ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

নির্বাচনী লাইনে তাহলে অনেকেই?

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা | প্রকাশিত: ০৯:০৭ এএম, ২৫ নভেম্বর ২০২৩

নির্বাচন এলে রাজনীতির কত রং দেখতে হয় আমাদের। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। অবস্থাটা যদি এমন হয় দিনে বিএনপি রাতে তৃণমূল, তাহলে তা হবে বাস্তব। তবে বড় আকারে বিএনপি ভেঙে সব নির্বাচনে চলে আসছে ঠিক তা নয় অবস্থাটা।

বিএনপির সাথেও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলের অনেকেই নির্বাচন করবেন, এমনটা শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীর প্রতীক। আন্দোলনের মাঠে থাকা মানুষটা হঠাৎ নতুন জোট গঠনের ঘোষণা দিয়ে জোটগতভাবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানালেন।

অনেকে বিস্মিত, বিএনপি ক্ষুব্ধ। শোনা যাচ্ছে আরও অনেকেই লাইনে আছেন। নির্বাচন করব না করব না করতে করতে নির্বাচনে এসেছে জি এম কাদেরের জাতীয় পার্টিও। তৃণমূল বিএনপি নেতারা বলছেন তারেক রহমানের বিএনপির অনেকেই তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন এবং সময় মতো তাদের পতাকাতলে এসে নির্বাচনের ঘোষণা দিবেন।

বোঝা যাচ্ছে, আগামী নির্বাচনে শুধু আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলই নয়, অনেকেই দলগতভাবে, ব্যক্তিগতভাবে এবং জোটগতভাবে এসে নির্বাচন করছেন। কিন্তু বিএনপির মত বড় একটি দল যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে কি সেই নির্বাচনকে অংশ্রগ্রহণমূলক বলা হবে? এই প্রশ্নটি বড়, কারণ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেশি হয় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশ থাকলে।

তবে এই সময়ের সবচয়ে বড় বাস্তবতা হলো আন্দোলনে থাকা বিএনপির হরতাল আর অবরোধ কর্মসূচি মানুষ সেভাবে মানছে না। বাস, ট্রেন আর অন্যান্য যানবাহন পুড়িয়েও জনগণকে আন্দোলনে আনতে পারছে না। আরও বড় বাস্তবতা হলো, বিএনপির সমমনারা নির্বাচন বিষয়ে মত বদলাচ্ছে এবং বর্জনের মধ্যে কোনো অর্জন দেখছে না।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এগুলো সবই একেবারে নতুন মেরুকরণ। সরকারের পদত্যাগ চাওয়া দল বা জোট এবং তাদের নেতারা নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে এক সপ্তাহ আগে যা ছিল পরিস্থিতি, সেই রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে দিচ্ছেন। বিএনপি ৩৬টি দল নিয়ে আন্দোলন করছিল। এখন অনেকেই মাঠে নেই, অনেক নেতাই আড়াল হয়ে গেছেন। বাজারে জোর গুজব যে, বিএনপির অনেক নেতা কোনো দলে না গিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন।

সরকারের চাপে, গ্রেফতার আর মামলা চাপে কোণঠাসা বিএনপি আন্দোলন জমাতে পারছে না। এর মধ্যে এরকম করে আন্দোলনের ময়দান থেকে সরে গিয়ে নির্বাচন কারও কারও নির্বাচনের ঘোষণা দলকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, উপায়ন্তর না দেখে বিএনপিও হয়তো শেষ মুহূর্তে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিতে পারে। তবে বিএনপি কি করবে সেটা তার নেতৃত্বই জানে। কিন্তু নির্বাচন যে প্রতিহত করা যাচ্ছেনা সেটা দিবালোকের মতো এখন পরিষ্কার।

কারণ অনেকগুলো। একটা বড় কারণ হলো বিএনপি না আসলে তারা জিতে আসতে পারবেন, একটা বড় সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এবং সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সাথে দরকষাকষির বিষয়টাও সবাই আলোচনায় রাখছে। অনেকেরই বয়স হয়েছে, এবারই এমপি হওয়ার শেষ সুযোগ মনে করছেন শারীরিক সক্ষমতা বিবেচনায়। বিএনপি হোক বা অন্য দল হোক, তুলনামূলক যারা বয়সে তরুণ তারাও সুযোগ নিতে চান, কারণ বিএনপি বা বিএনপি জোট থেকে মনোনয়নই হয়তো তারা পাবেন না।

সরকারের চাপে, গ্রেফতার আর মামলা চাপে কোণঠাসা বিএনপি আন্দোলন জমাতে পারছে না। এর মধ্যে এরকম করে আন্দোলনের ময়দান থেকে সরে গিয়ে নির্বাচন কারও কারও নির্বাচনের ঘোষণা দলকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, উপায়ন্তর না দেখে বিএনপিও হয়তো শেষ মুহূর্তে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিতে পারে। তবে বিএনপি কি করবে সেটা তার নেতৃত্বই জানে। কিন্তু নির্বাচন যে প্রতিহত করা যাচ্ছে না সেটা দিবালোকের মতো এখন পরিষ্কার।

ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তার মনোনয়ন ফর্ম বিক্রিও শেষ। এবং দলের নেতা কর্মীরা মানসিকভাবে অনেকটা চাঙা সামগ্রিক পরিস্থিতিতে। বিএনপিবিহীন নির্বাচন নিয়ে শুরুতে যে একটা অস্বস্তি ছিল, মনে হচ্ছে সেটাও কেটে গেছে। আসলে বিএনপি ও এর মিত্ররা আগামী নির্বাচন বর্জন করতে পারে, এই আশঙ্কাটা আওয়ামী লীগের ভাবনায় অনেক আগে থেকেই ছিল। তাই নতুন দল গঠন, ইসলামি দলগুলোর সাথে সুসম্পর্ক রাখা, অনেককে বিএনপি থেকে বের করে আনার চেষ্টা দলটি করেছে।

চেষ্টা ছিল তফসিলের আগে একটা বড় চমক দেওয়ার। তবে তা হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতারা অবশ্য বলছেন, চমক আরও অপেক্ষা করছে। আওয়ামী লীগ এবার চায় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দল ও প্রার্থীর সংখ্যা বাড়াতে। ২০১৪ সালের মতো কেউ যেন বিনা ভোটে পাস করে না আসে চেষ্টাও আছে। তবে সম্পূর্ণভাবে তাতে সফল নাও হতে পারে বলে অনেকে জানাচ্ছেন। কারণ বেশ কিছু প্রভাবশালী প্রার্থী তাদের আসনে একক প্রার্থী হিসেবে আছেন।

এই অবস্থায় তাহলে বিএনপি কি করবে? টানা এসব কর্মসূচির প্রভাব জনজীবনে থাকলেও তা সরকারকে চাপে ফেলতে পারছে না। কারণ, অফিস-আদালত সবই চলছে স্বাভাবিকভাবে। দূরের পথে যাত্রীবাহী বাস চলাচলে ব্যাঘাত হলেও পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক থাকছে। কূটনীতি পাড়ার তৎপরতাও কমে এসেছে। এ অবস্থায় বিএনপির তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে হতাশার বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে অনেকখানি। বিএনপি বড় দল, জনপ্রিয় দল, কিন্তু দল পরিচালনায় কি তবে কোথাও ভুল আছে যে কোনো ফসলই ঘরে তুলতে পারছে না?

লেখক: প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টেলিভিশন।

এইচআর/জেআইএম