিন্তায় পরিবেষ্টিত থাকা বিদগ্ধজনরা হালে বলছেন, "নৈতিকতার ধর্মগুলো ধীরে ধীরে মানুষের অভ্যাস থেকে সরে যাওয়ায় খোদ প্রকৃতি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠছে কি না- তা নিয়েও চিন্তা করার সময় হয়েছে।"

অন্যদিকে বৈশ্বিক রাজনীতির বৈষয়িক আদ্যপান্তের ফলাফল খুঁজতে অযাচিত জৈব অস্ত্রের অত্যধিক ব্যবহারে এই পৃথিবীর আয়ু কতদিন আছে, তা নিয়েও মানবগোত্রকে ভাবতে হবে। তবে সুপ্রিয় সত্তা গান্ধীজির চিরন্তন মতবাদে সিক্ত হওয়ার যথেষ্ট উপলক্ষ আছে। বায়োফিজিক্যাল পরিবেশের সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে সারাবিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা। চলুন, পাঠক এগোতে থাকি।

জার্মান শব্দ এনভায়রন থেকে পরিবেশ শব্দটির উৎপত্তি। অন্যদিকে বায়োফিজিক্যাল পরিবেশ প্রকৃতির কিছু সপ্রতিভ উপাদান ঘিরে সজীব এবং নির্জীব বিবর্তনের রূপ, যা পরখ করতে বাধ্য হয় জনমানুষ। সমুদ্র, বায়ুমণ্ডল এবং স্থলজ পরিবেশ অন্তর্ভুক্ত হয়ে বায়োফিজিক্যাল পরিবেশের সংখ্যা অযুত। মানুষের সংস্কৃতি তথা মানবিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক পরিবেশ এই পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব করছে বলে মনে করা হলেও অপরাপর জীব ও জড় পদার্থের সম্পর্ক জানান দেয় অন্য বার্তা। যেখানে জলবায়ু কোনো নির্দিষ্ট স্থানের সুদীর্ঘ সময়ের আবহাওয়ার গড় বা সামগ্রিক অবস্থার ফলাফল হিসেবে উত্তীর্ণ হয়।

খুব সহজ ও সরল দৃষ্টিতে আমার কাছে সম্ভাব্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় পরিবেশগত, মানুষের জৈব অস্ত্রের ব্যবহারে কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনের সুনির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে পৃথিবীর চেহারা পুরোটাই বদলে যাবে কি না, তা নিয়ে কিছুই বলতে চাই না। শুধু চাই, মানুষ ও অপরাপর জীবকুলের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক তৈরি হোক। যখন দেখব পাখি স্থলেও, জলেও, নীল আকাশে বরাবরের মতো উড়তে পারছে! তখন বুঝতে পারব, আমরা ভালো আছি।

জলবায়ু পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রায় দেড় যুগের অধিককাল সময় থেকেই ঘোষিত। তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রভৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত প্রকৃতি জলবায়ুর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার আওতাভুক্ত হলেও উল্লেখিত উপাদানগুলোর স্থায়ী পরিবর্তন হলে, তা জলবায়ু পরিবর্তন। যেমন, বাংলাদেশের জলবায়ু মোটামুটি উষ্ণ, আর্দ্র ও সমভাবাপন্ন। মৌসুমি বায়ুর প্রভাব অত্যধিক, সে কারণে, এখানকার জলবায়ু 'ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু' নামে পরিচিত।

এদিকে আজকের পৃথিবীতে সব জীবকুলকে অবশ্যই নিজেদের পরিবেশের পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থাকতে হচ্ছে। অক্সিজেননির্ভর উদ্ভিদ ও প্রাণী স্বস্তিতে তখনই থাকতে পারবে, যখন অক্সিজেন নিরপেক্ষ আণুবীক্ষণিক জীবের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইডের ভাঙনের সংঘটিত বাস্তবতা দৃশ্যমান হবে। বলাবাহুল্য, বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রার বর্তমান বৃদ্ধি প্রাথমিকভাবে মানুষের জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে ঘটেছে।

