ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

মাহে রমজান

নাজাতের দশকে বিশেষ ইবাদত

মাহমুদ আহমদ | প্রকাশিত: ০৯:১৯ এএম, ০১ এপ্রিল ২০২৪

আজ নাজাতের দশকের প্রথম দিন। দেখতে দেখতেই মাহে রমজানের রহমত ও মাগফিরাতের দিনগুলো শেষ হয়ে গেল। এখন শেষ দশক। নাজাতের এই দশকে নিজ, পরিবার এবং সমগ্র বিশ্বের শান্তির জন্য অনেক বেশি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে একান্ত বিনয়ী হয়ে দোয়া এবং রাতগুলোকে ইবাদতের মাধ্যমে জাগ্রত রাখবে মুমিন-মুত্তাকিরা। বিশেষ ইবাদতের লক্ষ্যে তারা ইতিকাফও করবেন।

পৃথিবীর যে দিকেই তাকাই সর্বত্রই যেন ফেতনা-ফ্যাসাদ-নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা আর অশান্তি বিরাজ করছে। এই মুহুর্তে আমাদের সকলকে আল্লাহতায়ালার কাছে অনেক বেশি প্রার্থনা করতে হবে। একমাত্র তিনিই যদি দয়া করেন তাহলে এই বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি। এছাড়া পবিত্র রমজান হলো দোয়া কবুলের সর্বোত্তম মাস। তাই নাজাতের এ দিনগুলোতে আমাদেরকে দোয়ার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে।

যে ব্যক্তি প্রকৃত প্রেরণা নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে আল্লাহতায়ালা তাকে কখনও ব্যর্থ হতে দেন না। যেভাবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। কিন্তু যারা আমার ইবাদত সম্বন্ধে অহংকার করে, তারা নিশ্চয় লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (সুরা মোমেন, আয়াত: ৬০)।

আবার তিনি ইরশাদ করছেন ‘অথবা কে উদ্বিগ্নচিত্ত ব্যক্তির দোয়া শুনেন যখন সে তার নিকট দোয়া করে এবং তার কষ্ট দুর করে দেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীর উত্তরাধিকারী করে দেন? আল্লাহর সাথে কি অন্য কোন উপাস্য আছে? তোমরা খুব কমই উপদেশ গ্রহণ কর’ (সুরা নামল, আয়াত: ৬২)।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দার দোয়া গ্রহণ করার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করেন, কখন তার বান্দা তাকে ডাকবে আর তিনি তা গ্রহণ করবেন এবং তার দু:খ কষ্ট দুর করবেন। তিনি সবার খুবই নিকটে রয়েছেন, যেভাবে কোরআনে আরো উল্লেখ রয়েছে ‘আর যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে, তখন বল, আমি নিকটে আছি। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার উত্তর দেই যখন সে আমার নিকট প্রর্থনা করে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সারা দেয় এবং আমার ওপর ঈমান আনে যাতে তারা সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬)।

এ আয়াত থেকে স্পষ্ট, তিনি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার উত্তর দিয়ে থাকেন। আমারা যদি প্রকৃতভাবে তাকে ডাকি তাহলে অবশ্যই তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দিবেন। তিনিতো সেই জীবিত খোদা, যে খোদা পুর্বেও কথা বলতেন আর এখনও বলেন, তবে শর্ত হচ্ছে পবিত্রাত্মার। আমাদের আত্মাকে যদি সম্পূর্ণরূপে বাহ্যিকতা থেকে মুক্ত করতে পারি এবং পবিত্রাত্মার অধিকারী হতে পারি তাহলে তিনি অবশ্যই আমাদের দোয়াও গ্রহণ করবেন। আর এই রমজান হচ্ছে আত্মা পবিত্রময় করার সর্বোত্তম সময়। তাই রমজানের এ অবশিষ্ট দিনগুলোকে আমাদের সবার কাজে লাগাতে হবে।

আমাদের প্রিয়নবী (সা.) পবিত্র মাহে রমজানের নাজাতের এ দশকে অধিক পরিমাণ ইবাদত করতেন। রাতের বেশিরভাগ সময় সালাত, দোয়া-জিকির এবং কুরআন তেলাওয়াত করে কাটাতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘মহানবী (সা.) রমজানের শেষ দশকে এত বেশি ইবাদত করতেন, যা তিনি অন্য সময়ে করতেন না’ (মুসলিম)।

রমজানের এ শেষ দশক নাজাত বা মুক্তির দশক আর এতে দোয়া কবুলিয়তের বিশেষ মুহূর্ত সৃষ্টি হয়। এই শেষ দশকে আল্লাহকে লাভ করার জন্য অনেকে ইতিকাফ করছেন। ইতকাফকারীরা একাগ্রতার সাথে খোদাকে ডাকছেন এবং তারা কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার উদ্দেশ্যে এবং তাঁরই ভালবাসায় আত্মমগ্ন হয়ে ইতেকাফে বসেছেন আর গভীর ভাবে দোয়াতে রত আছেন। আল্লাহপাক তাদের ইতিকাফ গ্রহণ করে তাদেরকে তাঁর দয়ার চাদতে আবৃত করে নিন।

হজরত ইবনে উমর (রা.) বর্ণিত হাদিসে হজরত নবী করিম (সা.) বলেন, ‘সৎকর্মশীলতার দিক দিয়ে আল্লাহর দৃষ্টিতে রমজানের শেষ দশকের চেয়ে মহৎ ও প্রিয় আর কোন দিন নেই’। (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, ২য় খণ্ড) অর্থাৎ এই দশকে আল্লাহতায়ালা অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক বেশি মাহাত্ম্য দান করেন। নইলে, কোন দিন বা রাত আল্লাহর কাছে কী করে মহান হতে পারে? মহান এ দিক দিয়েই যে, এই দশকে আল্লাহর সংস্পর্শে যারা আসে তাদেরকে এটি মহানে পরিণত করে। মহান আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক যতো নিবিড় হবে, বান্দাও ততো মহানে পরিণত হতে থাকবে।

তাই আসুন, আমরা সবাই সবার নিরাপত্তা ও মঙ্গলের জন্য পবিত্র মাহে রমজানের এই শেষ প্রান্তে এসে অনেক বেশি দোয়ায় রত হই আর আমাদের রাতগুলোকে জাগ্রত রাখি বিশেষ ইবাদতে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে আমাদের সবিনয় প্রার্থনা, হে দয়াময়! আপনি আমাদের ক্ষমা করুন আর অশান্ত বিশ্বকে শান্তিময় করে দিন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ধর্মের নামে যে হানাহানী আর রক্তপাতের ঘটনা ঘটছে তার অবসান ঘটিয়ে শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত করুন।
বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ দলাদলি বন্ধ করে সবাই যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে একক ঐশী নেতৃত্বের পতাকাতলে সমবেত হয়ে ইসলামের অনুপম শিক্ষা পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে দেয়ার সৌভাগ্য লাভ করে।

আল্লাহপাক মুসলিম উম্মাহকে রমজানের এই শেষ দশ দিন বিশেষ ইবাদতে রত থেকে অতিবাহিত করার তৌফিক দান করুন এবং সবাইকে তার রহমতের চাদরে জড়িয়ে নিন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
[email protected]

এইচআর/জেআইএম