ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

অগ্নিঝরা মার্চ

অসহযোগ আন্দোলন ও স্বাধীনতা ঘোষণার প্রথম আনুষ্ঠানিকতা

এম. নজরুল ইসলাম | প্রকাশিত: ০৩:৩৫ পিএম, ০৩ মার্চ ২০২৪

আজ ৩ মার্চ। বর্ষপরিক্রমায় ঘুরে আসা এই দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে অবিস্মরণীয়। এমনিতেই অগ্নিঝরা মার্চ তো আমাদের জাতীয় পরিচয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই মার্চে রচিত হয়েছে এমন কিছু ইতিহাস, যা বাঙালির পরিচয়সূত্র। ১৯৭১ সালের এই মার্চে স্বাধীনতাকামী বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। মার্চের শুরু থেকেই বাঙালির কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, লড়াই করেই অধিকার আদায় করে নিতে হবে।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু সরকার গঠনে আহ্বান জানানোর পরিবর্তে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সিদ্ধান্তকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দেন এবং এর প্রতিবাদে ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল আহ্বান করেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জনগণ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে ক্ষমতা হস্তান্তরে সামরিক সরকারের গড়িমসি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির সরাসরি অসহযোগিতার কারণেই বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। এর বিস্তৃতি ছিল সারা পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণের মাধ্যমে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

১৯৭১ সালের সেই দিনগুলোর দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, ১ মার্চ এক হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করলেন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা দেশে সর্বাত্মক হরতালের ডাক দেন।

১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে সবুজ জমিনের ওপর লাল বৃত্তের মাঝখানে সোনালি মানচিত্র খচিত প্রথম জাতীয় পতাকা তোলা হয়েছিল। ৪ মার্চ জনগণের মুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন সাংবাদিক ও শিল্পীরা। ৫ মার্চ টঙ্গীতে গুলিবষর্ণে চারজন নিহত ও ২৫ জন আহত হন। ৬ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের ডাক দেন। জরুরি বৈঠকে বসে আওয়ামী লীগ। ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘যার যা আছে তাই নিয়ে’ প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বাঙালিকে। ওই এক ভাষণেই দিকনির্দেশনা পায় দেশের জনগণ। বুঝে যায় অধিকার আদায় করে নিতে হবে। ১২ মার্চ কবি সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে মহিলা পরিষদের এক সভায় পাড়ায় পাড়ায় মহিলা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আহ্বান জানানো হয়।

পাকিস্তানের জন্মের ২৩ বছর পর ১৯৭০ সালে দেশটিতে প্রথমবারের মতো সরাসরি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে বাঙালিদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের যোগ্যতা অর্জন করেন। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঢাকায় পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাঞ্জাবি শাসকরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের সরকার-প্রধান হতে দিতে রাজি ছিল না।

১৯৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক-শাসক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের একটি বিবৃতি রেডিও পাকিস্তানের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এই বিবৃতিতে জেনারেল ইয়াহিয়া বলেন: ‘এটা বলা নিষ্প্রয়োজন যে, আমি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আমি বারবার এ কথাই উল্লেখ করেছি, শাসনতন্ত্র কোনো সাধারণ আইন নয়, বরং এটা একসঙ্গে বসবাস করার একটি চুক্তি মাত্র।’ রেডিও পাকিস্তানের বরাত দিয়ে এ খবরটি পরদিন ২ মার্চ দৈনিক আজাদ ও দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয়।

জেনারেল ইয়াহিয়া খানের এই বিবৃতি পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে যায়। একসঙ্গে বসবাস করা না-করা সংক্রান্ত ইয়াহিয়ার এই বক্তব্যের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম সুযোগটি গ্রহণ করেন। তিনি এক মুহূর্তও দেরি না করে ১ মার্চ দুপুরেই হোটেল পূর্বাণীতে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। ইয়াহিয়ার বক্তব্যের উত্তরে তিনি বলেন: ‘ষড়যন্ত্র যদি আরো চলে, তাহলে বাংলাদেশ নিজ প্রশ্নের মীমাংসা করে নেবে। আগামী ৭ মার্চ আমি রেসকোর্স ময়দানে বাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

