ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ২০২৪

নেতৃত্বের মহিমায় উন্নয়নের শীর্ষে আরোহণ করবে বাংলাদেশ

ড. মিল্টন বিশ্বাস | প্রকাশিত: ০৯:১৮ এএম, ০৯ জানুয়ারি ২০২৪

ব্যতিক্রম ও অভিনব সব ঘটনায় পূর্ণ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রকৃতপক্ষে ঐতিহাসিক হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। আগামী পাঁচ বছর শেষ হওয়ার পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের শাসনকালের মোট সময় দাঁড়াবে ২৫ বছর। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। এজন্য সৎ ও নির্লোভ রাজনীতিবিদের টানা দায়িত্ব জনগণের কাছে কল্যাণকর ঘটনা।

নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় এই নির্বাচনকে কেউ কেউ ১৯৭০ সালে আরেকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল বলে মন্তব্য করেছেন। তখন মাওলানা ভাসানী নির্বাচনে অংশ নেননি, কিন্তু ভোট বর্জন কিংবা সহিংসতাও করেননি। সেসময় সব জাতীয় নেতাকে পেছনে ফেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে উঠেছিলেন এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের একক নেতা। তেমনি বিজয়ের মধ্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা এদেশের মঙ্গলকামী মানুষের আস্থাশীল রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছেন। অবশ্য বিবিসি নিউজ বাংলাদেশের রাজনীতিকে আখ্যায়িত করেছে ‘ওয়ান ওমেন শো’ হিসেবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর মন্তব্য প্রতিবেদনে উঠে এসেছে প্রকৃত তথ্য- ‘নিরঙ্কুশ বিজয়ের পথে শেখ হাসিনা, পরাজিত হলো জো বাইডেনের চাপ প্রয়োগমূলক পররাষ্ট্রনীতি।’

নির্বাচনের দুই দিন আগে (৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ) নিউইয়র্ক টাইমস সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, ‘বিএনপির রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে। তারা আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।’

দুই.
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বিশেষত্ব অনেক। মানুষ ভোট দিয়েছে বলেই লাখ লাখ ভোট গণনা করতে হয়েছে। এমনকি বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া শাহজাহান ওমর জয়ী হয়েছেন ৯৫ হাজার ৪৭৮ ভোটে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে। দেশ জুড়ে তিনশ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে ৭ জানুয়ারি (২০২৪) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করে এ নির্বাচন বর্জন করে দেশবাসীকে ভোটে অংশ না নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।

অন্যদিকে পনের বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিশ্বনেত্রী হিসেবে ভাবমূর্তি আরো বেশি সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। নির্বাচন সফল করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের তৎপরতা ছিল অনন্য। ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ৪২ হাজার ১০৩টি কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। “নির্বাচন শেষে একটি বিষয় স্বস্তিদায়ক যে, নির্বাচনি সহিংসতায় কোনো মৃত্যু হয়নি। কিছু কিছু ছোট ছোট ঘটনা ঘটেছে,” বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। “নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে এসে স্বাধীনভাবে তাদের ভোট প্রয়োগ করেছেন। নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে কমিশন চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেনি,” বলেন তিনি।

স্বচ্ছ ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় গঠিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের ক্ষমতার পুরোটাই প্রয়োগ করেছে।অর্থাৎ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে।অভিযোগ পাওয়ায় ৭টি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়েছে। সারা দেশে ৩৭টি অনিয়ম ও গোলযোগের ঘটনার সংবাদ পাওয়া গেছে। অনিয়মের কারণে বরগুনায় একজনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একজনের প্রার্থিতাও বাতিল করা হয়েছে।

জাল ভোটের দায়ে ১৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়। আসলে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগকে নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করেছে। নির্বাচন কমিশন এবার দিনেরবেলা ব্যালট পেপার পাঠিয়েছে। আগের রাতে যেখানে ব্যালট পেপার যায়নি, সেখানে ভোটচুরির ঘটনা হাস্যকর। প্রকৃতপক্ষে যেখানে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে, নির্বাচন কমিশন হস্তক্ষেপ করেছে, ভোট বাতিল করেছে এবং স্থগিত করেছে।

শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের একাধিক নেতা।তাঁদের ভাষ্য হলো-“বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক ভোটকে বাধা দেয়ার সব অপচেষ্টা সত্ত্বেও সারা দেশের ভোটকেন্দ্রগুলোতে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ও নির্বিঘ্নভাবে ভোট দিয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সারা দেশে ভোট অত্যন্ত সুষ্ঠু ও চমৎকার পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো বড় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, গোলযোগ বা সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।

বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও বলেছেন, ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া ঠিক ছিল এবং কাউকে ভোট দিতে জোর করা হয়নি।জনগণ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমর্থন জানিয়েছেন। দেশের সাফল্যের তালিকায় এটি একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা।”দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছে পঞ্চাশ শতাংশের বেশি। যেমন বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভোটারদের ছবি দেখা গেছে। দীর্ঘ লাইন যেমন দেখা গেছে, তেমনি দেখা গেছে- সন্তান ১২০ বছরের বৃদ্ধা মাকে কাঁধে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছে।

তিন.
বিএনপি বরাবরই সংবিধান ও নির্বাচনকে অবজ্ঞা করেছে। সুন্দর ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের ভোটারদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে। ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য নাশকতার আশ্রয় নিয়েছে।নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরুর আগে ৬ জানুয়ারি(২০২৪) শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অন্তত ২৩ জেলায় ৪২টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৪ জেলার ২১টি ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। একই সময় চার জেলায় চার নির্বাচনী ক্যাম্প ও দুই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সাত জেলায় ১১টি যানবাহন ও চার জেলায় চারটি স্থাপনায় (ভোটকেন্দ্র নয় এমন বিদ্যালয়) আগুন লাগানো হয়েছে।

এ ছাড়া দুটি জেলায় ভাঙচুর করা হয়েছে অন্তত ২২টি যানবাহন।এভাবে সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি ভোটারদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করে, নির্বাচন থেকে ভোটারদের দূরে রাখার যে ষড়যন্ত্র করেছিল, সেটি ব্যর্থ হয়েছে। এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়ে সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন এবং ভোট দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচার এখনো থেমে নেই। অতীতে বিএনপি’র পক্ষে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক আমলা, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ও বিচ্যুত রাজনীতিবিদদের মধ্য থেকে প্রার্থী বাছাই করে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামাত।১৯৯১ সালের নির্বাচনে সব পূর্বাভাস ও জরিপকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে জামায়াতের সমর্থনে বেগম জিয়াকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানো হয়। নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি’র কুকীর্তি বিশদ।

সব বাধা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচন শেষ করেছেন। বিএনপি ভোট বর্জন করলেও তিনি নিজ দলের একাধিক প্রার্থীকে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন। জমে উঠেছিল ভোটের পরিবেশ। ফলে এখন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার জন্য বিএনপি ও তাদের সমর্থকদের ২০২৮ সাল অবধি অপেক্ষা করতে হবে। ততদিনে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের মহিমায় উন্নয়নের শীর্ষে আরোহণ করবে।

শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেন এবং রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় খালেদা জিয়ার পতন ঘটান। একই বছর ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় ও সরকার গঠন করে।আওয়ামী লীগ মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলেও গ্যাস বিক্রির টাকার খেলায় সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র আবারও খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে আসে।

আর ‘হাওয়া ভবন’ স্থাপন করে ব্যাপক দুর্নীতির জাল বিস্তার করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থাটিও নিজেদের পক্ষে নিয়ে নেয় বিএনপি-জামায়াত। আওয়ামী লীগের তীব্র আন্দোলনের সুযোগে তৃতীয় শক্তি হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিনের সরকার। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপিকে কবর দিয়ে এবং আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে মার্কিন মদদপুষ্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা। কিন্তু গণরোষের মুখে সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায় এবং সেনা-সমর্থিত সরকার দুই বছরের মাথায় জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে নিরাপদে বিদায় নেয়।

ইতিহাসের সবচেয়ে সুষ্ঠু ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৮৭ শতাংশ আসনে বিজয়ী হয় এবং তাদের প্রাপ্ত ভোট ৪৭ শতাংশে দাঁড়ায়। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ সবসময় জয়ী হবে-এই বিষয়টির সত্যতা সামনে আসে। অন্যদিকে ২০০৯ সালে সরকার গঠিত হওয়ার পর দেশের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাসমূহ গ্রহণ করা হয়। ২০২১ ও ২০৪১ সালকে সামনে রেখে রূপকল্প প্রণয়ন করার ফলে দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়।

