কিশোরী মায়ের সংখ্যা বাড়ছে
কন্যা সন্তানকে বাল্যবিয়ে না দিয়ে স্বয়ম্ভর করি
শহরে যে কিশোরী মেয়েগুলো কাজ করতে আসে, এদের মধ্যে অনেকেই বিবাহিত এবং সন্তানের মা। গ্রামে বাবা-মা বিয়ে দিয়েছিল ১৩-১৪ বছর বয়সে। এরপর এক সন্তানের মা হয়েছে সেই কিশোরী মেয়েটি। বাচ্চা হওয়ার পর তার প্রতি স্বামীর শারীরিক আকর্ষণ কমতে শুরু করে এবং একদিন স্বামী উধাও হয়ে যায় অথবা আরেকটা বিয়ে করে সংসার শুরু করে। মেয়ে ফিরে আসে বাবার গৃহে, হয় একা, নয়তো সন্তানসহ। আবার শুরু হয় বাবার বা ভাইয়ের পরিবারে আশ্রিত হয়ে থাকার সংগ্রাম। এটা কোনো অপরিচিত কাহিনি বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মেয়েদের মোটামুটিভাবে নিজের পায়ে দাঁড় না করিয়ে কম বয়সে বিয়ে দিলে অধিকাংশ মেয়েকে এ ভাগ্য মেনে নিতে হয়।
আমাদের দেশে শতকরা ৪১ শতাংশেরও বেশি মেয়ের বিয়ে হচ্ছে ১৮ বছরের আগেই অর্থাৎ কৈশোরেই। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বাল্যবিয়ে দেওয়ার পক্ষে নানাধরনের যুক্তি থাকতে পারে কিন্তু এর কোনোটাই সমস্যা সমাধানের পথ নয়। অথচ সচেতনতার অভাবে, পারিবারিক পলিটিক্সের শিকার হয়ে মেয়েদের এই পথেই ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
বাল্যবিয়ের পক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তি মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বাবা-মায়ের দায়িত্বপালন করা। কিন্তু বাস্তবে এর কতটা হচ্ছে? আসলেই কি মেয়েগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে? নাকি মেয়েগুলো অধিকতর নিরাপত্তাহীন পরিবেশে গিয়ে পড়ছে? অধিকাংশ শ্বশুরবাড়িতে বাল্যবধূ নির্বাচন করা হয়, যেন বউরা দীর্ঘদিন সংসারের কাজ করতে পারে, সহজেই সন্তানের মা হতে পারে এবং স্বামীকে যৌন আনন্দ দিয়ে ধরে রাখতে পারে।
অতীতকালে বেশিরভাগ নারী পরিবারকে জগৎ ভেবেই সেখানে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে চেয়েছেন। পরিবারের সফলতার জন্য, নিজের ভালোবাসার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে সুখী হতে চেয়েছেন। এখন সেটা পরিবর্তিত হয়েছে। নারী এখন বাইরের জগতের লড়াইতেও সম শক্তি নিয়ে লড়ছেন। সন্তান এলে তার ওপর চাপ বেড়ে যায় দ্বিগুণ। তাই সন্তান ধারণ, সুস্থ সন্তান জন্মদান এবং তাকে বড় করার জন্য মাকে হতে হবে স্বয়ম্ভর।
সমাজে শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত এবং পড়াশোনা না জানা পুরুষদের অনেকেই তাদের শারীরিক ও অন্য চাহিদা মেটানোর জন্য কম বয়সী মেয়ে বিয়ে করতে চায়। তারা মনে করে ১৬ বছরের কম বয়সী মেয়েরাই প্রকৃত ‘কুমারী’ এবং কম বয়সী মেয়ে বিয়ে করলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করাও সহজ হবে। খুবই আশংকাজনক ব্যাপার হলো বরের বাড়ি থেকে ১২ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য খুবই চাপ দেওয়া হয়। আর তাই এ বয়সেই বিয়ে দেওয়াটা সহজ মনে করে পাত্রীর অভিভাবক।
আইনের ফাঁক দিয়ে অভিভাবক, ঘটক, পাত্রপক্ষ এর সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। তাই তো বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন করা সত্ত্বেও দেশের ৫০ শতাংশ কিশোরী মেয়ে পড়াশোনা বাদ দিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হচ্ছে। কম বয়সী মেয়েগুলো যখন বিয়ের পর বাবার বাড়িতে আসে, তখন বোঝা যায় তারা শ্বশুরবাড়িতে কতটা নির্যাতন, নিপীড়ন ও দারিদ্র্যের মধ্যে থাকে। অথচ এই কথাটা মেয়েগুলো বাবা-মাকে বলতে চায় না। কারণ তারা বাবা-মায়ের মনে দুঃখ দিতে চায় না। অনেকে বললেও বাবা-মা বিশ্বাস করেন না। অধিকংশ মেয়েই মনে করে এ তার ভাগ্য। মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় কী?
একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতে গিয়ে প্রায় ২০-২৫টি জেলায় বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের ওপর কিছু কেস স্টাডি সংগ্রহ করে রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলাম ২০২১/২২ সালে। সেখানে দেখেছি প্রতিটি মেয়েই বাধ্য হয়েছে পড়াশোনা ছেড়ে বিয়ে করতে। বিয়ে করার পর সিংহভাগ মেয়ে সংসারের যাঁতাকলে পড়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। সংসারের প্রায় সব কাজ ঘরের বউকে দিয়ে করানো হয় এবং সবচেয়ে কম খাবার খেতে দেওয়া হয়। এরপর যখন ক্লান্ত দেহ নিয়ে এরা স্বামীর যৌন চাহিদা মেটাতে পারে না, তখন স্বামী মুখ ফিরিয়ে নেয়, নির্যাতনও করে।
অবশ্য বাল্যবিয়ের এই চিত্র পাওয়ার জন্য কেস স্টাডি সংগ্রহ বা বিবিএসের জরিপের ওপর নির্ভর করতে হয় না। আমাদের চারপাশে অসংখ্য মেয়ে দেখছি যাদের বিয়ে হচ্ছে ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যেই। যে কম বয়সী মায়েরা বাচ্চা কোলে নিয়ে ঘুরছে বা কাজ করছে, তাদের প্রায় সবারই বয়স ১৮ এর নিচে। এদের কারও কারও দুটি বাচ্চাও আছে। কারও স্বামী কাজ করতে অন্য জেলায় গেছে, কারও স্বামীর সাথে তালাক হয়ে গেছে, কারও স্বামী আছে কিন্তু খোঁজখবর রাখে না। লাবণ্যহীন ভাঙা শরীর, দারিদ্র্য ও অপুষ্টির ছাপ মা এবং সন্তান দুজনের মধ্যেই। এদের কেউ কেউ রক্তশূন্যতায় ভুগছে। কোলের শিশুটিও অপুষ্ট এবং বয়সের তুলনায় ছোট।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত 'বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২৩ (বিএসভিএস-২০২৩)' শীর্ষক জরিপে দেখা গেছে, গত তিন বছরে দেশে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেড়েছে। গ্রামাঞ্চলে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেশি। সেখানে ৪৪ দশমিক চার শতাংশ নারীর বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়সের আগে। তবে জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট) পরিচালিত বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (ডিবিএইচএস) ২০২২-এর তথ্যের সঙ্গে বিবিএসের জরিপের যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। নিপোর্টের জরিপে দেখা গেছে, ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই।
বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের মধ্যে যারা গর্ভবতী হচ্ছেন, তাদের শতকরা ২৫ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ১৯। এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে সাম্প্রতিক এক সরকারি গবেষণায়। এতদিন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার জরিপে এই ভয়াবহ তথ্য উঠে এলেও সরকার এর বিরোধিতা করেছে। অপরিণত বয়সে গর্ভবতী হওয়ার পর এই মেয়েদের যতটুকু বিশ্রাম দরকার, ততটা পায় না, যতটা পুষ্টিকর খাওয়া দরকার, সেটাও পায় না। ফলে শরীর হয়ে পড়ে রুগণ, শীর্ণ আর কোলের বাচ্চাটি হয় খুব দুর্বল ও অসুস্থ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ১০ থেকে ১৯ পর্যন্ত সময়টাকেই কৈশোরকাল বা বয়ঃসন্ধিকাল বলে। এসময় মানুষের দেহ, মন ও বুদ্ধিবৃত্তিক যে পরিবর্তন ঘটে, তা একেবারেই অচেনা তাদের কাছে। এসব সমস্যা নিয়ে কারও সাথে শেয়ার করা যায় না। অনেক প্রশ্ন তৈরি হয় শরীর ও মন নিয়ে কিন্তু উত্তর পাওয়া যায় না। আইসিডিডিআরবি’র (২০০৫ সালের) তথ্য অনুযায়ী বয়ঃসন্ধিকালের শিশুরা বাবা-মা অথবা তাদের শিক্ষকদের সাথে নিরাপদ যৌন জীবন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে তেমন কোনো কথাই বলে না বা বলতে পারে না। অন্যদিকে শহর কিংবা গ্রামের, শিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত অভিভাবকরাও এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সন্তানকে সচেতন করেন না।
