ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

আতিকউল্লাহ খান মাসুদ : স্বপ্নদ্রষ্টার সাফল্যগাথা

ড. মিল্টন বিশ্বাস | প্রকাশিত: ১১:৪২ এএম, ২২ মার্চ ২০২৪

১৯৯৩ সাল। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী।সেসময় দৈনিক সংবাদপত্র পাঠ একটা রুটিন ওয়ার্ক ছিল। জগন্নাথ হলের রিডিং রুমে ‘ইত্তেফাক’ কিংবা ‘সংবাদ’ নিয়মিত পাঠ করার সুযোগ হয়। সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে এই পত্রিকাগুলোর সাহিত্যপাতা আকর্ষণের বিষয় ছিল।চলছিল খালেদা জিয়ার শাসনামল।ইতিহাস বিকৃতির জোয়ারে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল দেশকে।বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছিল। মুক্তিযুক্তের চেতনা ও মুক্তচিন্তার আঙিনায় ধর্মীয় মৌলবাদীরা জায়গা জুড়ে বসেছিল।সামাজিক জীবনে নতুন নতুন অস্থিরতার সূচনা হয়েছিল-মাদকের অবাধ অনুপ্রবেশ ঘটে। তরুণ প্রজন্মকে বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসর থেকে ভোগবিলাসে লিপ্ত করার নানা প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়।কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের উপর আস্থা দৃঢ় করার সকল অবৈধ কার্যসূচি বাস্তবায়ন করার পিছনে অর্থ ঢালা হচ্ছিল।সাংস্কৃতিক জীবনে মান সম্পন্ন শিল্প-সাহিত্যের বিকাশ রুদ্ধ হয়েছিল।ঠিক এই আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দৈনিক জনকণ্ঠ আত্মপ্রকাশ করে। জয় করে নেয় কোটি বাঙালি পাঠককের হৃদয়। পত্রিকাটি প্রকাশ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ এবং প্রচার করে চলেছে। পাশাপাশি পত্রিকাটি সব সময় স্বাধীনতাবিরোধীদের বিপক্ষে সরব অবস্থানে রয়েছে। তার অন্যতম প্রকাশনা হচ্ছে ‘সেই রাজাকার’।

এই বইটি দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।প্রথম থেকেই দেখা গেছে দৈনিক জনকণ্ঠ’র একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও উদার রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি পক্ষপাতিত্ব রয়েছে।জনকণ্ঠের মধ্য দিয়েই আমরা মোনাজাতউদ্দিনের(১৯৪৫-১৯৯৫) মতো বিখ্যাত চারণ সাংবাদিক ও লেখকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি।১৯৯৫ সালের মাঝামাঝি তিনি দৈনিক জনকণ্ঠে সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি তাঁর প্রতিবেদনের মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনকে শহরবাসীর কাছে তুলে ধরার মহৎ কাজটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল কাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও দুর্ভোগের চিত্র নিবিড়ভাবে লেখনিতে তুলে ধরেছেন।১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর নদীতে ফেরি দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান।তাঁর সংবাদটি পাঠকদের শোকে স্তব্ধ করে দেয়।জনকণ্ঠ নিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত একটি উদ্ধৃতি স্মরণীয়-‘‘মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরের অকুতোভয় গেরিলাযোদ্ধা মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ মূলত তিনটি নীতির ভিত্তিতে দৈনিক জনকণ্ঠ প্রকাশের উদ্যোগ নেন। একটি হচ্ছে তিরিশ লাখ শহীদের আত্মাহুতির মহাকাব্য মহান মুক্তিযুদ্ধকে সমুজ্জল রাখা এবং দ্বিতীয় হলো মুক্তিযুদ্ধের মূল নীতি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং তৃতীয়টি হলো দেশের তৃণমূল মানুষের কাছে দিনের পত্রিকা দিনেই পৌঁছে দেওয়া।

যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে নব্বইয়ের দশকেও দেশের তৃণমূল পর্যায়ে পত্রিকা পৌঁছাতে দুই থেকে তিনদিন লেগে যেত। তাই পত্রিকা প্রকাশের আগে দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ চিন্তা করেন কীভাবে দিনের পত্রিকা পাঠকের হাতে দিনেই পৌঁছে দেয়া যায়। সেই নীতির আলোকেই মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে ১৯৯২ সালে শুরু হয় দেশের পাঁচ বিভাগীয় শহর থেকে দৈনিক জনকণ্ঠ প্রকাশের উদ্যোগ। দেশ তখনও ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেনি, ছিল না কোন ইন্টারনেট ব্যবস্থা। এমনকি, কম্পিউটার ব্যবহারও ছিল সীমিত পর্যায়ে। ওই সময়ে দেশের পাঁচটি স্থান থেকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে নতুন একটি চাররঙা দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ ছিল দুঃসাহসিক উদ্যোগ। আবার ঝুঁকিও ছিল অনেক। সাহসিকতার সঙ্গে সেই ঝুঁকি গ্রহণ করেছিলেন সংবাদপত্র প্রকাশের অগ্রসেনানী আতিকউল্লাহ খান মাসুদ। ১৯৯৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত করে তিনি বাংলাদেশের মিডিয়া জগতে পুরনো গতানুগতিক ধাঁচ উপড়ে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশের পাঁচটি বৃহত্তর বিভাগীয় শহর থেকে একসঙ্গে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে দেশের সংবাদ মাধ্যমে নতুন এক মাত্রা যুক্ত করেছিল দৈনিক জনকণ্ঠ। রঙিন এই পত্রিকাটি প্রকাশ শুরু হয়েছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া ও সিলেট থেকে। বগুড়া বিভাগীয় শহর না হলেও এটি হচ্ছে উত্তরবঙ্গের কেন্দ্রবিন্দু। এ কারণেই রাজশাহীর পরিবর্তে বগুড়াকে বেছে নেওয়া হয়েছিল উত্তরবঙ্গের বিভাগীয় শহর হিসেবে।

সেই থেকে ভিন্ন এক বাস্তবতায় পথচলা শুরু করে দৈনিক জনকণ্ঠ, যখন সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে আজকের মতো অগ্রগতি ছিল না। কিন্তু পাঠককে প্রতিনিয়ত এগিয়ে রাখার সচেতন প্রয়াস ও দৃঢ় শপথেই বাজারে এলো এক নতুন দৈনিক পত্রিকা জনকণ্ঠ।’’ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী এককথায় স্বীকার করবেন যে, ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত সময়ে দৈনিক জনকণ্ঠের সাহসী ভূমিকা ছিল।আর পাঠককে সচেতন রাখার প্রয়াসটি প্রকৃতপক্ষে অগ্রগামী বাংলাদেশের জন্য জরুরি ছিল। এজন্য ছাত্র জীবন থেকেই জনকণ্ঠের পাতায় প্রকাশিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কলামগুলো পাঠ করে সমৃদ্ধ হয়ে উঠি।ইতিহাসকে জানা, বাংলাদেশ চেনার সূচনা জনকণ্ঠ পাঠের মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছিল বলে আজ এই পত্রিকার পাতায় নিজের লেখা প্রকাশিত হলে আলোড়িত হই।এজন্য কৃতজ্ঞতায় মন ভরে যায় মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদকে স্মরণ করে।

