ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীর হলে থাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ‘লেডিস সিট’

শাহানা হুদা রঞ্জনা | প্রকাশিত: ০৯:৩১ এএম, ১১ অক্টোবর ২০২৩

বিয়ের পর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কি অপরাধ? বিয়ের পর অন্তঃসত্ত্বা হওয়াও কি অপরাধ? নাকি এটা আইন বহির্ভূত কোনো কাজ? যদি অপরাধ না হয়, তাহলে বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকা নিষিদ্ধ হবে কেন? সন্তানধারণ ও বিয়ে একজন নারীর প্রজনন অধিকার। এই অধিকার নারীর এমন শক্তি, যে শক্তি দিয়ে জগৎ জয় করা যায়। বিয়ে হলে একজন নারী মা হতেই পারেন। মাতৃত্ব কোনো লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়। মা এবং তার সন্তান সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পত্তি। এদের দুজনকে সুস্থভাবে রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কেন গর্ভবতী মাকে হলে থাকতে দেবে না? কোন আইনে মায়ের এই অধিকার ক্ষুণ্ণ করছেন তারা?

অথচ নিজেরা দিব্যি হলের প্রভোস্ট ও হাউস টিউটর হয়ে হলের আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করছেন। একজন বিবাহিত ছাত্রীর যদি হলে থাকা অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে হলের হাউস টিউটর ও প্রভোস্টরা বিবাহিত হয়ে হলের আবাসিক ভবনে স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকছেন? নিয়ম অনুযায়ী তাদেরও অবিবাহিত হওয়ার কথা। প্রসঙ্গটি খুবই যৌক্তিক।

আমরা কি দিনে দিনে অগ্রসর হচ্ছি নাকি পিছিয়ে পড়ছি? চিন্তা-চেতনায় এই বৈকল্য কেন? নানান কারণে একটি মেয়ের পড়াশোনা করার সময় বিয়ে হতে পারে। মেয়েটির পরিবার বা স্বামীর পরিবার বা ঘনিষ্ট স্বজন কেউ ঢাকা বা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়টি যে শহরে অবস্থিত, সেখানে নাও থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে সেই ছাত্রী কোথায় থেকে তার পড়াশোনা শেষ করবেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকার যে বিধি-নিষেধ এবং প্রচলিত নিয়ম তা নিয়ে নতুন করে হৈ চৈ শুরু হওয়াতে সবার সামনে আবার এই আজব নিয়মটি উঠে এলো।

ছাত্রীর বিবাহিত হওয়ার সঙ্গে, তার হলে থাকা বা না থাকার কোনো সম্পর্ক বা যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। একজন ছাত্রী বিবাহিত না অবিবাহিত, তা দেখে কেন হলে সিট বরাদ্দ দেয়া হবে? হলেতো মেধা অনুযায়ী বৈধ সিট বরাদ্দ দেয়া হয়। আবাসিক হলে সিট পাওয়া ছাত্র বা ছাত্রীর অধিকার। এটা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো দয়ার বিষয় নয়। কাজেই বলা যায় যে বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটি বিবাহিত ছাত্রীদের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।

সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রাধ্যক্ষর এক বিজ্ঞপ্তিতে বিবাহিত এবং অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের আসন ছাড়তে বলা হয়েছে, কেননা হলের আবাসিক অধিকার পাওয়ার শর্ত অনুযায়ী বিবাহিত ছাত্রীদের আসন পাওয়ার সুযোগ নেই। আবাসিকতা লাভ ও বসবাসের শর্তাবলি এবং আচরণ ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা ২০২১এর ১৭ নম্বর ধারা মোতাবেক বিবাহিত ও গর্ভবতী ছাত্রীরা আবাসিক সিট (আসন) পাবে না। বিধায় তারা অতি দ্রুত হলের সিট ছেড়ে দেবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকা নিয়ে কর্তৃপক্ষের এমন নির্দেশনা দেওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলে এমন নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে। এমনকি কিছু কিছু চাকরির বিজ্ঞাপনেও বলে দেওয়া হয়, বিবাহিত নারীরা আবেদন করতে পারবেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের পাঁচটি হলে আসন বণ্টন-সম্পর্কিত নীতিমালার একটি ধারায় বলা ছিল, ‘কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। অন্যথায় নিয়ম ভঙ্গের কারণে তাঁর সিট বাতিল হবে। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহিত ছাত্রীকে চলতি সেশনে হলে থেকে অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী হলে থাকতে পারবেন না।’ অনেক সমালোচনা ও হৈচৈ এর পর এই নিয়ম বাতিল করা হয়েছিল।

সংবিধান পরিপন্থী এই রকম অদ্ভুত নিয়ম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন বারবার জারি করার চেষ্টা করছেন? কেন নারী শিক্ষা ও নারীর মাতৃত্বকে ঘিরে কর্তৃপক্ষের এই নেতিবাচক মনোভাব? জবির বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রাধ্যক্ষ দীপিকা রাণী সরকার, তাঁর নির্দেশ দেওয়ার পক্ষে বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, হলটিতে রাতের বেলা হাউস টিউটর ও প্রভোস্ট কেউ থাকেন না। গেটে দুজনসহ মাত্র তিনজন লোক আছেন, হলে চিকিৎসক নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্স আছে।

