ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

শর্তহীন সংলাপের প্রস্তাবে কেন ভিসানীতির হুমকি?

বিপ্লব কুমার পাল | প্রকাশিত: ০৩:৪৩ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করার পর আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে শর্তহীন আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়ে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। পাশাপাশি যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করবে তাদের বিরুদ্ধে পূর্বঘোষিত মার্কিন ভিসানীতি (থ্রিসি) কার্যকর হবে বলে হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

সোমবার ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি এক বিবৃতিতে জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। আমরা সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহার এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাই। যুক্তরাষ্ট্র কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না।’বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির বিষয়টি মনে করিয়ে বলা হয়, যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করবে তাদের বিরুদ্ধে পূর্বঘোষিত মার্কিন ভিসানীতি (থ্রিসি) কার্যকর হবে।

এর আগে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে ভারত। গত শনিবার ভারত নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়, যা আমেরিকার সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভারতের বিদেশ সচিব বিনয় কোয়াত্রা জানিয়ে দেন, মার্কিন প্রশাসনকে তাঁরা বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অভিমত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভারত মনে করে বাংলাদেশের নির্বাচন সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অন্য কোনও দেশের সেখানে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।’

শুধু সংবিধান ও আইন অনুযায়ীই বাংলাদেশে নির্বাচন চায় চীন। আর ওই নির্বাচন নিয়ে বাইরের কারো হস্তক্ষেপ চায় না দেশটি। চীন নিজেও অন্য দেশে হস্তক্ষেপ করে না। ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এমনকি বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু রাশিয়াও বাইরের হস্তক্ষেপের চায় না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

এর আগেও দলগুলোর মধ্যে শর্তহীন সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। জবাবে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়ে দেন, বিএনপি সন্ত্রাসী দল। তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘জো বাইডেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প কি কথা বলেন, মুখোমুখি বসে বৈঠক করেন? ওঁরা যেদিন করবেন, সেদিন আমি করব।’

একই ভাবে সোমবার খুলনায় আওয়ামী লীগের জনসভায় শেখ হাসিনা জানিয়ে দেন, ‘বিএনপি মুণ্ডুহীন দল। তাদের এক নেতা পলাতক আসামি, এক নেতা কারাগারের আসামি। সেই দল দেশে নির্বাচন হতে দিতে চায় না। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, কেউ যদি গাড়িতে আগুন দিয়ে পোড়াতে চেষ্টা করে, ওই হাত ওই আগুনে পুড়িয়ে দেবেন, উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেবেন, যেন আর কেউ সাহস না পায় দেশের মানুষের ক্ষতি করতে।’

প্রধানমন্ত্রীর কথায় পরিষ্কার বিএনপির সাথে কোনো সংলাপে বসবে না আওয়ামী লীগ। যদিও এই প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিষয়ে অনেকটা নমনীয় ছিল। দাবি আদায়ে বিএনপি যদি কার্যালয় ঘেরাও করতে চায়, তাহলে তাদের চা খাওয়ানোর কথা জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও প্রধানমন্ত্রীর এই আমন্ত্রণ নিয়ে তাচ্ছিল্য করেছিল বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘চা খাওয়ার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নেওয়ার কথা বলুন।’

বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অবিচল দলটি। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের কথা বললেও বিএনপি তার আগে একটি শর্ত জুড়ে দিয়ে এসেছে। স্বভাবতই এখন প্রশ্ন উঠেছে- এতো দিন যে দলটি শর্তহীন সংলাপ বসতে চায়নি, সেই দলটি লুর কথায় সংলাপে বসবে?

সংলাপে বসা ছাড়া বিএনপির সামনে সত্যিই কী আর কোনো পথ খোলা আছে? বিএনপি সংলাপ চাইলেও আওয়ামী লীগ কি তাদের সাথে সংলাপে বসতে রাজি হবে? সংলাপে বসে হবে টা কী? তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র কেন সংলাপের কথা বলছেন? বাংলাদেশ নিয়ে তাদের এতো আগ্রহ কেন? কেনই বা তারা সংলাপের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ভিসানীতির হুমকি দিয়েছে?

যে দলটির জন্য যুক্তরাষ্ট্র শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে, সেই দলটি কখনই সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় বিশ্বাসী ছিলো না। ফলে আজ পর্যন্ত কোনো সংলাপেই সফলতা আসেনি। যখনই সংলাপের কথা এসেছে, তখনই হয় সংলাপ বর্জন করেছে অথবা শর্ত জুড়ে দিয়ে তা বানচাল করে দিয়েছে তারা। এবারের মতো ২০১৪ তেও সংলাপে অংশ নেয়নি, আর ২০০৭ ও ২০১৮ তে সংলাপে বসলেও শর্ত জুড়ে দিয়ে ও মিথ্যাচার করে সংলাপগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছ।

এছাড়া নির্বাচন কমিশন যত বারই আলোচনার জন্য বিএনপিকে ডেকেছে, তারা যোগদান করেনি। গত বছরেও একই কাজ করেছে দলটি। যদিও তাদের প্রভুর আহ্বানে ‘আত্মগোপনে’ থাকা দলটি সংলাপে বসতে পারে। কিন্তু বিএনপি আলোচনা বসতে চাইলে যে সংলাপ হবে এমনটি নয়। কারণ সংলাপের ট্রেন হাতছাড়া করেছে বিএনপি। কারণ আওয়ামী লীগ শর্তহীন সংলাপের কথা এতো দিন বলে এসেছিল। সেই আহ্বানকে কোনো পাত্তাই দেয়নি বিএনপি। এখন আওয়ামী লীগ কী তাদের সাথে সংলাপে বসবে? এটাই এখন বড় প্রশ্ন।

প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন ‘খুনি দলের সাথে কিসের সংলাপ।’ কিন্তু রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে কোনো কাজ করানো যায় না। তবে ভালোবাসায় তাকে জয় করা সম্ভব। এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি আছে। খালেদা জিয়াকে মুক্তির জন্য টানা আন্দোলন করেছিল বিএনপি। তবুও প্রধানমন্ত্রীকে এক চুলও নড়াতে পারেনি তারা। অথচ খালেদা জিয়ার ভাই শামিম ইস্কান্দারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কারাগারের পরিবর্তে বেগম জিয়াকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার উৎখাতের হুমকি দিয়ে যাকে টলানো যায়নি অথচ তিনিই মানবতার জন্য আবেদনে সাড়া দিয়েছেন।

এই খালেদা জিয়া কিন্তু শেখ হাসিনার মুখের সামনে তার বাড়ির দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। অথচ ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে সান্ত্বনা দিতে ওই বাসায় গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খালেদার বড় ছেলের পরিকল্পনায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, জিয়াউর রহমানের মদদে ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল। তবুও বয়স্ক খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন কঠিন, তেমনি মহানুভবও। তাই ভয় দেখিয়ে নয়, ভালোবেসে খুব সহজে তাকে জয় করা সম্ভব।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

এইচআর/এমএস