নয়া সরকারের কাছে প্রত্যাশা
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি রোধ অগ্রাধিকার পাক
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতুত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে। বিগত তিন মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে। উন্নয়নের এই সুফলভোগী সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা এবার আরো অনেক বেশি। জনগণের প্রত্যাশা শেখ হাসিনা সরকার এবার তাদের দৈনন্দিন জীবনের দুর্ভোগ লাঘবে জোর দিবেন এবং সেইসাথে বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তুলবেন।
গত কয়েক বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ক্রমবর্ধমান দাম সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। সুতরাং, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ক্রমবর্ধমান দাম নিয়ন্ত্রণ করা শেখ হাসিনা সরকারের এই মেয়াদে অগ্রাধিকার হিসেবে দাঁড়িয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দাম একটি প্রবল প্রভাব তৈরি করে, যা জীবনযাত্রার সামগ্রিক ব্যয়কে প্রভাবিত করে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতি অবশ্যই মূল্যস্ফীতি এবং মূল্যবৃদ্ধি রোধে কৌশলগত পদক্ষেপের দ্বারা পরিপূরক হতে হবে। জনসাধারণের উপর আর্থিক চাপ কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে কার্যকর মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন, সরবরাহ শৃঙ্খল নিরীক্ষণ এবং মজুদদারী রোধ করে দ্রব্য মূল্য স্থিতিশীল রাখতে হবে।
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার জনগণের কল্যাণে তার অঙ্গীকার প্রদর্শন করতে পারে। মূল্যবৃদ্ধিরোধে সরকারের সক্রিয় প্রচেষ্টা শুধুমাত্র নাগরিকদের ক্রয় ক্ষমতাকে উন্নীত করে না বরং সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সম্প্রীতিও বৃদ্ধি করে। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধিরোধকল্পে সরকারের গৃহীত কর্মসূচি জনগণের তাৎক্ষণিক উদ্বেগের সাথে অনুরণিত হয়, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং দায়িত্বশীল শাসনের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতিকে শক্তিশালী করে। উন্নয়নের সুফল প্রতিটি ঘরে পৌঁছানো নিশ্চিত করা একটি স্থিতিস্থাপক ও সমৃদ্ধশালী সমাজকে গড়ে তোলার কেন্দ্রবিন্দু।
রাষ্ট্রের সকল স্তরে দুর্নীতি দমন করা সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আবশ্যিকতা। দুর্নীতি শুধু জনগণের আস্থাই নষ্ট করে না বরং শাসনের দক্ষতা ও কার্যকারিতাও নষ্ট করে। সুশাসনের কাঠামোকে শক্তিশালী করতে, সরকারকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উপর জোর দিয়ে বহুমুখী পন্থা অবলম্বন করতে হবে।
শক্তিশালী দুর্নীতি বিরোধী পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য তদারকি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, সততার সংস্কৃতির প্রচার করা এবং দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান দুর্নীতি বিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং অন্যায়কারীদের দ্রুত বিচার এই দৃঢ় সংকেত দেয় যে, কোনো ভাবেই দুর্নীতির প্রতি নমনীয়তা দেখানো হবে না।
অধিকন্তু, শাসন ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে এবং দুর্নীতি উচ্ছেদ করার উপায় প্রদান করে একটি নাগরিক-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা হলে এটি একটি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করতে পারে। জনপ্রশাসনের মধ্যে নৈতিক মানগুলিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা এবং নিয়মিত অডিট পরিচালনা করা দুর্বলতাগুলি সনাক্ত এবং সংশোধন করতে সহায়তা করতে পারে। যেহেতু দুর্নীতি প্রায়শই অস্বচ্ছ পরিবেশে বিকাশ লাভ করে, উন্মুক্ততা এবং জবাবদিহিতার প্রতিশ্রুতি একটি আরও স্থিতিস্থাপক এবং বিশ্বস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র তৈরি করতে পারে।
সফলভাবে দুর্নীতি দমন করা শুধুমাত্র একটি নৈতিক আবশ্যকতাই নয়, টেকসই উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টাকে অগ্রাধিকার দিয়ে, সরকার তার সুনাম বৃদ্ধি করতে পারে, বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে এবং নিশ্চিত করতে পারে যে অগ্রগতির সুফল সুষমভাবে বন্টন করা হয়েছে।
