ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

আপনি কি এখনো কিছুই করছেন না?

সাইফুল হোসেন | প্রকাশিত: ০৯:৪৪ এএম, ০২ মে ২০২৪

আপনারা যারা finfacts চ্যানেলে আমার ভিডিও নিয়মিত শুনেন তাঁদের মধ্যে অনেকেরই প্রশ্ন ‘আমি কি করবো, আমি কাজ করতে চাই, আমি কাজ করতে পারছি না, কি কাজ করবো একটা পরামর্শ দেন’। আমি তাদেরকে বলছি যে এভাবে তৎক্ষণাৎ কোন রেডিমেড পরামর্শ দেয়া সম্ভব নয়। আমি আপনার সম্পর্কে জানি না ,আপনার এডুকেশন সম্পর্কে জানি না, আপনার অবস্থান সম্পর্কে জানি না, আপনার ইচ্ছা সম্পর্কে জানি না, আপনার স্কিল সম্পর্কে জানি না, আমি কিভাবে বলতে পারি যে আপনি এই কাজটা করেন। আসলেই কি এটা সম্ভব? আপনি যাকে এই প্রশ্নটা করবেন সে আপনাকে সঠিক উত্তরটা দিতে পারবে না। তাহলে সত্যি উত্তরটা আছে কার কাছে। সঠিক উত্তর দেওয়ার জন্য আপনিই হচ্ছেন সঠিক ব্যক্তি কারণ একমাত্র আপনিই জানেন যে আপনি কি করতে চান।

আর আমি আমার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান দিয়ে জানি যে আপনার মন আপনাকে যেটাতে সায় দিবে আপনি সেটাই করতে পারবেন। কারণ আপনি অনেক পাওয়ারফুল, আপনি ইউনিক। আপনার মধ্যে আল্লাহ তালা অনেক ক্ষমতা দিয়েছেন যা অন্যদের মধ্যে দেননি। যদি মানসিকভাবে আপনার কোন অসুস্থতা না থেকে থাকে তাহলে আপনি অনেক কিছুই পারবেন যদি আপনি চান।

আমরা জানি অধিকাংশ মানুষেরই কমপ্লেন যে আমি কিছু করতে পারছি না। তার মানে আপনার কিছু করার ইচ্ছে আছে। আপনার একটা গাইডলাইন দরকার। চলুন গাইডলাইন নিয়েই বরং কথা বলি। আমার প্রথম অনুরোধ হচ্ছে আপনি নিজের সাথে বসুন, নীরবতায় নিজের সাথে বসুন। খাতা কলম নিয়ে বসুন । এইবার চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখুনতো আপনার কি কি গুণ আছে, কোন কোন গুণের প্রশংসা আপনার আপনজনেরা অতীতে করেছে। কেউ বলেছেন আপনি এই কাজটা ভালো করেন, কেউ বলেছেন আপনি ওই কাজটা ভালো করেন। এই গুলো ভাবুন ও লিখুন।

কাজ হোক আপনার নিত্য সঙ্গী, সাফল্য আপনার আসবেই, দুদিন আগে বা দুদিন পরে। ভুলে গেলে চলবে না যে কোনো পরিশ্রমী মানুষ বিফল হয় না কিন্তু অনেক যোগ্য মানুষ বিফল হয় শুধুমাত্র পরিশ্রম না করার কারণে।

প্রত্যেক মানুষের এক বা একাধিক হিডেন ট্যালেন্ট আছে, প্রতিটা মানুষই গুণ সম্পন্ন মানুষ বিশেষ গুণ-সম্পন্ন মানুষ। যদি সেটাই হয় তাহলে কেন আমরা কোন কাজ খুঁজে বের করতে পারছি না। তাই জন্য বলছি যে আপনি নিজের সাথে বসুন, এবং চোখ বন্ধ করে ভাবুন যে আপনি কি কি করতে পারেন। এক দুই তিন করে আপনি লিখুন। আপনি ক্রিয়েটিভ । অনেক কিছু লিখতে পারেন। ধরুন যেমন আপনাকে কেউ যদি একটু দেখিয়ে দেয় আপনি একটা ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলতে পারবেন। এভাবে নিজেকে একটু ভাঙ্গুন চিন্তার মধ্যে। আপনার গুন গুলো খুঁজে বের করুন, আপনি কি কি পারেন শুধু সেটাই চিন্তা করুন, কি কি পারেন না সেটা চিন্তা করার দরকার নেই।

সবশেষে আপনি দেখুন, আপনি যে কাজগুলো পারেন, সেগুলো মানুষের কোন কাজে আসে কিনা। যদি কারোর কাজে লাগে আপনার কাজ হল তার কাছে পৌঁছানো। যদি তার কাজটা করে দিতে পারেন তাহলে সে আপনাকে পয়সা দিবে। আমাদের দেশে প্রধানত দুই ভাবে আয় করা যায়, চাকরি করে আর বিজনেস করে। খন্ডকালীন কাজ আছে আবার ফ্রিল্যান্সিং করে আয়েরও পথ আছে। তবে মেইন হলো চাকরি আর ব্যবসা। ধরুন আপনি মনে করছেন যে আপনার ব্যবসা করার খুব ইচ্ছা কিন্তু টাকা নেই। টাকার খুব দরকার, কিন্তু ভাবছেন টাকা কই পাবো।

