ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সহিংসতা: চাই মুসলিম বিশ্বের ঐক্য

মাহমুদ আহমদ | প্রকাশিত: ০৯:৪৪ এএম, ১৩ অক্টোবর ২০২৩

কয়েকদিন ধরে, নির্মম সহিংসতা ও রক্তপাতের ফলে নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ শত শত ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছে এবং সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবারের সূচনা হয় গাজা থেকে ইসরায়েলে নজিরবিহীন আক্রমণ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তারপর থেকেই কয়েকদিন ধরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘাত চলছেই। হামাস ইসরায়েলে একসঙ্গে কয়েক হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছে। সেই সঙ্গে অনেক হামাস যোদ্ধা গাজার সীমানা অতিক্রম করে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় গাজার হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপে হিমসিম অবস্থা। এমন নির্মম অত্যাচারের প্রতিবাদে আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।

নিরপরাধ বেসামরিক জনগণের হত্যা বা ক্ষতিসাধন করা ইসলাম ও শান্তির দূত মহানবির (সা.) শিক্ষার সরাসরি লঙ্ঘন। তিনি শিখিয়েছেন, যুদ্ধাবস্থায়ও কোনো নারী, শিশু বা বৃদ্ধকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা বা তাদের ক্ষতিসাধন করা যাবে না। কোনো ধর্মীয় নেতা বা উপাসনালয়েও হামলা করা যাবে না। এমন বর্বর ও নিষ্ঠুর হামলা শুধু ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মাঝেই যে হচ্ছে তা কিন্তু নয় বরং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে। সমগ্র বিশ্বে কেন মুসলমানরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে? এর একটাই কারণ, তাহলো মুসলিম আজ শতধা বিভক্ত হয়ে পরস্পর ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত।

মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পরস্পরের মাঝেই নেই ঐক্য। মুসলমানদের এই অনৈক্যের কারণেই ভ্রাতৃঘাতী দ্বন্দ্ব সংঘাতে লিপ্ত হয়ে পড়তে দ্বিধাবোধ করছে না। সমগ্র মুসলিম বিশ্বের এই চরম বিপর্যয়ের একমাত্র কারণ- তাদের আজ কোনো ঐশী নেতা নেই। যেহেতু মুসলিম জাহান আজ ঐশী নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে তাইতো এ অধঃপতন। মুসলিম বিশ্বের একতাই পারে জাতিসমূহকে শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত করতে। আজ যদি সমগ্র বিশ্বের ইসলামী একক নেতা থাকতো তাহলে কারও এ সাহস থাকতো না মুসলমানদের ওপর এমন নির্মম অত্যাচার করার।

সারা পৃথিবীতে আজ ইহুদি, নাসারা আর মুশরিকরা তাদের ক্ষমতা বিস্তার করতে চায়। এ কারণে তারা সারা পৃথিবীতে তাদের অপশক্তির ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই সন্ত্রাসী কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে ইঙ্গ-মার্কিন পরাশক্তি। ইঙ্গ-মার্কিন এ পরাশক্তি কখনো প্রকাশ্যে আবার কখনো বা পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ইহুদি, নাসারা আর মুশরিকদের মূল টার্গেট হচ্ছে মুসলিম জনগোষ্ঠী। তারা জানে যত দিন মুসলিম জাতি মাথা উঁচু করে থাকবে, ততদিন তাদের ক্ষমতা পৃথিবীর বুকে টিকে থাকবে না। তাই তারা সংঘবদ্ধ হয়ে মুসলিম নিধনে অগ্রসর হচ্ছে। এই টার্গেট নিয়ে আজ গোটা পৃথিবীতে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে। যাতে মুসলমান পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে।