আসলে ২২ মার্চ দৈনিক জনকন্ঠ সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদের মৃত্যুবার্ষিকী নয় কেবল বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসঞ্চারী ও উন্নয়নের মহাসড়কে থাকা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের কৃতজ্ঞতা জানানোর দিন।তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও পত্রিকার সম্পাদককে হারানোর যে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছিল সেইসময় তখনই আমরা জেনেছিলাম বহুমাত্রিক প্রতিভার অনন্য দিশারি অবদানসমূহ।২০২১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মহাপ্রয়াণের পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, এমপি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছিলেন তাতে স্পষ্ট যে তিনি ছিলেনি একাত্তরের চেতনার জাগ্রত সন্তান এবং উন্নয়নের মহাসড়কে থাকা বাংলাদেশের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। শোক বার্তায় রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বলেছিলেন, ‘‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের অনুসারী আতিকউল্লাহ খান মাসুদের মৃত্যুতে জাতি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তির বাতিঘরকে হারাল। সংবাদপত্র প্রকাশনার জগতে মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ দিয়েছেন নতুন মাত্রা। তাঁর মৃত্যুতে দেশ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার একজন মহান মুক্তিযোদ্ধাকে হারাল।

আতিকউল্লাহ খান মাসুদ : স্বপ্নদ্রষ্টার সাফল্যগাথা

তিনি নতুন প্রজন্মের সংগঠক ও উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা হিসেবে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। আতিকউল্লাহ খান মাসুদকে একজন সজ্জন ও ভীষণ সহসী মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করে শোক বার্তায় আরও বলা হয়, তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশ ও এদেশের স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি একজন বুদ্ধিবৃত্তিক পুরোধাকে হারাল।’’ সম্পাদক পরিষদ (সম্পাদক পরিষদ)-এর তরফ থেকে সেসময় এক শোক বার্তায় বলা হয়-‘‘আতিকুল্লাহর মৃত্যুতে দেশ একজন প্রখ্যাত সম্পাদক ও অসাম্প্রদায়িক কণ্ঠস্বরকে হারালো।এই মুক্তিযোদ্ধা জনকণ্ঠকে একটি শক্তিশালী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিতে পরিণত করে গেছেন।’’ প্রেস ক্লাবে ৩ এপ্রিল, ২০২১ স্মরণসভায় বলা হয়েছিল, দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ চেতনার বাতিঘর ছিলেন। তাঁর অকাল মৃত্যুতে জাতি একজন লড়াকু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষকে হারিয়েছে।যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালন করার জন্য তারা জনকণ্ঠ সম্পাদকের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অন্যতম প্রতিষ্ঠান দৈনিক জনকণ্ঠ। এতে মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের প্রাণ খুলে লেখা ও বলার মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছেন সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেছিলেন, ‘সাংবাদিকতায় এখন নিরপেক্ষ থেকে কাজ করা কঠিন।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ছাড়া ভারসাম্যের সাংবাদিকতার সুযোগ কমে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা আক্রান্ত, তাই সঠিক ধারায় আমাদের চলতে হবে, যেমন চলেছিলেন জনকণ্ঠের সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ। তিনি অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ইস্যুতে কোন আপস করেননি।’

দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক, মুদ্রাকর, প্রকাশক এবং গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘‘মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ দীর্ঘ সময় সাহসিকতার সঙ্গে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় দৈনিক জনকণ্ঠ সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন। সংবাদপত্র প্রকাশনার জগতে মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ যুক্ত করেছেন নতুন মাত্রা। তাঁর মৃত্যুতে দেশ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হারাল। তিনি এই প্রজন্মের সংগঠক ও উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা হিসেবে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।’’ সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান এক শোকবার্তায় বলেছিলেন, ‘তিনি ছিলেন স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির বাতিঘর। তাঁর প্রকাশিত পত্রিকাটি সব সময়ই স্বাধীনতাবিরোধীদের বিপক্ষে সরব ছিল।’

