ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

জলবায়ু পরিবর্তনে বিপর্যস্ত বিশ্বে করণীয় কী?

ড. মতিউর রহমান | প্রকাশিত: ১০:০১ এএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত আজ এক নির্মম বাস্তবতা। উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু, মরুভূমি থেকে সমতল ভূমি, পাহাড় কিংবা পর্বত, ধনী কিংবা গরিব, উন্নত অথবা স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল কোনো দেশ বা স্থানই আজ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবমুক্ত নয়। জলবায়ু পরিবর্তন প্রাথমিকভাবে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন দ্বারা চালিত হয়। এই গ্যাসগুলো তাপকে আটকে রাখে, যার ফলে বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলস্বরূপ, আমরা বিভিন্ন পরিবেশগত পরিবর্তনের হুমকির মুখে থাকি, যার মধ্যে রয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহ, দাবদাহ, দাবানল, সাইক্লোন, হারিকেন, বন্যা এবং ভারী বৃষ্টিপাতের মতো ঘটনা।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত জুলাইয়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মন্তব্য করেন, ‘বিশ্ব উষ্ণতার দিন পেরিয়ে এখন ফুটন্ত যুগে প্রবেশ করেছে’ তিনি বলেন, জুলাইয়ের তীব্র তাপপ্রবাহ প্রমাণ করে যে বিশ্ব বৈশ্বিক উষ্ণায়নের যুগ শেষ করে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। এটা আসলে ‘গ্লোবাল বয়েলিং এজ’।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘এটি সমগ্র গ্রহের জন্য একটি বড় বিপর্যয়। আগামী দিনে, আমরা একটি বরফ যুগের সমাপ্তির মতো এক যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। আমরা একটি ভয়াবহ গ্রীষ্ম পার করছি। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন শুরু হয়েছে, এটা ভয়াবহ। কিন্তু এটি শুধুমাত্র শুরু।’

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এল নিনো শুরু হয়ে গেছে। এল-নিনো হলো যে কোনো জায়গার জলবায়ু ব্যবস্থার সর্বোচ্চ ওঠানামা। প্রাকৃতিক এ ঘটনার উৎপত্তিস্থল প্রশান্ত মহাসাগরে। এল নিনোর প্রভাবে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিজ্ঞানীরা।

আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হয়েছে তার নজির বিগত একশ বছরের মধ্যে ঘটেনি। এবছরের গ্রিষ্ম ছিল সবচেয়ে বেশি উষ্ণ। দাবানল, বন্যা, খরা, ভূমিকম্প ইত্যাদির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নারকীয় দৃশ্যের তৈরি করে।

তারা আরও বলেন, এসবের পেছনে যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা রয়েছে, তেমনি এল নিনোর কারণেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমা অতিক্রম করেছে। এ বছর প্রায় সারা বিশ্বই প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হচ্ছে। এটা এখন প্রমাণিত যে মানবসৃষ্ট কার্যকলাপ যেমন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, কৃষি, দূষণ, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ইত্যাদি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধানত দায়ী। যাই হোক, এটা সত্য যে বর্তমান বিশ্ব উষ্ণায়নের সাথে, যদি এল নিনো জোরালোভাবে ঘটে তবে এর প্রভাব মারাত্মক হতে পারে।

ইতিহাস মোতাবেক ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালকে প্রাক-শিল্প যুগ বলা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্টে তাপমাত্রা সেই সময়ের তাপমাত্রার চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি অতিক্রম করে।

২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প যুগ তাপমাত্রার কাছাকাছি অর্থাৎ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০৫০-২১০০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণকে কমিয়ে এমন পর্যায়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যেন গাছপালা তা প্রাকৃতিকভাবে শুষে নিতে পারে, অর্থাৎ কার্যত প্রকৃতিতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনা। সব দেশের কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর বৃদ্ধি করা। উন্নত রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার জন্য এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য তহবিল সৃষ্টি করা। কিন্তু কার্যত তা হয়নি।