বর্তমানে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, আরাকান, চেচনিয়া, বসনিয়া, আফগানিস্তান, হার্জেগোভিনা, লেবানন, ইরাক প্রভৃতি মুসলিম দেশ। সামান্য অজুহাত দেখিয়ে শান্তিপ্রিয় মুসলিম দেশগুলোর ওপর টনকে টন বোমা ফেলে তাদের ঘাড়ে দৈত্যের মতো চেপে বসছে। এতে লাখ লাখ নিরীহ নারী-পুরুষ-শিশু অকাতরে মারা যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো এই মৃত্যুলিলা খেলা আর কতকাল চলবে? এ প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলতে পারি যতদিন সমগ্র মুসলিম বিশ্ব এক ঐশী নেতৃত্বের পতাকাতলে না আসবে তত দিন এই মৃত্যুলিলা খেলা বন্ধ হওয়ার নয়।

আমরা ইরাক, আফগানিস্তানের কথা বাদই দিলাম, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কথাই যদি ধরি তাহলে দেখতে পাই আধিপত্যবাদীদের হাতে দীর্ঘদিন ধরে শৃঙ্খলিত হয়ে আছে ৮০ লাখ নিরীহ কাশ্মীরবাসীর জীবন। ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে এই উপত্যকায়। এরপর চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াংয়ের বিভিন্ন বন্দিশিবিরে উইঘুর জনগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর গণহত্যা এবং নির্যাতন চালানোর অভিযোগ নতুন নয়। তবু বিশ্ববাসী কেন নীরব?

বিশেষ করে, মুসলিম দুনিয়ার সবচেয়ে প্রিয় স্থানদ্বয় পবিত্র মক্কা এবং মদিনাও আজ বিপদ ও ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন। যেসব মুসলিম রাষ্ট্র আজ ইসলামের নামে বড়াই করছে, প্রকৃতপক্ষে তাদের কর্মকাণ্ড ইসলামি শিক্ষা বা ন্যায়নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। বরং তারা নিজ স্বার্থ উদ্ধারে সচেষ্ট। এ জন্যই ইসলামি বিশ্বের বিভিন্ন কার্যক্রম ও পদক্ষেপে স্ববিরোধিতা লক্ষ্য করা যায়। আজ যদি সবাই পবিত্র কোরআনের শিক্ষা অনুযায়ী একক নেতৃত্বের অধীনে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব চলতো তাহলে অবশ্যই মুসলমানরা সর্বত্র মার খেত না।

নেতাশূন্য বলেই মুসলমানরা সমগ্র বিশ্বে অপদস্থ হচ্ছে। আজ এ অনৈক্যের কারণেই দেশে-দেশে যুদ্ধ বিগ্রহ লেগেই আছে, এ শেষ হওয়ার নয়, যতদিন পর্যন্ত না মুসলিম বিশ্ব এক ইমামের নেতৃত্বে চলবে ততদিন মুসলিম বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। যে জাতির কোনো আধ্যাত্মিক নেতা নেই, সেই জাতিকে কী জীবিত বলা যায়? সেই জাতি তো মূলত মৃত।

ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। তাই ইসলাম মানুষের মনে অসাধারণ গুণের ও মাহত্মের উন্মেষ ঘটাবে এটাই স্বাভাবিক। প্রকৃতপক্ষে ঘটেছিলও তাই। স্বনিষ্ঠ ইসলাম অনুসারীদের মাঝে দেখা গেছে বহু অসাধারণ গুণের ও মাহত্মের সমাবেশ। একনিষ্ঠ ইসলামের অনুসারীরা হয়েছিল সব অসাধারণ মানবিক, নৈতিক ও মহৎ গুণের অধিকারী।

এজন্যই ইসলামের অনুসারী মুসলমানরা সর্বক্ষেত্রে অতি আশ্চর্যজনক সাফল্য লাভ ও সুমহান কীর্তি স্থাপন করে সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে এক অতি গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য। তাদের সে সাফল্য প্রকৃতই অতীব বিস্ময়কর। মুসলমানরা হয়েছিল বিশ্বের অর্ধেকের মালিক। তারা প্রবল প্রতাপ ও শান-শওকতের সঙ্গে শাসন করেছে অর্ধজাহান। শৌর্যবীর্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থনীতি প্রকৃতি সব ক্ষেত্রেই তাদের সাফল্য ছিল অতীব চমকপ্রদ। কোনো ক্ষেত্রেই কোনো জাতিই ছিল না তাদের সমকক্ষ।