প্রকৃতপক্ষে দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক, প্রকাশক এবং গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ বাংলাদেশের গণমাধ্যমে স্মরণীয় একটি নাম। তিনি ১৯৫১ সালের ২৯ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ জেলার মেদিনী মণ্ডল গ্রামে সম্ভ্রান্ত খান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।অত্যন্ত সাহসী আতিকউল্লাহ খান মাসুদ যুব বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ২নং সেক্টরের অধীনে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানা কমান্ডার হিসেবে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেন এবং অনেক বড় বড় অপারেশনে অংশ নেন। বিশিষ্ট এই মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধ শেষ করে ১৯৭২ সালে সফলভাবে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে কর্মজীবন শুরু করেন। তৎকালীন সফল তরুণ শিল্পপতিদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তিনি বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন।
তাঁর ব্যবসায়ী ক্ষেত্র ছিল বৈচিত্র্যময়।১৯৭৮ সালে তিনি সাফল্যের সঙ্গে জাপানের কারিগরি সহযোগিতায় গ্লোব ইনসেক্টিসাইডস লিঃ নামে দেশের প্রথম মশার কয়েল প্রস্তুতকারী শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ধোঁয়াবিহীন মশা নিবারক গ্লোব ম্যাট ও তেলাপোকা ধ্বংসকারক গ্লোব এ্যারোসল এই দুটি পণ্য এই কারখানায় উৎপাদন শুরু করা হয়।

১৯৯০ সালে গণচীনের কারিগরি সহযোগিতায় গ্লোব মেটাল কমপ্লেক্স লিঃ নামে আরও একটি ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠা করেন। আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ১৯৯৭ সালে ডেইরি ও কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য গ্লোব খামার প্রকল্প নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। ১৯৯৮ সালে দেশের গৃহায়ন সমস্যা বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত নাগরিকদের জন্য গৃহায়ন সমস্যা সমাধানকল্পে গ্লোব কনস্ট্রাকশন লিঃ নামে আরও একটি গৃহনির্মাণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ২০০০ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সমন্বয়কারী হিসেবে গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবার লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি নিজস্ব সাংগঠনিক মেধা ও প্রশাসনিক দক্ষতার গুণে প্রতি বছর দেশের কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে দেশে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন এবং দেশে উপরি-উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে অদ্যাবধি কয়েক হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। বর্তমানে ‘গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবার লিমিটেড’ অবস্থানগতভাবে বাংলাদেশে সফল, সুপরিচিত ও বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত।

জন্মলগ্ন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সপক্ষে এবং নীতির প্রশ্নে আপসহীন দৈনিক জনকণ্ঠ যে সাহসী ভূমিকা এ যাবত পালন করে এসেছে তা সহ্য করতে না পেরে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ওয়ান ইলেভেনের শুরুতেই অর্থাৎ ২০০৭ সালের ৭ মার্চ মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদকে জনকণ্ঠ ভবন থেকে রাত ১০টায় গ্রেফতার করে ৪২টি মিথ্যা মামলা দিয়ে ৪৫ কোটি টাকা জরিমানা এবং ৪৮ বছর কারাদণ্ড প্রদান করে দীর্ঘ ২২ মাস ১২ দিন কারান্তরীণ রাখে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে গণতন্ত্র ফিরে আসে এবং ২০০৯ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। আতিকউল্লাহ খান মাসুদ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৮৪-৮৬ সালে তিনি ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সহ-সভাপতি ও ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান ছাড়াও ১৯৮৫-৮৬ সালে গরিব ও অনাথ শিশুদের বিনা খরচে চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত তিনি বিক্রমপুরের লৌহজং মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন।

