ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

মাহে রমজান

১৭ রমজানের মাহাত্ম্য, জেগে উঠুক মুমিন হৃদয়

মাহমুদ আহমদ | প্রকাশিত: ০৯:৩৩ এএম, ২৮ মার্চ ২০২৪

আজ ১৭ রমজান। ঐতিহাসিক বদর দিবস। ইসলামের ইতিহাসে ১৭ রমজানের গুরুত্ব অতি ব্যাপক। বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল হিজরি দ্বিতীয় সালের এই ১৭ রমজানে। এ যুদ্ধে আল্লাহতায়ালা তার ফেরেশতা বাহিনী দ্বারা যুদ্ধ করিয়ে মুসলমানদেরকে বিজয় দান করেছিলেন।

বদরের প্রান্তরের যে স্থানটিতে মুসলমানেরা অবস্থান নিয়েছিলেন, সেখানে সূর্যের তেজ সরাসারি তাদের মুখের ওপর পতিত হয়। কিন্তু কাফেরদের মুখে দিনের বেলায় সূর্যের আলো পড়ে না।

মুসলমানেরা যেখানে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করবেন, সেখানে বালুময় মাটি যা যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য উপযুক্ত নয়। অপর দিকে কাফেররা যেখানে অবস্থান নিয়েছিল, সেখানে মাটি শক্ত এবং যুদ্ধের জন্য স্থানটি উপযুক্ত। কিন্তু অবস্থান নেয়ার ফলে অবশেষে কী হলো?

রমজান মাসের ১৬ তারিখ দিনটি শেষ, মাগরিবের পর তারিখ বদলে গেল, অতঃপর ১৭ রমজান শুরু হলো। সেই রাতে মহানবী (সা.) এবং তার সাথিরা ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। অপর দিকে কাফেররাও তাদের ক্যাম্পে অবস্থান করছিল। ১৭ রমজানের এই বিশেষ রাতে আল্লাহতায়ালার নিকট সিজদায় পড়ে সাহায্য প্রার্থনা করছেন মানবতার মুক্তির দূত বিশ্বনবি ও শ্রেষ্ঠনবি হজরত মুহাম্মদ (সা.)।

তিনি কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, ‘হে দয়াময় আল্লাহ! আগামীকালের নীতিনির্ধারণী যুদ্ধে তোমার সাহায্য আমাদের অতি প্রয়োজন। এই যুদ্ধে আমরা তোমার সাহায্য ছাড়া বিজয় লাভ করতে পারব না। আর আমরা যদি পরাজিত হই তাহলে তোমাকে সিজদা করার কিংবা তোমার নাম ধরে ডাকার লোক এই পৃথিবীতে আর নাও থাকতে পারে। অতঃপর তুমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো কী করবে। কারণ, তুমিই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মালিক। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে প্রাণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যাবো। আমরা আমাদের জীবন তোমার পথে উৎসর্গ করলাম। বিনিময়ে তোমার দ্বীনকে আমরা তোমার জমিনে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তুমি আমাদেরকে বিজয় দান করো। আমরা তোমার কাছে সাহায্য চাই’ (যুরকানি, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪১৯ ও ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৭)

মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই দোয়া আল্লাহতায়ালা কবুল করলেন। ওই রাতে মরুভূমিতে প্রবল বৃষ্টি হলো। এই বৃষ্টি মুসলমানদের জন্য কল্যাণে পরিণত হল। কারণ, বৃষ্টির কারণে কাফেরদের যুদ্ধের মাঠের শক্ত মাটি কাদায় ভরে পিচ্ছিল হয়ে গেল। অপর দিকে মুসলমানদের বালুময় যুদ্ধের মাঠ শক্ত হয়ে গেল।

ঐ রাত্রেই আল্লাহতায়ালা মহানবীকে (সা.) শুভ সংবাদ দিয়ে বললেন, তোমার অমুক অমুক শত্রু মারা যাবে এবং তারা অমুক অমুক জায়গায় মারা পড়বে। ঠিক তা-ই ঘটল। যখন যুদ্ধের সময় ঘনিয়ে এলো, তখন মহানবি (সা.) যে স্থানে বসে বসে প্রার্থনা করতেন সেই স্থান থেকে বের হয়ে এলেন এবং বললেন, শত্রু সেনাদল পর্যুদস্ত হয়ে যাবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পলায়ন করবে। আল্লাহ পাক এমনটিই করেছেন। সুবহানআল্লাহ।

মহানবির (সা.) একনিষ্ঠ এবং প্রাণপ্রিয় সাহাবিরা এ যুদ্ধের পূর্বে এই কসমই খেয়েছিলেন যে, আমরা আপনার ডানে যুদ্ধ করব, আপনার বামে যুদ্ধ করব, আপনার সামনে যুদ্ধ করব, আপনার পিছনে যুদ্ধ করব এবং হে আল্লাহর রসুল! যে দুশমন আপনার ক্ষতি সাধন করতে এসেছে তারা আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তারা আমাদের লাশের ওপর দিয়ে যাবে। হে আল্লাহর রাসুল! যুদ্ধ তো একটা মামলি ব্যাপার। এখান থেকে কিছু দূরেই সমুদ্র, আপনি যদি হুকুম দেন যে, তোমরা তোমাদের ঘোড়া নিয়ে সেই সমুদ্রে ঝাঁপ দাও, তাহলে আমরা তৎক্ষণাৎ ঘোড়াসহ সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ব’ (ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃ. ১২)।

এ যুদ্ধে আল্লাহতায়ালা মুসলমানদেরকে সাহায্য করেছিলেন তার ফেরেশতা বাহিনী দ্বারা। বোখারি শরিফের হাদিস মোতাবেক, যুদ্ধের শেষে সাহাবিদের মধ্য থেকে কেউ কেউ সাক্ষী দিয়েছেন আর তারা বলেছেন, আমরা সাদা পোশাক পরিহিত কিছু ব্যক্তিকে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করতে দেখেছি। তাদেরকে আমরা যুদ্ধের আগে কখনো দেখিনি, এমনকি যুদ্ধের পরও দেখিনি।

শেষে এটাই বলব, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়ার বরকতেই এ যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয় লাভ করেছিলেন।

তাই আসুন, আজ সেই ঐতিহাসিক দিনে আল্লাহপাকের দরবারে পবিত্র হৃদয় নিয়ে বিনয়ের সাথে দোয়া করি, হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করে তোমার মাগফিরাত দান কর।

হে দয়াময় প্রভু! ধর্মের নামে বিশ্বময় যে অরাজকতা সৃষ্টি হচ্ছে তার অবসান কর। হে পরম কৃপাকারী আল্লাহ! আমাদের রোজাগুলোকে গ্রহণ করে নিয়ে তোমার কৃপার চাদরে জড়িয়ে নাও, আমিন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
[email protected]

এইচআর/এএসএম

আরও পড়ুন