৩ মার্চ সুস্পষ্টভাবে স্বাধীনতার ঘোষণার পরও পাকিস্তানি সামরিক চক্র বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করেনি। এর অন্যতম কারণ ছিল, বাঙালিদের প্রতিরোধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব। তাদের সার্বিক প্রস্তুতি নিতে ২৫ মার্চ পর্যন্ত লেগে গিয়েছিল। যে কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, রবিবার দ্বিতীয়বার বাঙালিদের কাছে স্বাধীনতার ঘোষণা ও সংগ্রামের সুস্পষ্ট কর্মসূচি নিয়ে হাজির হওয়ার সুযোগ পান।

সাংবাদিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার পরক্ষণেই ঢাকার রাজপথে ছাত্র-জনতার মিছিল শুরু হয়ে যায়। মিছিলে স্লোগান ছিল ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংরাদেশ স্বাধীন করো।’ অল্পক্ষণের মধ্যেই পল্টন ময়দানে এক স্বতঃস্ফ‚র্ত জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাবেক ছাত্রনেতা এবং তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নবনির্বাচিত সাংসদ তোফায়েল আহমদ সভায় বলেন: ‘আর ৬-দফা বা ১১-দফা নয়, এবার বাংলার মানুষ এক-দফার সংগ্রাম শুরু করলো। আর এই এক-দফা হচ্ছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব।’ (দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদ, ২ মার্চ, ১৯৭১)

১ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একটি বিবৃতি দেন। তা পরদিন পাকিস্তানের সব পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন: ‘সারা বাংলাদেশে বাঙালিরা স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ প্রদর্শনের মাধ্যমে দুনিয়াবাসীর সামনে প্রমাণ করেছে যে, তারা আর নির্যাতিত শোষিত হতে রাজি নয়; বাঙালিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১ মার্চ বিকেল তিনটায়। ঐ দিনই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে রাত আটটায় তৎকালীন ইকবাল হলে (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্রলীগের তৎকালীন এবং প্রাক্তন আট নেতা এক জরুরি সভায় মিলিত হন। সভায় উপস্থিত ছিলেন সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, শেখ ফজলুল হক মণি, তোফায়েল আহমদ, নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন ও শাজাহান সিরাজ। এ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক বিরাট ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রস্তাব পাঠ করেন ছাত্রলীগের তৎকালীন দপ্তর সম্পাদক এম এ রশীদ। সভা-মঞ্চে ছাত্রলীগের চার নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন এবং শাজাহান সিরাজ সম্মিলিতভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকাটি উড়িয়ে দেন।

১ মার্চ সাংবাদিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন যে, ৭ মার্চ তিনি বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সম্পর্কিত কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। এরপর থেকেই আশঙ্কা করা হয়েছিল, যেকোনো সময় বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান সরকার গ্রেপ্তার করতে পারে। সম্ভবত সেইজন্যই বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা না করে ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগ এবং শ্রমিক লীগের যৌথ-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। তিনি প্রথমেই বলেন, ‘হয়তো এটাই আমার শেষ ভাষণ। .... আমি যদি নাও থাকি, আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলন যাতে না থামে। .... আমি মরে গেলেও সাত কোটি মানুষ দেখবে দেশ সত্যিকারের স্বাধীন হয়েছে।’ খবরটি ১৯৭১ সালের ৪ মার্চ প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদ পত্রিকায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়।

এই সভায় প্রদত্ত ঘোষণা ইশতেহার আকারে প্রকাশ করা হয়। এই ইশতেহারে বলা হয়: ‘১. স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষণা করা হয়েছে, চুয়ান্ন হাজার পাঁচ শ ছয় বর্গমাইল বিস্তৃত ভৌগোলিক এলাকার সাত কোটি মানুষের আবাসিক ভূমি হিসেবে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাম বাংলাদেশ। ক. পৃথিবীর বুকে বাঙালির সাহিত্য-সংস্কৃতি পূর্ণ বিকাশের ব্যবস্থা। খ. সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করে কৃষকরাজ-শ্রমিকরাজ কায়েম করা। গ. বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ নির্ভেজাল গণতন্ত্র কায়েম।

২. বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালনার জন্য নিন্মলিখিত কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে: ক. প্রতিটি অঞ্চলে ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম কমিটি’ গঠন। খ. জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা। গ. মুক্তিবাহিনী গঠন। ঘ. সাম্প্রদায়িক মনোভাব পরিহার। ঙ. লুটতরাজ ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধকরণ।
৩. স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারা হবে নিš§রূপ: ক. বর্তমান সরকারকে বিদেশী সরকার গণ্য করে এর সকল আইনকে বেআইনী বিবেচনা। খ. অবাঙালি সেনাবাহিনীকে শত্রু সৈন্য হিসেবে গণ্য এবং এদের খতম করা। গ. এদের সকল প্রকার ট্যাক্স-খাজনা দেওয়া বন্ধ। ঘ. আক্রমণরত শক্তিকে প্রতিরোধ করতে সশস্ত্র প্রস্তুতি গ্রহণ। ঙ. বৈজ্ঞানিক ও গণমুখী দৃষ্টি নিয়ে সংগঠন গড়ে তোলা। চ. স্বাধীন দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ ব্যবহƒত হবে। ছ. পশ্চিম পাকিস্তানি দ্রব্য বর্জন ও সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তোলা। জ. পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে বাংলাদেশের পতাকা ব্যবহার। ঝ. স্বাধীনতা সংগ্রামরত বীরদের সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান।
৪. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক। (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৬৬-৬৬৭)

উল্লেখিত এই ঘোষণা ছাড়াও সভা মঞ্চ থেকে আলাদাভাবে একটি প্রস্তাব পাঠ করা হয়। তাতে বলা হয়, ‘স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের প্রতি সমাবেশ পূর্ণ আস্থা জ্ঞাপন করছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৬৬ এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ আছে।
বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে এবং তাঁর নির্দেশে আসন্ন মুক্তিযুদ্ধের যে রণনীতি ও রণকৌশল সভামঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হয়। আর সেটাই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রথম আনুষ্ঠানিকতা।
সমাবেশের ঘোষণা ও প্রস্তাবে এই প্রথম লাখো জনতার সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়, ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ স্থাপনের ঘোষণা করা হয়েছে। এর ভৌগোলিক বিস্তৃতি চুয়ান্ন হাজার পাঁচ শ ছয় বর্গমাইল’ এবং সুস্পষ্টভাবে রাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করা হয় ‘বাংলাদেশ’। ঐদিনই সর্বপ্রথম বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধ করার জন্য মুক্তিবাহিনী গঠনের আদেশ দেওয়া হয় এবং ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি' জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচন করা হয়। এই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতির জনক ও সর্বাধিনায়ক হিসেবে আখ্যায়িত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। মূলতঃ এভাবেই বাঙালিদের সুদীর্ঘ মুক্তি আন্দোলনের ধারায় ৩ মার্চ ১৯৭১ জাতির অন্যতম স্বপ্ন প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বাস্তবতা লাভ করে।

৩ মার্চ সুস্পষ্টভাবে স্বাধীনতার ঘোষণার পরও পাকিস্তানি সামরিক চক্র বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করেনি। এর অন্যতম কারণ ছিল, বাঙালিদের প্রতিরোধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব। তাদের সার্বিক প্রস্তুতি নিতে ২৫ মার্চ পর্যন্ত লেগে গিয়েছিল। যে কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, রবিবার দ্বিতীয়বার বাঙালিদের কাছে স্বাধীনতার ঘোষণা ও সংগ্রামের সুস্পষ্ট কর্মসূচি নিয়ে হাজির হওয়ার সুযোগ পান।

তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়াদী উদ্যান) বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্র। যুদ্ধের নয়টি মাস মুক্তিকামী বাঙালি জাতি তাদের প্রিয় নেতার ঐতিহাসিক ভাষণটি শুনে উজ্জীবিত ও প্রাণিত হয়েছে।

আজকের দিনে সেদিনের বীরদের স্মরণ করি।

লেখক: সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি।

এইচআর/জেআইএম