মুসলমানরা বিশ্বে সব ক্ষেত্রেই ছিল শীর্ষস্থানীয়, নেতৃস্থানীয়। যুদ্ধ হতে শুরু করে জীবনের সব ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনে সক্ষম হওয়ায় তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বব্যাপী। সে যুগে মুসলমানরাই দিয়েছিল বিশ্ব নেতৃত্ব। অসাধারণ জাতিরূপে, শ্রেষ্ঠতম জাতিরূপে মুসলমানরাই লাভ করেছিল প্রতিষ্ঠা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সাফল্য ও খ্যাতি এতই অসাধারণ ছিল যে, তারা আখ্যায়িত হয়েছেন বহু আলংকারিক বিশ্লেষণে, প্রশংসিত হয়েছেন উচ্ছসিত ভাবে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের বড় বড় মনীষী কর্তৃক। বহু অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়ায় মুসলমানরা উন্নতির শীর্ষে পৌঁছেছিল সত্য, তবে একথা বলাই বাহুল্য যে, পরবর্তীকালে সময়ের সঙ্গে তাল রেখে আরও এগিয়ে যেতে, নিজেদের সে প্রতাপ, প্রতিপত্তি, প্রাধান্য ও বিশ্ব নেতৃত্ব বজায় রাখতে তারা হয়েছিল ব্যর্থ।

এর কারণ কি? শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে এবং অর্ধ জাহান শাসনের বিশ্ব নেতৃত্ব যাদের গৌরবময় ঐতিহ্য, তা আজ কোথায়? আজ এত এত মুসলমান দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন পারছে না ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সংঘাত বন্ধ করতে? কেন পারছে না মুসলমান বিশ্ব নেতৃত্ব দান করতে? এর একমাত্র কারণ হলো-মুসলিম বিশ্বের কোন একক নেতা নেই।

নেতাশূন্য বলেই মুসলমানরা সমগ্র বিশ্বে অপদস্থ হচ্ছে। আজ এ অনৈক্যের কারণেই দেশে-দেশে যুদ্ধ বিগ্রহ লেগেই আছে, এ শেষ হওয়ার নয়, যতদিন পর্যন্ত না মুসলিম বিশ্ব এক ইমামের নেতৃত্বে চলবে ততদিন মুসলিম বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। যে জাতির কোনো আধ্যাত্মিক নেতা নেই, সেই জাতিকে কী জীবিত বলা যায়? সেই জাতি তো মূলত মৃত।

আজ সমগ্র বিশ্বে কোটি কোটি মুসলমান রয়েছে ঠিকই কিন্তু তাদের নেই কোনো নেতা, যিনি সবার সমস্যায় পাশে দাঁড়াবেন এবং সমস্যা দূর করার নিঃস্বার্থ চেষ্টা করবেন। কেউ কি আজ বলতে পারে যে, তাদের এ ধরনের গুণসম্পন্ন নেতা রয়েছে? কোনো মুসলিম সম্প্রদায় আজ এমন নেই যারা বলতে পারবে যে তাদের এমন এক নেতা রয়েছেন, যিনি আমাদের কষ্টে ব্যথিত হোন, আমাদের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে প্রার্থনা করেন, আমাদের আলো দেখান।

বর্তমান মুসলিম বিশ্বের একক ইসলামি নেতার খুবই প্রয়োজন। একক নেতৃত্ব ছাড়া বিশ্বের মুসলমান মাথা উঠিয়ে দাঁড়ানো কোনো মতেই সম্ভব নয়। সমগ্র মুসলিম বিশ্বের আবার মাথা তুলে দাঁড়ানো খুবই প্রয়োজন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]

এইচআর/ফারুক/জেআইএম