ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

শিক্ষাখাতে অগ্রযাত্রা এবং নির্বাচনী ইশতেহার

সৈয়দ মো. সিয়াম | প্রকাশিত: ০৯:৫৪ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩

শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। দেশের সকল শিশু—কিশোরকে শিক্ষা তথা বিদ্যালয়মুখী করা এবং তাতে উৎসাহিত করা বর্তমান সরকারের এক সুদূরপ্রসারী যুগপৎ এবং চলমান চিন্তাধারা।

‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০—এর শিক্ষা—লক্ষ্য অর্জন ও উন্নত বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রায় একীভূত মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণসহ শিক্ষাসহায়ক কার্যক্রমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর।

আর এসকল উদ্যোগকে কার্যকরভাবে চলমান ও টেকসই করতে এবং আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক সদ্য প্রকাশিত ইশতেহারে তার একটি প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম একটি বক্তব্য ছিল, শিক্ষা খাতে বিনিয়োগই জাতির শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। তাঁর অনুসৃত পথ ধরেই প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে স্বাধীন দেশের উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ আজ চলমান।

বর্তমানে সেই নীতির উপর ভিত্তি করেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিজ্ঞানে সমৃদ্ধ দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার। বর্তমান সরকার বিদ্যালয়ে কাঙ্ক্ষিত শিখনফল অর্জন, শতভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি, ছেলেমেয়ের বৈষম্যসহ শিক্ষায় সকল ধরনের বৈষম্য নিরসন, ঝড়ে পরা রোধ সহ প্রাথমিক শিক্ষার কার্যকারিতা বৃদ্ধি প্রভৃতির জন্য নানাবিধ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এসব কার্যক্রমে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন অংশীজন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে।

২০০৯—২০২৩ অবধি শিক্ষাখাতের ব্যাপক প্রসার ও যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত দেশপ্রেমিক, উৎপাদনমুখী ও বৈশ্বিক নাগরিক গড়ে তুলতে জাতীয় শিক্ষাক্রম— ২০২২ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আলোকে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ চলমান রয়েছে।

প্রাক—প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় শতভাগে উন্নীত হয়েছে, নীরব বিচ্যুতি (silent exclusion) ও ঝরে পড়া (dropout) উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। শিক্ষক—শিক্ষার্থী অনুপাত, শ্রেণিকক্ষ উন্নয়ন, শিক্ষণ—শিখন পদ্ধতির উন্নয়নসহ শিক্ষায় জনঅংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০২৩ সাল নাগাদ প্রায় ৫১০০ বেসরকারি স্কুল—কলেজ এমপিওভুক্ত করা হয়েছে, যার সুফল ভোগ করছেন প্রায় ৯৮ হাজার শিক্ষক—কর্মচারী। বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় ১৪৯৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে।

২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২ লক্ষ ৭৩৭ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। 'বই উৎসব' উদযাপনের মাধ্যমে বছরের প্রথম দিনে বিনা মূল্যে নতুন পাঠ্যবই বিতরণেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। শিক্ষায় একীভূত পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০২২ শিক্ষাবর্ষে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ—গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের তাদের ভাষায় প্রণীত এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ব্রেইল বই বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন জেন্ডার সমতা। ছাত্রী ভর্তির হার ২০২১ সালে মাধ্যমিক (৬ষ্ঠ—১০ম) স্তরে ছিল ৫৪.৬৭ শতাংশ এবং উচ্চ মাধ্যমিক (কলেজ) স্তরে ৫২.১৩ শতাংশ, যা নারী শিক্ষার প্রসারে বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সার্থক প্রতিফলন সারা বিশ্বে প্রশংসিত। ২০২৩ সাল নাগাদ ৬৭৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬৬৩টি কলেজ সরকারীকরণ হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিতের জন্য দেশব্যাপী 'মিড—ডে মিল' কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের শিশুদের শিখনসক্ষমতা বৃদ্ধি ও পুষ্টি ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কর্মমুখী, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় গুরুত্বারোপ করে প্রতি উপজেলায় আন্তর্জাতিক মানের একটি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।