গবেষণাটিতে বলা হয়েছিল যে বাংলাদেশে এই ঝুঁকিপূর্ণ বয়সে থাকা শিশুরা এমন একটা সমাজে বা গোষ্ঠীর মধ্যে বসবাস করে, যারা সনাতনী ধ্যানধারণা বিশ্বাস করে ও চর্চা করে। প্রজনন স্বাস্থ্য, যৌন জীবন নিয়ে আলোচনাকে ঘরে-বাইরে, এলাকায়, স্কুলে এখনো ভয়াবহভাবে ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়। প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কতগুলো খুব জরুরি বিষয় জানা দরকার যেমন- প্রজনন স্বাস্থ্যতত্ত্ব, যৌনতা, পরিবার পরিকল্পনা এবং যৌনবাহিত রোগ। অথচ এসব নিয়ে আলোচনা করাটা বাংলাদেশের প্রায় সবধরনের পরিবারগুলোতে গর্হিত কাজ। অথচ এ বয়সেই মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে, যৌনজীবন শুরু হচ্ছে এবং এরাই সন্তানের মা হচ্ছে। অপরিচিত পরিবেশ, বয়স্ক স্বামী, বয়ঃসন্ধিকালের দৈহিক সম্পর্ক, বৈবাহিক জীবন ও দাম্পত্য সম্পর্ক এবং অপরিণত বয়সে সন্তান ধারণ শিশু-কিশোরীদের খুবই শঙ্কার মধ্যে ফেলে দেয়।
দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, প্রতিরোধ সত্ত্বেও আমরা দেশে বাল্যবিয়ে রোধ করতে পারছি না। বাংলাদেশে অসংখ্য মেয়ের বিয়ে হচ্ছে তাদের ১৮ বছরের জন্মদিন হওয়ার আগেই। এদের মধ্যে অর্ধেকের বিয়ে হয় ১৫ বছরের আগে (তথ্যসূত্র ইউনিসেফ)।
বাল্যবিয়ে ঘটার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ দেশ। মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার পক্ষে অনেকেই। তারা মনে করেন বিয়ে না দিলে মেয়েরা প্রেম করবে, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করবে, চরিত্র খারাপ হয়ে যাবে অথবা নিজের পছন্দ মতো বিয়ে করবে। এছাড়া তারা বিভিন্ন ধরনের নোংরা মন্তব্য করেন। অথচ অপরিণত বয়সে বিয়ের পর যে একটি মেয়েকে কতটা ভয়াবহ অবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে হয়, এটা নিয়ে সমাজ ভাবে না। সেই অসহায় মেয়েটির দায়িত্বও কেউ নিতে চায় না।
বছর দুয়েক আগে টাঙ্গাইলে ১৪ বছর বয়সী মেয়েটিকে যে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সে তার বিয়ের ছবি দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারবে। বিয়েটা ছিল তার কাছে আতংকের নাম। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সময় তার চোখে কোনো স্বপ্ন, আনন্দ ও শিহরন ছিল না, ছিল ভয়। নতুন মানুষ, নতুন জীবনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ভয়। সেই কিশোরী মেয়েটির কাছে বিবাহিত জীবনের অভিজ্ঞতা আরও বেশি ভয়াবহ হয়েছিল।
২০ বছরের বড় স্বামীর পাশে তাকে দেখাচ্ছিল ভয়ার্ত হরিণীর মতো। সেই ভয়টিই সত্যি হয়েছিল মেয়েটির জীবনে। অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন সম্পর্কের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাকে শেষ পর্যন্ত মারা যেতে হলো। মেয়েটি বিয়ে করতে চায়নি। কিন্তু বাবা-মা ধনী ছেলে হাতছাড়া করতে চাননি। শেষ পর্যন্ত মৃত মেয়ে নিয়ে তাদের ঘরে ফিরতে হয়েছে।
বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (বিএসভিএস) -২০২৩ অনুসারে, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের সন্তান জন্মদানের হার ৭৩ শতাংশ। আগের বছরের জরিপে এ সংখ্যা ছিল ৭০ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে দেখা গেছে, দেশের মোট অন্তঃসত্ত্বা নারীর মধ্যে ২৫ শতাংশেরই বয়স ১৫ থেকে ১৯ বছর। বিষয়টি নিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, “আমরা প্রায়ই দেখি ১৬ বছরের কম বয়সী মেয়েরা দ্বিতীয়বারের মতো গর্ভধারণ করে আমাদের কাছে আসে। আমরা যখন জিজ্ঞাসা করি কেন তারা গর্ভধারণ করেছে, তখন অনেকে বলে যে বাচ্চা হলে তাদের বিয়ে সুরক্ষিত হয় বা শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক দৃঢ় হয়”। (সূত্র: দি ডেইলি স্টার)। চিকিৎসকরা মনে করেন এই বয়সে গর্ভধারণ মেয়েদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
