ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

আপনি কি মাসে মাত্র একটি বদ-অভ্যাস ত্যাগ করতে পারবেন!

সাইফুল হোসেন | প্রকাশিত: ০৯:৪৮ এএম, ০৪ এপ্রিল ২০২৪

মানুষ হচ্ছে আল্লাহর এক মিরাকেল সৃষ্টি। তার সক্ষমতা অন্য যে কোনো প্রাণীর চেয়ে অনেক বেশি। মানুষ অনেক কিছু পারে কিন্তু মানুষ নাকি তার স্বভাব সহজে পরিবর্তন করতে পারে না। যে কোনো একটি বদ-অভ্যাস বিশেষ করে যেটা কারও মধ্যে রুটেড হয়ে গেছে সেটা থেকে বের হয়ে আসা এতো সহজ নয়।

কিন্তু সেটা কীভাবে? বদ-অভ্যাস পরিত্যাগ করা খুবই কঠিন কাজ কিন্তু সত্যিকার অর্থে অসম্ভব নয়। যে মানুষ দুনিয়ায় অনেক কঠিন কঠিন কাজ করতে পারে, অসাধ্য সাধন করতে পারে, সেই মানুষ যদি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে তবে তার দ্বারা এ বদ-অভ্যাস পরিত্যাগ করা অবশ্যই সম্ভব।

বদ-অভ্যাস কীভাবে ত্যাগ করা যায় সে বিষয় নিয়ে অনেক ভিডিও আপনি পাবেন। কেউ কেউ আপনাকে মেডিটেড করতে বলবে, ইয়োগা করতে বলবে, কেউ একটা লম্বা কোর্সের মধ্যে দিয়ে যেতে বলবে। এক একটা প্রসেসের মধ্যে দিয়ে গেলে এক ধরনের ফল পাওয়া যায়। কিন্তু আমি শুধু আপনার একটা দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে চাই। আপনার সব সক্ষমতা দিয়ে একটু চেষ্টা করে দেখুন তো, আমার বিশ্বাস যে আপনার বদ অভ্যাস ত্যাগ করার জন্য আপনার একটি সিদ্ধান্তই যথেষ্ট।

আপনি ঠিক করুন যে আপনি কোন অভ্যাসটা নিয়ে আজ থেকে কাজ শুরু করবেন। আর নিজেকে কনভিন্স করুন যে হ্যাঁ আপনার জীবন থেকে প্রত্যেকটা বদ অভ্যাস একে একে চলে যাবে। আপনি একজন পরিশুদ্ধ মানুষে পরিণত হবেন, একজন অধিকতর ভালো মানুষে পরিণত হবেন। আপনার জন্য শুভকামনা।

সিদ্ধান্তটা হলো আপনি প্রথমে লিস্ট করুন আপনার বদ অভ্যাস কী কী আছে। লিস্ট করে এটাকে প্রায়োরোটাইজ করুন। ধরুন আপনার সিগারেট খাওয়া একটা বদ অভ্যাস। এ বদ অভ্যাসটা আপনি ত্যাগ করবেন। আপনি দেরিতে ঘুম থেকে ওঠেন। এই বদ অভ্যাসটা আপনি ত্যাগ করবেন। আপনি প্রচুর চিনি খান। এ বদ অভ্যাস আপনি ত্যাগ করবেন। আপনি অনেক রাত জাগেন। এই বদ অভ্যাসটা আপনি ত্যাগ করবেন। আপনি অন্যের নামে বদনাম করেন। এটা থেকে আপনি বের হতে চান।

এরকম যতগুলো বদ অভ্যাস আপনার আছে আপনি যদি একটা লিস্ট করেন তাহলে দেখবেন যে এই বদ অভ্যাসগুলোর তালিকা কিন্তু আপনার বেশি বড় হবে না। ১০ থেকে ১৫টা হবে। এখন আপনি নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করুন যে ‘আমি এই বদ অভ্যাসগুলো থেকে বের হয়ে আসবো একে একে এবং বের হয়ে আর রিপিট করবো না’।

