ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন

চব্বিশের নয়া স্টাইল

প্রভাষ আমিন | প্রকাশিত: ০৯:৫৮ এএম, ০৮ জানুয়ারি ২০২৪

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে যে নির্বাচনটি হয়ে গেল, তা নিয়ে অনেক চুলচেড়া বিশ্লেষণ হবে অনেকদিন। নির্বাচনটি কেমন হলো, নানা দৃষ্টিকোণ থেকে তা বিচার করা হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করেন, আমি এই নির্বাচনকে লেটার মার্কস না হলেও পাস মার্ক দেবো। আমি আসলে আরো খারাপ মানের নির্বাচন হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলাম। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খারাপ যা, তা আগেই হয়ে গেছে। নির্বাচনের দিন নতুন করে খারাপ কিছু হওয়ার সুযোগ ছিল না। বাংলাদেশে ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে। এবারের নির্বাচনে ২৮টি অংশ নিয়েছে। পরিসংখ্যানে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলকই হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি অংশ না নিলে সেটাকে পূর্ণাঙ্গ অংশগ্রহণমূলক বলা যাবে না। আর অংশগ্রহণমূলক না হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ার সুযোগও কম। তবে দলের বিদ্রোহীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত করে দিয়ে অন্তত ১০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ তৈরি করতে পেরেছিল আওয়ামী লীগ। তাতে লাভও হয়েছে হাতে হাতে। অন্তত ১০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণেই ভোটের হার একটা সম্মানজনক পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছিল। একটি নির্বাচনকে অনেকগুলো বিশেষণে বিশেষায়িত করা যায়- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য। ৭ জানুয়ারি যা হয়েছে, তাকে আপনি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ হয়তো বলতে পারবেন। তবে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়া যে সম্ভব নয়, তা আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। আর সব শর্ত পূরণ করলেও বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। কারণ আমাদের দেশে পরাজয় মেনে নেয়ার সংস্কৃতি নেই। তাই নির্বাচন যত ভালোই হোক, পরাজিত দল বা ব্যক্তির কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয় না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব ভালো হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। তবে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি পর্যাপ্ত না হলেও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় খুব বেশি ত্রুটি ছিল এমন অভিযোগ এখনও আসেনি। বরং বিদেশী পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সন্তোষই প্রকাশ করেছেন।

বর্তমান সরকারের আমলে ২০১৪ ও ২০১৮ অনুষ্ঠিত পরপর দুটি নির্বাচন নিয়ে নানা সমালোচনা আছে। তবে দুটি নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা কিন্তু দুইরকম। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার মানে নির্বাচনের আগেই সরকার গঠনের মত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গিয়েছিল। সেটা নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠলেই আইনগতভাবে তা বৈধ ছিল। তবে সেই সমালোচনাটা নিশ্চয়ই নীতিনির্ধারকদের মাথায় ছিল। তাই এবার বিএনপি অংশ না নেয়ার পরও কেউ যাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে না পারে, তা নিশ্চিত করা হয়েছে আগেই। প্রয়োজনে ডামি প্রার্থী রাখারও নির্দেশনা। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সাথে ২০১৮ সালের নির্বাচনের কোনো মিল ছিল না। বিএনপি নামকাওয়াস্তে নির্বাচনে এসেছিল নিজেদের নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে আর দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় তা প্রমাণ করতে। বিএনপির সেই ফাঁদে পা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আর পুলিশ-প্রশাসন মিলে সে নির্বাচনকে হাস্যকর করে তুলেছিল। কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সমালোচনা ছিল আগের রাতের ভোট। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বারবার বলেছেন, এবার রাতে ভোট হবে না। সেটা নিশ্চিত করতে এবার অধিকাংশ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে নির্বাচনের দিন সকালে। তাই এবারের নির্বাচন ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মত হয়নি। ভালোমন্দ যাই হোক, এবারের নির্বাচন হয়েছে নয়া স্টাইলে।

শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে মাঠে নামিয়ে অন্যরকম আবহ তৈরি করেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমপিরা নির্বাচিত হয়েছিলেন অনায়াসে। তাদের জনগণের কাছে যেতে হয়নি, জনগণের ভোট লাগেনি। এবারও তারা আশায় বসেছিলেন শেখ হাসিনা তাদের কোনো না কোনোভাবে পার করে দেবেন। কিন্তু শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে পার করলেও সব এমপির দায়িত্ব নেননি। তাই এবার জিততে অনেককে ঘাম ঝড়াতে হয়েছে। দলের বিদ্রোহীদের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন বাঘা বাঘা অনেক নেতা। মন্ত্রিসভার অন্তত ৩ জন জিততে পারেননি। ৬১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতেছেন, যাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগেরই সমর্থক। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার নীতিতে শেখ হাসিনা দলের জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। এই থেকে যদি আওয়ামী লীগের নেতারা শিক্ষা নেন, আবার সংগঠন নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যান, তাহলে দলের তো লাভ হবেই, লাভ হবে দেশেরও।

আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসছে, শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মত প্রথধানমন্ত্রী হচ্ছেন। শেখ হাসিনা এরই মধ্যে বাংলাদেশকে অন্যরকম উচ্চতায় তুলে এনেছেন। এখন সামনে সুযোগ দেশকে আরো এগিয়ে নেয়ার। দুর্নীতি, অর্থপাচার, ঋণখেলাপী ঠেকাতে জিরো টলারেন্স নিয়ে এগিয়ে যাওয়া এখন সময়ের দাবি। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রশ্নেও আগের সমালোচনা মাথায় রেখে কাজ করার সুযোগ সামনে। বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাক।

লেখক: বার্তাপ্রধান, এটিএন নিউজ।

এইচআর/জেআইএম