মাহে রমজান
দোয়ার প্রতি গুরুত্ব দেই
আজ রহমতের দশকের নবম দিন। দয়াময় আল্লাহর বিশেষ কল্যাণে রমজানের রহমতের দিনগুলো অতিবাহিত করছি। আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহে ইনশাল্লাহ আর একদিন পরেই প্রবেশ করব মাগফিরাতের দশকে।
দ্রুতগতিতে শেষ হচ্ছে মাহে রমজানের দিনগুলো। এখনো যারা পবিত্র মাহে রমজানের দিনগুলোকে বিশেষ ইবাদতে রত না থেকে অতিবাহিত করেছেন তাদের উচিত বাকিদিনগুলো অনেক বেশি দোয়া ও ইস্তেগফারে কাটানো।
কেননা পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।’ (সুরা : আল মোমেন, আয়াত : ৬০)
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে না চায়, তার ওপর তিনি অসন্তুষ্ট হন। (সুনানে তিরমিজি)
রমজান মাসের অন্যতম নেয়ামত হচ্ছে গোনাহ মাফ ও আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্তি। জানিনা রহমতের দশকের এ নয়টি দিন ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আমরা কতটা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছি।
এখন উচিত হবে রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলোতে অনেক বেশি ইবাদত, বেশি বেশি তওবা, ইস্তেগফার এবং দোয়ায় রত হওয়া।
কেননা রমজান এমন একটি মাস যে মাসে বান্দার দোয়া কবুলের জন্য আল্লাহ অধির অপেক্ষায় থাকেন। এ মাস মহান রাব্বুল আলামিনের কাছ থেকে চেয়ে নেয়ার মাস। এ পবিত্র মাসে যে যত বেশি চাইতে পারে, আল্লাহতায়ালা তাকে তত বেশি দান করেন।
আল্লাহতায়ালা চান তার বান্দারা যেন তাদের দোষত্রুটির জন্য প্রথমে পরিপূর্ণভাবে তওবা করে। পরিপূর্ণ তওবার পর যেই বান্দা আল্লাহর দরবারে দোয়া করে তার দোয়া তিনি গ্রহণ করে নেন।
তাইতো আল্লাহতায়ালা মুমিন বান্দাকে তওবাতুন নসূহর শিক্ষা দেন। এর ফলে আল্লাহতায়ালা তাদের পাপ দূর করেন ও তার সন্তুষ্টির জান্নাতে স্থান দেন। যাদের তওবা তিনি গ্রহণ করে নিবেন তাদের সামনে ও পেছনে নূর থাকবে আর তারা এ জন্য দোয়া করবে-‘রাব্বানা আতমিম লানা নূরানা ওয়াগফির লানা ইন্নাকা আলা কুল্লি শায়ইন কাদির।’
অর্থ: হে আমাদের পভু-প্রতিপালক! আমাদের জন্য আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণ কর আর আমাদেরকে ক্ষমা কর। নিশ্চয় তুমি সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান। (সুরা তাহরিম: আয়াত ৮)
পবিত্র কুরআনে এমন অনেক দোয়া রয়েছে যেগুলো পাঠ করে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি। এখানে মাত্র কয়েকটি দোয়ার উল্লেখ করছি যা রমজানের এ দিনগুলোতে আমরা উঠতে-বসতে সবসময় করতে পারি এবং সন্তানদেরকে মুখস্ত করাতে পারি-‘রাব্বানাগফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়্যা ওয়ালিল মুমিনিনা ইয়াউমা ইয়াকুমুল হিসাব।’
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা কর, যেদিন হিসাব কায়েম হবে। (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)
পবিত্র কুরআনের আরেকটি চমৎকার দোয়া রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা তার ক্ষমা পেতে পারি। দোয়াটি হলো- ‘রাব্বানা আলায়কা তাওয়াক্কালনা ওয়া ইলায়কা আনাবনা ওয়া ইলায়কাল মাসির, রাব্বানা লা তাজ আলনা ফিতনাতাল লিল্লাযিনা কাফারু ওয়াগফির লানা রাব্বানা ইন্নাকা আনতাল আযিযুল হাকিম।’
অর্থ: হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক! তোমার ওপর আমরা ভরসা করছি ও তোমারই সমীপে আমরা ঝুঁকেছি এবং তোমার দিকে আমাদের শেষ প্রত্যাবর্তন হবে।
হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক! যারা অস্বীকার করেছে তুমি আমাদেরকে তাদের জন্য পরীক্ষার কারণ করো না এবং তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর, হে আমাদের প্রভু! নিশ্চয় তুমিই মহাপরাক্রমশালী, পরম প্রজ্ঞাময়। (সুরা মুমতাহানা: আয়াত ৪-৫)
পবিত্র কুরআনের এই দোয়াটিও আমরা অধিক করতে পারি- ‘ওয়াকিহিমুস সাইয়্যিআতি ওয়া মান তাকিস সাইয়্যিআতি ইয়াওমায়িযিন ফাকাদ রাহিমতাহু ওয়া যালিকা হুয়াল ফাওযুল আযিম।’
অর্থ: আর তুমি তাদেরকে সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে রক্ষা কর। প্রকৃতপক্ষে তুমি সেদিনের অনিষ্টসমূহ থেকে যাকে রক্ষা করবে তার প্রতি অবশ্যই কৃপা করবে। আর এটাই তো প্রকৃতপক্ষে মহা সফলতা। (সুরা আল মুমিন: আয়াত ৯)
আসুন, সময় নষ্ট না করে সুযোগ পেলেই দোয়া করি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে নিজের পাপের জন্য ক্ষমা চাই। উঠতে, বসতে, চলাফেরায় সবসময় দোয়ায় ব্যস্ত থাকি। আল্লাহপাক আমাদেরকে সব সময় দোয়া করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
[email protected]
এইচআর/এএসএম