সুশাসন এবং দুর্নীতি বিরোধী পদক্ষেপ জনগণের আস্থা তৈরি করতে এবং সরকারের দক্ষ কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জনসাধারণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং সর্বস্তরে দুর্নীতি নির্মূলে অব্যাহত প্রচেষ্টার প্রত্যাশা করে। আইনের শাসনকে সমুন্নত করে এমন প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা এবং জবাবদিহিতার সংস্কৃতিকে উন্নীত করা শেখ হাসিনা সরকারের চলমান মেয়াদে জনগণের মূল প্রত্যাশা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো অর্থনৈতিক উন্নয়নে জোর প্রাধান্য দেওয়া। জনসাধারণ দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টার প্রত্যাশা করে। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছে এবং আশা করা যায় চলতি মেয়াদে এই গতি বজায় থাকবে।
শেখ হাসিনা সরকারের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক খাতে ধারাবাহিক বিনিয়োগ অব্যাহত রাখা অতীব জরুরি। উন্নত ও সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গডতে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি, মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে। মানব পুঁজি উন্নয়নের উপর জোর দেওয়াকে জাতির দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের জন্য অত্যাবশ্যক খাত হিসেবে দেখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই সুবিধাবঞ্চিতদের উন্নয়নে সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। সরকার যখন চতুর্থ মেয়াদে প্রবেশ করছে, তখন এই কর্মসূচীর সম্প্রসারণ ও বর্ধনের প্রত্যাশা অনেক বেশি। অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণ করা সামাজিক সম্প্রীতির জন্য অপরিহার্য। জনসাধারণ এমন নীতিগুলি প্রত্যাশা করে যা সমান সুযোগের প্রচার করে এবং আরও ন্যায়সঙ্গত সমাজ তৈরি করে।
ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের যুগে, স্থায়িত্ব এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে উদ্বেগ আরও বিশিষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার জন্য শক্তিশালী কৌশল প্রয়োজন। জনগণ আশা করে যে সরকার টেকসই উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেবে, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ করবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে, কূটনৈতিক সম্পর্ক একটি জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব মঞ্চে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে স্বীকিৃতি পেয়েছে। এটি ধরে রাখতে জনসাধারণ, শক্তিশালী এবং ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব বজায় রাখতে শেখ হাসিনা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতা ক্রমাগত বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে, একটি বিচক্ষণ এবং কৌশলগত পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য অপরিহার্য হিসাবে দেখা দিয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের বর্তমান মেয়াদ নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। সামনের পথ বাধা-বিপত্তিতে ভরা। যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব মোকাবিলা করা থেকে শুরু করে আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক জটিলতাগুলো দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা অপরিহার্য। জনসাধারণ প্রত্যাশা করে যে, কার্যকর শাসনের মাধ্যমে সরকার এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের চতুর্থ মেয়াদে জনগণের প্রত্যাশা শান্তি, অব্যাহত অগ্রগতি, উন্নয়ন এবং সামাজিক সম্প্রীতি বজায় থাকা। যদিও সামনের চ্যালেঞ্জগুলি প্রবল কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার স্থিতিস্থাপকতা এবং দৃঢ়তা জনগণের মধ্যে আস্থা জাগিয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের চতুর্থ মেয়াদটি দেশের সমৃদ্ধির জন্য বাঙালি জাতির চলমান আত্মজ অনুসন্ধানের ও দ্বিধাবিভক্ত পরিহার করে উঠে দাঁড়াবার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী।
এইচআর/এমএস