পরিশুদ্ধ নিয়তে হোক মাহে রমজানের শুভ সূচনা
আজ থেকে (মঙ্গলবার) থেকে শুরু হলো রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের মাহে রমজান। আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহপাকের কাছে এই প্রার্থনাই থাকবে, আমরা যেন সুস্থতার সাথে পবিত্র এই দিনগুলো অনেক বেশি ইবাদত আর পুণ্যকর্মের মাধ্যমে অতিবাহিত করতে পারি।
আমরা জানি, ইসলামের সকল কর্মের ভিত্তি নিয়তের ওপর রাখা হয়েছে। নিয়্যত অনুযায়ী প্রত্যেককে তার কর্মফল প্রদান করা হয়। যেহেতু আল্লাহতায়ালা প্রত্যেকের অন্তরের খবর জানেন তাই কে কোন নিয়তে পুণ্য করেন সে অনুযায়ী তাকে পুরস্কার দেয়া হয়।
মহানবি (সা.) বলেছেন, আল আ’মালু বিননিয়াত অর্থাৎ মানুষের কর্মের ফল নিয়ত এবং ইচ্ছার ওপর হয়ে থাকে। এই জন্য ইবাদত শুরু করারও ইসলামে সঠিক নিয়ত ও নেক ইচ্ছার শর্ত রয়েছে। যখন কোনো মুসলমান কোনো বিশেষ ইবাদতের নিয়ত করে তা আদায় করে, তখন তার সেই ইবাদত প্রকৃত অর্থে আদায় হবে। রোজা সম্পর্কেও বলা হয়েছে যে, এরজন্য নিয়ত করা জরুরি। সবচেয়ে উত্তম হলো, রোজার জন্য মানুষ রাতে ঘুমানোর সময় ইচ্ছা ও নিয়ত করে ঘুমানো।
এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে হজরত হুযায়ফা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বে রোজা রাখার নিয়ত না করে, তার রোজা রাখা পূর্ণ হয় না’ (তিরমিযজ, আবওয়াবুস সাওম)।
রোজার নিয়তের জন্য কোনো অর্থ বোধক শব্দ পাঠ করা জরুরি নয়। নিয়ত সেই ইচ্ছারই নাম, যার জন্য সে কোনো খাদ্য ও পানীয় ছেড়ে দিচ্ছে। রোজার নিয়তের জন্য আলাদা কোনো দোয়া হাদিস শরীফ থেকে পাওয়া যায় না। তবে একটি বাক্য প্রচলিত আছে, যা পাঠ করাতে কোনো অসুবিধা নেই, তা আমরা নিয়ত হিসেবে পাঠ করতে পারি যেমন ‘ওয়া বি সাওমে গাদিন নাওয়াইতু মিন শাহরি রামজানা’ অর্থাৎ কাল সকালে রমজান মাসের রোজা রাখার নিয়ত করছি। যদি নিজভাষায় বা শব্দেও নিয়্যত করে, তবেও কোনো অসুবিধা নেই।
হজরত ইমাম মালেক (রহ.), হজরত ইমাম শাফী (রহ.) ও হজরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) এর মতে রমজানের রোজার নিয়্যত রাতে করা জরুরী। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (রহ.), সুফিয়ান সাওরী (রহ.), ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মোহাম্মদ (রহ.) এর মতে রমজান মাসে রাতে রোজার নিয়্যত জরুরি নয়। কেননা, রোজার নিয়ত করার উদ্দেশ্য এই যে, যেন নির্ধারণ করা যায়, কোন রোজা, নফল না ফরজ। আর রমজানের রোজা রাখার হুকুম দিয়ে আল্লাহতায়ালা তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, এই জন্য রাতে তার নিয়ত করা জরুরি নয়।
ইমাম শাফী (রহ.) ও ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর মতে যদি অর্ধ দিবসের আগ পর্যন্ত রমজানের রোজার নিয়্যত করা হয়, তাহলেও হবে। আর ইমাম মালেক (রহ.), ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) ও ইসহাক বলেন, যদি রমজানের প্রথম রাতে সমস্ত রমজান মাসের জন্য নিয়ত করা হয়, তবে যথেষ্ট। কেননা, সমস্ত রোজার নিয়ত আর একটি রোজার নিয়ত একই কথা।
আমাদের উচিৎ হবে রমজানের রোজা রাখার পূর্বে নিয়ত করে নেয়া আর আল্লাহতায়ালার কাছে এই প্রার্থনা করা যে, হে আল্লাহ! আগামীকাল তোমার সন্তুষ্টির জন্য আমি রোজা রাখবো, তুমি আমাকে সুস্থতার সাথে রোজা রাখার তৌফিক দান কর। আমরা যদি পরিশুদ্ধ অন্তরে রোজার নিয়ত করে রোজা রাখি তাহলে আল্লাহতায়ালা আমাদের রোজা গ্রহণ করবেন।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে সুস্থতার সাথে রমজানের দিনগুলো বিশেষ ইবাদত বন্দেগির মাঝে কাটানোর এবং রোজার যে মর্ম তা উপলব্ধি করার সৌভাগ্য দান করুন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
[email protected]
এইচআর/এএসএম