ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

‘অভিজাত’ হওয়ার জন্য আমরা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শুকানো মাংসও খাচ্ছি

শাহানা হুদা রঞ্জনা | প্রকাশিত: ০৯:২১ এএম, ২৪ জানুয়ারি ২০২৪

ছোটবেলায় রংপুরে এক বাসায় বেড়াতে গিয়ে দেখেছিলাম বাঘের চামড়া সাজিয়ে রাখা হয়েছে বসবার ঘরের টেবিলের উপর। খুলনায় আরেকটি বাড়িতে গিয়ে দেখেছি শিকারির পোশাকপরা একদল মানুষ বাঘের মৃতদেহর উপর পা রেখে ছবি তুলেছেন। ওনারা সেই পরিবারের পূর্বপুরুষ। একসময় তাদের বনেদিয়ানা ছিল কিন্তু এখন তারা সাধারণ চাকুরিজীবী মানুষ। সেই বাড়ির বিবর্ণ দেয়ালে হরিণের মাথাও সাজানো ছিল।

চলচ্চিত্রেও দেখেছি বড়লোকেদের বাসায় সৌখিন বস্তু হিসেবে পশুপাখির মৃতদেহ দেখানো হয়। সেদিনও বুঝতে পারিনি পশুপাখি হত্যা করে, সেই মৃতদেহের উপরে পা রেখে বা ঘরে মৃত প্রাণিটির মুন্ডু সাজিয়ে রেখে কতটা অভিজাত হতে পারে মানুষ। আজো বুঝতে পারছি না যে এর সঙ্গে আভিজাত্যের কী সম্পর্ক থাকতে পারে? বরং এরমধ্যে আছে ক্রুরতা, নিমর্মতা ও অমানবিকতা।

পুরানো আমলের সেইসব ইতিহাস ফিরে এসেছে বিভিন্ন সমাজের তথাকথিত ধনীদের মাধ্যমে। কেউ সাপের বা কুমিরের চামড়ার ব্যাগ, বেল্ট ও জ্যাকেট ব্যবহার করে শো-অফ করছেন। কেউবা খুব দুর্লভ প্রাণির পশমের কোট পরিধান করে ফ্যাশান করছেন। অন্যদিকে গন্ডারের শিং ও হাতির দাঁতের তৈরি মূল্যবান গহনা ও ছোটখাট আসবাবপত্রের চাহিদাতো দুনিয়াজোড়া। হাতির চামড়া দিয়ে তৈরি হচ্ছে মোড়া।

প্যাংগোলিনের মত প্রাণির মাংস খুব দামি বলে, শুধু ২০১৯ সালেই ১.৯৫ লাখ প্যাংগোলিন পাচার হয়েছে। এইসব পরে যারা পশুপাখির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করা নিয়ে গর্ব করেন, তাদের জন্য করুণা হওয়া উচিৎ। কারণ তারা অপরাধীর দোসর। যারা এই প্রাণিগুলোকে হত্যা করছে, এরা সেই তাদেরই পণ্যের খদ্দের।

এই “অভিজাত শ্রেণির চাহিদার” কারণে বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সরবরাহকারী থেকে ভোক্তা দেশ হয়ে উঠছে আমার দেশ বাংলাদেশও। দেশের পয়সাওয়ালা শ্রেণির মধ্যে বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে তৈরি তথাকথিত বিভিন্ন ওষুধ ও প্রসাধনীর চাহিদা বাড়ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য (সূত্র:বিজনেস স্ট্যার্ন্ডাড)। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিপন্ন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল।

সেই বন থেকে বিদেশে পাঠানো ও দেশে ব্যবহারের জন্য বাঘ হত্যা করছে চোরা শিকারিরা। বর্তমানে কেবল বহির্বিশ্বের চাহিদা নয়, বরং স্থানীয় চাহিদার কারণেও বাড়ছে এই অবৈধ বাণিজ্য। অর্থাৎ রয়েল বেঙ্গলের দেশ বলে আমরা যারা গর্ব করছি, সেই তারাই বাঘ হত্যা করে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি ও ব্যবহার করছি।

চীনের ইউয়ান থেকে প্রকৃতি সংরক্ষণ-বিষয়ক গণমাধ্যম মঙ্গা বে'কে গবেষণা নিবন্ধের মূল লেখক নাসির উদ্দিন বলেছেন, "অতীতে জীবিত প্রাণি বা মৃত বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সরবরাহের একটি প্রধান উৎস ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা উদ্বেগজনক হারে লক্ষ্য করছি অভিজাতদের মধ্যে এগুলো দিয়ে তৈরি পণ্যের চাহিদা বাড়ার ঘটনা। এদের মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক এবং এখানে বসবাসকারী বিদেশি উভয়েই রয়েছেন।"

