ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

জেনে নিন কারা মূলত ভুল সিদ্ধান্ত নেয়

সাইফুল হোসেন | প্রকাশিত: ০৯:৫৫ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ছোট্ট একটি গল্প দিয়ে শুরু করি। আমার পরিচিত একটা ছেলে, বুয়েট থেকে নেভাল আর্কিটেক্ট হয়েছে। নিঃসন্দেহে নেভাল আর্কিটেক্ট হওয়া একটি সৌভাগ্যের ব্যাপার। তবে তাকে দেখে মনে হয়নি যে সে তার প্রাপ্তিতে খুশি হয়েছে। কথা বলে জানলাম সে তার এই সাবজেক্টভিত্তিক উচ্চতর পড়াশোনা এবং ওই রিলেটেড কোনো কাজ করবে না। তার পছন্দ হচ্ছে লেখালেখি করা। সে এখন কনটেন্ট রাইট করে এবং নিজের একটা ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে।

আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কি ব্যাপার, তুমি এত গুরুত্বপূর্ণ একটা সাবজেক্টে পড়াশোনা করলে, বাংলাদেশের নাম করা একটা ইউনিভার্সিটিতে কিন্তু তুমি সেই রিলেটেড কোনো কাজ করবে না?’ প্রতি উত্তরে সে বলল, সে শুধু সার্টিফিকেট অর্জন করেছে তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার জন্যে। তার বাবা-মা খুব করে চেয়েছে যে, ছেলে নেভাল আর্কিটেক্ট হোক, সে তার বাবা-মায়ের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। কিন্তু সে এই রিলেটেড কোনো কাজ করতে অনিচ্ছুক।

বুয়েটে কয়েক বছর ধরে, এই ডিগ্রিটা কষ্ট করে অর্জন করেছে কিন্তু তার প্রতি কোনো ভালোবাসা ছিল না। এত মেধাবী একটা ছেলের জীবন নষ্ট হয়েছে বলে বলছি না, কিন্তু তার যে শিক্ষা, তার ব্যক্তি জীবনে সেই শিক্ষা বিশেষ কোনো কাজে লাগবে বলে মনে হয় না। যেহেতু এই রিলেটেড কোনো কাজে সে নিজেকে সম্পৃক্ত করবে না।

বাবা-মায়ের একটা সিদ্ধান্ত ছেলেটার জীবনটাকে আমূল পাল্টে দিয়েছে। অনেকে হয়তো বলবে, তার জীবনটা নষ্ট হয়েছে। দেখুন কারও জীবনের সিদ্ধান্ত সে নিজে নিক বা তার পক্ষে অন্য কেউ নিক যদি ভুল হয়, সেটা তার জীবনের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সবার জীবনে সঠিক সিদ্ধান্তটি কাম্য। প্রত্যেকে যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তখন সে তার সর্বোত্তম মেধা প্রয়োগ করে, চিন্তাভাবনা করে। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত সব সময় সঠিক হয়, এমনটি বলা যাবে না। সময় গেলে তারপর বোঝা যায় কোনটি সঠিক হয়েছে আর কোনটি সঠিক হয়নি।

আমি আমার ক্যারিয়ার শুরু করেছি ব্যাংক দিয়ে। সেখানে দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় কাজ করেছি। কিন্তু দীর্ঘ সময় কাজ করার পরে আমার মনে হয়েছে যে সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল না। দেখুন যে সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না, সেই সিদ্ধান্তের ওপরে ভর করে কাটিয়ে দিয়েছি দুই দশকের বেশি সময়। তাই আপনারা যখন কোনো কাজের সিদ্ধান্ত নেবেন, যে বয়সেই হোক না কেন, খুব চিন্তা ভাবনা করে, হিসাব-নিকাশ করে নেবেন। না হলে সিদ্ধান্ত যদি ভুল হয় তাহলে শেষ পর্যন্ত পস্তাতে হয়। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সিদ্ধান্ত তো অনেকেই নেয়। এ সিদ্ধান্ত যারা নেন তাদের মধ্যে মূলত ভুল সিদ্ধান্ত নেন কারা? দুই ধরনের লোক মূলত ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তবে বলে রাখি সবসময় যে ভুল সিদ্ধান্ত নেন সেটা নয়। মাঝে মাঝে তাদের সিদ্ধান্ত সঠিকও হয়।

এক ধরনের মানুষ আছেন যারা খুব ভীতু টাইপের এবং সবসময় খুব দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকেন, নিজেদের ওপরে আত্মবিশ্বাস যাদের কম, তারা কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিতে দীর্ঘ সময় নেন কিন্তু সেই দীর্ঘ সময় ধরে যে তারা চিন্তা করেন, ব্যাপারটা এরকম নয়। তারা ভয় ও দ্বিধায়, সময়কে লম্বা করতে থাকেন। এবং লম্বা করতে করতে একেবারে শেষের দিকে এসে যখন তাদের সিদ্ধান্ত নিতেই হয়, তখন সেই সিদ্ধান্ত তারা মূলত তড়িঘড়ি করেই নেন। সামনে পেছনে চিন্তা না করেই সিদ্ধান্ত নেন এবং সেই সিদ্ধান্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুল হয়।

