ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ উদযাপনের গুরুত্ব অপরিসীম

ড. মিল্টন বিশ্বাস | প্রকাশিত: ১০:০০ এএম, ২১ নভেম্বর ২০২৩

২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবের দিন। দিনটিতে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করা হয় এভাবে- ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত করার জন্য দরকার একটি সুপ্রশিক্ষিত, সুশৃঙ্খল ও দক্ষ সশস্ত্র বাহিনী। তিনি ১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল এক সরকারি আদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন সাংগঠনিক কাঠামো ‘বাংলাদেশ ফোর্সেস’ ভেঙে স্বতন্ত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গড়ার নির্দেশ দেন এবং দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে দক্ষ ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গঠনের কাজ শুরু করেন।

জাতির পিতার পরিকল্পনায় স্বাধীনতার পরপরই ঢাকায় ৪৬ পদাতিক ব্রিগেড, যশোরে ৫৫ পদাতিক ব্রিগেড এবং কুমিল্লায় ৪৪ পদাতিক ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। তাছাড়া তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিটি আর্মস ও সার্ভিসের গোড়াপত্তন হয় এবং শতাধিক ইউনিট প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

তিনি ১৯৭২ সালে ঢাকায় দেশের প্রথম অফিসার প্রশিক্ষণ একাডেমি চালুর ব্যবস্থা করেন। ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে সেনাবাহিনীর আটজন এবং বিমান বাহিনীর একজন অফিসারকে ভারত পাঠানো হয় নতুন ক্যাডেট নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর প্রশিক্ষণের জন্য। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের হাতেই গড়ে ওঠে ইন্টার সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ড (আইএসএসবি)। ১৯৭৩ সালের ২৯ নভেম্বর কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি। দেশে নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু মূলত স্বাধীনতার আগেই ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনে এ ভূখণ্ডে নৌবাহিনী সদর দপ্তর স্থাপনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে নৌবাহিনীর ভিত রচনা করেন। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে জাতির পিতা প্রায় শূন্য থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী গঠনের কাজ শুরু করেন। একটি দক্ষ, শক্তিশালী ও আধুনিক নৌবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি তিনটি নৌবাহিনী ঘাঁটি- বানৌজা হাজী মহসিন, বানৌজা ঈশা খাঁ ও বানৌজা তিতুমীর স্থাপন করেন।

আজকের পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিন বাহিনীর ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনার আধুনিকায়ন করে যেতে হবে। কারণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী চ্যালেঞ্জ নিয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করছে। এ ধারা অব্যাহত রাখা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমুন্নতি বিধান এবং সর্বোপরি দুর্যোগ মোকাবিলায় ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ উদযাপনের গুরুত্ব অপরিসীম।

এছাড়া বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক প্রয়াসে সংগ্রহ করা হয় পাঁচটি আধুনিক রণতরী এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে প্রদান করা হয় নেভাল এনসাইন। দেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণে মহান এ রাষ্ট্রনায়ক ১৯৭৪ সালে প্রণয়ন করেন ‘বাংলাদেশ টেরিটোরিয়াল ওয়াটার'স অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট’। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও সামরিক কৌশলগত দিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিধি ও সম্ভাবনার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল একটি আধুনিক, শক্তিশালী ও পেশাদার বিমান বাহিনী গঠনের। এ পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে স্বাধীনতার পরপরই বিমান বাহিনীতে সংযোজিত হয় তৎকালীন অত্যাধুনিক মিগ-২১ সুপারসনিক যুদ্ধবিমান, এএন-২৪ বিমান ও এএন-২৬ পরিবহন বিমান, এমআই-৮ হেলিকপ্টার ও এয়ার ডিফেন্স রাডার। বঙ্গবন্ধু উন্নত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ১৯৭৪ সালে ‘প্রতিরক্ষা নীতি’ প্রণয়ন করেন।’

বঙ্গবন্ধুর অবদানের সূত্র ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে তাঁর অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেছেন, ‘জাতির পিতা স্বাধীনতার পর একটি আধুনিক ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। সেনাবাহিনীর জন্য তিনি মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মড স্কুল ও প্রতিটি কোরের জন্য ট্রেনিং স্কুলসহ আরও অনেক সামরিক প্রতিষ্ঠান এবং ইউনিট গঠন করেন। তিনি চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটি ঈশা খাঁ উদ্বোধন করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৎকালীন যুগোশ্লাভিয়া থেকে নৌবাহিনীর জন্য দুটি জাহাজ সংগ্রহ করা হয়। বিমান বাহিনীর জন্য তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে সুপারসনিক মিগ-২১ জঙ্গি বিমানসহ হেলিকপ্টার, পরিবহন বিমান ও রাডার সংগ্রহ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীকে দেশে ও বিদেশে উন্নততর প্রশিক্ষণ প্রদানসহ আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করছি।