তবে একথা সত্য জনকণ্ঠ পত্রিকা দিয়ে আতিকউল্লাহ খান মাসুদ সবচেয়ে বেশি পরিচিত হয়েছেন। স্বাধীনতার পরে আশির দশক অবধি দেশের ইত্তেফাক, সংবাদ প্রভৃতি পত্রিকার পৃষ্ঠাসংখ্যা ছিল ৪, ৬ ও ৮; বিশেষ সংখ্যার জন্য ১২। তখন সংবাদপত্রের মুদ্রণ হতো প্রাচীন রীতি-পদ্ধতিতে।নব্বইয়ের দশকের শেষদিক থেকে কম্পিউটার কম্পোজের আগমন সংবাদপত্রের মুদ্রণে রীতিমতো বিপ্লব নিয়ে আসে, তখন দেশের কোনো কোনো সংবাদপত্র প্রথমবারের মতো নিয়মিত ১২ পৃষ্ঠা করে বের হতে থাকে। জনকণ্ঠ এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।জনকণ্ঠ প্রথম থেকেই ছিল ব্যতিক্রম, বৈচিত্র্যময়।প্রথম থেকেই প্রকাশের দিনেই গ্রাম-প্রান্তের মানুষের হাতে পৌঁছায়।দ্রুত পাঠকপ্রিয়তার কারণে ১৯৯৪ সালেই দৈনিক জনকণ্ঠ প্রচার সংখ্যায় শীর্ষস্থানে উঠে আসে।জনকণ্ঠের টিম সাজানো হয়েছিল তরুণ-প্রবীণের সংমিশ্রণে।সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাদের সঙ্গে নিয়েছিলেন এক ঝাঁক মেধাবী সংবাদকর্মী ও কর্মচারী। বহুমাত্রিক প্রতিভা দিয়ে ঢেলে সাজানো হয়েছিল পত্রিকাটি। আতিকউল্লাহ খান মাসুদের চিন্তা ও চেতনাকে তারা বাস্তবে রূপদান করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফলে পত্রিকা প্রকাশের এক বছরের মধ্যেই দৈনিক জনকণ্ঠ দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় পরিণত হয়। প্রগতিশীল সম্পাদকীয় নীতিমালার মিশেলে সংবাদ পরিবেশনে দেশে এক নতুন দুয়ার উন্মোচন করে দৈনিক জনকণ্ঠ। সৃষ্টি করে এক নবজাগরণ, যা সংবাদপত্র জগতে ইতিহাস হয়ে থাকবে।বলা হয়ে থাকে, সংবাদপত্র জনগণের মতামতকে ঠিক করে দেয়। অর্থাৎ গণমাধ্যমের এজেন্ডা পাবলিক এজেন্ডায় পরিণত হয়। সমাজে নানা ঘটনার মধ্যে কোনটি বেশি আলোচিত হবে বা গুরুত্ব পাবে গণমাধ্যমই তা নির্ধারণ করে দেয়। এর মধ্যে সহজবোধ্য ও দ্রুততম তথ্য প্রাপ্তির উৎস হিসেবে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া একধাপ এগিয়ে। অতীত এবং বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সংবাদপত্রের বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা যেমন নিশ্চিত করতে হবে তেমনি স্বাধীনভাবে কাজ করার যাবতীয় দিক উন্মোচন করা দরকার। তাহলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার গতি আরও ত্বরান্বিত হবে। আর সুশাসন সুমন্নত অবস্থানে পৌঁছালে তার মাধ্যমেই বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরও ভাল হবে।

জনকণ্ঠই সর্বপ্রথম গ্রামে-গঞ্জে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ক্যাডারদের দ্বারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সংবাদ প্রকাশ করে। ফলে হয়রানিমূলকভাবে জনকণ্ঠ পত্রিকা ভবনের বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন করা হয়। সেই সঙ্গে সরকারি সকল প্রকার বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয় খালেদা সরকার। ২১ জানুয়ারি ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে রিপোর্টার্স সান ফ্রন্টিয়ার্স জানায়-‘বিএনপি সন্ত্রাসীদের কুকর্মকাণ্ডের সত্য কথা প্রকাশ করায় দৈনিক জনকণ্ঠের সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ, বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণসহ সম্পাদকের ওপর হয়রানিমূলক মামলা বন্ধে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল রবার্ট ম্যাক নরর্ড এক চিঠিতে জনকণ্ঠ সাংবাদিকদের হয়রানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রেকর্ড অনুসারে পত্রিকাটির কমপক্ষে ৮ জন সাংবাদিক শারীরিকভাবে নিগৃহীত হন। ১২ জনকে হুমকির শিকার হতে হয়েছে। বিদেশের দূতাবাসসমূহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জনকণ্ঠ পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হয়।’

