ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বইমেলা

মানসম্মত বইয়ের বিকল্প নেই

অরুণ কুমার বিশ্বাস | প্রকাশিত: ১০:৪৮ এএম, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

শুরু হয়েছে বাঙালির প্রাণের মেলা বইমেলা। প্রথম শুক্রবারেই মেলা প্রাঙ্গণ বলতে গেলে ভিড়ে ভিড়াক্কার। সবাই যে বই দেখতে বা কিনতে আসছেন তা নয়, তবু তারা আসছেন। আসুন তাতে সমস্যা নেই, তবে আমার চিন্তার বিষয় অন্যখানে। সোজাসাপটা বলতে গেলে, আমাদের পাঠাভ্যাস তুলনামূলক কমছে। আমরা আর আগের মতো সৃজনশীল বই পড়ছি না। বাবা-মায়েরাও ছেলেপুলেদের মনের খোরাকে মন না দিয়ে তাদের যাপিত জীবনে কীসে সুখ-সুবিধা বাড়ে তাই নিয়ে বেশি ভাবছেন। অর্থাৎ তারা সন্তানদের মুখের সামনে চাকরি পাওয়া বা ভাষা শিক্ষার বই তুলে ধরছেন। শিল্প-সাহিত্যে তাদের মোটেও আগ্রহ নেই। আর এই সুযোগটাই লুফে নিচ্ছেন এক শ্রেণির মওসুমি প্রকাশক, তারা মোটিভেশন ও ইংরেজি শিক্ষার বই ছাপছেন, দুহাতে টাকা লুটছেন।

অথচ একুশে বইমেলার উদ্দেশ্য তা নয়। এই মেলাকে কেন্দ্র করে লেখক-পাঠকের আড্ডা হবে, সৃষ্টিশীল আলাপ-আলোচনা হবে, পাঠক আসবেন, মানসম্মত বই কিনবেন। কিন্তু সেসব আর এখন হচ্ছে কই! আমরা সব ঝাঁকের কৈ-এর মতো কীসের পেছনে যে ছুটছি তা বোঝাই এখন দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেলাজুড়ে ভিড় বাড়ছে বাড়–ক, তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু এদের বেশির ভাগ আসে স্রেফ ঘুরতে নয়তো আইসক্রিম খেতে। আরো একটি উদ্দেশ্য আছে বটে। তথাকথিত সেলেব্রিটি লেখকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে নানান রঙে ঢঙে সেলফি তোলাই একশেণির আগন্তুকের প্রধান কাজ। এরা মোটেও পাঠক নয়, হুজুগে বাঙালি বলা যায়।

এবার আসা যাক প্রকাশিত বইয়ের গুণ ও মান প্রসঙ্গে। কথা উঠতে পারে, বইয়ের মান কে নির্ধারণ করবে! মানসম্পন্ন বই বলতে আসলে কী বুঝায়! একটি বই- সে হোক কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস কিংবা গল্প, তা পাঠযোগ্য হয়ে উঠতে গেলে ন্যূনতম শিল্পগুণ থাকা বাঞ্ছনীয়। আবার যদি একটু গুরুতর কথা বলি, লেখায় অতি অবশ্যই নান্দনিকতার ছোঁয়া থাকা চাই। যা পড়তে আরামদায়ক নয়, তা কখনও শিল্প মানোত্তীর্ণ হতে পারে না। এখন অনেকের লেখা দেখবেন ব্যাকরণসিদ্ধ তো নয়ই, তাতে আসত্তিও নেই। অর্থাৎ একটি লাইন বা স্তবক পড়বার পরে এগুতে আর মন চায় না। কারণ শব্দচয়ন ইংরেজিতে যাকে বলে ডিকশন, তা এতটাই দুর্বল যে, সেই দুর্লঙ্ঘ্য বাধা পেরিয়ে কারো আর আখ্যানভাগে মন দেবার ইচ্ছেই জাগে না। অনেকের কবিতা রীতিমতো অভিধান ঘেঁটে পড়তে হয়। অথচ তা ছাপা হচ্ছে, বিকোচ্ছে, সেলফিসমেত পৌঁছেও যাচ্ছে কাঁচা পাঠকের হাতে।

কিন্তু এসব অপাঠ্য বই প্রকাশের দায় কার! শুধুই কি প্রকাশকের, নাকি লেখক বা পাঠকেরও কিছু দায় থেকে যায়! বলা হয়, একটি দেশের মানুষ যেমন, তার নেতাও তেমনই হয়ে থাকে। অর্থাৎ পাঠক যদি প্রকৃত রসবোধসম্পন্ন এবং চৌকস হতেন, তাহলে কিন্তু এসব বই প্রকাশ পেলেও তা মার্কেট পেতো না। আর যারা লিখছেন, তাদের কাছে একটাই চাওয়া, দয়া করে জেনেশুনে বুঝে এবং পড়ে লিখবেন। লেখক হতেই হবে এমন বাসনা মোটেও স্বাস্থ্যকর বা রুচিকর নয়। অনেক রকম ভাবে আপনি বিখ্যাত হতে পারেন, কষ্ট করে কেন এসব অপাঠযোগ্য বই লিখবেন?

অনেকেই আছেন যারা কিনা ‘টানে এক আঁকো বক’ টাইপ লেখক। তারা একের পর বই ‘নামাচ্ছেন’, একবারও ভাবছেন না এসব বই পড়ে পাঠক কীভাবে উপকৃত হবেন! বিখ্যাত লেখক সিডনি স্মিথ বলেছেন, ভালো বই মানে তা অবশ্যই মনোরম অর্থাৎ চিত্তাকর্ষক, তাতে একটি পুষ্টিকর উপজীব্য থাকবে এবং তা পড়ে পাঠক পরিতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবেন। কখনও মনে হবে না যে তিনি মিছে সময় নষ্ট করলেন। অর্থাৎ শিক্ষণ এবং সুস্থ বিনোদন- দুটো থাকলেই তবে একটি বই সার্থক হয়। ধ্রুপদী সাহিত্যের সংজ্ঞা অবশ্য ভিন্ন।

আশা করছি আমরা শুধু সংখ্যা নয়, বরং মানসম্মত বই প্রকাশে মনোযোগী হব। তাহলেই কেবল আমাদের এই প্রাণের বইমেলা সর্বাংশে সুষমামণ্ডিত হয়ে উঠবে।

লেখক: সাহিত্যিক।

এইচআর/এএসএম

আরও পড়ুন