আমার পরামর্শ হচ্ছে আপনি প্রথমেই টাকার চিন্তাটা না করে, কোন ব্যবসাটা করতে চান সেটার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন। ওই ধরনের ব্যবসা যে করছে তাকে আপনি হেল্প করা শুরু করুন। অল্প বেতন হলেও আপনি সেই কাজটা শিখতে পারবেন। আপনার উদ্দেশ্য কিন্তু ওখানে বেশি বেতন পাওয়া না, আপনার কাজ হচ্ছে এই ব্যবসার ব্যাপারে সবকিছু জানা। এই জানতে জানতেই দেখবেন আপনার অনেকগুলো দরজা খুলে যাবে। আপনি নিজেও জানেন না যে কখন কোন সুযোগ চলে আসবে। এক সময় গিয়ে দেখবেন আপনি ঠিকই ওই ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়ে গেছেন। এভাবে পৃথিবীর অনেক লোক বড় বড় ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলেছেন।

এখন যারা বড় বড় ব্যবসায়ী তারা এককালে অনেক ছোট কিছু দিয়ে শুরু করেছিলেন। আমার কথা হচ্ছে আপনি কেন শুরু করছেন না? অলস বসে থাকবেন না, ঘুরে বেড়াবেন না, কিছু না কিছু শুরু করুন। আপনি গ্রাজুয়েট হয়েছেন আপনি কোন কিছু না করতে পারলে চায়ের দোকানে গিয়ে হেল্প করেন। সেটাও একটি কাজ। লজ্জাকে দূরে ঠেলে দিন। আমি চায়ের ব্যবসায় জড়িত হতে বললাম কারন আপনি হয়তো মনে করবেন যে চায়ের ব্যবসা অনেক ছোট একটি কাজ। মনে রাখতে হবে কোন কাজই ছোট না। আপনি একটা ছোট কাজকেই গ্রেট ওয়েতে করতে পারেন। একটা গ্রেট ওয়ার্ক ছোট হয়ে যেতে পারে যদি আপনি সেটা ছোট মানুষের মতো করেন কিন্তু একটা ছোট কাজ যদি আপনি গ্রেট মানুষের মতো করেন তাহলে সেই ছোট কাজটি গ্রেড হয়ে যেতে পারে।

আপনি যদি চাকরি না করেন তাহলে ব্যবসা শুরু করুন। আশেপাশে তাকালেই দেখতে পাবেন যে কেউ কেউ একটি ভালো চাকরির আশায় এক দুই বছর বেকার। আমি তো প্রথমেই বলেছি যে আপনি কোনো কাজ শুরু করতে চাইলে দেখবেন অনেকগুলো দরজা খুলে গেছে। দেখবেন অনেক মানুষের সাথে আপনার যোগাযোগ হবে, অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হবে, অনেক জ্ঞান বুদ্ধি মাথায় আসবে। যেটা আপনাকে সামনে পরবর্তীতে বড় কাজ করতে সহায়তা করবে।

সুতরাং বসে থাকবেন নাকি কাজ করবেন এই ডিসিশনটা আপনার। কিন্তু আমার মনে হয় বসে থাকা কোনো সল্যুশন নয়। আপনি ঘরে বসে থাকলে এক সময় ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে অসুস্থ হয়ে যাবেন। তখন আপনার জন্য কাজ পাওয়া সহজ হবে না। আপনার বারবার চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা করতে করতে দেখবেন যে এক সময় গিয়ে কিছু একটা হয়ে গেছে। চেষ্টা না করে আপনি যতদিন ঘরে বসে থাকবেন, দেখবেন কিছুই হচ্ছে না।

কারণ কাজ যে দিবে সেই মানুষটার কাছে আপনার যেতে হবে, আপনার নেটওয়ার্কিং করতে হবে। শুধু মামা চাচা আছে বলে কাজ পাবেন যাদের নাই তারা পাবেন না ব্যাপারটা ঐরকম নয়। যারা মামা চাচা নয় তাদেরকে মামা চাচা বানিয়ে নিতে হবে আপনার সততা দিয়ে, আপনার ভালো ব্যবহার দিয়ে ,আপনার গুড নেটওয়ার্ক দিয়ে। মনে রাখবেন সবাই সৎ ও যোগ্য মানুষ খুঁজে বেড়ায়।

সুতরাং আর একদিনও বলবেন না যে আপনার দ্বারা কিছু হবে না, আপনার হাতে কাজ নেই। বরং আপনি যে কাজ করতে পারেন সে কাজ দিয়ে শুরু করুন, সেটা যদি মাটি কাটাও হয় সেটাই শুরু করুন। যদি আপনার লক্ষ্য থাকে, মনোবল থাকে, সততা থাকে এবং সঠিক ভিশন থাকে, তাহলে দেখবেন যে আপনি যতই ছোট কাজ দিয়ে শুরু করুন না কেন, আপনার পরিসমাপ্তি হচ্ছে খুব বড় কাজ দিয়ে। কাজ হোক আপনার নিত্য সঙ্গী, সাফল্য আপনার আসবেই, দুদিন আগে বা দুদিন পরে। ভুলে গেলে চলবে না যে কোনো পরিশ্রমী মানুষ বিফল হয় না কিন্তু অনেক যোগ্য মানুষ বিফল হয় শুধুমাত্র পরিশ্রম না করার কারণে। ভালো থাকুন।

লেখক: দি আর্ট অব পার্সোনাল ফাইনান্স ম্যানেজমেন্ট বইয়ের লেখক, কলামিস্ট, ইউটিউবার এবং ফাইনান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট।

এইচআর/এএসএম

আরও পড়ুন