জাতির পিতার নির্দেশে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের উপযোগী ১৯৭৪ সালে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রমসমূহ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামো নির্মাণ, আর্তমানবতার সেবা, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা এবং বিভিন্ন জাতি গঠন মূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন।

এভাবে সশস্ত্র বাহিনী আজ জাতির আস্থার প্রতীক হিসেবে গড়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। আমি আশা করি, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশপ্রেম, পেশাদারত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাবেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা সক্ষম হবো, ইনশাল্লাহ।’

প্রকৃতপক্ষে দেশের যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনীর অবদান মূল্যায়ন করলে এ দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করা সম্ভব। উপরন্তু গত সাড়ে ১৪ বছরে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও তাদের কার্যক্রমের সাফল্য গাথা বিশ্লেষণ করলেও স্পষ্ট হবে এ দিবসটি উদযাপনের তাৎপর্য। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্মিলিতভাবে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সূচনা করে। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে সম্মিলিতভাবে ২১ নভেম্বরকে সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এর আগে ২৫ মার্চ সেনা, ১০ ডিসেম্বর নৌ এবং বিমান বাহিনী ২৮ সেপ্টেম্বর আলাদাভাবে দিবসসমূহ পালন করা হতো। পরে ২১ নভেম্বরের তাৎপর্য সমুন্নত রাখতে সম্মিলিত দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালনের পেছনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সক্রিয়। মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর অবদান সাধারণ জনতার আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে দেখা হয় এ দিবসটিতে।

১৯৭১ এর ২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনীর তাণ্ডবলীলার জবাবে অস্ত্র তুলে নেয় বিপ্লবী ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, আনসার এবং অন্য সদস্যরা। পরে এগিয়ে আসে পূর্ব পাকিস্তানের কর্মরত বাঙালি নাবিক ও নৌ অফিসার, সেনা ও বিমান কর্মকর্তারা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সর্বস্তরের মুক্তিপাগল হাজার হাজার যুবক। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ধারণ করে সশস্ত্র সংগ্রামের রূপ।

জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে পাকিস্তানি শাসকদের স্বপ্ন নস্যাৎ ও তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন দেখা দেয় একটি সুসংগঠিত সশস্ত্র বাহিনীর। মুজিবনগরে গঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার কর্নেল এমএজি ওসমানীকে (পরে জেনারেল) মুক্তিবাহিনীর প্রধান নিয়োগ করে। তার ওপর মুক্তিবাহিনীকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সেনাবাহিনীর অফিসার ও সৈনিকরা দ্রুত নিজেদের সুসংগঠিত করে পাল্টা আক্রমণ করে। সারাদেশকে বিভক্ত করা হয় ১১টি সেক্টরে যার নেতৃত্ব দেওয়া হয় একেকজন সুশিক্ষিত পেশাদার সেনা কর্মকর্তাদের। আট মাস পর ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর চূড়ান্তভাবে সম্মিলিত আক্রমণের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। সেদিন স্থল, নৌ ও আকাশ পথে কর্নেল ওসমানীর নেতৃত্বে চালানো হয় ত্রিমুখী আক্রমণ। উন্মুক্ত হয় বিজয়ের পথ। এই আক্রমণ পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সফলতা লাভ করে জলে, স্থলে ও অন্তরীক্ষে। তারা বাধ্য হয় পশ্চাদপসারণে। সুশিক্ষিত একটি বাহিনীর বিরুদ্ধে সূচিত হয় মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের ইতিহাস। তারপর মিত্র বাহিনীর সহযোগে ঘোষিত হয় সার্বিক যুদ্ধ। ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি ছিনিয়ে আনে চূড়ান্ত বিজয়। প্রকৃতপক্ষে এ বিজয় ত্বরান্বিত করেছিল ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বরের সম্মিলিত আক্রমণ।

১৯৭২ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তর অবলুপ্ত হয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে তিনবাহিনীর পৃথক পৃথক সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ পরিচ্ছেদের ৬১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহের সর্বাধিনায়কতা রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে এবং আইনের দ্বারা তার প্রয়োগ নিয়ন্ত্রিত হয়। বিভিন্ন সংকটে-বিপদে সশস্ত্র বাহিনী এদেশের মানুষের পাশে থেকেছে সবসময়।ঝড়-তুফান-বন্যা তো আছেই, এর ওপর বৈশ্বিক পরিস্থিতির উত্তাপও এসে লাগে- আর তখন আমাদের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এজন্য শেখ হাসিনা সরকারও তাদের উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ।

শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৪ বছরে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে আন্তরিক কর্মযজ্ঞ দেখা গেছে। এর আগে ১৯৯৬ সালে এই আওয়ামী লীগ সরকারই তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনীর জন্য এপিসি বা Armoured Personnel Carrier, MIG-২৯ যুদ্ধ বিমান, অত্যাধুনিক Class-4 ফ্রিগেট ও অন্য আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে। পেশাদারত্ব বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, ওয়ার কলেজ, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ, BIPSOT বা Peace Keeping ইনস্টিটিউট, BUP বা Science & Technology ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জনবল বাড়ানোর জন্য একটি কম্পোজিট ব্রিগেড, একটি পদাতিক ব্রিগেড, স্পেশাল ওয়ার্কস ব্রিগেড ও বেশ কয়েকটি বিভিন্ন ধরনের ব্যাটলিয়ানসহ অন্য উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর নতুন Armoured Personnel Carrier কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন সিস্টেম ডিজিটালাইজড করতে এবং তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নের লক্ষ্যে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যদিকে ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আওতায় সেনাবাহিনীতে একাধিক পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড এবং আর্মি ওয়ার গেম সেন্টারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রতিটি কোর ও সার্ভিসে সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র, সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি। বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ একটি পেশাদার ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এ বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে আধুনিক সারফেস ফ্লিট, সাবমেরিন, নেভাল অ্যাভিয়েশন, নৌ কমান্ডো সোয়াডস এবং বৃদ্ধি পেয়েছে নৌঘাঁটি ও অবকাঠামোগত সুবিধা। বিমান বাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে একাধিক বিমান ঘাঁটি, ইউনিট, অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার, রাডার, ক্ষেপণাস্ত্র ও যুগোপযোগী সামরিক সরঞ্জাম। সশস্ত্র বাহিনীতে প্রশিক্ষণের মান যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আন্তর্জাতিকমানের উচ্চ শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান।

সেনাবাহিনীতে চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাংক-এমবিটি ২০০০, অত্যাধুনিক রাডার, সেল্ফ প্রপেলডগান এবং নতুন হেলিকপ্টার সংযোজন করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নকল্পে আওয়ামী লীগ সরকার রাশিয়ার সঙ্গে ঋণ চুক্তি অনুযায়ী সমরাস্ত্র ক্রয় করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বৈশ্বিক মানে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে জুলাই ২০১৩ থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে মেডিকেল কোরে মহিলা সৈনিক ভর্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। সাংগঠনিক এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সিলেটে একটি পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩টি পদাতিক ব্যাটালিয়নকে রূপান্তর করে একটি ম্যাকানাইজড পদাতিক ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

জাতিসংঘ সনদের ষষ্ঠ অধ্যায়ে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা এবং সপ্তম অধ্যায়ে শান্তি প্রয়োগের বিধান রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সংঘর্ষে লিপ্ত দুপক্ষের সম্মতি এবং মতৈক্যের ওপর ভিত্তি করে শুরু হয়। শান্তিরক্ষা বাহিনীকে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ কর্তৃক অনুমোদিত একটি শান্তি চুক্তি বা শান্তি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মোতায়েন করা হয়। এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ৬৮টি মিশনের মধ্যে ৫৪টিতে ১,১৮,৯৮৫ জন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী সদস্য অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান শান্তি মিশনে যোগদানের মধ্য দিয়ে এদেশের সেনাবাহিনীর ১৫ জন সদস্য জাতিসংঘের পতাকাতলে একত্রিত হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী শান্তি মিশনে যোগ দেয় ১৯৯৩ সালে। বাংলাদেশ পুলিশ ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ পরিবারের সদস্য হয় নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা মিশন এলাকায় বিবদমান দলকে নিরস্ত্রীকরণ, মাইন অপসারণ, সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা প্রদান, সড়ক ও জনপথ এবং স্থাপনা তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

কঙ্গো, নামিবিয়া, কম্বোডিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা/রুয়ান্ডা, লাইবেরিয়া, হাইতি, তাজিকিস্ততান, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর প্রভৃতি স্থানে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল নাম। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতিসংঘের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কারণ বিশ্বে সব প্রান্তের দুর্গত, নিপীড়িত ও নিরীহ মানুষের সেবায় এ শান্তিরক্ষীদের হাত সর্বদা প্রসারিত। সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়েও তারা আর্তমানবতার সেবা করে চলেছে।

আধুনিক সশস্ত্র বাহিনীর স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন সৎ, যোগ্য ও দক্ষ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর মাধ্যমেই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ থাকবে, যা আজ বাস্তবে প্রতিফলিত। দেশের শান্তি -শৃঙ্খলা রক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জাতি গঠনমূলক কাজে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বিশ্ব শান্তিরক্ষায় আজ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর রয়েছে অসামান্য অবদান।

বর্তমান সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারত্ব এবং কর্মদক্ষতার পরিচিতি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত ও প্রশংসিত। আসলে দেশের প্রতিরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ আর জনগণের জন্য ভালোবাসা- এ দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর দেশপ্রেম। আজকের পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিন বাহিনীর ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনার আধুনিকায়ন করে যেতে হবে। কারণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী চ্যালেঞ্জ নিয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করছে। এ ধারা অব্যাহত রাখা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমুন্নতি বিধান এবং সর্বোপরি দুর্যোগ মোকাবিলায় ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ উদযাপনের গুরুত্ব অপরিসীম।

লেখক : অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু গবেষক, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ। 
[email protected]

এইচআর/ফারুক/এএসএম

আরও পড়ুন