অন্যদিকে প্রকৃতির চমকপ্রদ মিথস্ক্রিয়াগুলোর অনিয়মিত ফলাফল ও স্থায়ী পরিবর্তনের রূপগুলোর যোগফল হলো জলবায়ুর পরিবর্তনের নমুনা।

কোনো সন্দেহ নেই যে, পরিবেশবাদ একটি বিস্তৃত সামাজিক এবং দার্শনিক আন্দোলন, যার একটি বড় অংশ বায়োফিজিক্যাল পরিবেশের ওপর মানুষের খারাপ প্রভাব হ্রাস এবং ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করে। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রজাতি বিলুপ্তি, দূষণ এবং পূর্ণবিকশিত বনাঞ্চল ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে জনশ্রেণি সভ্যতা খুঁজতে গিয়ে বিপদে পড়ে গেছে।

ফলত, জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিক উষ্ণতাকে নির্দেশ করে। বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রার চলমান বৃদ্ধি এই গ্রহের জলবায়ু ব্যবস্থার নয়া পরিবেশ। বৃহত্তর অর্থে এমন পরিবর্তন পৃথিবীর জলবায়ুর পূর্ববর্তী দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করে। বলা যায় যে, বিশ্ব উষ্ণায়ন হওয়ার জন্য নানাবিধ মন্দ উদ্যোগ রয়েছে মানবশ্রেণির পক্ষ থেকে।

অপরদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন পরিবেশের ওপর ক্রমবর্ধমান বড় প্রভাব রেখে এখন মরুভূমি প্রসারিত হচ্ছে , তাপ তরঙ্গ এবং দাবানল আরও সাধারণ হয়ে উঠছে। আর্কটিকের প্রশস্ত উষ্ণায়ন পারমাফ্রস্ট গলানো , হিমবাহের পশ্চাৎপসরণ এবং সমুদ্রের বরফ হ্রাসে অবদানগুলো হুমকি ছড়াচ্ছে।

এদিকে পাহাড় , প্রবাল প্রাচীর এবং আর্কটিকের দ্রুত পরিবেশগত পরিবর্তন অনেক প্রজাতিকে স্থানান্তরিত হতে বা বিলুপ্ত হতে বাধ্য করছে ।

জলবায়ু পরিবর্তন বর্ধিত বন্যা, চরম তাপ, বর্ধিত খাদ্য ও পানির ঘাটতি, রোগবালাই এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির হুমকি দেয় । মানুষের অভিবাসন এবং সংঘর্ষও এর ফলে হতে পারে। যদিও সংকট মোকাবিলায় পৃথিবীর তাবৎ শাসকশ্রেণি, সংশ্লিষ্ট সংস্থা তৎপর, তবে প্রকৃতির ইচ্ছে ধারণ করার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে।

মানুষ তার সম্পদ অর্জনের মোহ থেকে সরে আসুক। বিত্তবান সত্তা এলন মাস্ক বলেছেন, "আমরা এখনই ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক পরীক্ষা চালাচ্ছি, যা পরিবেশগত বিপর্যয়ের আগে বায়ুমণ্ডল কতটা কার্বন ডাই অক্সাইড পরিচালনা করতে পারে তা দেখার জন্য।"

খুব সহজ ও সরল দৃষ্টিতে আমার কাছে সম্ভাব্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় পরিবেশগত, মানুষের জৈব অস্ত্রের ব্যবহারে কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনের সুনির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে পৃথিবীর চেহারা পুরোটাই বদলে যাবে কি না, তা নিয়ে কিছুই বলতে চাই না। শুধু চাই, মানুষ ও অপরাপর জীবকুলের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক তৈরি হোক। যখন দেখব পাখি স্থলেও, জলেও, নীল আকাশে বরাবরের মতো উড়তে পারছে! তখন বুঝতে পারব, আমরা ভালো আছি।

লেখক : সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

এইচআর/ফারুক/এএসএম

আরও পড়ুন