আসলে দৈনিক জনকণ্ঠ জোট সরকারের আমলে নির্বাচন-উত্তর সহিংসতার ঘটনা জনসমক্ষে প্রকাশ করলে বিএনপি-জামায়াত জনকণ্ঠের ওপর চড়াও হয়। ২৮ জুলাই ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে বিশিষ্ট কবি লেখক ও নাট্যকার সৈয়দ শামসুল হক জনকণ্ঠে তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে লিখেছিলেন- ‘জনকণ্ঠ রুদ্ধ হলে স্বাধীনতার চেতনা থেকে নিষ্প্রভ হয়ে যাব। প্রতিদিনের সংবাদপত্রে হত্যা, খুন, গুম, সন্ত্রাস, নারীর সম্ভ্রমহানির যে সব খবর ছাপা হয়, তার চেয়ে আর বড় প্রমাণ কি আছে, আমরা দেশে নয় জঙ্গলে বাস করছি। যতটুকু বাকি ছিল তা চূড়ান্ত হয়ে গেল রাতের অন্ধকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলে পুলিশী তাণ্ডবের ঘটনায়।’ তাছাড়া ওয়াশিংটন প্রবাসী বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজ জনকণ্ঠের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। জনকণ্ঠের বিরুদ্ধে ১৩২ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে সরকারি দল মামলা করার যে হুমকি দিয়েছে, তা শুধু সংবাদপত্রের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপই নয়, নজিরবিহীন।অথচ দেশের কোথায় কি ঘটছে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করার দায়িত্ব সংবাদপত্রের।

২৭ জুলাই ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডন প্রবাসী বিশিষ্ট কলামিস্ট ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর বক্তব্য ৮ জুলাই জনকণ্ঠে প্রকাশিত হয়। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘দুই ডিআইজি, তিন এসপির বদলির দাম উঠেছে প্রায় দুই কোটি টাকা শিরোনামে যে রিপোর্টকে কেন্দ্র করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দণ্ডবিধির ১৩১ ও ১৩২ ধারায় পত্রিকাটির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার হুমকি দিয়েছে, তা একটি আকস্মিক ব্যাপার নয়, পূর্ব পরিকল্পনার চক্রান্ত। এর আগে কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই পত্রিকাটির বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়। তারপর জনকণ্ঠ অফিসের বিদ্যুতের বিল বকেয়া না পড়া সত্ত্বেও অন্যায় অজুহাত দেখিয়ে বিদ্যুতের লাইন কেটে দেয়া হয়। পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকদের নানাভাবে মামলা দিয়ে হয়রানি তো চলছেই। সন্দেহ নেই জনকণ্ঠ দেশের মানুষের অভাব অভিযোগ, তাদের অত্যাচারিত, নিপীড়িত হওয়ার কাহিনি সাহসের সঙ্গে তুলে ধরছে। জনকণ্ঠের ৮ জুলাইয়ের রিপোর্টটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয় কিভাবে? চিহ্নিত রাষ্ট্রদ্রোহীদের নিয়ে সরকার গঠনের পর খালেদা-নিজামী জোট এখন চারদিকে রাষ্ট্রদ্রোহী খুঁজে বেড়াচ্ছে। দেশের যত দেশপ্রেমিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সরকারী অফিসারদের বিরুদ্ধে একটার পর একটা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা সাজানোর অপচেষ্টা চলছে। সেই পাকি শাসকদের এই চার দলীয় জোট সরকার অনুসরণ করে চলেছে। সরকারের সমালোচনা করলেই সে ভারতের দালাল আর তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ঠুকে দিচ্ছে।’’

