ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

সুবিধাবাদীরাই আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

ড. সুলতান মাহমুদ রানা | প্রকাশিত: ০৯:৩০ এএম, ১২ এপ্রিল ২০২৪

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর একটানা চতুর্থ মেয়াদ চলছে। ইতিপূর্বে জামায়াত-শিবির থেকে আওয়ামী লীগে পদ পাওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অসংখ্য প্রতিবেদন দেখেছি। ওইসব প্রতিবেদন দেখে প্রথম দিকে শঙ্কিত হতাম। তবে এখন মোটেও শঙ্কিত হই না। কারণ ইদানীং প্রায় প্রতিটি কমিটি কিংবা উপকমিটিতে এমন অনুপ্রবেশ পদপ্রাপ্তির বিষয়টি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।

জামায়াত-শিবির থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অনেকেই নিজেদের গা বাঁচানোর লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের পদ লাভ করার চেষ্টায় মত্ত আছে। অথচ যারা দীর্ঘদিন থেকে মূল সংগঠনে আছে তাদের অনেকেই রাজনীতিতে সুবিধা করতে পারছে না। তারা দলে ভালো কোনো পদ-পদবি পাচ্ছে না। ফলে অনুপ্রবেশকারীদের পদ পাওয়ার বিষয়টি প্রকৃত আওয়ামী আদর্শের মানুষদের ব্যথিত করে তুলছে। এসব ইস্যুতে প্রায়ই দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখছি।

৭৫-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধাচারণসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নানাভাবে শোষণ করার চেষ্টা করেছে তাদের অনেকই এখন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে। ইদানীং নানাভাবে শোনা যায়, অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ কিংবা এর ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোতে পদ বাণিজ্য হচ্ছে। অথচ আওয়ামী লীগের সভাপতি ৭৫-পরবর্তী সময়ে নির্য়াতিত আওয়ামী লীগারদেও কমিটি গঠনে অগ্রাধিকার প্রদানের বার্তা দিলেও সেটি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না।

ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের উপকমটির পদ-পদবী নিয়ে বেশ কয়েকবার বিতর্কিত পরিস্থতির সম্মুখীন হতে হয়েছে মূল দলকে। যখন আমরা কোনো ব্যক্তির ক্ষমতার অপচর্চা এবং বাড়াবাড়ি লক্ষ করি, তখন তার গোড়া খুঁজতে গেলেই অনুপ্রবেশ চরিত্র কিংবা অন্যায্য ও অনৈতিক রাজনৈতিক পদপ্রাপ্তির বিষয়টি সামনে চলে আসে।

কিছুদিন আগে শাহেদকাণ্ডের ঘটনাতেও এমন পরিস্থতি অবলোকন করেছি। কিন্তু এক্ষেত্রে আমার কৌতূহল হলো, আরো কতই না বিতর্কিতরা এমন পদ বাগিয়ে বসে আছে! পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, দ্রুতই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের কমিটিতে চিরুনি অভিযান করে অনুপ্রবেশকারী খুঁজে দেখা। এতে অন্তত প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের মূল্যায়নের সুযোগ তৈরি হবে।

বর্তমানে দেশের যে রাজনৈতিক সুবিধাবাদ চর্চা শুরু হয়েছে তাতে একজন ব্যবসায়ী কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়াই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে চলে যাচ্ছে। এমনকি ইদানীং এমন কিছু ব্যক্তিকে দলের পদ-পদবী দেওয়া হচ্ছে, যারা নিজেরাই নিজেদের সুবিধা নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

রাজনীতি বিজ্ঞানের তত্ত্বে রাজনৈতিক দলের মূল লক্ষ্য হলো নির্দিষ্ট নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং বৈধভাবে ক্ষমতায় যাওয়া। আর এ জন্য প্রতিটি রাজনৈতিক দলই নিজেদের আদর্শ ও লক্ষ্য ঠিক রেখে নিজেদের কর্মী-সমর্থক বাড়াতে চায়। সাধারণত ধরে নেওয়া হয়, যে দলের কর্মী সমর্থক যত বেশি এবং যে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি যতটা মজবুত সেই দল ততটাই শক্তিশালী।