দেখবেন অনেক মানুষ আছে যারা তার বিয়ের জন্য পাত্র বা পাত্রী খুঁজছেন। তারা একটা, দুটা, তিনটা করতে করতে হয়তো একশো’র মতো মেয়ে দেখলেন কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারলেন না। শেষে একটা মেন্টাল প্রেসার ফিল করেন এবং তড়িঘড়ি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এত লম্বা সময় নেওয়ার কোনো দরকার ছিল না। এবং এ সিদ্ধান্তটি আসলে সঠিক হয়নি। যে ধরনের পাত্রী উনি খুঁজছিলেন, সে ধরনের পাত্রী হয়তো ছেড়ে চলে এসেছেন এবং যেটাকে গ্রহণ করেছেন ওই ধরনের পাত্রী উনি চাচ্ছিলেন না। ঠিক এমন হতে পারে, পাত্র খোঁজার ক্ষেত্রেও।

আরেক ধরনের মানুষ আছেন, যারা অত্যন্ত সাহসী বলে নিজেদের মনে করেন এবং নিজেদের খুবই কনফিডেন্ট মানুষ বলে ধারণা করেন। কথায় বলে যে কনফিডেন্স ভালো, কিন্তু ওভার কনফিডেন্স ভালো নয়। যারা ওভার কনফিডেন্ট তারা দেখবেন যে, চটজলদি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। তারাও কিন্তু সামনে- পেছনে খুব ভাবেন না। যতগুলো ফ্যাক্টরকে কনসিডার করা দরকার সবগুলোকে কনসিডার করেন না, না করেই একটা সিদ্ধান্ত নেন। শুধু সেই সিদ্ধান্তটি নেন যেটা উনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, উনি পারবেন। এবং উনি বিশ্বাস করেন যে তার সিদ্ধান্ত ভুল হতে পারে না।

হয়তো এ ব্যক্তি একটু চিন্তা ভাবনা করে লোকজনের সাথে পরামর্শ করে বা নিজে স্টাডি করে, স্থিরভাবে চিন্তা করে যদি একটা সিদ্ধান্ত নিতেন সেই সিদ্ধান্ত হয়তো তার জীবনের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনতো। এরকম প্রবণতা আমি দেখেছি, অনেক সাকসেসফুল ব্যবসায়ীর মধ্যে। ধরুন, তিনি একটা কনসার্ন শুরু করেছেন এবং খুব ভালো করেছেন। আরেকটা শুরু করেছেন, খুব ভালো করেছেন। এভাবে সাতটা, আটটা, দশটা কনসার্ন করেছেন।

এগুলো যখন করেছেন তখন অনেক চিন্তাভাবনা করে করেছেন। কিন্তু নিজের ওপর কনফিডেন্স তার এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে হঠাৎ করে একটা দুটো সিদ্ধান্ত এমন নিয়েছেন, লোকজনের কথা শুনে হোক বা নিজের থেকে চিন্তা করেই হোক- দেখা গেছে, সিদ্ধান্তটি চিন্তা প্রসূত নয় এবং দেখা গেছে যে এতদিনের যে সাফল্য, এই এক সিদ্ধান্ত বা দুটো সিদ্ধান্তের কারণে সব ম্লান হয়ে গেছে। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি ভীতু হওয়াও যেমন চলবে না, তেমনি খুব বেশি ওভার কনফিডেন্ট হওয়াও চলবে না।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে এবং প্রচুর স্টাডি করতে হবে, প্রচুর চিন্তা করতে হবে। সামনে কি হতে পারে, সেটা ভাবতে হবে। এটার কনসিকোয়েন্স কি হতে পারে, সেটা ভাবতে হবে এবং সার্বিকভাবে আপনি ওটা সত্যিই পারবেন কি না এবং আপনার জন্য সেটা সুখকর হবে কি না, কল্যাণ বয়ে আনবে কি না, সেটা আপনাকে বর্তমান সময়ে বসে এনালাইসিস করতে হবে, তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তারপরেও একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, সব সিদ্ধান্ত যা আপনার জন্য সঠিক হবে এমনটি নয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যদি আপনি ভয়কে বাদ দিয়ে, ওভার কনফিডেন্ট না হয়ে একটা বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেন, তবে সেটা ভালো হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে মনে রাখবেন, সিদ্ধান্ত যখন নেবেন সেই সিদ্ধান্ত বারবার চেঞ্জ করবেন না। যে লক্ষ্য নিয়ে আপনি সামনে যান না কেন, এটা যতক্ষণ অর্জিত না হয়, ততক্ষণ তার পেছনে লেগে থাকুন। হাল ছাড়া যাবে না। তাহলে সফল হবেন।

লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক, ফাইন্যান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট; ইউটিউবার ও সিইও, ফিনপাওয়ার লিডারশিপ ইন্টারন্যাশনাল।
[email protected]

এইচআর/ফারুক/এএসএম

আরও পড়ুন