ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

যোগাযোগ খাতের আরও একটি মাইলফলক

ড. হিমাংশু ভৌমিক | প্রকাশিত: ১০:৪৫ এএম, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন দেশের যোগাযোগ খাতের জন্য আরেক মাইলফলক এবং এটি যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মহাসড়কে চলাচলে নানা বিড়ম্বনা থেকে মুক্ত হয়ে বিরামহীনভাবে যান চলাচলের সুযোগ করে দিতেই নির্মিত হয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এ এক্সপ্রেসওয়েটি ঢাকার বাসিন্দা ও দেশের অন্য অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগের উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে।

উল্লেখ্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

২০ কিলোমিটার এ সড়কের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার যেতে সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট। এতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রুটের বিমানযাত্রীরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি ঢাকা শহরের যানজটও কমবে। যানজটের কারণে জ্বালানি তেলের অপচয়, মানুষের কর্মঘণ্টার অপচয় ও ফ্লাইট মিস হওয়াসহ প্রতি বছর হয় যে ক্ষতি হয়, টাকার অঙ্কে তা নিরূপণ করা যাবে না। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করা হয়েছে যাদের নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াত দরকার, তাদের জন্য। বিশেষ করে পোশাক রপ্তানিকারকদের কনটেইনারবাহী ট্রাকগুলো গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত যেন নির্বিঘ্নে চলে যেতে পারে- এই উদ্দেশ্যে এটি করা। পাশাপাশি নগরীর ভেতরে যারা দ্রুত যেতে চান, তারা ব্যবহার করবেন।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বিমানবন্দর, ফার্মগেটসহ কয়েকটি ওঠানামার জায়গা রাখা হয়েছে। এটি চালু হওয়ায় গাজীপুর, আশুলিয়া, টঙ্গীসহ রাজধানীর আশপাশের শিল্পাঞ্চলের রফতনি পণ্যবাহী যানবাহন এ উড়াল সড়ক ব্যবহার করে ঢাকার যানজট এড়িয়ে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরসহ গন্তব্যে যেতে পারবে সহজে। এতে সময় এবং খরচ দুই-ই বাঁচবে। পাশাপাশি রাজধানীবাসীও যানজট এড়াতে পারবেন এ সড়ক ব্যবহার করে।

রাজধানীবাসীও নানামুখী সুবিধা পাবে এ উড়াল সড়কের। উত্তরা কিংবা বিমানবন্দর এলাকা থেকে কম সময়ে বনানী, তেজগাঁও, ফার্মগেট, কমলাপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যেতে উড়াল সড়ক ব্যবহার করতে পারবেন। ঢাকা বিমানবন্দর এলাকার কাওলা থেকে রেললাইন ধরে কমলাপুর এবং কমলাপুর থেকে চিটাগাং রোডের কুতুবখালী পর্যন্ত এ উড়াল সড়ক প্রায় ২০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ের এই অংশে গাড়ি ওঠানামার জন্য ১৫টি র‌্যাম্পের মধ্যে উদ্বোধনের দিন থেকে ১৩টি জায়গা দিয়ে ওঠা নামা করছে। এক্সপ্রেসওয়েতে কম গতির কোনো যানবাহন চলবে না।

বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রথম দরকার ছিল একটি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই সরকার এ বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েই গত এক যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে তৈরি করেছে নতুন এক মাইলফলক। যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের মানুষও মেট্রোরেলে চড়ছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে দ্রুত ছুটে চলছে, যা কিছুদিন আগেও ছিল স্বপ্ন। সরকার ওই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করেছে। বর্তমান সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টায় ঢাকাসহ আরও বেশ কিছু শহর আধুনিক শহরে রূপ নিয়েছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন তারই ইঙ্গিত বহন করছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেরিন ড্রাইভসহ উন্নত দেশগুলোর মতো সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থার নেটওয়ার্কে এসেছে বাংলাদেশ।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে লং ডিস্টেন্স যে বাণিজ্য, সে ক্ষেত্রে গতি আনতে হবে। আর এ কারণে এই উড়াল সড়ক আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে। তবে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সড়ক, রেল, আকাশ ও নৌপথসহ পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই কেবল আসল ফল মিলবে।

বর্তমান সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক কল্পগুলোর আওতাধীন যোগাযোগ অবকাঠামোর এ বিশাল প্রকল্পটি ঢাকা শহরের যানজট নিরসনের পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচলে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, যা রাজধানীসহ অন্য নগরে বসবাসকারী সাধারণ জনগণসহ উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের সার্বিক কার্যক্রমে বহুমাত্রিক পরিবর্তন আনবে।

যানজটের কারণে আগে যে শ্রমঘণ্টা নষ্ট হতো তা অনেকাংশে কমে আসবে। এতে যাত্রী, সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রা সহজ হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তারা এ প্রকল্প থেকে আগামী দিনগুলোতে উপকৃত হবেন। কারণ এটি স্থানীয় আন্তঃসংযোগ জোরদার করার পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচল নিশ্চিত করবে এবং নগরবাসীর ওপর ট্রাফিক জ্যামের নেতিবাচক প্রভাব অনেকটাই কমিয়ে আনবে।

বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে সড়ক, রেল, আকাশ ও নৌপথ সমান গুরুত্ব দিয়ে একটি আন্তর্জাতিকমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ চলছে। শুধু তা-ই নয়, বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল দিয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সরাসরি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

কক্সবাজারে পৌঁছে গেছে ট্রেন। পর্যটন শিল্প মাথায় রেখে তিন উন্নয়নবঞ্চিত পার্বত্য জেলায় যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে সরকার। পাহাড়ের প্রত্যেককে যোগাযোগ নেটওয়ার্কে আনা হয়েছে। সিঙ্গাপুর-ব্যাংককের আদলে সাজানো হবে কক্সবাজার।

এদিকে সমুদ্রের জলে রানওয়ে নির্মাণের গ্রাউন্ড-ব্রেকিংয়ের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের উপকূলীয় শহরে অবস্থিত সেরা বিমানবন্দরের মধ্যে অন্যতম হবে কক্সবাজার বিমানবন্দর। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশের শুধু যোগাযোগ খাতে নয়, দেশের অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলেও ব্যাপক অবদান রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এ উড়াল সড়ক দেশের জন্য নতুন দিগন্তের দুয়ার খুলে দেবে এবং সরকারের যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিশন রয়েছে, সেই লক্ষ্যে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে লং ডিস্টেন্স যে বাণিজ্য, সেক্ষেত্রে গতি আনতে হবে। এ কারণে এ উড়াল সড়ক আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অনেক বড় একটি ভূমিকা পালন করবে। তবে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সড়ক, রেল, আকাশ ও নৌপথসহ পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই কেবল আসল ফল মিলবে। এক্সপ্রেসওয়ের পুরো সুবিধা পাওয়ার জন্য আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এক্সপ্রেসওয়েটি সম্পূর্ণ চালু হলে আমাদের যোগাযোগ খাতে যেমন বিপ্লব হবে, তেমনি আমাদের অর্থনৈতিক খাতও সমৃদ্ধ হবে।

লেখক: অধ্যাপক ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর।

এইচআর/ফারুক/জেআইএম