ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

কৃতজ্ঞতা

এএইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন | প্রকাশিত: ০৪:০৯ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘যখন আপনি সংগ্রাম করা থেকে উঠে আসেন না, প্রশংসা অর্জন করা এমন একটি গুণ, তখন তা কারও পক্ষে প্রকাশ করা অনেক কঠিন।’ এমন মতবাদের আলোকে বলা যায় যে, প্রশংসা পেতে গেলেও ব্যক্তিবিশেষের সবিশেষ যোগ্যতা থাকা দরকার। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তো বটেই।

বাংলাদেশে সামরিক শাসক হিসেবে দুজন বিশেষ ব্যক্তি বারবার নিজেদের রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে দাবি করলেও তারা নেতা হতে পারেননি। ‘জেনারেল’ হয়েই থাকতে হয়েছে। তাই তাদের ঘিরে কৃতজ্ঞতা জানানোর উপলক্ষ তৈরি হয়নি, হবেও না। তাদের দলের অনুসারী ব্যতীত কথিত প্রশংসায় ভাসেনি কেউ। এখানেই আওয়ামী লীগের সাথে অপরাপর রাজনৈতিক দলের পার্থক্য। অর্থাৎ, নিজস্ব নেতাকর্মীর বাইরে ওই সব দলগুলোর আদর্শের প্রতি, নেতার প্রতি অনুরাগে নেই সাধারণ মানুষ। যেটা, আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু কিংবা শেখ হাসিনার প্রতি জনগোষ্ঠীর আছে।

এদিকে যে কোনো রাষ্ট্রের একেক সময়ের শাসক শ্রেণি নিজস্ব নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। বাংলাদেশে তা হয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলটির সাথে আদর্শিক সংঘাত বাধিয়ে ওই সব জেনারেল প্রতিবিপ্লব করতে চেয়েছে। কিন্তু তারা এখন আর সফল হতে পারছে না। একজন শেখ হাসিনার অবিচল নেতৃত্ব ও এই দেশের মানুষের ভালো থাকা- অনেক কিছুর জবাব দিচ্ছে। রাজনৈতিক কৃতজ্ঞতার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও শেখ হাসিনাকে আমাদের পক্ষ থেকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা উচিত।

তীব্র দাবদাহের দৃশ্যমান বাস্তবতা; সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এখন মধ্যপ্রাচীয় উষ্ণ আবহাওয়াকে পরিচিত করাছে। বাংলাদেশে এখন বেলা ১১টা থেকে বিকেল অবদি যে গরম পড়ছে, ঠিক সে সময়ে যদি বিদ্যুৎ সরবরাহের অপ্রতুলতায় হাঁটতো দেশ, কী হতো? কিছু বিচ্ছিন্ন দিকের হিসাব না করলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব জেলা শহরে লোডশেডিং নেই। অথচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানোর জনশ্রেণির সংখ্যা নগণ্য পর্যায়ের।

এবারের এপ্রিল মাস, বাঙালির দু-দুটি উৎসব পালিত হলো। নির্বিঘ্নে। সরকারি চাকরিজীবীরা যে বোনাস-ভাতা পেয়েছিলেন, তা দিয়ে তারা স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ সময় পার করতে পেরেছেন। কারণ, তাদের কাছে পরিবার নিয়ে উৎসব করার মতো মুদ্রার নোটের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু, আবারও হতাশ হয়েছি। কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনার জন্য দুই লাইন লিখে ফেসবুক, টুইটারে তারা ‘কৃতজ্ঞতা’ জ্ঞাপন করতে উদ্যত হয়নি।

মূলত কখনই তাৎক্ষণিক ধন্যবাদ পাওয়ার জন্য সরকার প্রস্তুত থাকে না। কারণ, গণতন্ত্রের শর্তে মানুষ ওই ধন্যবাদ এর অস্ত্র ব্যবহার করে জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেয়। তবে, সময় ও প্রেক্ষাপটের ওপর ভর করে অমীমাংসিত ধারাভাষ্য প্রদানে থেকেই সাধারণ জনগণই এখন সারাবিশ্বের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সরকারের ওপর 'প্রেসার গ্রুপ' হিসেবে বিদ্যমান, যা কোনো শাসকশ্রেণি অস্বীকার করতে পারবে না। কাজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলীয় কর্মীরাই শুধু নয়, আওয়ামী লীগ চায়, সাধারণ মানুষ লিখুক। প্রশংসাও করুক, গঠনমূলক সমালোচনাও করুক। নানা কিছুর চিন্তা করে তারা করণীয় দিক সম্পর্কে ধারণাও দিক।

প্রশংসা করার মধ্য দিয়ে দায়িত্ববান ব্যক্তি বা শ্রেণি আত্মবিশ্বাসের যে সীমা ছুঁতে পারে, তার সুফল দিক রয়েছে। তখন জাতি উপকৃত হয় বলে মনে করার সুযোগ আছে। ‘অকৃতজ্ঞ হৃদয় কোনো করুণা আবিষ্কার করে না; কিন্তু কৃতজ্ঞ হৃদয় প্রতি ঘণ্টায় কিছু স্বর্গীয় আশীর্বাদ খুঁজে পাবে’ - বলেছিলেন, হেনরি ওয়ার্ড। মাঝে মাঝে এই মতবাদটি নিয়ে আমি আধ্যাত্মিকতার অন্তরীক্ষে ভাসতে থাকি।

‘কৃতজ্ঞতা হলো জীবনকে উপহার হিসেবে অনুভব করার ক্ষমতা। এটি আমাদের আত্ম-প্রবণতার কারাগার থেকে মুক্তি দেয়।’ ফলে এমন মতবাদই মানব আত্মার মধ্যকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বোধ সম্পর্কিত অভিরুচি।

রাজনৈতিক মনোবোধে সিক্ত হয়ে নিজেকে অল্প জানার মানুষ হিসেবে তাই কৃতজ্ঞতার শ্লেষে গিয়ে বাঙালি জাতিকে অকৃপণ হতে হবে। যেটা সত্য, তা বলতে হবে প্রতিদিন। এতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব অনুপ্রেরণা পায়।

অন্যদিকে জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে শুধু সংসদে আইন পাস হওয়ার মধ্য দিয়ে রক্ষিত হলে চলবে না। সংসদে যাওয়ার আগে সরকার প্রধানের উচিত হবে, বিশেষজ্ঞ মতগুলো গুরুত্ব দিয়ে গণতান্ত্রিক পর্যায়ের অনেকগুলো জানালা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে যাওয়া। অতঃপর, চলমান আলোচনাটির ফলাফল সংসদে নিয়ে যাওয়া।"

জনশ্রেণির সাথে সম্পর্ক, শাসকশ্রেণির নিত্য দিবসের কাজ। এমন অভিপ্রায়ে আওয়ামী লীগ কাজ করছে। কোনো সন্দেহ নেই যে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বার্থ উদ্ধারে এক অদম্য সত্তা। মানুষ এখন তাকে দেখলেই নির্ভার থাকে, খরার মধ্যে এক পশলা বৃষ্টির মতোই তার চলমান চরিত্র। যাকে অভিভাবক মেনে নিয়েই বাংলাদেশ জলবায়ু বিপর্যয়ের মধ্যে থেকেও বলতে পারছে, এই বেশ ভালো আছি! অতি অবশ্যই তার প্রতি কৃতজ্ঞতা, যখন তিনি বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা রাখতে বলতে পেরেছিলেন, চ্যালেঞ্জ আছে। সেই চ্যালেঞ্জ হলো, অপশক্তিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার।

লেখক: সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

এইচআ/এমএস/ফারুক