মাহে রমজান
আমলগুলো থাকুক প্রাণবন্ত
আজ মাহে রমজানের শেষ দিন। আল্লাহতায়ালার বিশেষ কৃপায় পবিত্র মাহে রমজানের দিনগুলো আমাদেরকে সুস্থতার সাথে অতিবাহিত করার তৌফিক দান করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
রমজানের দিনগুলোতে আমরা চেষ্টা করেছি অনেক পুণ্যকর্ম এবং বিশেষ ইবাদতে রত থেকে কাটানোর।
এখন আমাদের কর্তব্য রমজানের ইবাদতগুলোকে বছরজুড়ে জারি রাখা। আমরা যদি রমজানের দিনগুলোর ন্যায় সারা বছরই ইবাদত-বন্দেগি ও দান-খয়রাতের প্রতি মনোযোগী হই তাহলে আমরা সহজেই আল্লাহপাকের প্রিয়ভাজন হতে পারবো।
রমজানের দিনগুলোতে যেভাবে আমরা সৃষ্টির প্রতি সহানুভূতি ও দয়াসুলভ আচরণ করেছি ঠিক একইভাবে রমজানের পরেও তা বহমান রাখতে হবে। আমরা যদি সারা বছরই রমজানের ন্যায় উত্তম কাজ করতে থাকি তাহলে তা হবে আমাদের নিজেদের জন্যই কল্যাণকর।
যেভাবে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআন করিমে ইরশাদ করেন ‘যে ব্যক্তি আমলে সালেহ করে তা তার নিজের জন্যই’ (সুরা জাসিয়া, আয়াত:১৫)।
এই আমলে সালেহ বা উত্তম কাজ বলতে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সমষ্টিগত জীবনে সর্বস্তরের ছোট-বড় সকল প্রকাল কল্যাণকর কাজকেই বুঝানো হয়েছে।
এখানে সমাজকল্যাণমূলক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক ইত্যাদী সব রকমের কাজই ইসলামের অনুশাসন অনুযায়ী হলে তা-ই আমলে সালেহ বা উত্তম কাজ হিসেবে পরিগণিত হয়। আর এসব কাজের মাধ্যমেই প্রকৃত ঈমানের পরিচয় ও প্রমাণ পাওয়া যায়।
তাই আমরা যদি রমজানের পুণ্যকর্মগুলোকে নিজেদের জীবনের সঙ্গী বানিয়ে নেই তাহলে আমাদের জীবন হবে শান্তিময় আর আল্লাহপাক হবেন আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট।
সাধারণত দেখা যায়, সারা বছর যারা ইবাদত-বন্দেগিতে যতটা আগ্রহি না তারাও এই রমজান মাসে ইবাদতের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হয়। যারা কোন দিন মসজিদ মুখি হয় না তারাও রমজান মাসে মসজিদে কমপক্ষে দৈনিক একবার হলেও বাজামাআত নামাজ আদায় করেন।
এছাড়া এই দিনগুলোতে প্রতিটি মসজিদ মুসল্লিদের দ্বারা ছিল ভরপুর। মসজিদগুলো হয়ে উঠেছিল প্রাণবন্ত। কিন্তু যেদিন থেকেই রমজান শেষ হয় সে দিন থেকেই মসজিদের মুসল্লি কমতে থাকে। মসজিদ কাঁদে মুসল্লির জন্য।
যে যুবকরা নিয়মিত মসজিদে এসে নামাজ আদায় করতো তাদের আর চোখে পরে না, যারা গরীবদের মুখে খাবার ও বস্ত্র তুলে দিত তারাও যেন কোথায় হারিয়ে যায়। এই সব দান-খয়রাত আর ইবাদত-বন্দেগি কি শুধু রমজান মাসের জন্যই সীমাবদ্ধ? অবশ্যই না। প্রকৃত মোমেন তারাই যারা রমজানের নেক আমলকে বছরজুড়ে জীবিত রাখে আর সারা বছরই আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকে।
আল্লাহ পাক এটাই চান যে, তার বান্দারা যেন সব সময় সৎ কাজ করে আর তাদেরকে কিভাবে ক্ষমার চাদরে আবৃত করা যায়।
যেভাবে হাদিসে উল্লেখ আছে, হজরত আবু যার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত মহানবি (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি একটি সৎ কাজ করবে, সে এর দশ গুণ অথবা অধিক সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি একটি অন্যায় করবে, সে তেমনি একটি অন্যায়ের শাস্তি পাবে অথবা আমি মাফ করে দিব। যে ব্যক্তি আমার এক বিঘত নিকটবর্তী হবে, আমি তার এক হাত নিকটবর্তী হবো, যে ব্যক্তি আমার এক হাত নিকটবর্তী হবে, আমি তার দুই হাত নিকটবর্তী হবো। যে ব্যক্তি হেঁটে হেঁটে আমার কাছে আসবে আমি দৌড়ে তার কাছে যাবো। যে ব্যক্তি পৃথিবী সমান গুনাহ নিয়ে আমার সাথে সাক্ষাত করবে, অথচ সে আমার সাথে কোনো কিছু শরিক করেনি, আমি তার সাথে অনুরূপ পৃথিবীভর্তি ক্ষমা নিয়ে সাক্ষাত করবো (মুসলিম)।
তাই রমজানে যেভাবে আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ভালোবাসা লাভ করার জন্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা করেছি ঠিক একই প্রেরণা নিয়ে সারাটা বছর অতিবাহিত করার চেষ্টা করতে হবে। তবেই না এ রমজান আমাদের জন্য বয়ে আনবে প্রভূত কল্যাণ।
আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে পবিত্র মাহে রমজানের নেক আমলগুলোকে সারা বছর পালন করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
[email protected]
এইচআর/এএসএম