শিশু-কিশোরীদের নিরাপত্তার জন্য বিয়ে দেওয়াটা কোনো সমাধান নয়। ভালো বিয়ে হবে বলে অভিভাবকরা কন্যা সন্তানকে যে গৃহে পাঠাচ্ছেন বা যে মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছেন, সেখানে তারা কতটা সুখী হতে পারছে? কতজন নির্যাতিত হয়েও মুখ বন্ধ করে থাকছে, কতজন সন্তান কোলে নিয়ে পিতৃগৃহে ফিরে আসছে, সেটা হিসাব করে দেখার সময় এসেছে। যৌতুক নিয়ে ছোট ছোট মেয়েগুলোকে বিয়ে করে। আশা মিটে গেলে বাবার বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে যায়।
বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে কিশোর-কিশোরীর প্রেম বা গর্ভধারণের ঘটনা খুবই দুর্বল একটা যুক্তি। এক্ষেত্রেও বিয়েটা কোনো সমাধান হতে পারে না। বরং সন্তানকে ঠিকমতো শিক্ষা দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। যাতে তারা সাবধান হয় এবং অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত না হয়। কারণ এতে তার ও পরিবারের বিপদ বাড়ে। দেখা গেছে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে ২৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ বাল্যবিয়ের শিকার হয়। ভালো পাত্র পাওয়া গেছে, এই ছুতোয় বিয়ে দেওয়া হয় শতকরা ২২ দশমিক ৪৯ জনের। অভাব অনটনের কারণে কম বয়সেই বিয়ে দেওয়া হয় ১৮ দশমিক ৯৯ জনের।
এছাড়া ধর্মীয় বিশ্বাস, পড়াশোনায় কম উৎসাহ, যৌতুকের ভয়ে, সামাজিক চাপের কারণেও কিছু বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটছে। বেসরকারি সংস্থা এমজেএফ এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ বাল্যবিয়ে হয় বিয়ে পূর্ববর্তী শারীরিক সম্পর্কের কারণে, যা খুবই নগণ্য। প্রেমের কারণে মাত্র ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ বিয়ে হয় বাল্য বয়সে।
আধুনিক সময়ে দাঁড়িয়েও কেন আমাদের মেয়েদের এত কম বয়সে বিয়ে হচ্ছে? কেন বাল্যবিয়ের শিকার শতকরা ৬৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ ছাত্রী? এরা ঝরে পড়ছে স্কুল থেকে। এমনকি উৎপাদনশীল কাজের সাথে জড়িত শতকরা ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ মেয়েও বাধ্য হয়ে চলে যাচ্ছে শ্বশুরবাড়ি। মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার কাজে সবচেয়ে সক্রিয় থাকেন ঘটকরা। ৪১ শতাংশেরও বেশি মেয়ের বিয়ে হয় ঘটকদের ফন্দি ফিকিরে পড়ে।
মালাউই, মোজাম্বিক, জাম্বিয়া, গাম্বিয়া ও তানজানিয়ার মতো দেশও তাদের বাল্যবিয়ে আইনের মধ্যে থাকা ফাঁকফোকরগুলো বন্ধের জন্য বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সেখানে আমরা একটি চমৎকার আইনের ভেতরে ফাঁকফোকর ঢুকিয়ে দিয়েছি। আমাদের বড় দুর্বলতা হচ্ছে বাবা-মা, অভিভাবক, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা, ধর্মীয় নেতা, সামাজিক মতমোড়লদের আমরা এই ইস্যুটি নিয়ে তেমন সচেতন করতে পারছি না। মেয়েদের প্রতি আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করতে হবে। মেয়েরা মোটামুটি শিক্ষিত হতে পারলে এই মেয়েই একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। মেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়ালে সে নিজের পাশাপাশি সংসারের দায়িত্বও ভাগ করে নিতে পারবে।
বর্তমান সময়ে নারীকে শক্ত হতে হবে, আয় করতে হবে কারণ পুরুষের পাশাপাশি নারীর জীবন অনেক জটিল হয়ে যাচ্ছে। অতীতকালে বেশিরভাগ নারী পরিবারকে জগৎ ভেবেই সেখানে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে চেয়েছেন। পরিবারের সফলতার জন্য, নিজের ভালোবাসার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে সুখী হতে চেয়েছেন। এখন সেটা পরিবর্তিত হয়েছে। নারী এখন বাইরের জগতের লড়াইতেও সম শক্তি নিয়ে লড়ছেন। সন্তান এলে তার ওপর চাপ বেড়ে যায় দ্বিগুণ। তাই সন্তান ধারণ, সুস্থ সন্তান জন্মদান এবং তাকে বড় করার জন্য মাকে হতে হবে স্বয়ম্ভর।
৫ মে, ২০২৪
লেখক: যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখক।
এইচআর /ফারুক/এএসএম