কোনো মেয়ে অসুস্থ হলে অন্য মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে হলের গেটে থাকা দুজন তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যান। অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের গর্ভপাত হওয়াসহ এর আগেও বিভিন্ন সমস্যা হয়েছে। রাতের বেলা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেয়ার কেউ থাকে না। দীপিকা রাণী বলেছেন বিবাহিত নারীদের সাধারণত ঢাকায় বাসা ভাড়া করে থাকার সামর্থ্য থাকে। তাঁদের সিটগুলো মা-বাবা নেই কিংবা দূর থেকে পড়তে এসেছেন এমন ছাত্রীদের দিলে তাঁরা পড়াশোনাটা শেষ করতে পারেন। এ ছাড়া বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের জন্য অন্য শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।

মাথাব্যথা হলে কি আমরা মাথা কেটে ফেলি? নাকি ওষুধ দিয়ে সারানোর চেষ্টা করি? এখানেতো দেখছি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাথাটা কেটে ফেলারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোন অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী যদি হলে থেকেই থাকেন, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক ডাক্তারের প্রতি নির্দেশনা দেবেন যেন গর্ভবতী ছাত্রীর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয় এবং বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা রাখা। আবাসিক ডাক্তার না থাকলে যেকোনো গাইনির ডাক্তারের সাথে বা কাছাকাছি হাসপাতালের সাথে একটা এরেঞ্জমেন্ট করতেই পারেন, অনেকটা ভিজিটিং টিচার এর মতো ব্যবস্থা।

তবে হ্যা, এই সময় নারীর বিশেষ যত্নের দরকার হয়। যেকোনো সময় যেকোনো জরুরি অবস্থা তৈরি হতে পারে। সেজন্য এক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করারও দরকার আছে। আমরা জানি মা হওয়ার সময়, পরিবারের কাছেই একজন মেয়ের থাকা উচিৎ। কিন্তু যদি কোনো কারণে, কোন ছাত্রী থাকতে না পারেন, তাহলে তিনি কোথায় থাকবেন, হল ছাড়া। তাই এক্ষেত্রে কোনোভাবেই সিট বাতিল করা যাবে না, যদি তা করা হয় সেটা হবে মানবাধিকারের ও নারী অধিকারের চরম লংঘন। আর সবচেয়ে বড় কথা গড়ে কতজন নারী শিক্ষার্থী গর্ভবতী মা হিসেবে হলে থাকছেন? কয়টি আসনইবা নিয়ে আছেন? ওনাদের খেদিয়ে দিলে কতজন ছাত্রীইবা সে জায়গাটা পাবেন? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ দয়া করে মাথা খাটিয়ে কাজ করুন। নারী বিরোধী অ্যাকশন নেয়া থেকে বিরত থাকুন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আসন না পাওয়া, গাদাগাদি করে থাকা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নোংরা টয়লেট, ডাইনিং-এ খাদ্যের নিন্মমান, মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রদের রুম দখল করে রাখা, শক্তিধরদের অন্যায় অত্যাচার, ক্যাডারদের পেশি শক্তি প্রয়োগ - কোনোটাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফয়সালা করতে পারেন না। শুধু পারেন ছাত্রীদের উপর নিয়ম চালু করতে।

প্রশাসনের উচিৎ সেইসব ছাত্রছাত্রীকে টার্গেট করা, যারা হলে সিট পেয়েও হলে থাকেন না বা অন্যদের থাকতে দেন। এটা অন্যায়, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। হলে সিট কম এবং গাদাগাদি করে থাকা, ছাত্রছাত্রীরা যুগের পর যুগ এই অসুবিধার মধ্যে দিয়েই গেছে। কখনো কি কেউ এগুলো নিয়ে কথা বলেছেন? সেখানে নীতি-নৈতিকতা কোথায় ছিল বা আছে? হলের ডাইনিং এর মানহীন খাওয়া নিয়ে নাটক, সিনেমা, জোকস অনেক হয়েছে, কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন কি হয়েছে? শুনছি এখন অবস্থা আরো খারাপ। ছাত্রছাত্রীরা কিনে বা রান্না করে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। বাইরে খেয়ে বা হলের ডাইনিং এর বাজে তেলের রান্না খেয়ে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এসবই পত্রিকায় প্রকাশিত খবর।

উল্লেখ্য এ বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার চেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. সোলায়মান। ওই নোটিশে বলা হয়, বিবাহিত ও গর্ভবতী ছাত্রীদের জন্য এমন নিয়ম নারীদের উচ্চশিক্ষা অর্জনের পথে অন্তরায় এবং এটি বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদের সঙ্গেও সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। নারী নেত্রীরাও বলছেন বর্তমান সময়ে এ ধরনের নির্দেশনা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষতো এ ধরনের অসাংবিধানিক নির্দেশনা দিতেই পারেন না। চাকরির ক্ষেত্রেও ’বিবাহিত না হওয়ার’ শর্ত বেঁধে দেওয়াও অসাংবিধানিক।

আইনি নোটিশ প্রসঙ্গে জবির বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রাধ্যক্ষ বলেন, ছাত্রীরা তাঁদের কাছে এসে সমস্যার কথা বলতে পারতেন, তা তাঁরা করেননি। এখন আইনি প্রক্রিয়ায় যে সিদ্ধান্ত হবে, তাই মেনে নিতে হবে। তাদের কাছে এসে বললে কি ওনারা এই সিদ্ধান্ত নিতেন না? ওনারা কি জানতেন না ২০২১ এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কী হয়েছিল?

