টাকার ৭টি মৌলিক নীতি যা আপনাকে ধনী হতে সহায়তা করবে
কোথায় কীভাবে বিনিয়োগ শুরু করবেন, তা জানা বা বোঝা সত্যিই কঠিন বিশেষ করে যারা কেবল শুরু করছেন, এটি আরও কঠিন যদি আপনার কাছে কোনো টাকাই না থাকে। আপনার অর্থ বিনিয়োগ করার জন্য অনেকগুলো জায়গা আছে। কিন্তু কোনটি সেরা? সঞ্চয় দিয়ে আমাদের কি করা উচিত, আমি স্টক বা মিউচুয়াল ফান্ডে কতটা ব্যয় করতে পারি, আমার কি রিয়েল স্টেট বা বিট কয়েনে বিনিয়োগ করা উচিত, এধরনের নানা প্রশ্নে আমরা আবর্তিত।
আমি আপনাদের কিছু জীবন পরিবর্তনকারী নিয়মের কথা বলব, যা আপনার আর্থিক অবস্থার স্থায়ী পরিবর্তনে দুর্দান্ত ভাবে সাহায্য করবে। আপনি কোন বয়সের কোন স্তরে আছেন তা এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। কারণ, এ সাধারণ নিয়মগুলো সবার জন্য প্রযোজ্য। যত তাড়াতাড়ি আমরা আমাদের জীবনে এগুলো বাস্তবায়ন শুরু করব ততই মঙ্গল। টাকার সাতটি নিয়ম বা সাতটি মৌলিক নীতি আপনাদের সাথে শেয়ার করব, যা পালন করলে আপনি ধনী হয়ে উঠবেন অনেকটা নিশ্চিতভাবেই।
এক
টাকা কীভাবে কাজ করে সেটা ভালো করে বুঝতে পারা দরকার। অর্থ উপার্জন করার জন্য আপনাকে পুরো আর্থিক ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে সেটা জানতে হবে। বেশিরভাগ লোকই প্রতি মাসে যা আয় করে তা খরচ করেন। অর্থ সঞ্চয় করতে ব্যর্থ হন, এ কারণে নয়, আপনি অর্থের ব্যবস্থাপনায় খুবই খারাপ। এটি শুধু এই কারণে যে, আপনি মূল বিষয়গুলো বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন।
আপনাদের অনুরোধ করছি, ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে শেখা বন্ধ করবেন না। এমনকি আপনি যখন কলেজের বা ভার্সিটির ডিগ্রি পাবেন তখনও সেটা বন্ধ করবেন না। বরং প্রতিনিয়ত ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আপনার নিজেকে প্রশিক্ষিত করা উচিত। বই পড়া শুরু করুন এবং ব্যক্তিগত অর্থ সংক্রান্ত কোর্স গ্রহণ করুন।
সুদ কীভাবে কাজ করে বা চক্রবৃদ্ধি সুদ কি, তা আপনি বুঝতে পারছেন না। এটা আপনাকে বুঝতে হবে এবং জানতে হবে অর্থ কীভাবে কাজ করে। আপনাকে পড়তে হবে, শিখতে হবে। এবং আপনাকে জানতে হবে এবং নিজেকে আগে পেমেন্ট করতে হবে, আপনার আয়ের কিছু অংশ নিজের জন্য সঞ্চয় বা বিনিয়োগ করতে হবে।
দুই.
আপনি যদি নিজেকে একদিন কোটিপতি হিসেবে দেখতে চান, তবে আপনার প্রথম পদক্ষেপটি হবে প্রতি মাসে আপনার বেতনের ১০ থেকে ২০ শতাংশ বা তারও বেশি আলাদা করে রাখা এবং কখনোই সেটিকে স্পর্শ না করা। এগুলো আপনার চাকরি না থাকলে বা অসুস্থ হলে আপনাকে রক্ষা করবে। এটি এমন অর্থ যা আপনি পোশাক বা বিনোদনের মতো বড় কেনাকাটায় ব্যয় করবেন না। আবার বলছি এটি এমন অর্থ যা আপনি কখনোই স্পর্শ করবেন না। এই টাকাটা ব্যাংকে রাখুন এবং এটির কথা ভুলে যান।
তিন.
এছাড়া প্রতি মাসে আপনার আয়ের ১০ থেকে ২০ শতাংশ বিনিয়োগে দেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার বিনিয়োগ করা অর্থ সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পাবে। এটি সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঠগুলোর মধ্যে অন্যতম। আপনার উপার্জনের চেয়ে কম ব্যয় করুন এবং অবসর জীবনের জন্য তাড়াতাড়ি সঞ্চয় করা শুরু করুন। মানুষের সবচেয়ে বড় ভুলগুলোর মধ্যে একটি হলো তাদের সাধ্যের ঊর্ধ্বে জীবন যাপন করা। আপনার জীবনযাত্রার ব্যয় আপনার আয়ের চেয়ে বেশি হতে পারবে না কোনোভাবে। কারণ, আপনি ভেঙে পড়বেন।
চার.