আমরা সেটাই দেখতে পাই তাদের বিগত দিনগুলোর চলমান বর্তমানের কার্যক্রমসমূহ এবং সেগুলোর উপর ভিত্তি করেই নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ প্রক্রিয়া। যার ব্যতিক্রম নয় এবারে তাদের প্রকাশিত দলীয় ইশতেহারের প্রতিটি খাত। শিক্ষাখাতসহ বিভিন্ন সেক্টরে চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগ গ্রহণ এবং সেগুলোর সফল বাস্তবায়ন করার ফলে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার উচ্চ প্রশংসার দাবি রাখে।

সরকার ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ২৩টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, ৪টি মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, নতুন ২টি সার্ভে ইন্সটিটিউট স্থাপন করেছে। উচ্চ শিক্ষার প্রসারে নতুন মেডিক্যাল কলেজ, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, গবেষণা অনুদান বৃদ্ধি প্রক্রিয়াও চলমান। মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠ্যক্রমকে যুগোপযোগীকরণ এবং কর্মমুখী শিক্ষায় রূপান্তরের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়ে স্নাতকোত্তর মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো ছিল বিগত সময়ের দিন বদলের সনদ থেকে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের অঙ্গীকার।

একসকল কাজকে চলমান রাখা এবং সেই সাথে সামনে আরও এগিয়ে নিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলটির যেসকল অঙ্গীকার সমূহ করেছে তার মধ্যে রয়েছে সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদের পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করবে।

শিক্ষার বিকাশ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে, সামগ্রিক জাতীয় উন্নয়ন ও দারিদ্র্য নিরসনে গতিবেগ সঞ্চার করে এই বিশ্বাস থেকে আওয়ামী লীগ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ যুক্তিসংগত করা এবং তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করবে। বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন সহায়তা (এমপিওভুক্তি) কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নারী শিক্ষকের অনুপাত ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে।

স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভাষা, উচ্চতর গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষাকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করা হবে। বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য উপযুক্ত ল্যাবরেটরি গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। মেধাবী বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বৃত্তি প্রদান করা হবে।

মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে যথাযথ শিক্ষা পাঠক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হাতে নেওয়া হয়েছে। নারী শিক্ষা প্রসারের সঙ্গে সংগতি রেখে উপবৃত্তি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। দরিদ্র ও দুর্বলতর জনগোষ্ঠীর সন্তানদের উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ আরও প্রসারিত হবে। শিক্ষকদের বেতন, মর্যাদা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উদ্যোগের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে।

এবারে আসা যাক বিশ্লেষণে, উন্নয়ন একটি টেকসই ও চলমান প্রক্রিয়া। আর এই চলমান প্রক্রিয়ায় যেকোনো কাজেই ধারাবাহিকতা রক্ষা না হলে কিংবা টেকসই না হলে সেটি উন্নয়ন প্রক্রিয়ার অংশ হবে না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকেই তাদের গৃহীত প্রতিটি উন্নয়ন কাজেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছে শিক্ষাখাতের উন্নয়নও তার ব্যতিক্রম নয়। তারা চিন্তা করে দেশের ভবিষ্যতের উন্নয়নের কথা।

আমরা সেটাই দেখতে পাই তাদের বিগত দিনগুলোর চলমান বর্তমানের কার্যক্রমসমূহ এবং সেগুলোর উপর ভিত্তি করেই নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ প্রক্রিয়া। যার ব্যতিক্রম নয় এবারে তাদের প্রকাশিত দলীয় ইশতেহারের প্রতিটি খাত। শিক্ষাখাতসহ বিভিন্ন সেক্টরে চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগ গ্রহণ এবং সেগুলোর সফল বাস্তবায়ন করার ফলে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার উচ্চ প্রশংসার দাবি রাখে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই রূপকল্প ২০৪১ এর স্মার্ট বাংলাদেশে গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এইচআর/জেআইএম