শিল্পোন্নত দেশগুলো তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রতিশ্রুত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে তাদের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হওয়ার কথা স্বীকার করুক বা না করুক, বিশ্বজুড়ে মানুষ রেকর্ড তাপমাত্রায় নাভিশ্বাস ফেলছে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে শুরু করে ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন ভারত, জাপান, চীনে চরম তাপপ্রবাহ, দাবদাহ, দাবানল এবং বন্যার কারণে জীবন ও জীবিকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো ২০২৩ সালের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ প্রাকৃতিক দুর্যোগকে নাটকীয়ভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। গরম, শুষ্ক বাতাসের কারণে অনেক দেশে দাবানল হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কানাডায় যে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল তা অন্তত দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে, ফলে এসব অঞ্চলের তাপমাত্রা দুই থেকে আড়াই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক দশক ধরে জলবায়ু, বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়ে তাদের ভবিষ্যদ্বাণী ২০২৩ সালের উচ্চ তাপমাত্রার পূর্বাভাসের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু এর প্রভাব তাদের আশংকার চেয়েও অনেক বেশি। সুতরাং এখনই বিশ্ব নেতাদের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি। এটা শুধু পরিবেশগত সমস্যা নয়; এটি আমাদের কল্যাণ, অর্থনীতি এবং আমাদের গ্রহের ভবিষ্যতের জন্য হুমকিস্বরূপ। জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিণতিগুলোর মধ্যে একটি হলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ বৃদ্ধি, যার মধ্যে রয়েছে সাইক্নেন, বন্যা, হারিকেন, দাবানল এবং তাপপ্রবাহ। এই বিপর্যয়গুলো কেবলমাত্র বিশাল মানবিক দুর্ভোগের কারণই নয় বরং প্রতি বছর বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করে। সুতরাং, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় রোধ করতে, সরকার, সম্প্রদায়, ব্যবসায়ী এবং ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করে একটি ব্যাপক এবং সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

ডয়েচে ভেলে’র বাংলা সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘ইউএনইপি অ্যাডাপ্টেশন গ্যাপ–২০১৩’ রিপোর্টে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বা ফলাফলের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক খরচের পরিমাণ এখনকার চেয়ে দু-তিন গুণ বেড়ে যাবে। বর্তমানে যা ধারণা করা হচ্ছে, তার চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বাড়বে ২০৫০ সাল নাগাদ।

অন্যদিকে ওই রিপোর্টটিতে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়ার সীমা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে যেমন মানুষের দুর্ভোগ কমবে অন্যদিকে নামতে থাকবে খরচের হারও।’

বিবিসি বাংলা ২০১৯ সালে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্যানেলের একটি বিশেষ রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্যের বরাত দিয়ে উল্লেখ করে, ‘২১০০ সাল নাগাদ সাগর-পৃষ্ঠের উচ্চতা ১.১ মিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। জাতিসংঘের একটি বিজ্ঞানী প্যানেল হুঁশিয়ার করেছে- মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের পরিণতিতে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন দ্রুত হারে সাগর-পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে এবং বরফ গলছে। সেই সাথে জীবজন্তুর বিভিন্ন প্রজাতি তাদের আবাসস্থল বদলাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বরফের আচ্ছাদন বিলীন হওয়ার কারণে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে পরিস্থিতি দিনকে দিন বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে।’

জাগো নিউজ২৪.কম এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘বরফ গলার কারণে, ২০২২ সালের শেষ দিকে, অ্যান্টার্কটিকার দক্ষিণে বেলিংহাউজেন সাগরের কাছে একসঙ্গে ১০ হাজার এমপেরর পেঙ্গুইনের মৃত্যু ঘটেছে। এই বাচ্চা পেঙ্গুইনদের পালক সাঁতারের জন্য উপযোগী হওয়ার আগেই তাদের পায়ের নিচে থাকা সমুদ্রের বরফ গলে ও ভেঙে যায়। আর তা থেকেই বরফ পানিতে ডুবে বা ঠান্ডায় জমে বাচ্চাগুলোর মৃত্যু ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। পেঙ্গুইনের মধ্যে উচ্চতা ও ওজনে সবচাইতে বড় জাতের প্রাণীটিকে এমপেরর পেঙ্গুইন বলা হয়। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, যেহেতু পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে. তার ফলে এই শতকের শেষ নাগাদ পৃথিবী থেকে এমপেরর পেঙ্গুইনের ৯০ শতাংশেরও বেশি কলোনি বা আবাস হারিয়ে যাবে।’