এখন যারা ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগের আদর্শকে অনুপ্রবেশকারীদের হাতে তুলে দিয়ে দলের ভাবমূর্তিকে খাটো করছে তারা আসলেই আদর্শের শুভাকাঙ্খী কিনা- তা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। এমনকি যারা আদর্শকে কলুষিত করার খেলায় নেমেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বপ্রদানকারী দলকে আরো অধিকতর পরিশুদ্ধতার দিকে নিতে পারার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই আগামী দিনের অন্যতম লক্ষ্য ধরা উচিত।

বেশ কয়েক বছর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংগঠনে ‘কাউয়া’ (কাক) ঢুকছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। দলের হাইকমান্ডের সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা থাকা সত্তে¡ও যারা এই অনুপ্রবেশ-সংক্রান্ত কার্যক্রমে সহায়ক হিসেবে দুঃসাহস দেখাচ্ছে তারা দলের প্রকৃত মিত্র কিনা তা নিয়ে ভাবতে হবে। যাদেরকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হচ্ছে কিংবা দলে প্রবেশ করানো হচ্ছে তারা কি আদর্শিকভাবে কখনোই আওয়ামী লীগকে মেনে নিতে পারবে? যারা জামায়াত-বিএনপি থেকে এসে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদধারী হয়েছে কিংবা হচ্ছে তারা কি প্রকৃতপক্ষেই আওয়ামী লীগার হচ্ছে? তারা কি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মনে প্রাণে কখনোই লালন করতে পারবে?

দলের সাংগঠনিক দিককে মজবুত করার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিক ভিত্তিকে মজবুত করার নামে কোনো অনুপ্রবেশকারীকে হঠাৎ করে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করার বিষয়টি খুব বেশি ইতিবাচক কিনা তা নিয়ে বিশেষভাবে ভাবতে হবে। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক সক্ষমতা, আদর্শিক এজেন্ডা এবং পরিবর্তনশীল বিশ্বের প্রত্যাশার সঙ্গে দলগুলোর সেই আদর্শিক এজেন্ডার সামঞ্জস্যতার প্রশ্ন, আঞ্চলিক ও ভূরাজনীতির নতুন প্রয়োজনের সাপেক্ষে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকেন্দ্রিক অবস্থান একটি নতুন বাস্তবতা।

এ অবস্থায় দলের নানান ফাঁকফোকর দিয়ে দলের আদর্শে বিশ্বাসী নয় এমন বহু নীরব ঘাতক দলটিতে স্থান করে নিচ্ছে। তবে দলটির নানান স্তরে সেই রঙ দূষণকারী উপাদানের উপস্থিতি দলটির ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই দূষণকারীদের সংখ্যা দলে যত বেশি বাড়বে, দলটির রাজনৈতিক আচরণের পরিবর্তন তত বেশি স্পষ্ট হবে।

দলটি এখন কিছুটা হলেও দূষণকারীদের চ্যালেঞ্জের প্রারম্ভিক পর্যায়ে রয়েছে। দলটির আদর্শিক কর্মসূচি কিছুটা হলেও এড়িয়ে চলার আত্মঘাতী প্রবণতা কিংবা যা করা দরকার তা না করার প্রবণতা প্রায়শই প্রতীয়মান হয়। এখন যারা ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগের আদর্শকে অনুপ্রবেশকারীদের হাতে তুলে দিয়ে দলের ভাবমূর্তিকে খাটো করছে তারা আসলেই আদর্শের শুভাকাঙ্খী কিনা- তা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। এমনকি যারা আদর্শকে কলুষিত করার খেলায় নেমেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বপ্রদানকারী দলকে আরো অধিকতর পরিশুদ্ধতার দিকে নিতে পারার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই আগামী দিনের অন্যতম লক্ষ্য ধরা উচিত।

লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

এইচআর/জেআইএম