দুই দশকে শক্তিশালী অর্থনৈতিক বিকাশ হয়েছে বাংলাদেশের। সেই বিকাশের হাত ধরে সম্পদের অসম বন্টন হয়েছে এবং তৈরি হয়েছে এক ধরনের “ধনীক শ্রেণি”। এই শ্রেণিটির মধ্যে আছে শুধু অর্থের গরিমা ও লোক দেখানো জৌলুস। শিক্ষা, সচেতনতা ও ন্যায়-অন্যায়বোধ খুব কম কাজ করে। বন্য প্রাণি হত্যা, চুরি, পাচার, প্রাণির হাড়হাড্ডি ও চামড়া থেকে তৈরি পণ্য ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কিছু ইতর প্রকৃতির মানুষ এগুলো ব্যবহার করছে। প্রশ্নটা হচ্ছে যারা এগুলো ব্যবহার করছে, তারা কিভাবে অভিজাত শ্রেণি হয়? তাদের শিক্ষা, প্রতিষ্ঠা, মানসম্মান, পদমর্যাদা ও পেশা সবই অর্থহীন।

দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশে ধনী মানুষ বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে তাদেরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পণ্যের অবৈধ বাজার। বাঘের চামড়া, হাড়, দাঁত ও শুকানো মাংস সবচেয়ে বেশি চাহিদা-সম্পন্ন পণ্য বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এগুলো বাংলাদেশের বিমান ও সমুদ্র বন্দরসহ স্থল সীমান্ত ক্রসিংগুলো দিয়ে আনা-নেওয়া করা হয়।

অভিজাত বাংলাদেশিদেরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোক্তা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে এসব ভোক্তারা বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বাণিজ্যে একটি বড় প্রভাব ফেলছেন, এতে করে বাংলাদেশ শুধু অবৈধ রপ্তানির উৎসই নয় বরং আমদানিকারকও হয়ে উঠছে। এই চাহিদা পূরণে ভারত ও মিয়ানমারে বাঘ চোরাশিকার করা হচ্ছে।

দেশে “খেকো” মানুষের সংখ্যা এত দ্রুত বাড়ছে যে সংরক্ষিত এলাকা, প্রাণিকুল এরা সব হজম করে ফেলছে। এই খেকো মানুষদের মধ্যে কিন্তু সাধারণ কোনো মানুষ নেই, আছেন একশ্রেণির ধনী, লুটেরা, অসৎ ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা ও ক্ষমতাধর মানুষ। এরাই বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ লাক্সারি হিসেবে ব্যবহার করছেন ও দেশের সম্পত্তি গোগ্রাসে গিলছেন। বিভিন্ন দেশ বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ ও পাচার রোধে বিভিন্নধরনের আন্তঃরাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, অনুদানও দিচ্ছে। আমরা কি পারছি এই পদক্ষেপগুলোর অংশ হতে, নাকি চাইছি-ই না?

আবার অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ১৫টি দেশে বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচার করা হচ্ছে। এই তালিকার শীর্ষে মালয়েশিয়ার মতো বিপুল প্রবাসী বাংলাদেশি থাকা দেশসহ রয়েছে চীন ও ভারত। এরপরেই রয়েছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। যাতায়াতের সুবিধার কারণে সহজেই আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের ব্যবসায়ীদের সাথে স্থানীয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের নেটওয়ার্ক যুক্ত হচ্ছে। এর মানে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ বাঘের অঙ্গ প্রত্যঙ্গেও ক্রেতা ও বিক্রেতা দুই হিসেবেই সামনের সারির।

শুধু কি বাঘ? এদেশেতো “মরা হাতিও লাখ টাকা।” পেশাদার খুনি দিয়ে মানুষ যেভাবে হত্যা করা হয়, হাতিও তাই। মানুষ হত্যা করে মাটি চাপা দেয়া হয়, ঠিক তেমনি মানুষের চাইতে ১০০ গুণ বড় হাতিকেও হত্যা করে মাটি চাপা দেয়া হয়। কী ভয়ংকর অপরাধের পথে হাঁটছি আমরা। বন দখলকারী চক্র ভাড়াটে খুনিদের নিয়ে হাতি হত্যা করাচ্ছে। শেরপুর, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামে একই কায়দায় হাতি হত্যা চলছে।