এটা কঠিন হলেও চেষ্টা করলে কিন্তু সম্ভব। এ বদ অভ্যাসগুলো থেকে বের হয়ে আসতে পারলে অনেক ভালো একটা কিছু আসবে আপনার জীবনে। আমার কথা হচ্ছে প্রতি মাসে আপনি একটা বদ অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসুন।

মূলত যদি একটা মানুষ ২১ দিন একটা অভ্যাস থেকে দূরে থাকে তাহলে সে অভ্যাস থেকে পুরোপুরি সরে আসা তার জন্য সহজ হয়। ধরেন আপনি সিগারেট খান একদিনে দুই প্যাকেট। যদি প্রথম দিনে একেবারে না খান তাহলে আপনি আসলে পারবেন না। আপনি প্রথমে মাত্রাটা কমাবেন বা সচেতন থাকবেন যে আপনি একটা প্রসেসের মধ্যে নেমেছেন এক মাসের মধ্যে আপনি সিগারেট থেকে সম্পূর্ণ দূরে সরে আসবেন।

আপনার মাত্রা কমাতে হবে। প্রথম দিন আপনি ১২টা, পরের দিন ৮টা। এভাবে করতে করতে আপনার শূন্যতে নিয়ে আসতে হবে। ব্যাপারটা সহজ নয়, অনেক মনোবল দিয়ে কাজটা করতে হবে। তাহলে দেখবেন আপনি আলটিমেটলি এসব থেকে বের হয়ে আসতে পারছেন।

আমি আমার জীবনে অনেক মানুষকে দেখেছি যে তারা সিগারেট খাওয়া ছেড়েছে কিন্তু কিছুদিন পর আবার কোনো এক বন্ধুর পাল্লায় পড়ে শুরু করেছে। পরে আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। আপনি যদি একবার এই বদ অভ্যাস ছেড়ে দিতে পারেন তাহলে আপনাকে অনেক কেয়ারফুলি মুভ করতে হবে। এভাবে এক এক করে আপনার সব বদ অভ্যাস ছাড়তে শুরু করুন।

সব বদ অভ্যাস আপনি একটু একটু করে ছাড়তে শুরু করুন মাসে মাসে। শুধু বদ অভ্যাস থেকে সরে আসাটাই বড় কথা নয় বদ অভ্যাস থেকে সরে খরচটা আপনার বাঁচছে সেটা ভালো কিছুতে ট্রান্সফার করতে হবে। যেমন- সিগারেট এখন আপনি খাচ্ছেন না মাসে যে টাকা আপনার থাকছে সে টাকা আপনি সেভ করুন।

আপনি ৮টার সময় আগে ঘুম থেকে উঠতেন এখন ৬টার সময় ওঠেন। এটার জন্য আপনার কিছু প্রিপারেশন নেওয়ার আছে। এই দুই ঘণ্টা কি করবেন সেটা আপনি ঠিক করুন। আপনি কি পড়াশোনা করবেন, এক্সারসাইজ করবেন নাকি পড়বেন? কি করবেন আসলে এটা আপনাকে ঠিক করতে হবে।

এভাবে প্ল্যান করে যদি আপনি চেষ্টা করেন তাহলে দেখবেন যে এক মাসে আপনি একটা করে বদ অভ্যাস থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে আনতে পারছেন এবং এক বছরের মধ্যে দেখবেন যে আপনার বারোটা বদ অভ্যাস আপনার থেকে দূরে সরে গেছে।

সুতরাং আপনি আজ ঠিক করুন যে আপনি কোন অভ্যাসটা নিয়ে আজ থেকে কাজ শুরু করবেন। নিজেকে কনভিন্স করুন যে হ্যাঁ আপনার জীবন থেকে প্রত্যেকটা বদ অভ্যাস একে একে চলে যাবে। আপনি একজন পরিশুদ্ধ মানুষে পরিণত হবেন, একজন অধিকতর ভালো মানুষে পরিণত হবেন। আপনার জন্য শুভ কামনা।

লেখক: দি আর্ট অব পার্সোনাল ফাইনান্স ম্যানেজমেন্ট বইয়ের লেখক, কলামিস্ট, ইউটিউবার এবং ফাইনান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট।

এইচআর/ফারুক/এএসএম

আরও পড়ুন