চার.
সুন্দর, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা সর্বত্র। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। নির্বাচনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচনের স্বচ্ছতায় তারা অভিভূত।রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনার অ্যান্দ্রে ওয়াই শুটব বলেছেন, আমি বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছি। খুব দারুণ নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছে। নির্বাচন স্বচ্ছ, উন্মুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে হয়েছে। ভোটের পরিবেশে নিরাপত্তা ছিল, এটা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। কোনো বিষয়ে কোনো তথ্যের অভাব ছিল না।

গণমাধ্যমকর্মীরা স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহ করেছে। রাশিয়া ছাড়াও বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ওআইসি, ফিলিস্তিন ও গাম্বিয়ার পর্যবেক্ষকরা। ভোটগ্রহণ শেষে রোববার (৭ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে আসেন তারা। সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংকালে ফিলিস্তিনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাশিম কুহাইল বলেছেন, আমরা বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখেছি।ভোট শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে, এছাড়া ভোটের পরিবেশও খুব ভালো ছিল। নাগরিকদের ভোটদান প্রক্রিয়াও খুব সহজ ছিল। এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যেই ভোটাররা ভোট দিতে পেরেছেন।

অর্থাৎ ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। ভোটের পরিবেশেরও প্রশংসা করেছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতিবিদ জিম ব্যাটস প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ভোট সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেছে।এছাড়া ব্রিফিংয়ে কানাডার এমপি চন্দ্রকান্থ আরিয়া ও ভিক্টর হো বক্তব্য রাখেন।

নির্বাচন চলার সময় জানা গেছে, নির্বাচনে ৩০০-এর মতো বিদেশি পর্যবেক্ষক রয়েছেন। তারা এ নির্বাচনকে সন্তুষ্টজনক মনে করেছেন।কোনো কোনো পর্যবেক্ষক বলেছেন, এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে, তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।বিদেশি এক সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে যুক্তরাজ্য-এর মতো নির্বাচন হচ্ছে। স্বচ্ছ, অবাধ এবং মুক্ত পরিবেশে নির্বাচন চলছে। সবচেয়ে বড় কথা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো সহিংস ঘটনা কোথাও ঘটেনি।

লেখাবাহুল্য, ভোটকেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ করে স্বচ্ছ ও শান্তিময় পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে বলে মন্তব্য করেছেন সকল বিদেশি পর্যবেক্ষক। ঢাকার দারুস সালাম এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ কোরিয়া কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভোট পরিদর্শন শেষে ভোটের পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তাদের মূল্যায়ন জানান তিন বিদেশি পর্যবেক্ষক।সে সময় ডেপুটি হেড অব মিশন ইউএস এসটিও টেরি এল. ইসলে বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ ভালো। মানুষ ভোট দিতে আসছে। ৫০ শতাংশ ভোট পড়বে বলে আমরা আশা করছি। সে অনুযায়ী আমরা যে কেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি, সেগুলোতে কোনো ত্রুটি চোখে পড়েনি।’

পলিটিক্যাল এডিটর আয়ারল্যান্ড নিকোলাস হুপাওয়াল বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ দেখেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরাপদ নির্বাচন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি মাইলস্টোন হবে।’(সূত্র- দৈনিক বাংলা) অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের পর্যবেক্ষক দল। সেখানে তাঁরা জানান, ভোট শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। ভোটের সার্বিক পরিস্থিতিতে তারা সন্তুষ্ট এবং ভীষণ আশাবাদী।রাজধানীর বাইরে ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি দেখে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন তারা। বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরবেন বলেও জানান যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের পর্যবেক্ষক দল।

বিদেশি পর্যবেক্ষকদের মন্তব্য ও আশাবাদ সত্য বলেই বিশিষ্ট জনগণ ভোট দিয়ে নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। আসলে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে বলেই- পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে ভোটদাতাদের বিচিত্র প্রতিক্রিয়া। সাধারণ মানুষের মতো চলচ্চিত্র, সংগীত, টেলিভিশন ও মঞ্চের তারকারাও ভোট দিয়েছেন। ভোট দিয়ে তাঁরা ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। তারকাদের কয়েকটি মন্তব্য লক্ষ্ করা যেতে পারে। ঢাকার গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী চম্পা। তাঁর মন্তব্য-‘একজন নাগরিক হিসেবে ভোট আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তাই ভোট দিয়ে ভালো লাগছে। আমার কেন্দ্রের পরিবেশও মুগ্ধ করেছে।’ মাকে সঙ্গে নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে শাকিব খান যান গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে। তিনি বলেন ‘দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে ভোট প্রদান করা আমার একান্ত দায়িত্ব। ভোট দিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আমি গতবারও নির্বাচনে আম্মাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি, এবারও এসেছি। আমার বাবা সকালে তাঁর বন্ধুরাসহ ভোট দিতে গেছেন। আমার মনে হয়, ভোটার হয়েছেন, এ রকম প্রত্যেক মানুষের ভোট দিতে আসা উচিত।’