আপনি যদি ধনী হতে চান, তবে এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি কীভাবে টাকা উপার্জন ও ব্যয় করবেন- সেটা শেখা। আপনার তিনটি গাড়ি, চারটি টেলিভিশন এবং একটি বিশাল বাড়ির দরকার আছে কি? আপনার জন্য একটি গাড়ি, একটি টেলিভিশন এবং একটি ছোট বাড়ি হলেই চলবে। আপনি যদি আপনার খরচ কম রাখতে সক্ষম হন, তবে আপনার সঞ্চয় বেড়ে যাবে।
আপনার অর্থ কোথায় যাচ্ছে এবং আপনার সামর্থ্য কি রকম- তা জানার জন্য একটি বাজেট রাখুন। আপনি যদি অর্থ সঞ্চয় করতে না পারেন, তাহলে সম্ভবত আপনার অর্থ কোথায় যাচ্ছে তা আপনি জানেন না। অধিকাংশ মানুষ এই গোত্রেই পড়েন। তারা তাদের খরচের হিসাব রাখতে ব্যর্থ হন। তাই মাস শেষে তাদের কাছে কোনো নগদ অর্থ থাকে না। একটি বাজেট তৈরি করা নিশ্চিত করুন। আপনি যেন জানতে পারেন যে, আপনি বিনোদন, খাবার এবং অন্য কাজের জন্য কতটা ব্যয় করতে পারেন। এটি আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে কোটিপতি হওয়ার জন্য আপনাকে কত টাকা সঞ্চয় করতে হবে।
পাঁচ.
Wants এবং Needs এর মধ্যে পার্থক্য জেনে নিন। আপনার সামর্থ্যের বাইরে কোনো জিনিস কিনে অন্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করবেন না। একটি বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ির প্রয়োজন নেই। আপনার যা দরকার তা হলো মৌলিক খাদ্য এবং আশ্রয়। আর বাকি সব কিছুই কেবল বস্তুবাদী আবর্জনা। আপনার বন্ধু যদি লেটেস্ট আইফোন কেনেন, আপনাকেও সেটা কিনতে হবে কেন? আপনার যদি পরিবার থাকে, বরং তাদের পেছনে ব্যয় করুন। সেটিই আপনার জন্য মঙ্গলজনক। অন্যকে দেখে কিছু কেনা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। হঠাৎ আপনার গাড়িটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, আপনার পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। তাই, গাড়ি মেরামত বা চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য সঞ্চয় করুন। কারণ, সঞ্চয় না থাকলে আপনি অপ্রত্যাশিত খরচ কীভাবে সামলাবেন?
যদি আপনার অর্থ সঞ্চয় থাকে তবে আপনাকে বেশি সুদে ঋণ নিতে হবে না। আপনি নিজের সঞ্চিত টাকা থেকেই এই প্রয়োজন মেটাতে পারবেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঋণ থেকে বেরিয়ে আসুন। ঋণ করে অর্থ ব্যয় করা বন্ধ করুন। ঋণ করে অর্থ ব্যয় করা- এটি হলো সবচেয়ে বড় ভুল, যা বেশিরভাগ লোক করে এবং সময় থাকতে সতর্ক না হলে এক সময় তারা দেউলিয়া হয়ে পড়বেন।
আপনি যদি সময়মতো আপনার ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ না করেন, তাহলে সুদের হার বাড়তেই থাকবে। এবং আপনাকে প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা বকেয়া শোধ করতে হবে। এই কারণেই আপনার আর্থিক ভবিষ্যতের জন্য এটি অপরিহার্য যে, আপনি আপনার ব্যয়ের চেয়ে বেশি উপার্জন করুন এবং অবসর গ্রহণের জন্য অর্থ সঞ্চয় করার আগে প্রথমে ঋণ পরিশোধকে অগ্রাধিকার দিন।
ছয়.
আপনাদের আরেকটি বিষয় সম্পর্কে বলছি, আপনাদের অনুরোধ করছি, ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে শেখা বন্ধ করবেন না। এমনকি আপনি যখন কলেজের বা ভার্সিটির ডিগ্রি পাবেন তখনও সেটা বন্ধ করবেন না। বরং প্রতিনিয়ত ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আপনার নিজেকে প্রশিক্ষিত করা উচিত। বই পড়া শুরু করুন এবং ব্যক্তিগত অর্থ সংক্রান্ত কোর্স গ্রহণ করুন। শিগগির আপনি আর্থিকভাবে শিক্ষিত হয়ে উঠবেন এবং প্রচুর জ্ঞান অর্জন করবেন, যা আপনার আশেপাশের বেশিরভাগ লোককে ছাড়িয়ে যাবে। আমার লেখা দি আর্ট অব পার্সোনাল ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট বইটি পড়ুন। আপনি উপকৃত হবেন।
সবশেষে অনুরোধ করছি আপনি আর অপেক্ষা করবেন না। আজ থেকেই অর্থের যে নিয়মগুলো আলোচনা করেছি সেগুলো অনুসরণ করা শুরু করুন। আপনি এটির জন্য পরে নিজেকে ধন্যবাদ জানাবেন। কারণ, আপনি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন এবং ৯৯ শতাংশ লোকের মতো ভেঙে পড়বেন না।
লেখক: দি আর্ট অব পার্সোনাল ফাইনান্স ম্যানেজমেন্ট বইয়ের লেখক, কলামিস্ট, ইউটিউবার এবং ফাইনান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট।
এইচআর/ফারুক/এএসএম