ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ভূমিকম্প

বসে আছি সর্বনাশের আশায়

ড. হারুন রশীদ | প্রকাশিত: ০৯:১৪ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে- এটি বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়েই বলছেন। এজন্য আমাদের করণীয় এবং প্রস্তুতির কথাটিও বারবার উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু আমরা তো ঘাড়ে এসে না পড়লে সেটির দিকে নজর দেই না। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের উদাসীনতার বিষয়টি স্পষ্ট। কিন্তু ভূমিকম্প এমন একটি দুর্যোগ যার পূর্বাভাস জানার সুযোগ কম। ফলে ভূমিকম্পজনিত ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে হলে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি রাখাই হচ্ছে উত্তম।

এবার ভূমিকম্পে কাঁপলো দেশ। ১৭ সেপ্টেম্বর রবিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ৪ দশমিক ২। আজ গতকাল দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিটে এই ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলে। প্রকৃতি আমাদের বার বার সতর্ক করছে। কিন্তু আমরা সাবধান হচ্ছি না। ফলে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আমাদের ঘিরে রাখছে। আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে।

ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হওয়ায় বাংলাদেশ রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। বিল্ডিং কোড মেনে না চলা, বন উজাড়, পাহাড় কেটে ধ্বংস করাসহ নানা উপায়ে আমরা যেন ভূমিকম্প নামক মহাবিপদকে ডেকে আনছি। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, সারাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা লক্ষাধিক। একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট ভূকম্পনেও বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলেও বিশ্লেষকরা বলছেন। এক্ষেত্রে নতুন ভবন নির্মাণে সরকারি তদারকি আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

রাজধানীতে দিন দিন বাড়ছে আকাশচুম্বী অট্টালিকার সংখ্যা। অল্প জায়গায় এত বড় বড় স্থাপনা ভূমিকম্পের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরি করা হচ্ছে ভবন। এতে স্বল্পমাত্রার কম্পনেই ভেঙে পড়তে পারে অনেক ভবন।

এছাড়া ভূমিকম্প-পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায়ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। তৈরি করতে হবে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। জনসচেতনতার জন্য চালাতে হবে ব্যাপক প্রচারণা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকম্প রোধ করা সম্ভব নয়, তবে আমরা নিজেরাই যেন ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি না বাড়াই সে বিষয়ে সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই।

ভেতরে ও বাইরে থেকে ভূমিকম্প সৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশ ভয়াবহ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এসব ভূমিকম্পের মধ্যে মাঝারি থেকে বড় মাত্রার ভূমিকম্পও রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত এসব ভূমিকম্পে বড় মাত্রার কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। না হলেও দেশের চারদিকে ভয়াবহ ভূমিকম্পবলয় তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারত বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখা দিয়েছে। এসব এলাকা থেকে প্রায় সময়ই মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তি হচ্ছে। এর আঘাত সরাসরি এসে পড়ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর।

অতীতের মতো সাম্প্রতিককালেও এসব এলাকা থেকে বড় ভূমিকম্প সৃষ্টি হওয়ার নজির রয়েছে। বিশেষ করে সিকিম, উত্তর-পূর্বে আসাম ও এর আশপাশের এলাকা থেকে এখন প্রায়ই ভূমিকম্প সৃষ্টি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘন ঘন ভূমিকম্পের কারণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার জন্য দেশের ভেতরে ও বাইরে ভূ-অভ্যন্তরে অধিক শক্তি জমা হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তের ভূমিকম্পের মাধ্যমে তা বের হয়ে আসবে।

ভূমিকম্প মোকাবিলায় প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারাভিযান। সরকারি উদ্যোগে ফায়ার সার্ভিস, ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সবসময় প্রস্তুত রাখতে হবে। ভূমিকম্পের সময় দালান ভেঙে পড়ে বেশি মানুষের ক্ষতি হয়। তাই নির্মাণাধীন বাড়িগুলো বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করা হচ্ছে কি না কর্তৃপক্ষকে সে ব্যাপারে তদারকি জোরদার করতে হবে।

ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যার পূর্বাভাস আগে থেকে জানা যায় না। এছাড়া একে আটকানোর কোনো পথ নেই। এ অবস্থায় সচেতনতা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। বিশেষ করে সময় থাকতেই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। লালনের গানের শরণ নিয়ে বলতে হয়- ‘সময় গেলে সাধন হবে না।’

বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ অনেক দূর অগ্রসর হলেও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে ভূমিকম্পকে মোকাবিলা করার মতো প্রস্তুতিতে আমাদের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। আমরা যেন সব জেনেশুনেও ‘সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়।’ অথচ যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকলে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায় আর এজন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। জাতীয় উদ্যোগ নিতে হবে ভূমিকম্পের সময় ও তারপর কী করণীয় সে সম্পর্কে মানুষকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে।

ভূমিকম্প মোকাবিলায় প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারাভিযান। সরকারি উদ্যোগে ফায়ার সার্ভিস, ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সবসময় প্রস্তুত রাখতে হবে। ভূমিকম্পের সময় দালান ভেঙে পড়ে বেশি মানুষের ক্ষতি হয়। তাই নির্মাণাধীন বাড়িগুলো বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করা হচ্ছে কি না কর্তৃপক্ষকে সে ব্যাপারে তদারকি জোরদার করতে হবে।

উপকূলীয় এলাকা, যেখানে সুনামি, ভূমিকম্প- সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে, সেখানে তৈরি করতে হবে অনেক আশ্রয়কেন্দ্র, যাতে মানুষ বিপদের সংকেত পাওয়া মাত্রই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারে। মানুষকে বোঝাতে হবে যে ভূমিকম্প হলে উত্তেজিত না হয়ে সাবধানে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি হবে। মানুষের জানমাল রক্ষায় এর কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট। ডেপুটি এডিটর, জাগো নিউজ।
[email protected]

এইচআর/জেআইএম