দুই বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী জয়া আহসান ভোট দিয়ে ছবি পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। ঢাকার বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুলে স্ত্রী মুশফিকা খান তিনাকে সঙ্গে নিয়ে ভোট প্রদান করেছেন চিত্রনায়ক রিয়াজ আহমেদ। ভোট প্রদান শেষে দুজনের দুটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন তিনা। ঢাকার ইস্কাটন দিলু রোডের ভোটার গীতিকবি কবির বকুল ভোট দেওয়া শেষে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘ভোট হলো গণতন্ত্র। আমার ভোট আমি দেব। ভোট দিয়ে এলাম।’

ভোট দেবার পর ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা যায়নি। এবার সবকিছু নতুন। কারণ ভোটার উপস্থিতির মাধ্যমে দ্বাদশ নির্বাচনকে উৎসবমুখর করে তুলতে সমাজের বিশিষ্টজনরাও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এজন্য ভোট প্রদান শেষে সংগীতশিল্পী কোনাল ফেসবুকে লিখেছেন-‘আমার ভোটে জিতবে দেশ’। ‘ভোট দিয়ে এসেছি। ভোট প্রদান করুন নিজের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে।’ সংগীতশিল্পী সিঁথি সাহা ভোট প্রদান শেষে ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করলাম।’ ‘নাগরিক অধিকার প্রয়োগ’ করার ফলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছে। ভোটাররা তাদের পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। এজন্য ফলাফল একতরফা হয়নি। বরং প্রতিদ্বন্দ্বীকে মোকাবেলা করেই এমপি হতে হয়েছে। ভোটের মাঠে কেউ দরদ পায়নি। বরং তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরেছেন তিনজন প্রতিমন্ত্রী। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন ও সম্পাদকমণ্ডলীর দুজন সদস্যসহ বেশ কয়েকজন বর্তমান সংসদ সদস্য নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন ভোটে পরাজিত হয়েছেন। এ সংখ্যা তিন প্রতিমন্ত্রীসহ ১৯ জন হবে।নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে বলেই এই ধরনের ফলাফল ও দৃশ্যপট আমাদের দেখতে হচ্ছে।

পাঁচ.
বিএনপি’র পক্ষে যারা ছিলেন তারা হাল ছেড়েছেন নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার আগেই। এজন্য পশ্চিমাদের প্রতিনিধিরা নীরব এখন। এবারও হয়ত বিএনপি-জামায়াত শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করবে। কিন্তু জনগণকে মনে রাখতে হবে, অতীতে মহাদুর্যোগ কাটিয়ে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলার মাটিতে কার্যকর হয়েছে জাতির পিতাকে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায়।

সব আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নিজ অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে পদ্মা সেতু। বাজেটের আকার ৬০ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে মধ্যম আয়ের দেশে।বিএনপি-জামায়াত ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করে চরম নাশকতার পথ বেছে নিয়েছিল। তারপরও শেখ হাসিনার অগ্রযাত্রা ঠেকাতে পারেনি। ২০১৮ সালে তারা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তবে শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়িয়ে নির্বাচনটিকে বেশ খানিকটা বিতর্কিত করে তুলতে সক্ষম হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের আগেই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল- তাতেও সক্ষম হয়নি। বরং শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সব বাধা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচন শেষ করেছেন। বিএনপি ভোট বর্জন করলেও তিনি নিজ দলের একাধিক প্রার্থীকে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন। জমে উঠেছিল ভোটের পরিবেশ। ফলে এখন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার জন্য বিএনপি ও তাদের সমর্থকদের ২০২৮ সাল অবধি অপেক্ষা করতে হবে। ততদিনে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের মহিমায় উন্নয়নের শীর্ষে আরোহণ করবে।

লেখক : বঙ্গবন্ধু গবেষক এবং বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

এইচআর/জেআইএম