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিবাহিত-অবিবাহিত এভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এভাবে দেখলে তা হবে বৈষম্যমূলক, যা গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার্থী অন্তঃসত্ত্বা হলে তাঁর শারীরিক ও মানসিক দিক বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যুক্তিসংগত কোনো পরামর্শ দিতে পারেন।

আশার কথা তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ছাত্রীদের বিরুদ্ধে নেয়া এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। বলেছেন ছাত্রীরা বিয়ে করলে হলে থাকতে পারবেন না, এমন সিদ্ধান্ত একেবারেই অযৌক্তিক এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ছাত্রীরা এক জায়গায় বসবেন, ছাত্ররা আরেক জায়গায় বসবেন, সেটিও অবাস্তব সিদ্ধান্ত বলে তিনি মনে করেন। ”এ ধরনের সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ কীভাবে নেয়, এটা আমার বোধগম্য নয়। আমি এটা শিক্ষামন্ত্রীর নজরে আনবো। কারণ, এর উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ শিক্ষামন্ত্রী।”

বাসে ছাত্রীদের আলাদা বসা নিয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসন নির্দেশনা দেয়। শিক্ষার্থী পরিবহনের বাসগুলোয় ছাত্রীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক সিদ্ধার্থ ভৌমিকের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের বহনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সিলভার রঙের একতলা বাসের সামনের দ্বিতীয় সারি থেকে পঞ্চম সারি পর্যন্ত দুই পাশের সব আসন ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। বিআরটিসির লাল রঙের দ্বিতল বাসের নিচের তলায় ছাত্রীরা আর ওপর তলায় ছাত্ররা অবস্থান করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় একটি কোএডুকেশন প্রতিষ্ঠান, এখানে বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া নারী পুরুষ আলাদা ব্যবস্থা রাখার কোনো সুযোগ নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকেই ছাত্রছাত্রীরা একসাথেই পাশাপাশি আসনে বসে যাতায়াত করছেন, সেখানে হঠাৎ পাবলিক বাসের মতো ‘লেডিস সিট’ চালুর উদ্ভট আইডিয়া কেন এলো? পরিষ্কার কথা হচ্ছে যাদের কোএডুকেশন পদ্ধতি নিয়ে সমস্যা আছে, তারা ‘বালক’ অথবা ‘বালিকা’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসবেন না।

এর আগে ২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক উপাচার্য স্যার ছাত্রীদের চার দফা দাবির জবাবে বলেছিলেন, ”আমাদের পূর্বপুরুষেরা মূল্যবোধ ও সামাজিক দিক বিবেচনায় নিয়মগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সেখানে অনেক ভালো নিয়মও আছে। তবে বর্তমান সময়ে তা যৌক্তিক কি না, তা পর্যালোচনার দাবি রাখে।” তবে এই “তথাকথিত জনহিতকর নিয়ম” কবে থেকে চালু হয়েছে, সে বিষয়ে কেউ কিছু জানেন না। পূর্বপুরুষদের নেয়া এই নিয়ম কতটা মূল্যবোধ কেন্দ্রিক, সে আলোচনায় না গেলেও, আমরা আশা করবো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে মানবিক ও অধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে বৈষম্যমূলক এবং অপ্রয়োজনীয় আইন এবং নীতিমালাগুলো শিথিল নয়, বাতিল করতে হবে। তা না হলে এর প্রয়োগ হতেই থাকবে বরবার।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি দেশের সংবিধান বিরোধী আইন করতে পারে? দেশের সংবিধান প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকার দিয়েছে। সেখানে কেন দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই বৈষম্যমূলক নীতি? সংবিধানের ২৬নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো আইন করা যাবে না। আর যদি করা হয়, তবে তা স্বতঃসিদ্ধভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি আগের সব আইন সাংবিধানিকভাবে অবৈধ। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ১৮ বছর বয়সের পর নারীর বিয়ের ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় অনেক ছাত্রীরই বিয়ে হয়ে যায়। এর সঙ্গে তার শিক্ষা অর্জন বিষয়ক অধিকারের কোনো ধরনের সংঘর্ষ হওয়ার কারণ নেই। বরং আমরা চাই বিবাহিত হলেও নারী যেন সকল সুযোগ-সুবিধাসহ তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেন। ছাত্রীদের লক্ষ্য করে, নারীর অধিকার বিরোধী কোনো আইন আমরা মেনে নিবো না।

১০ অক্টোবর, ২০২৩

লেখক: যোগাযোগ কর্মী ও কলামিস্ট।

এইচআর/এমএস