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং এল-নিনোর প্রভাবে ২০২৪ সাল থেকে চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। এ ঘটনায় আগামী বছর বিশ্বে উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে। আবহাওয়াকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে অস্ট্রেলিয়ায় খরা, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতে বর্ষার ভরা মৌসুমে কম বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। গবেষকরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রার চেয়ে মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর বেশি উষ্ণ হয়ে আছে।

বাংলাদেশ ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, নদীভাঙন এবং জলাবদ্ধতা, মাটির লবণাক্ততা প্রভৃতির কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম। এ জলবায়ু পরিবর্তন দেশের কৃষি, অবকাঠামো ও জীবনযাত্রার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ বেড়েছে।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেও বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশ সমতল ও নিচু ভূমি এলাকা নিয়ে গঠিত। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের নাগরিক এবং সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠছে। দেশের ৮০ শতাংশেরও বেশি জমি বন্যাপ্রবণ। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত; তাই জলবায়ু পরিবর্তন কৃষকদের খারাপভাবে প্রভাবিত করবে। বিশ্বব্যাংক আগেই সতর্ক করেছে, বাংলাদেশ ২১০০ সালের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হবে। প্রতিবেদনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা তিন ফুট বাড়বে বলে অনুমান করা হয়েছে। এতে দেশে ব্যাপক বন্যা হবে এবং ফসলহানি ঘটবে। এ কারণে দারিদ্র্য ও মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা এখন বিশেষ কোনো দেশ বা জনগোষ্ঠীর নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বের দেশে দেশে পরিবেশদূষণ, বন্যা, দাবদাহ, নতুন নতুন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার আবির্ভাব, সামুদ্রিক প্রাণীর খাদ্য সংকট, উদ্ভিদের ক্ষতি সবকিছুই তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও ইকোসিস্টেমের ভারসাম্যহীনতার ফল। পরিবেশদূষণের বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের জনজীবনের ওপর।

২০২৩ সাল এমন একটি বছর যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের রেকর্ডই শুধু অতিক্রম করেনি, এটি মানুষের মনে আতঙ্কও তৈরি করেছে। চরম আবহাওয়ার ফলে দুর্যোগ এখন আরও সাধারণ হয়ে উঠেছে এবং প্রতি বছর এর প্রভাব আরও খারাপ হচ্ছে। বিশ্ব নেতাদের জেগে ওঠা এবং দ্রুত কার্বন নিঃসরণ কমাতে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন COP28 অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমাদের আশা এই সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় মোকাবেলার সবচেয়ে কার্যকর উপায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর লক্ষ্যে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন প্রতিটি দেশকে কার্বন নিঃসরণ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু এখন এটা স্পষ্ট, কোনো উল্লেখযোগ্য লাভ হয়নি। এ কারণে তাপমাত্রা বেড়েই চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সম্মেলনে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।

এই সংকটজনক অবস্থায় কার্বন নিঃসরণ কমাতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি তারা ক্রমাগত আহ্বান জানাচ্ছেন। কার্বন নিঃসরণ কমাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে তারা বার বার সতর্ক করছেন। তারা বলছেন, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিশ্ব নেতাদের এখনই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিশ্ব নেতাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে ডিগ্রির প্রতিটি ভগ্নাংশ গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর জনগোষ্ঠী এবং বাস্তুতন্ত্র রক্ষার জন্য নৈতিক অপরিহার্যতার অংশ হিসেবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার বাস্তবসম্মত কারণ রয়েছে। এক্ষেত্রে যত বেশি দেরি হবে ততই চলমান পরিবর্তনগুলোর সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া বেশি ব্যয়বহুল এবং চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে।

জলবায়ু পরিবর্তন এ মুহূর্তে মানুষ এবং অন্য সব জীবের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে আরও বিধ্বংসী প্রভাব পড়বে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইতিমধ্যে এর ভয়াবহতা প্রমাণ করেছে। সুতরাং, মানবজাতিসহ অন্যান্য প্রাণীর স্বার্থে আমাদের ভালোবাসার গ্রহকে রক্ষার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মোকাবিলা করা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।

লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী।

এইচআর/ফারুক/এএসএম

আরও পড়ুন