ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

একটি ফাইনাল দর্শন ও একটি উপলব্ধি

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল | প্রকাশিত: ০৯:৪৭ এএম, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

মাত্রই শেষ হলো এক দিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সর্বশেষ আয়োজনটি। সারা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমিরা আগ্রহভরে দেখেছে নাচ-গান, আতশবাজি আর অঘটনে ভরপুর একটি ফাইনাল ম্যাচ। পুরো মাসটা জুড়ে ক্রিকেট বিশ্বকে শাসন করে অবশেষে অস্ট্রেলিয়ার কাছে অসহায় আত্মসর্মপণ করেছে ভারতীয় পেশাদার ক্রিকেট বাহিনী। বিশ্বকাপ হারিয়ে সঙ্গত কারনেই স্তব্ধ ছিল কানায়-কানায় নিল জার্সিতে ভরা আহমেদাবাদের দেড় লক্ষ ধারণক্ষমতার নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম। ভারতের এই স্টেডিয়ামটি সেদিন নরেন্দ্র মোদির শতাধিক কোটির স্তব্ধ ভারতের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল যেন। মাঠে ফাইনাল শেষে এর বিপরীত একটি চিত্রের মঞ্চায়নও অবশ্য আমরা দেখেছি।

আবারো সেই সঙ্গত কারণেই ম্যাচটা জিতে প্রাণটা খুলে উল্লাস করেছে অস্ট্রেলিয়ার একেকজন ক্রিকেটার। উল্লাসের ঢেউটা নিশ্চই গিয়ে পৌঁছেছিল প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশি অস্ট্রেলিয়া মহাদেশেও। তবে গুটিকয়েক, বারোয়ারি মানুষের অতবড় দেশে সেই আনন্দের ঢেউটা চাপা দিতে পারেনি শতকোটি ক্রিকেট পূজারী ভারতীয়দের স্তব্ধতাকে। অতএব সঙ্গত কারণেই বিশ্ব মিডিয়ায় শিরোনাম হয়নি অস্ট্রেলিয়াদের বিজয় উৎসব। সেই জায়গাটায় বরং জায়গা করে নিয়েছে অন্য একটি দেশের মানুষেরা।

ভারতীয়দের পরাজয়ে এদেশের কিছু কুলাঙ্গারের বাঁধভাঙ্গা উল্লাসের ঢেউ এতটাই প্রবল ছিল যে তা ভারতীয়দের পাহাড়সম বিষাদকে ছাপিয়ে জায়গা করে নিয়েছে বিশ্ব মিডিয়ার শিরোনামে। ভারতের একটা নামকরা পত্রিকাতো লিখেইছে যে, বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতে নিলেও সম্ভবত এসব বাংলাদেশীদের আনন্দবোধ এতটা প্রবল হতো না।

একাত্তরের বাংলাদেশে পাকিস্তানীদের যে বর্বরোচিত জেনোসাইড, তার দুটো বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। এর একটি হচ্ছে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড। স্বাধীন বাংলাদেশটাকে বুদ্ধিবৃত্তিক পঙ্গুত্ব বরণে বাধ্য করায় অসম্ভব সফল ছিল পাকিস্তানীদের এই পাষবিক নীলনকশাটি। একাত্তর উত্তর বুদ্বিজীবীবিহীন স্বাধীন বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার যে নিদারুণ ঘাটতি এবং সুশীল সমাজের ময়ূরপুচ্ছধারীদের দিয়ে যে প্রতিস্থাপন, সেই জায়গাটি থেকে আজও উত্তরণ ঘটাতে পারেনি আজকের বাংলাদেশ। কাজেই উন্নয়ন আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আমরা বিশ্বের যত জায়গায় যত বড় রোল মডেলই হইনা কেন, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জায়গাটাতে আমাদের ঘাটতিটা এতটাই প্রবল যে বিদেশীরা তো কোন ছাড়, দেশের নেতারাও মাঝেমধ্যেই এদেশের আজকের সুশীলদের বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করেন না।

পাকিস্তানী জেনোসাইডের অন্য কলংকিত দিকটি ছিল গণধর্ষণ। ন্যূনতম তিন লক্ষ বাঙালি নারী পাকিস্তানী সেনাবাহিনী, মিলিশিয়া আর তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। পাকিস্তানীদের উদ্দেশ্য ছিল এদেশে একটি শংকর প্রজাতি সৃষ্টি করা, যারা হবে বাঙালি মায়ের ঔরসজাত নাম না জানা পাকিস্তানী পিতার সারমেয় শাবক। প্রকৃতপক্ষে একাত্তরে ধর্ষিতা বীরাঙ্গনাদের সংখ্যা ছিল আরো অনেক বেশি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিন লক্ষ বীরাঙ্গনার সফল গর্ভপাতের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছিল বলেই সেখান থেকে এই তিন লক্ষ সংখ্যাটির উৎপত্তি। তবে প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা যে অবশ্যই এর চেয়ে ঢেড় ঢেড় বেশি তা বোঝার জন্য বোধকরি বিস্তারিত ব্যাখ্যাটি নিঃস্প্রয়োজন।

বছরখানেক আগে ঢাকার মাঠে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ক্রিকেট দ্বৈরথে এদেশের কিছু সারমেয় শাবকের নির্লজ্জ পাকিস্তানী পক্ষাবলম্বন দেখে চিন্তাটি প্রথম মাথায় এসেছিল, আর এবার তা পোক্ত হলো অস্ট্রেলীয়দের বিশ্ব বিজয়ে তাদের আস্ফালনে। বিষয়টি অবশ্য তেমন কিছুই না। মাথায় শুধু ঘুরছে, সেদিন যদি পাকিস্তানীরা জানতো যে এদেশের আলো-বাতাসে স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীর পরও হৃষ্টপুষ্ট হবে তাদের এত লক্ষ ‘নাজায়েজ সন্তান’, তাহলে সেদিন হয়তো তারা এদেশের এত বীরঙ্গনা মাকে এতটা কষ্টকর অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে নিত না।

লেখক: ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

এইচআর/এএসএম

আরও পড়ুন