ধনী হতে চাও আরও বেশি দাও
ধনী হতে চাইলে আমাদের বেশি বেশি করে দিতে হবে কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমরা যদি ধনী হতে চাই আবার সব কিছু দিয়ে দেই, তাহলে ধনী হবো কীভাবে? আমরা জানি সমাজের কিছু নিয়ম আছে। আমরা প্রথমে কিছু দেব, বিনিময়ে কিছু নেব। বাস্তব হচ্ছে আমরা প্রথমেই চাইতে থাকি যদিও আমাদের উচিত চাওয়ার আগে কিছু দেওয়া। আমরা যদি বেশি বেশি দিতে পারি তাহলে সমাজ থেকে, জীবন থেকে আমাদের যে কোনো প্রাপ্তিই সহজ হবে কিন্তু কীভাবে?
আমরা প্রথমে যখন একটা ব্যবসা শুরু করি তখন ক্রেতাকে কোনো পণ্য বা সার্ভিস প্রদান করি এবং এর মাধ্যমে তার জীবনে আমরা ভ্যালু অ্যাড করি। সেজন্য সেই ক্রেতা আমাদের পেমেন্ট করে। আপনি সমাজে যত বেশি ভ্যালু অ্যাড করবেন, সমাজ আপনাকে তত বেশি পেমেন্ট করবে। তাই ধনী হতে হলে দিতে হবে আগে। তবে তার আগে আমাদের কি দিতে হবে সেটা বুঝতে হবে।
আমাদের উচিত আমাদের আইডিয়া, চিন্তাভাবনা, উদ্দীপনা, আন্তরিকতা, ডেডিকেশন, কোন প্ল্যান, সম্পদ ও কঠোর পরিশ্রম দেওয়া এবং বিভিন্ন প্ল্যান বাস্তবায়ন করার জন্য শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে কাজ করে যাওয়া। কাজের প্রতি আমাদের হতে হবে যত্নশীল এবং সমাজের প্রতি পালন করতে হবে দায়িত্ব ও কর্তব্য। মনে রাখতে হবে আমরা আমাদের শ্রম, আইডিয়া, মেধা, ডেডিকেশন, সেবা, এফোর্ট, সময় ও সম্পদ দেব এবং ফলস্বরূপ অধিক প্রাচুর্য পাব।
যারা ব্যবসা করছেন তারা তাদের প্রফিটের একটা বড় অংশ এমপ্লয়ীদের মধ্যে বিতরণ করে দিতে হবে। এই প্রদান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে ভাবতে পারেন বেশি প্রফিট দিয়ে দিলে ব্যবসা বড় হবে কীভাবে? আসলে আমরা যখন এমপ্লয়িদের মধ্যে প্রফিট শেয়ার করছি, জ্ঞান শেয়ার করছি বা গভীর আন্তরিকতা প্রদর্শন করছি, বিপদে আপদে এগিয়ে আসছি তখন তারা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আরও যত্ন সহকারে সময় দিচ্ছে এবং প্রোডাকটিভিটি বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। দেখা যাবে আমাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে তারা তাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠান ভেবে কাজ করছে। ফলে সামগ্রিকভাবে যখন সবার প্রোডাক্টিভিটি বাড়ছে তখন দেখা যাবে আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্টিভিটিও বেড়ে যাবে, প্রফিটিবিলিটি বেড়ে যাবে।
আর এভাবে যদি প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্টিভিটি বাড়ে তাহলে সমাজের প্রোডাক্টিভিটিও বাড়বে, সমাজে অধিক পরিমাণে সম্পদ সৃষ্টি হবে এবং সমাজটা একটা কল্যাণকর অবস্থায় উপনীত হবে। যখন আমরা সমাজকে বেশি বেশি দিতে পারব তখন আমাদের মধ্যে একধরনের সন্তুষ্টি কাজ করবে, নিজেদের তখন একপ্রকার সুখী মানুষ মনে হবে। ফলে দেখা যাবে সমাজের প্রতি আমাদের প্রদানের মাত্রা আরও বেড়ে যাচ্ছে, আমাদের মধ্যে কাজ করার আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। আমরা যখন বেশি কাজ করছি তখন সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে কারণ আমরা কেবল পরিবারের জন্য করছি না বরং সমগ্র সমাজের জন্য করছি।