হাতি অনেক বুদ্ধিমান প্রাণি, দলগতভাবে বিচরণ করে, বাচ্চাকে খুব ভালবাসে, নিজের মতো চলাফেরা করে, বাধা পেলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সেই রাজকীয় প্রাণিকে মানুষ ভিক্ষুক বানিয়ে ছেড়েছে। দিনে দিনে বাড়ছে হাতি হত্যা করার হারও। হাতিদের আশ্রয়স্থল কেড়ে নিয়েছে মানুষ। গাছ কেটে বন সাফ করছে, হাতি চলাচলের পথে মানুষ বসতি গড়েছে।

তাহলে এই নিরীহ প্রাণিগুলো কোথায় যাবে, কোন পথে চলবে? কী খাবে? বনের ভেতরে গাছ কাটার পর সেখানে চোরাকারবারি বা বন উজাড়কারীরা ফসলের চাষ করছে। আর ওই ফসল পেকে ওঠার পর তা রক্ষায় তারা জমির চারপাশে বিদ্যুতের তার দিয়ে বেড়া দিচ্ছে। চলাচলের সময়ে সেখানে বাধা পেয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা পড়ছে হাতি।

হাতি বা বাঘ হত্যা নিয়ে আমাদের অনেকেরই কোনো মাথাব্যথা নেই। উচ্চপদস্থদের কেউ কেউ মনে করেন সৌদি আরবেতো বাঘ নাই, সেদেশের কি উন্নতি হয়নি? বাঘ ও হাতি রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বন বিভাগ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো জবাব দেবেন কি? বন বিভাগের বন্য প্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেছিলেন, বন বিভাগের একার পক্ষে হাতি রক্ষা সম্ভব না। কারণ বনের ভেতর অবৈধ দখলদারেরা কীভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়, ফসলের চাষ করে, আর অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে, তা দেখার দায়িত্ব একা বনবিভাগের নয়। সরকারের অন্যান্য সংস্থাগুলোর সহযোগিতা ছাড়া হাতি বাঁচানো যাবে না।

বাঘ রক্ষার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ওয়াইল্ডলাইফ জাস্টিস কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জীবিত বাঘের শাবক পাচার হয়ে আসারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়েছে, পূর্ণ বয়স্ক বাঘের চেয়ে ব্যাঘ্র শাবকের বেশি দাম পাওয়া যায়, যা ৭ হাজার ৬৪৮ ডলার থেকে শুরু করে শাবক প্রতি সাড়ে ১৭ হাজার ডলার পর্যন্ত হয়।

বাংলাদেশের বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের প্রধান মো. সানাউল্লাহ পাটোয়ারি বলেছেন, "বন্যপ্রাণি পাচার অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। পাচার প্রতিরোধে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের সীমিত সম্পদ ও জনবলের কারণে মনিটরিং সক্ষমতা কম। এটাও আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্রগুলোর কাছে বাংলাদেশকে আকর্ষণীয় ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত করেছে।”

আমাদের দেশে পশুপাখি রক্ষার জন্য খুব সামান্য স্কেলে কিছু সংস্থা ও মানুষ কাজ করছেন ঠিকই। তবে পশুপাখির প্রতি নির্দয় আচরণের পরিমাণই দিন দিন বাড়ছে। দেশে কুকুর, বিড়াল, হাতি, পাখি, শিয়াল, বেজি, বনবিড়াল, ডলফিন, বাঘ সবাইকে এক কাতারে ফেলে হত্যা করা হচ্ছে। এগুলো নিয়ে বাণিজ্য করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এই যে পশুপাখির প্রতি নির্দয় আচরণ করা হয়, এর জন্য কোথাও কোন উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দেখি না। অপরাধীদের শাস্তিও পেতে দেখি না। পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা একধরণের মানসিক বিকৃতি বা অসুস্থতা। একমাত্র মানুষই পারে ‘অভিজাত সাজা’র জন্য ভয়ংকরভাবে মানুষ ও পশুপাখি হত্যা করতে। আর কোনো জীব তা পারেনা।