উপরন্তু বিরোধী দলে থাকার সময় বিএনপি- এর একদল বিক্ষোভকারী দৈনিক জনকণ্ঠের অফিস ভবনের নিচতলায় হামলা চালায়।বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট, জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশনের মতে, বিএনপি বিক্ষোভকারীদের জনকণ্ঠে আক্রমণ করার আহ্বান জানানো হয়েছিল কারণ এটি একটি ‘সরকারি সংবাদপত্র’। প্রকৃতপক্ষে, জনকণ্ঠ একটি স্বাধীন দৈনিক যা তৎকালীন সরকার ও বিরোধী দল বিএনপি উভয়েরই সমালোচনা করেছে। ওই হামলায় আঠারোজন সংবাদপত্রের কর্মী আহত হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে ছিলেন ফটো এডিটর হক, ফটোগ্রাফার রেকু, ম্যানেজার ইসলাম ও সহকারী ম্যানেজার খান। বিএনপি নেতাকর্মীরা দেশীয় বিস্ফোরক, বন্দুক, ঢিল ও বাঁশের লাঠিতে সজ্জিত ছিল। জনকণ্ঠ ব্যবস্থাপনা সূত্রে জানা গেছে, তাণ্ডবের সময় তারা পত্রিকার ১৪টি গাড়িসহ বেশ কয়েকটি দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। গুলিও চালানো হয়।জনকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ খান মাসুদ, ঢাকা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষার পত্রিকা দ্য ইন্ডিপেনডেন্টকে বলেছিলেন, তিনি ‘‘নিজের চোখে দেখেছেন যে বিএনপি কর্মীরা ... আমার পত্রিকা অফিসে হামলা করেছে।’’ মাসুদ বলেন, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস উপদেষ্টা আনোয়ার জাহিদ এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। পত্রিকাটি অভিযোগ দায়েরের পর জাহিদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।অন্যদিকে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে মাইন বিস্ফোরণে জনকণ্ঠ ভবন উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টার কথা আমরা সকলে জানি।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট, জার্নালিজম এন্ড কমিউনিকেশন (বিসিডিজেসি)’র জরিপে দেখা যায়, বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে দেশে দু’শতাধিক সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত ও নিগৃহীত হন ২৮৫ জন সাংবাদিক। কেবল ২০০১-এর অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৮টি ঘটনায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৯ জন সাংবাদিক। চরম নির্যাতনের শিকার হয়েও প্রচলিত আইনের আওতায় দীর্ঘমেয়াদি আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো সময় ও অর্থ অনেক সাংবাদিকের নেই। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার গণ মানুষের তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বহুল প্রত্যাশিত ‘তথ্য অধিকার অধ্যাদেশ’কে আইনে পরিণত করে বেশ সুনাম অর্জন করেছে।আর সাংবাদিক সমাজের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য এই সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে আসলে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরও ভাল হবে যদি দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনকণ্ঠের মতো গণমাধ্যমকে কার্যকর ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়।

সংবাদপত্রকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের সাধ্যের মধ্যে রেখে প্রসারিত করেন তাঁর শাসনামলে। মুক্তিসংগ্রামে ইত্তেফাক, সংবাদ প্রভৃতি পত্রিকার প্রগতিশীল ভূমিকা তিনি ভালো করেই জানতেন। এজন্য ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু দেশের সংবাদপত্রকে স্বাধীন মতপ্রকাশে সুযোগ তৈরি করে দেন।এমনকি সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণমূলক কাজে সরকারি দৃষ্টি দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা তৈরি করেন।বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে সাংবাদিক ও সংবাদের গোলামি করে গেছেন।গণসচেতনতা তৈরিতে তাঁর সাহসী ভূমিকা দেশ ও বাঙালি জাতির নতুন প্রজন্ম স্মরণ করবে যুগান্তরে। মহাকালের সময় স্রোতে তাঁর অবদান প্রোজ্জ্বল হয়ে থাকবে।

লেখক : ড. মিল্টন বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধু গবেষক এবং বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, [email protected]

এইচআর/এমএস