আমরা যখন দিচ্ছি তখন আমাদের মধ্যে আরও দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হচ্ছে কারণ এর বিনিময়ে সমাজও আমাদের দিচ্ছে। একটি দারুণ এবং ফলপ্রসূ লেনদেন ঘটছে। সমাজে দেওয়া ও নেওয়ার মাধ্যমে একটা সুন্দর বন্ডিং তৈরি হচ্ছে, সুন্দর একটা সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে সবার সাথে। এ সম্পর্ক আপনার ব্যবসা ও অন্য কার্যক্রমে প্রসার ঘটাতে সাহায্য করছে। আরেকটা ব্যাপার এখানে উল্লেখ করতে হয়, আমরা যখন অন্যকে সফল করে তোলার কাজে নামছি তখন দেখা যাবে সেই সফল ব্যক্তিরা আমাদেরও নানা কাজে নানা ভাবে সফল করে তোলার চেষ্টায় নামছে।
আমরা মূলত যে ভুলটা করি তা হচ্ছে আমরা প্রথমেই শুধু চাই। আসলে এই ‘শুধু চাওয়ার’ প্রবণতা থেকে বের হয়ে এসে আমাদের আগে কিছু দিতে হবে সমাজকে। আমাদের মধ্যে আগে প্রদান ও পরে গ্রহণের প্রবণতা তৈরি করতে হবে। কারণ সমাজ মূলত এভাবেই চলে। আপনি কিছু দেবেন সমাজও আপনাকে কিছু দেবে। এতে আমাদের সমাজে সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। দেখা যাবে এভাবে সমাজে আমরা শুধু সম্পদশালী হয়ে উঠবো না বরং একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে আবির্ভূত হবো।
মনে রাখতে হবে আমাদের শুধু সম্পদ থাকলেই চলবে না। সম্পদের পাশাপাশি সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাও থাকতে হবে। যদি আমরা কোথাও গেলে সমাদর না পাই, সম্মান না পাই তাহলে আমাদের এত ধন-সম্পদ থেকে কোনো লাভ নেই। তাই ধন-সম্পদের পাশাপাশি আমাদের সম্মান ও ভালোবাসা অর্জন করতে হবে, যা আমাদের মৃত্যুর পরেও টিকিয়ে রাখবে।
আমাদের ধন-সম্পদ কখনই এটা এন্সিউর করে না যে সমাজ আমাদের মনে রাখবে। বরং আমরা যে দান বা প্রদান করে গেছি তা আমাদের অমর করে রাখবে। আর তখনই আমরা পৃথিবীকে বসবাসের জন্য একটি ভালো জায়গা হিসেবে গড়ে তোলার আন্দোলনে শরিক হয়েছি বলে গণ্য হবো। মনে রাখতে হবে, ইফ ইউ গিভ লাভ, ইউ উইল গেট লাভ, ইফ ইউ গিভ মোর, ইউ উইল গেট মোর। যত বেশি দেবেন, তত বেশি পাবেন।
আসলে প্রদানেই প্রশান্তি, প্রদানেই আনন্দ, প্রদানেই সফলতা, প্রদানেই প্রাপ্তি। গ্রহণ করুন পরে, প্রদান শুরু হোক আগে। হাত পেতে নেওয়ার বদলে আগে প্রদান করলে ফলস্বরূপ আমরা সত্যি সত্যি অনেক কিছুই পাবো।
লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক, ফাইন্যান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট; ইউটিউবার ও সিইও, ফিনপাওয়ার লিডারশীপ ইন্টারন্যাশনাল।
[email protected]
এইচআর/ফারুক/এএসএম