বাংলাদেশের দক্ষিণে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন। এই বন বাংলাদেশের গর্ব ও বাঘের অন্যতম আবাসস্থল। ২০১৭ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য ছিল। এরা অনেক বাঘ হত্যা ও পাচারের সাথে জড়িত ছিল। তবে বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালে অভিযান চালিয়ে এসব দস্যুদের দলগুলো ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু এতে করে জলদস্যু নিধন হলেও, বাঘ নিধন বন্ধ হয়নি। এখন তাদের শূন্যস্থান দখল করেছে কয়েক ডজন বাঘ-চোরাশিকারী দল। এতে সুন্দরবনের বাঘেরা এখনও ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এই মূর্খ, হাভাতে গোষ্ঠি বনেদিয়ানা বা আভিজাত্য দেখানোর জন্য শুধু বাঘ, হরিণ, হাতি বা শিয়াল কেন, একদিন হয়তো দেশটাই খেয়ে ফেলবে। এ প্রসঙ্গে চিহিরোর বাবা-মায়ের সেই গল্পটা কিছুতেই মাথা থেকে তাড়াতে পারি না। বাবা মায়ের সাথে নতুন শহরে আসে ছোট্ট মেয়ে চিহিরো। আসতে গিয়ে পথ হারিয়ে একটি ছোট্ট বনের ভেতরে ঢুকে পড়ে তারা। সেখান দিয়ে যেতে যেতেই হঠাৎ সামনে দেখে একটি প্রাচীন বাড়ির গেট। চিহিরো পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে ভয় পায়, ফিরে যেতে চায়। বাবা মা তাকে গাড়িতে থাকতে বলে। ছোট্ট চিহিরোকে তারা বলে বাড়িটির ভেতরটা দেখেই চলে আসবে।

কিন্তু একা একা ভয় পেয়ে চিহিরো তাদের পিছু নেয়। চিহিরোর বাবা-মা বাড়িটির ভেতরে গিয়ে দেখে বাড়িটির পেছনে বাইরে বেরুবার একটি পথ দেখা যাচ্ছে। সেটি দিয়ে এগিয়ে যেতেই তারা দেখে সেখানে জনমানবহীন অন্য একটি শহর। শহরটিতে ঢোকামাত্র খাবারের সুন্দর গন্ধ পেতে থাকেন তারা। একটু এগিয়েই তারা দেখেন টেবিলে সারি সারি খাবার রাখা কিন্তু চারপাশে কেউ নেই। একটু ডাকাডাকি করে চিহিরোর মা-বাবা ভাবে খেয়ে নেই, কাউন্টারে লোক এলে বিল দেয়া যাবে। এইভেবে তারা সুস্বাদু খাবারগুলো খেতে শুরু করেন।

ওদিকে চুপচাপ পরিবেশ দেখে চিহিরোর ভয় আরো বেড়ে যায়। বাবা মা'কে ছেড়ে আজব ভীতিকর এলাকাটা একটু ঘুরে ফিরে দেখতে থাকে চিহিরো। এদিকে সুস্বাদু সব খাবার গোগ্রাসে খেতে থাকে চিহিরোর বাবা-মা। চিহিরো ঘুরে এসে পেছন থেকে দেখে মা-বাবা বেশ মোটা হয়ে গেছে খেতে খেতে। ভয় পেয়ে তাদের ডাকলে তারা ফিরে তাকায়। চিহিরো অবাক হয়ে দেখে দেখে মোটাতাজা শুকরে পরিণত হয়েছে তার বাবা-মা। সেই দেশের যে ডাইনি সে এইভাবে লোভী মানুষদের ধরে এনে খাইয়ে খাইয়ে মোটা তাজা করে এবং একদিন রোস্ট বানিয়ে খেয়ে ফেলে। জাপানের স্টুডিও জিবলির এনিমেটেড ফিল্ম "স্পিরিটেড অ্যওয়ে"এর গল্পের একটি অংশ।

আমাদের মধ্যে অনেকেই চিহিরোর বাবা-মায়ের মত শুধু খাচ্ছেন। অন্যের জমি, টাকা, সম্পদ, বাড়িঘর সবকিছু। এমনকী পার্ক, পাহাড়, নদী, উপকূল, ভূমি, মানুষ, পশুপাখিও বাদ যাচ্ছেনা। দেশে “খেকো” মানুষের সংখ্যা এত দ্রুত বাড়ছে যে সংরক্ষিত এলাকা, প্রাণিকুল এরা সব হজম করে ফেলছে।

এই খেকো মানুষদের মধ্যে কিন্তু সাধারণ কোনো মানুষ নেই, আছেন একশ্রেণির ধনী, লুটেরা, অসৎ ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা ও ক্ষমতাধর মানুষ। এরাই বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ লাক্সারি হিসেবে ব্যবহার করছেন ও দেশের সম্পত্তি গোগ্রাসে গিলছেন। বিভিন্ন দেশ বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ ও পাচার রোধে বিভিন্নধরনের আন্তঃরাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, অনুদানও দিচ্ছে। আমরা কি পারছি এই পদক্ষেপগুলোর অংশ হতে, নাকি চাইছি-ই না?

লেখক: যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখক।

এইচআর/জেআইএম