ঈদযাত্রা হোক নিরাপদ ও স্বস্তির
ঈদ যেমন মুসলমানদের জীবনে খুশি নিয়ে আসে, ঠিক তেমনি ঈদে অনেক পরিবারে কালো মেঘ বা দুঃখও আসে। কারণ ঈদযাত্রায় অনেক পরিবারের কর্তা বা ছেলে-মেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। যা কখনও মেনে নেওয়ার মত না। সাধারণত ঈদে ঘরমুখো মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ২৯ রমজান পর্যন্ত অফিস খোলা থাকবে। আগামী ৫ এবং ৬ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি। ৭ এপ্রিল শবেকদরের ছুটি। কিন্তু মাঝে ৮ ও ৯ এপ্রিল খোলা। দুইদিন কর্মদিবস থাকায় যাত্রীর বড় অংশ আগেভাগে শহর ছাড়তে পারবে না।
সড়কে ৯ এপ্রিল বিকেল থেকে চাপ বাড়বে। ছুটি কমে যাওয়ায় একসঙ্গে যাত্রীর চাপ সড়কে পড়লে যানজটের ভোগান্তি অবধারিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেজন্য অনেক বেশি নজরদারি বাড়াতে হবে সড়কপথে। গত বছর ঈদে পাঁচ দিনে রাজধানী শহর ঢাকা ছেড়েছেন এক কোটির বেশি মানুষ। এবছর অবশ্যই গতবছরের চেয়ে কম হওয়ার কথা না। তাই মানুষের ঈদযাত্রা যেন নিরাপদ হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তীক্ষ্ণ নজরদারি থাকলে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রামে ঈদ করতে যাওয়া মানুষের যাতায়াত তুলনামূলক স্বস্তির হয়।
রাজনৈতিক এবং অন্যান্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় এবারের ঈদে আরও বেশি মানুষের জনসমাগম হবে এবং বেশি মানুষ গ্রামমুখী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। 'নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা' মানুষের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। অতীতে করোনা মহামারির কারণে মানুষ কম ঈদযাত্রা করেছে। কিন্তু এখন তেমন কোন খারাপ পরিস্থিতি নেই,তাই ঈদে গতবারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আসন্ন ঈদযাত্রায় ঈদের আগে ও পরে কয়েক দিন তীব্র যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ সরকারি ছুটি তিনদিন মাত্র। অসহনীয় যানজটে যাত্রীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। এছাড়া পথে পথে যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এবারের ঈদে কালবৈশাখীর শঙ্কা থাকায় নৌপথ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই আনফিট নৌযান চলাচল বন্ধ করতে হবে। আগামী ২৫ রমজান থেকে লাখ লাখ যাত্রীর গণপরিবহন সংকট দেখা দিতে পারে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ছুটির ক্লাস্টার করে এটি সমাধান করা যেতে পারে। চাকরিজীবীদের পরিবারের সদস্যদের আগে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। ঢাকার ওপর চাপ কমাতে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। বিকেন্দ্রীকরণ করলে ঢাকায় আসা-যাওয়া মানুষের সংখ্যা কমে যাবে, যার সুফল পাবে সব জনগণ।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫০৫ জন মারা গেছেন। যেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৭ হাজার ৯০২ জন। এর দায় কার? প্রতিবছর ঈদ এলে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা হয়ে থাকে। কিন্তু যাত্রীদের দুর্ভোগ ও সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি কমেনি। সড়কে উন্নয়নের নানা কথা শুনতে পাই,কিন্তু বাস্তবে এর সুফল কি সাধারণ জনগণ ভোগ করতে পারছেন? এসব দুর্ঘটনা বা ভোগান্তি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। মানুষ এখন রাস্তায় নামলে বাসায় ফিরে আসবে কিনা সন্দেহ থেকে যায়। কারণ,প্রতিবছর সড়কে দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা খুব আশঙ্কাজনক।
এবছর ঈদযাত্রায় এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ যাতায়াত করতে পারে। এতে ৯ এপ্রিল থেকে ২০ এপিল পর্যন্ত ঈদবাজার, গ্রামের বাজার যাতায়াতসহ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির পরিবহনে বাড়তি প্রায় ৫০-৬০ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। সরকার অনেক পদক্ষেপ নেওয়ার পরও সড়ক দুর্ঘটনা রোধ বা প্রাণহানি কমিয়ে আনা যায়নি। অথচ গত দশকে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যয় বেড়েছে অনেক।
যানজট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গণপরিবহনে সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় খুবই খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে। যার ফলে অনেকের ঘরের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে যেতে পারে। তাই সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আমাদের সবার সচেতন হতে হবে যাতায়াতের সময়। ঈদে কেনাকাটার জন্য যেভাবে মানুষ ঘর থেকে শপিংয়ের জন্য বের হচ্ছেন; তাতে মনে হয় এবারের ঈদযাত্রায় বিভাগীয় শহরে যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে পারেন সাধারণ মানুষ। তাই রাজধানীসহ সব বিভাগীয় শহরে ফুটপাত হকার ও অবৈধ পার্কিংমুক্ত করা জরুরি।
অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ ও পরিবহন সংকট, অতিরিক্ত দ্রব্যমুল্যর চাপ কমাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালাতে কিছু কিছু পরিবহন মালিক-চালক বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনেক বেশি তৎপর থাকতে হবে, যাতে কোনো অসাধু পরিবহন মালিক বা চালক বেশি ভাড়া আদায় করতে না পারে।
ভাড়া নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও দৃষ্টান্তমূলক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতায় যাত্রাপথে দ্বিগুণ বা তিন গুণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ হয়নি। অর্থাৎ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং যাত্রী হয়রানি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। শুধু সড়কপথে এসব হয়,তা কিন্তু নয়; বরং নৌপথে ভাড়া নৈরাজ্যের পাশাপাশি সারাদেশে নৌ ও ফেরিঘাটে নিয়োজিত ইজারাদারদের ঈদে যাত্রী পারাপারে বাড়তি টোল আদায়ের নৈরাজ্য আছে। এবারও তারা তৎপর হয়ে উঠতে পারে। যাত্রী হয়রানি বন্ধে নৌপরিবহন ও সড়ক মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ একান্ত কাম্য।
শিমুলিয়া-বাংলাবাজার,পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াসহ বিভিন্ন ফেরিঘাটে যানবাহন চলাচলে ফেরির সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করতে হবে ঈদের সময়। এ ছাড়া চলমান ফেরিগুলোর যথাযথ ব্যবহার সুনিশ্চিত করা জরুরি। এবারের ঈদে কালবৈশাখীর শঙ্কা থাকায় নৌপথ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই আনফিট নৌযান চলাচল বন্ধ করতে হবে। আগামী ২৫ রমজান থেকে লাখ লাখ যাত্রীর গণপরিবহন সংকট দেখা দিতে পারে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ছুটির ক্লাস্টার করে এটি সমাধান করা যেতে পারে। চাকরিজীবীদের পরিবারের সদস্যদের আগে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। ঢাকার ওপর চাপ কমাতে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। বিকেন্দ্রীকরণ করলে ঢাকায় আসা-যাওয়া মানুষের সংখ্যা কমে যাবে, যার সুফল পাবে সব জনগণ।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক,হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ,জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
এইচআর/এএসএম